Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 17, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারতের জন্য সংশ্লিষ্ট মাথাব্যথার প্রধান কারণ হল পারমাণবিক ক্ষেত্রে চিনের প্রয়াস।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক বি(শৃঙ্খলা) তৈরির নেপথ্যকাহিনি

পারমাণবিক বি(শৃঙ্খলা) আসলে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ধরন দ্বারা আকার পায়। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার কাঠামোগত স্তরে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলিও এ বার প্রকাশ্যে উঠে আসছে, যা বর্তমান প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ফাটল সৃষ্টি করছে। এক দিকে চি, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের একটি অক্ষ বিদ্যমান, যা পারমাণবিক ব্যবস্থাকে অমান্য করছে এবং অন্য দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (মার্কিন) পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার লক্ষ্যে ব্রতী হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, মস্কো ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমী সমর্থনের বিরুদ্ধে নিজের পারমাণবিক মতবাদ পুনর্গঠন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চলতে থাকা নিয়মের ভাঙ্গাগড়ার মাঝেই বিদ্যমান পারমাণবিক ব্যবস্থাটি বিশ্বকে এক খাদের কিনারায় ঠেলে দিচ্ছে। এই সমস্যার মূলে রয়েছে আস্থার ঘাটতি, পারমাণবিক আধুনিকীকরণের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিয়মের অবক্ষয় এবং মূল শক্তিগুলির মধ্যে প্রতিরোধের পরিবর্তিত সমীকরণ।

পুতিন ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করে প্রচলিত সামরিক আগ্রাসনের আকারে নিজের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং পরিকল্পনা অনুসরণ করতে পারমাণবিক অস্ত্রের ঢাল ব্যবহার করেছেন।

ইউক্রেনের সংঘাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার মধ্যে ইতিমধ্যেই তৈরি হওয়া আস্থাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে ভেঙে পড়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৩ সালের শুরুর দিকে ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁর দেশ ভবিষ্যতে পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু না করার প্রতিশ্রুতির হ্রাস ঘটাবে এবং নিউ স্টার্টের কিছু বিধানের বাস্তবায় স্থগিত করবে। পারমাণবিক বিপ্লবের ভিত্তিগত অনুমান - যা পারমাণবিক অস্ত্রগুলি সংঘর্ষকে বাধা দেয় - বিশেষত অ-পারমাণবিক ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকি পদ্ধতির (ভয় দেখানোর জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি প্রদান) দরুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাশিয়ার পারমাণবিক মতবাদ আসলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সংঘাত শুরু করার ক্ষেত্রে নিজের পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) সদস্য রাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততাকে বাধা দেওয়ার সঙ্গে সম্পূর্ণ মানানসই। এটি দশকব্যাপী কার্যকর পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞার হ্রাস ঘটিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে কোন সংঘাত ও প্রতিযোগিতার জন্য নেতিবাচক নজির স্থাপন করেছে। সংক্ষেপে বললে, যুদ্ধক্ষেত্রের সীমানার প্রসার ঘটানোর জন্য রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া একটি -পারমাণবিক অস্ত্র রাষ্ট্রকে বৃহৎ শক্তির প্রক্সি  যুদ্ধের একটি বোড়েতে পরিণত করেছে, যার দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি মারাত্মক

ইতিমধ্যে, চিন তার পারমাণবিক অস্ত্রাগারের আধুনিকীকরণ চালিয়ে যাচ্ছে, যার লক্ষ্য হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংখ্যাগত পরিসরভিত্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। মার্কিন নেতৃত্বাধীন স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি চিপারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। পুতিন আবারও পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রও পারমাণবিক শক্তির গুণগত ও পরিমাণগত আধুনিকীকরণের চেষ্টা করবে। এই সব কিছুই অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রশমিত করার জন্য কোনও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অনুপস্থিতিতে রুশ এবং চিনা পারমাণবিক শক্তির নিরিখে এক তীব্র নিরাপত্তা সংশয় তৈরি করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া চি-সহ প্রধান পরমাণু শক্তিগুলির পক্ষ থেকে পারমাণবিক পরীক্ষার উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার এ হেন ভঙ্গি পারমাণবিক ব্যবস্থার আদর্শগত ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেবে। পারমাণবিক আদেশ এবং নিয়ন্ত্রণে উদীয়মান প্রযুক্তির সমন্বিতকরণ কৌশলগত স্থিতিশীলতার উপরেও প্রভাব ফেলবে, যা সব রাষ্ট্রকে নিরাপত্তা সঙ্কটের  অন্তহীন আবর্তে ঠেলে দেবে।

পারমাণবিক বিপ্লবের ভিত্তিগত অনুমান - যা পারমাণবিক অস্ত্রগুলি সংঘর্ষকে বাধা দেয় - বিশেষত অ-পারমাণবিক ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকি পদ্ধতির (ভয় দেখানোর জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি প্রদান) দরুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

পুতিন ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করে প্রচলিত সামরিক আগ্রাসনের আকারে নিজের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং পরিকল্পনা অনুসরণ করতে পারমাণবিক অস্ত্রের ঢাল ব্যবহার করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ আগ্রাসনের সুবিধার্থে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যবহারের বিষয়ে দেশগুলির জন্য এক নজির স্থাপন করেছে। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার সহ এ বার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সীমারেখা হ্রাস দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। তাই রাশিয়ার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ইরান এবং উত্তর কোরিয়া নিজেদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ইউরোপে ইন্দো-প্যাসিফিকের মার্কিন মিত্রদের উপরও চাপ আসতে চলেছে, যারা ট্রাম্পের বিনিময়বাদের যুগে পারমাণবিক অস্ত্রের যুক্তিকে আরও বেশি আকর্ষ বলে মনে করবে। পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ থেকে শুরু করে জাপান ও দক্ষিণ  কোরিয়া পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্রের কৌশলগত উপযোগিতা নিয়ে বিতর্ক তীব্রতর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতের জন্য সংশ্লিষ্ট মাথাব্যথার প্রধান কারণ হল পারমাণবিক ক্ষেত্রে চিনের প্রয়াস। এটি অস্থিতিশীল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার প্রেক্ষিতে ভারতের পারমাণবিক কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গির উপর চাপ সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের হুমকি ভবিষ্যতে আসলে চিনকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভারতকে উত্যক্ত করতে ও ভবিষ্যতে প্রচলিত ধারার জরুরি প্রয়োজনে ভারতের বিকল্পগুলিকে সীমিত করার জন্য চিন সীমান্ত সংঘাতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক প্রশাসন ভেঙে যাওয়া এবং নতুন শক্তিদের পারমাণবিক প্রতিযোগিতায় যোগদান নয়াদিল্লিকে এক জনাকীর্ণ প্রতিবেশের অংশ করে তুলবে, যেখানে একাধিক পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের কৌশলগত পরিবেশের মধ্য দিয়ে ভারতের পথ খুঁজে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +