Published on Jul 12, 2022 Updated 0 Hours ago

ইউক্রেন সঙ্কট ভারতীয় অর্থনীতিকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করলেও ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাহিদা এবং দেশীয় আর্থিক ব্যবস্থাপনা এই আঘাত উপশমে সাহায্য করতে পারে।

ভারত সম্পর্কে আশাবাদী হওয়া

ভারত বদলে গেছে। জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে অনাড়ম্বর ভাবে ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের পূর্ববর্তী দ্বিধা আর নেই। ধোঁয়াটে উত্তর-ঔপনিবেশিক এবং ঠান্ডা লড়াইয়ের আদর্শগত বোঝা যথাযথ ভাবে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। ইউক্রেন সঙ্কটের প্রেক্ষিতে অবস্থান গ্রহণের সুস্পষ্ট সীমারেখা দেশকে গর্বিত করেছে। ইউরোপীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারত বহিরাগত, তাই আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নীতিগত সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, মানবিক সহায়তা প্রদানের মতো কাজ করলেও, দোষারোপ করা বা পক্ষ অবলম্বন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সমর্থ হয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এক স্থায়ী সদস্য এবং ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্কের সাম্প্রতিক কালে এক তৃতীয় অংশীদার হিসেবে চিনের দ্বৈত অবস্থানের কথা মাথায় রেখে এটাই যুক্তিযুক্ত প্রত্যুত্তর যে, রাজহংসীর (চিন) জন্য যা ভাল, তা রাজহংসের (ভারত) জন্য খুব খারাপ হতে পারে না। জাতীয় স্বার্থে কতটা খরচ করে কতটা লাভ হবে, তার একটি ‘মার্কেলিয়ান’ সমীকরণের সঙ্গে কখনও কখনও দুর্লভ হলেও আবেগের বহিঃপ্রকাশ লাভজনকই বটে।

বিদ্যমান সঙ্কটের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ‘পশ্চিমী’ জোটের দ্বারা নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞা-ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কৌশলের ফলে ভারত নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে।

মূলত একটি ইউরোপীয় সমস্যার ক্ষেত্রে এই সাবধানী অবস্থান তা এক জন প্রধান চালক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে শুধু মাত্র ভারতের সীমিত ক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে না, একই সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের আন্তর্জাতিক বিরোধে তার অংশগ্রহণের স্তর বেছে নেওয়ার ইচ্ছাকেও চিত্রিত করে। ভারত উচ্চ পর্যায়ে আসন পাকাপোক্ত করার জন্য কোনও আগ্রাসী মনোভাব দেখায়নি। কারণ বৈশ্বিক জনসংখ্যার নিরিখে তার অতিরিক্ত সংযোজনের তুলনায় আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বা বাণিজ্যে অনুরূপ অবদান নেই।

তবুও বিদ্যমান সঙ্কটের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ‘পশ্চিমী’ জোটের দ্বারা নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞা-ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কৌশলের ফলে ভারত নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এই সঙ্কটের আগেও ভারত খুব একটা সুবিধেজনক অবস্থায় ছিল না। মুদ্রাস্ফীতি ইতিপূর্বেই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আর বি আই) দ্বারা নির্ধারিত বার্ষিক ৬ শতাংশের সীমা অতিক্রম করেছিল। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (ইউ এস এ) ৮ শতাংশের বেশি এবং ইউরো অঞ্চলে ৭.৫ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি হওয়ার তুলনায় ভারতীয় মুদ্রাস্ফীতির হার ৭ শতাংশের চেয়ে ১ পারসেন্টেজ পয়েন্ট কম হওয়ার ফলে ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলি ওই দেশগুলির তুলনায় ভাল ফল করার এক অভিনব অবস্থানে পৌঁছেছে। বর্তমান অর্থবর্ষে চতুর্থ ত্রৈমাসিকে আনুমানিক মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসের স্তরে থাকতে পারে ৬.৮ শতাংশ। শুধু মাত্র পার্থক্য হল যে, উন্নত অর্থনীতির এই গভীর অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট আর্থিক ক্ষমতা রয়েছে। ভারতের জন্য আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য এবং অতিমারির কবল থেকে সরবরাহের সীমাবদ্ধতা-চালিত মুদ্রাস্ফীতিকে মোকাবিলা করার জন্য একটি কঠোর আর্থিক নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যেই ভারতীয় স্টকের প্রধান বিক্রেতা।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিনিয়োগ ও বৃদ্ধির প্রতি যত্নশীল হওয়ার মতো যুগ্ম অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে সাম্য বজায় রেখে চলা এক কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করা হয়েছিল যে, কোভিড-১৯-এর প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার দরুন যে বৃদ্ধির গতিশীলতা লক্ষ করা গিয়েছিল, তা সরবরাহ শৃঙ্খলের ক্রমাগত স্বাভাবিক হয়ে ওঠার মাধ্যমে বজায় থাকবে। বিশ্বব্যাপী চাহিদা বৃদ্ধি ভারতীয় রফতানির জন্য একটি বৃদ্ধিমূলক সেতু তৈরি করবে, যেখানে বিচক্ষণ অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা একটি স্বাস্থ্যকর বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলতে সক্ষম। কেন্দ্রীয় সরকার তার রাজস্ব ঘাটতি গত অর্থ বর্ষের ৬.৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.৪ শতাংশ করতে পেরেছে। যদিও ৪ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতির উচ্চ স্তর অর্জন করা এখনও সময় সাপেক্ষ। ইতিমধ্যে জন ঋণ বেড়ে উঠছে, যা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে উৎপাদনশীল নতুন খরচগুলির পথে বাধা সৃষ্টি হবে।

প্রশমনের উপায়

ভারতই এক মাত্র এই সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়নি। একাধিক দেশই এই বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ে কশাঘাত অনুভব করেছে। তবুও একটি সর্বজনীন কার্যকরী পরিকাঠামোর পরিকল্পনা ফলপ্রদ হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী চাহিদা বৃদ্ধি ভারতীয় রফতানির জন্য একটি বৃদ্ধিমূলক সেতু তৈরি করবে, যেখানে বিচক্ষণ অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা একটি স্বাস্থ্যকর বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলতে সক্ষম।

এর মধ্যে অনেক লক্ষ্যই পরিচিত। যেমন আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ উচ্চ স্তর থেকে নামিয়ে নিয়ন্ত্রণযোগ্য অর্থাৎ সংযুক্ত ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য ৩ থেকে ৪ শতাংশ এবং রাজ্যগুলির জন্য ৪ শতাংশ বরাদ্দ। যদিও কোথায় ব্যয় কমানো উচিত বা ব্যয় করা হবে সে সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে উপকারী হবে। মোদীর অধীনে কল্যাণমূলক পদক্ষেপের আধিক্য লক্ষ করা গিয়েছে। অতিমারির প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জনকল্যাণ ভর্তুকি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগ এবং দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি শুরু না হলে ভর্তুকি কমানোর ফলে দারিদ্র্যের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর বি আই মনে করছে এই অর্থ বর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে প্রকৃত বৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসবে।

দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান বদলাতে থাকে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি ওয়ার্কিং পেপার (সিনহা রায় এবং ভ্যান ডি ওয়েইড, এপ্রিল ২০২২) অনুমান করেছে যে, দারিদ্র্যের মাত্রা হ্রাস পাবে (১.৯ মার্কিন ডলার পি পি পি ভিত্তিক)– ২০১১ সালের ২২.৪  শতাংশ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১০.২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এমন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে— যা সি এম আই ই কনজিউমার পিরামিড হাউসহোল্ড সার্ভে থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাধারণীকরণ করে ২০১১ সালের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের তথ্যের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ব্যাপী এক উন্নততর পরিপূরক হওয়ার লক্ষ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে। এই বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য দূরীকরণের হার ছিল দ্রুততর।

