Author : Harsh V. Pant

Published on Aug 03, 2023 Updated 0 Hours ago

চিনের লক্ষ্য নিজের কূটনৈতিক উত্থানের ইঙ্গিত দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঘটনাক্রম নির্ধারণে ওয়াশিংটনের ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জ করা

কিভের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বেজিংয়ের আন্তর্জাতিক ভূমিকা পালনের প্রয়াস

এপ্রিল মাসের শেষের দিকে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অবশেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বহু প্রত্যাশিত সংযোগ স্থাপন করেন এবং বিশ্বকে জানান যে, তাঁর দেশ ‘সর্বদা শান্তির পাশে দাঁড়িয়েছে।’ গত বছর  ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে ইউক্রেনে বেজিংয়ের এটিই ছিল প্রথম সংযোগ স্থাপন এবং জেলেনস্কি এই সম্পৃক্ততার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন, বিশেষ করে মার্চ মাসে শি-র মস্কো সফরের পর। ইউক্রেন চিনকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী বলে মনে করে এবং এই ধারণা দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে ফোনে ‘দীর্ঘ ও অর্থবহ’ কথাবার্তা দ্বারা জোরালো হয়েছে। এর পাশাপাশি ইউক্রেন এমনটাও মনে করে যে, (এই কথোপকথন) ‘আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিকাশে একটি শক্তিশালী প্রেরণা জোগাবে।’ এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রীও পরামর্শ দেন যে কিভকে চিনের সঙ্গে নিজের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে হবে, যদিও তিনি চিনকে বন্ধু দেশ হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন।

চিনা প্রেসিডেন্ট বলেন যে চিন ‘একটি দায়িত্বশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসাবে এই সংঘর্ষের নীরব দর্শকও হবে না, সংঘর্ষের আগুনে ঘৃতাহুতিও দেবে না, আর সংঘর্ষের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের লাভ করার কথা তো দূর অস্ত!’ কিন্তু বেজিং যে আগামী দিনে কোনও অর্থবহ পদক্ষেপ করতে পারে, সে রকম কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এই ফোনকল এবং সংশ্লিষ্ট বার্তালাপের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সমস্যা সমাধানে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী একটি আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে চিনের  নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করা। চিনের এ হেন পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনকে সহায়তা জোগানো এবং যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে সমস্যাকে জটিলতর করে তোলার এক প্রতিক্রিয়াস্বরূপ। ইউক্রেন সঙ্কটের সময় চিন ইতিমধ্যেই তুরুপের তাসগুলিকে প্রকাশ্যে এনেছে। চিন ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে ইউক্রেন সঙ্কটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির বিষয়ে একটি ১২-দফা অবস্থানের নথি বা টুয়েলভ পয়েন্ট পজিশন পেপার প্রকাশ করেছে। নিজেকে একটি নিরপেক্ষ শান্তি সূচনাকারী হিসেবে উপস্থাপন করার প্রয়াসে বেজিং কয়েকটি আদর্শ নীতির কথা বলেছে, যার মধ্যে রয়েছে সব দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করা, শিল্প ও সরবরাহের শৃঙ্খল স্থিতিশীল রাখা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার-সহ একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করা। এই সিদ্ধান্তকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে চিন ইউক্রেনে বিশেষ প্রতিনিধি পাঠানো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই ফোনকল এবং সংশ্লিষ্ট বার্তালাপের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সমস্যা সমাধানে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী একটি আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে চিনের নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করা। চিনের এ হেন পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনকে সহায়তা জোগানো এবং যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে সমস্যাকে জটিলতর করে তোলার এক প্রতিক্রিয়াস্বরূপ।

