Published on Jan 12, 2023 Updated 0 Hours ago

সদ্যপ্রতিষ্ঠিত চিনের ভারত মহাসাগর অঞ্চল ফোরাম কি এই অঞ্চলে বৃহত্তর উপস্থিতির জন্য চিনের ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষার লক্ষণ?

বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান অভিযান: প্রথম চিন–ভারত মহাসাগর অঞ্চল ফোরাম

সেখানে ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ভারতের আবেদন সর্বসম্মতিতে গৃহীত হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া খুশি। আমরা একটি স্থায়ী আগ্রহ ভাগাভাগি করি: একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, নিয়মভিত্তিক ও নিরাপদ ইন্দো–প্যাসিফিক।’‌’‌

অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানটি পুনর্ব্যক্ত করেছে যে সেই দেশটির, এবং ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী অন্য অনেক রাষ্ট্রের, আইওআর–সম্পর্কিত ইস্যুতে চিন বা অন্য কোনও আঞ্চল–অতিরিক্ত শক্তির সঙ্গে সংযোগের যোগ্যতা পরিমাপক কী। তারা ইতিমধ্যেই সরকারি স্তরের ইন্ডিয়ান ওশন রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ)–এর সদস্য, যা দুই দশকেরও বেশি আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর একটি আনুষ্ঠানিক সনদ, চরিত্র ও কাঠামো আছে, এবং এর সভাপতিত্ব পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সদস্য দেশের কাছে যায়, ঠিক যেমনটি আঞ্চলিক/আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদর্শ।

ইউএসএড কি অনুপ্রেরণা?

জানা গেছে, কুনমিং কনক্লেভে যোগ দিয়েছিলেন মলদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসান মানিক এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাডপরবর্তী সময়ে চিনা বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে এটি একটি মিশ্র যোগাযোগ (‌হাইব্রিড এনগেজমেন্ট)‌ ছিল, যা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চায়না ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো–অপারেশন এজেন্সি (সিআইডিসিএ) দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল:‌ বর্তমানে এর নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক উপ–বিদেশমন্ত্রী লুও ঝাওহুই, যিনি কিছুদিন আগে পর্যন্ত ভারতে রাষ্ট্রদূত ছিলেন, এবং তার আগে পাকিস্তানে।

এই বছরের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা সফরের সময় চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ‘‌ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রগুলির উন্নয়ন’‌–এর জন্য ‘‌ঐকমত্য ও সমন্বয় গড়ে তোলা এবং অভিন্ন উন্নয়নের জন্য’‌ আরেকটি ফোরাম তৈরির প্রস্তাব/ঘোষণা করেছিলেন  পরে  চিনের বিদেশমন্ত্রক স্পষ্ট করেছে যে কুনমিং উদ্যোগ এই পরিকল্পনার একটি অংশতবে বর্তমান ফোরামের সব সদস্য দ্বীপরাষ্ট্র নয়, যেমন ওয়াং ই কলম্বোতে বলেছিলেন। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে কিছু রাষ্ট্র স্থলবেষ্টিত, ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী নয়।

মোটের উপর মনে হচ্ছে সিআইডিসিএ মার্কিন প্রশাসনের স্বাধীন উন্নয়নমূলক আর্থিক শাখা ইউএসএড দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে, এবং এর লক্ষ্য বিতর্কিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ–এর থেকে আরও এগিয়ে যাওয়া। সিআইডিসিএ–র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, সংস্থাটির লক্ষ্য বৈদেশিক সাহায্যের জন্য কৌশলগত নির্দেশিকা, পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন করা, প্রধান বৈদেশিক সহায়তা সমস্যাগুলির সমন্বয় করা ও পরামর্শ দেওয়া, বিদেশি সাহায্যের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলিতে দেশের সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রধান কর্মসূচিগুলি চিহ্নিত করা, তত্ত্বাবধান করা, মূল্যায়ন করা ও সেগুলির বাস্তবায়ন।

যা বোধগম্য নয় তা হল কেন চিন, যে ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি কোথাও অবস্থিত নয়, সে একটি সমান্তরাল আইওআর ফোরামকে উন্নীত করতে চায়, বিশেষ করে যখন সে আইওআরএর একটি ‘‌সংলাপ অংশীদার’‌

কুনমিং–এ একটি চিনা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিআইডিসিএ দেশগুলি ‘‌নীতিগত সমন্বয় জোরদার করতে, উন্নয়ন সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে, অভিঘাত ও বিপর্যয়ের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে, এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলির‌ স্থিতিশীল উপায়ে মস্য সম্পদ, নবায়নযোগ্য শক্তি, পর্যটন, ও শিপিং–এর মতো সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করতে’ সম্মত হয়েছেচিন তার তরফে, সিআইডিসিএ–র একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‌‘‌চিন ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে সামুদ্রিক বিপর্যয় প্রতিরোধ ও প্রশমন সহযোগিতা ব্যবস্থা স্থাপনের প্রস্তাব করেছে, এবং যাদের প্রয়োজন সেই দেশগুলিকে প্রয়োজনীয় আর্থিক, উপাদানগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।’‌’‌

বেজিং ‘‌ইউনানের সমর্থন নিয়ে চিন ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলির জন্য একটি নীল অর্থনীতির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব’‌ও করেছে। চিন, যে একটি চায়না–আফ্রিকা স্যাটেলাইট রিমোট সেন্সিং অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার স্থাপন করেছে, সে তার তরফে দেশগুলিকে ‘‌অপ্রথাগত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে, যাতে একটি ঐক্যবদ্ধ, সমান, ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশ্বিক উন্নয়ন অংশীদারি তৈরি করা যায়’‌।

সংলাপের সহযোগী

চিনা দাবি অনুযায়ী, কুনমিং সম্মেলনে অংশ নিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মলদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান, ইরান, ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, সেশেলস, মাদাগাস্কার, মরিশাস, জিবুতি ও অস্ট্রেলিয়া। সেদিক থেকে এটি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ২৩টি উপকূলবর্তী রাষ্ট্রের নিজস্ব সংস্থা ‘‌ইন্ডিয়ান ওশন রিম অ্যাসোসিয়েশন’‌ (আইওআর)–এর বিরুদ্ধে চিনের তরফে একটি পদক্ষেপ। আইওআর সদস্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ড, কমোরোস ও সোমালিয়া চিনের ‘‌পছন্দের আইওআর’‌ তালিকায় স্থান পায়নি। যা বোধগম্য নয় তা হল কেন চিন, যে ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি কোথাও অবস্থিত নয়, সে একটি সমান্তরাল আইওআর ফোরামকে উন্নীত করতে চায়, বিশেষ করে যখন সে আইওআর–এর একটি ‘‌সংলাপ অংশীদার’‌। আইওআরএ তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির অনুপস্থিতি তার কথাই বেশি করে তুলে ধরেছে। অন্য দুটি উপসাগরীয় দেশ—ইরান ও ওমান—উভয় সংগঠনেই আছে। আর ভাল বা খারাপ যাই বলা হোক, ভারতের উত্তর ভাগের স্থলসীমান্তের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও নেপাল, যারা আইওআরএ–র এর সদস্য নয়, তারাও চিনের ফোরামে রয়েছে। জিবুতি, যে আইওআরএ–র সদস্য নয়, আইওআর–এ যোগদান করেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইতালির পরে পিএলএ–নৌবাহিনীর ‘‌সমর্থন ঘাঁটি’‌ সহ চিন জিবুতিতে সামরিক উপস্থিতির ক্ষেত্রে নতুন প্রবেশকারী।

যুবরাজ ছাড়া হ্যামলেট

চিনা উদ্যোগটিকে তাই শুধু ২০১৫ সালে মরিশাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রূপরেখায়িত ভারতের ‘‌সাগর’‌ (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন)–এর সঙ্গে তুলনা করা এবং প্রতিযোগী হিসাবে দেখা যেতে পারে। ভারতীয় ধারণাটি দেশের ‘‌প্রতিবেশী প্রথম’‌ নীতি এবং ‘‌প্রকল্প মৌসম’‌ ও ‘‌ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল সারভাইলেন্স সিস্টেম’‌ (এখন মলদ্বীপের সাথে ভাগ করা)–এর মতো উদ্যোগগুলির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়, যেগুলি সবই ভারত মহাসাগরে সীমাবদ্ধ, যেখানে চিনের বিপরীতে ভারত বৈধভাবে অন্তর্গত।