যদিও ভাল্লা, ভাসিন এবং ভিরমানি আই এম এফ-এর একটি ওয়ার্কিং পেপারে দেখিয়েছেন যে,  নগদ ব্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নামমাত্র মূল্যে খরচ নথিবদ্ধ করার চিরাচরিত সমীক্ষা পদ্ধতি দারিদ্র্যকে অতিমূল্যায়ন করে। ১৯৮০-র দশক থেকে ভারত খাদ্যের ব্যবহারে ভর্তুকি দিয়েছে – যা দরিদ্রদের গড় উপভোগের ৬০ শতাংশের সমান। ২০১৩ সাল থেকে খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রামীণ জনসংখ্যার তিন চতুর্থাংশ এবং শহুরে জনসংখ্যার অর্ধেক এই ধরনের সাহায্যের সুবিধাভোগী হয়েছে। নিম্ন ইস্যু মূল্যের পরিবর্তে বাজার মূল্যে খাদ্য সহায়তাকে মূল্যায়ন করা, নাটকীয় ভাবে খরচের মাত্রা বৃদ্ধি করে। যার ফলে দারিদ্র্যের মাত্রা ২০১১ সালের ২২.৫ শতাংশ থেকে ১০.৮ শতাংশে এবং ২০১৯ সালের মধ্যে ০.৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে ১০.২ শতাংশের বিপরীতে। এই মূল্যায়ন ২০২০ সালে (অতিমারির প্রথম বছর) দারিদ্র্যের একটি যৎসামান্য বা ০.৯ শতাংশ বৃদ্ধিকে দর্শায় এবং এই সাফল্যের নেপথ্যে অতিমারি চলাকালীন ব্যক্তি প্রতি খাদ্য সহায়তা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে খাদ্য ত্রাণ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীর সঙ্গে বিনিময় করা হয়েছে। ফলে একটি বৃহত্তর উপার্জন সহায়তা জোগানো সম্ভব হয়েছে। এই নিবন্ধটিতে পূর্ববর্তী কাজের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে দেখানো হয়েছিল যে, ভারতীয় ‘ইন কাইন্ড’ বা ‘নেট আয়’ সহায়তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ভাবে সর্বজনীন মূল আয় বাস্তবায়িত করার তুলনায় উন্নততর এবং সস্তা, যা পশ্চিমি বিশ্লেষকদের দ্বারা প্রত্যক্ষ নগদ সহায়তার মাধ্যমে উপার্জন করা সম্ভব।

নিম্ন ইস্যু মূল্যের পরিবর্তে বাজার মূল্যে খাদ্য সহায়তাকে মূল্যায়ন করা, নাটকীয় ভাবে খরচের মাত্রা বৃদ্ধি করে। যার ফলে দারিদ্র্যের মাত্রা ২০১১ সালের ২২.৫ শতাংশ থেকে ১০.৮ শতাংশে এবং ২০১৯ সালের মধ্যে ০.৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে ১০.২ শতাংশের বিপরীতে।

মজার বিষয় হল, এই নিবন্ধটিতে এই সুপরিচিত নীতি কথা ‘মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে দরিদ্রদেরই’… এর পক্ষেও যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ দেওয়া যায়। পাশাপাশি, এটি দাবি করে যে, ২০১৪-২০১৯ সালের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস সবচেয়ে দ্রুত ছিল যদিও প্রতি বছর বৃদ্ধির হার ছিল ক্ষীণ, মাত্র ৫.৪ শতাংশ। অন্য দিকে, ২০০৪-২০১১ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৬.৪ শতাংশ  হারে বৃদ্ধি হয়ে থাকলেও তুলনামূলক ভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণের হার ছিল শ্লথ। এ ক্ষেত্রে মূল পার্থক্যটি হল ২০১৪-২০১৯ সালের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার প্রতি বছর ৩.৬ শতাংশ ছিল, যা পূর্ববর্তী সময়কালের প্রতি বছরের ৮.৪ শতাংশ হারের তুলনায় অনেকটাই কম। এর থেকে আমরা এই শিক্ষাই নিতে পারি যে আগামী দিনে বৃদ্ধির জন্য স্থিতিশীলতার সঙ্গে সমঝোতা করা একটি উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন কৌশল, যা দরিদ্রদের উপর নেতিবাচক ফলাফল ডেকে আনে।

ভারত পরোক্ষ কর কিছুটা কমিয়ে (শুল্ক, পণ্য ও পরিষেবা কর) এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের আবগারি শুল্ক কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা হলেও হ্রাস করতে পারে। ২০১৯-২০২১ অর্থ বর্ষে পরোক্ষ কর (কেন্দ্র এবং রাজ্যের সম্মিলিত) তিন বছরের মেয়াদে মোট কর রাজস্বের ৬১ শতাংশের জন্য দায়ী। যদিও আমরা কি প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে বৃদ্ধির মাধ্যমে পরোক্ষ করের রাজস্বের ক্ষতি পূরণ করতে পারি? একই সঙ্গে রাজ্য সরকার / পৌরসভা স্তরে সম্পত্তি করের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিও কি সম্ভব?