তবে এই নীতিগুলির ঊর্ধ্বে উঠে চিনের ভাবমূর্তি শান্তি-নির্মাতা হিসাবে বৃহত্তর ভূমিকা পালনের পরিপন্থী। কারণ চিন দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে একই স্তরে তার সম্পর্ক বজায় রাখতে অস্বীকার করেছে। রাশিয়া তার আগ্রাসন থেকে পিছু হঠার কোনও রকম প্রবণতা দেখায়নি এবং ইউক্রেন আপাত দৃষ্টিতে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ মাত্রার পাল্টা আক্রমণ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার লক্ষ্য হল পূর্ব এবং দক্ষিণে দখল হয়ে যাওয়া অঞ্চলটি পুনরুদ্ধার করা এবং এমনটা করার জন্য ইউক্রেন এখন কয়েক মাস যাবৎ প্রস্তুতি নিচ্ছে। মস্কো পিছু হঠার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি এবং সম্ভবত তারা মনে করছে যে, তাদের কাছে অনেকটা সময় আছে এবং একই সঙ্গে তারা ইউক্রেনকে সমর্থনকারী পশ্চিমী ঐকমত্য ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী মনে করে যে, গত কয়েক মাসে পশ্চিমীরা যে পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করেছে, তা তাদের এই যুদ্ধের বাস্তবতাকে নিজেদের অনুকূলে আনতে অতি প্রয়োজনীয় গতিশীলতা প্রদান করবে।

চিনকে সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখাও অসম্ভব। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমশ সুদৃঢ় হচ্ছে। এবং ‘সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে কার্যকর ভাবে সমুন্নত রাখতে হবে’… এমন বিবৃতির পুনরুক্তি করা সত্ত্বেও বেজিং শুধুমাত্র রাশিয়ার ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকারই করেনি, বরং মস্কোর সঙ্গে তার অংশীদারিত্বের বিশেষাধিকার অব্যাহতও রেখেছে। যদিও মার্চ মাসে শি-র মস্কো সফরের ফলে রাশিয়ার কোনও বাস্তবিক সুবিধে না হলেও সফরটি পশ্চিমের কাছে এই ইঙ্গিত দিতে সমর্থ হয়েছে যে, চিন-রাশিয়া আঁতাত আন্তর্জাতিক ক্ষমতার ভারসাম্যকে এমন আকার দিতে পারে, যা পশ্চিমী স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর।

সর্বোপরি, ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষিতে চিনা অবস্থানের প্রধান লক্ষ্য হল পাশ্চাত্যের দেশগুলি। বিবৃতিতে বেজিং ‘ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতা’ ত্যাগ করার প্রয়োজনীয়তা এবং ‘সকল দেশের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থ ও উদ্বেগগুলিকে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা এবং যথাযথ ভাবে সমাধান করা উচিত’… এমন কথা বললেও এ কথা চিন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা মস্কোর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেকাংশে সহমত। রাশিয়ার মতো চিনও বিশ্বাস করে যে, নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) সম্প্রসারণের মাধ্যমে পশ্চিমের দেশগুলি এই যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। চিন রাশিয়ার উপর জারি করা পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞারও সমালোচনা করে বলেছে যে, ‘প্রাসঙ্গিক দেশগুলিকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা এবং লং আর্ম জুরিসডিকশন-এর অপব্যবহার করা বন্ধ করা উচিত, যাতে ইউক্রেন সঙ্কট হ্রাস করার ক্ষেত্রে তারাও নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারে।’ এই দু’টি বিষয়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চাপানউতোর বৃদ্ধির মাঝে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চিনের ভূমিকার দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চারপথের সূচনা করবে। চিনের জন্য স্পষ্টতই এই সঙ্কট যতটা না রাশিয়ার, তার চেয়ে নিজস্ব।

চিনকে সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখাও অসম্ভব। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমশ সুদৃঢ় হচ্ছে।

চিন যেহেতু তার কোভিড-প্ররোচিত বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে এসেছে, তাই দেশটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একটি স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক পরিবেশ পেতে আগ্রহী। কিন্তু পাশ্চাত্যের সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ অভিমুখের সুযোগ নিয়ে দেশটি অতীতের লজ্জাজনক কূটনৈতিক পরিসরে উদ্যোগী হয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে। অত্যন্ত অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরবকে একত্র করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে সে কথা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শান্তিসূচনাকারী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য চিনের প্রচেষ্টা বিশ্ব মঞ্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করার সমান। বেজিং ইউক্রেন সঙ্কটের চূড়ান্ত ফলাফলের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলতে সক্ষম না হলেও দেশটির কার্যকলাপ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, চিন তার ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক প্রবণতা প্রদর্শনে আর বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ করছে না।


প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মিন্ট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.