অন্যদিকে, চিনের উদ্যোগটি ভারতের বিরুদ্ধে এক ধরনের বিলম্বিত বদলা বলে মনে হচ্ছে, কারণ চিনের বহু–আঞ্চলিক ‘‌বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’‌ (বিআরআই)–এর অংশ হওয়ার জন্য চিনা আমন্ত্রণ ভারত প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং এর উদ্বোধন থেকে দূরে ছিল ‘‌সার্বভৌমত্ব, পদ্ধতিগত ও নেতৃত্বের সমস্যা’র কথা উল্লেখ করে। বিশেষ করে নয়াদিল্লির আপত্তির কারণ ছিল এই  যে পাকিস্তানে বিআরআই অর্থায়নকৃত ‘‌চিন–পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর’‌ (সিপিইসি) প্রকল্পগুলি এমন ভূখণ্ডের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল যা মূলত ভারতীয় (পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর বা পিওকে)।

ঘটনাটা অবশ্য আশ্চর্যজনক নয়, কারণ চিন সেই ২০১৫ সালেই দাবি করেছিল যে ‘‌ভারত মহাসাগর ভারতের মহাসাগর নয়’‌ এমন সময়ে তারা এই দাবি করেছে যখন এমনকি দক্ষিণ চিন পূর্ব চিন সাগরের অঞ্চলগুলির উপর দাবি প্রতিষ্ঠা করতে তারা ব্যস্ত ছিল

যাই হোক, ভারত ছাড়া একটি আইওআর ফোরাম কিন্তু যুবরাজ ছাড়া হ্যামলেটের মতো। ঘটনাটা অবশ্য আশ্চর্যজনক নয়, কারণ চিন সেই ২০১৫ সালেই দাবি করেছিল যে ‘‌ভারত মহাসাগর ভারতের মহাসাগর নয়’‌এমন সময়ে তারা এই দাবি করেছিল যখন এমনকি দক্ষিণ চিন ও পূর্ব চিন সাগরের অঞ্চলগুলির উপর দাবি প্রতিষ্ঠা করতে তারা ব্যস্ত ছিল, যেন সেগুলি চিনের একচেটিয়া ব্যাকওয়াটার, যদিও তা নয়।

একভাবে, এ সবই চিনের অন্তহীন লোভকে প্রতিফলিত করে। এটি চিনের এই অভিপ্রায় ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে যে নাগাল ও পৌঁছের ক্ষেত্রে সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো হবে, এবং সেইভাবে ভূ–অর্থনৈতিক, ভূ–রাজনৈতিক ও ভূ–কৌশলগতভাবেও মার্কিন দেশের সঙ্গে তুলনীয় হয়ে উঠবে। পূর্ববর্তী শতাব্দীর প্রথমার্ধে দুটি ‘‌মহাযুদ্ধের’‌ কারণে সৃষ্ট ঐতিহাসিক ইউরোপীয় বাধ্যবাধকতার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বর্তমান অবস্থানের বেশিরভাগ অর্জন করেছিল, যদিও যুদ্ধগুলো সে বাধায়নি। ওয়াশিংটন এই ভিত্তিটির উপর তার কৌশলগত স্থাপনা তৈরি করে চলেছে, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় এবং তার পরেও, প্রথমে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম এবং এখন চিনের মতো ‘‌সর্বকর্তৃত্ববাদী’‌ শক্তিকে প্রতিরোধের নামে। তবে যেখানে যেখানে সে পা ফেলেছে সেই সমস্ত দেশ ও অঞ্চলগুলি এর সবটাকে স্বাগত জানায় না।

দেরিতে সূচনাকারী, এবং ‘‌উদারপন্থী পশ্চিম’‌-এর পূর্ববর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েতের  থেকে ভিন্ন চিন কিন্তু তার শীর্ষে যাওয়ার পথটি বুলডোজ করে তৈরি করতে চাইছে, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়। কুনমিং উদ্যোগটি এর একটি অংশ, এবং এটি একটি সন্দেহভাজন প্রয়াস, কারণ বেজিং এমন দেশগুলির প্রাক্তন নেতাদের উপর বাজি ধরছে যাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভবিষ্য চিন তৈরি করতে চায়। স্পষ্টতই এর দ্দেশ্য যদি তারা বা তাদের মিত্ররা নির্বাচিত গণতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে ফিরে আসে তবে চিন তখন প্রতিদান পাবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.