পরিকাঠামো উন্নয়নের অর্থায়নের জন্য সম্পদ নগদীকরণের ক্ষেত্রে একটি আরও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এবং একই সঙ্গে আমরা প্রচলিত সামরিক সক্ষমতা ও পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা মজবুত করার জন্য একটি বড় পুনঃসশস্ত্রকরণ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করতে পারি না। চিন আগ্রাসী বা শান্ত… যে মনোভাবই দেখাক না কেন, ইউক্রেন সংঘাত থেকে আমরাযে শিক্ষাটি গ্রহণ করতে পারি, তা হল, অত্যাধুনিক সামরিক প্রস্তুতিকে কখনও উপেক্ষা করা উচিত নয়।

বৃদ্ধির সম্ভাবনা মাঝারি। বিশ্বের বৃদ্ধির হারে মন্থরতা, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং দেশীয় শিল্প স্থবিরতা ক্ষেত্রে ক্রমাগত উদ্বেগ বিপরীত হাওয়া তুললেও ২০২৩ অর্থ বর্ষটি পুনরুজ্জীবনের বছর হয়ে উঠতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন শিল্প ও রাজস্ব নীতির নিখুঁত ব্যবস্থাপনা। ছোট উদ্যোগ বা সীমিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ বিজেপি বা অন্যান্য ভারতীয় দলের রাজনৈতিক ধাতে নেই। এবং এই ধরনের মানসিকতা জনস্বার্থে বিনিয়োগের পরিমাণকে বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় বৃদ্ধিমূলক প্রতিদানের কথা বিবেচনা না করেই এক বর্ধিত স্তরে নিয়ে যেতে পারে। এই ধরনের নির্মাণকার্যের ফলে সৃষ্ট কর্ম সংস্থানগুলির জন্য পরিকাঠামো খাতে (সাধারণ জনকল্যাণ) বিনিয়োগ করা কি যুক্তিযুক্ত যত ক্ষণ না টোল থেকে আয় অথবা বিকল্প সবুজ অর্থায়নের উৎস থেকে সস্তার ঋণ  বিনিয়োগকে লাভজনক করে তোলে?

ভাল প্রকল্পের তত্ত্বাবধান এবং সময় মতো অডিট ছাড়া জি ডি পি অনুপাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বিশাল আকার ধারণ করতে পারে যদি তা ঋণ দ্বারা চালিত হয়।

বড় সরকারি বিনিয়োগের সংস্কৃতি নির্ভরতার একটি অসহনীয় পথ আছে। প্রকল্পের ভাল তত্ত্বাবধান এবং সময় মতো অডিট ছাড়া জি ডি পি অনুপাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বিশাল আকার ধারণ করতে পারে যদি তা ঋণ দ্বারা চালিত হয়। অন্য দিকে যদি নির্দিষ্ট সময়সীমা ছাড়িয়েও কাজ চলতে থাকে, তখন বিনিয়োগের অনুপাতে কার্যকারিতার পরিমাণ শ্লথ হয়ে পড়ে। এ ভাবেই বেসরকারি নির্মাণ সংস্থাগুলি দেউলিয়ায় পর্যবসিত হয়, যেখানে সরকারি প্রকল্প ভবিষ্যতের লাভের সম্ভাবনাকে মুছে ফেলে।

এটি প্রায় অসম্ভব যে, ভারতের কাঠামোগত ঘাটতিগুলি, যেমন স্বল্প বাজেটসম্পন্ন একাধিক কর্তৃপক্ষ, নিয়ন্ত্রক জট এবং উচ্চ গুণমানসম্পন্ন জনসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় কম মূলধন থাকা— আগামী দিনে পরিবর্তন হতে পারে। জনসেবা প্রদানে সাধারণ অক্ষমতা… যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবহারিক পরিষেবা (বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ, টেলিকম, জন পরিবহণ ব্যবস্থা), নিরাপত্তা এবং আইনের শাসন আমাদের দেশের একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত উপার্জনকারী অর্থনীতি থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত উপার্জনকারী অর্থনীতিতে উত্তরণের পথে প্রধান বাধা।

ছোট ছোট সংস্কারের কাজের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের ধৈর্যের বড়ই  অভাব। প্রাতিষ্ঠানিক ধারাবাহিকতা এবং পেশাদার নেতৃত্ব প্রদানের জন্য ভারতীয় ব্যবস্থায় একটি স্থায়ী আমলাতন্ত্রের পরিসর রয়েছে, যার পূর্ণ সদব্যবহার না করা ভুল হবে। আত্মবিশ্বাস, স্বমূল্যায়ন এবং সাংবিধানিক আদেশের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতা জনপ্রশাসনকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রবল আধিপত্যের সম্মুখে কার্যকর সংসদীয় নিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্যের অনুপস্থিতির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক শক্তিকে সঠিক পথে চালিত করার জন্য এমনকি ইতিবাচক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তিগুলিরও বাহ্যিক নিয়ন্ত্রকের প্রয়োজন হয়, যাতে রাজনৈতিক শক্তি কার্যকর ভাবে ব্যবহার করা যায়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.