Published on Oct 25, 2024 Updated 0 Hours ago
ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের মধ্যে বাস্তববাদ ও আদর্শের ভারসাম্য

জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি)-‌র অনুরা কুমারা দিসানায়েকে শ্রীলঙ্কার নবম একজিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নতুন সরকারের বিদেশনীতি নিয়ে জল্পনা চলছে। অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তববাদকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে — সেক্ষেত্রে ভারত ও চিনের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ভারসাম্য বজায় রাখবে। সুশাসন ও সংস্কারের জন্য নতুন জমানার অনুসন্ধান দীর্ঘমেয়াদে ভারতকে উপকৃত করবে।

১৯৬০-এর দশকে সূচনাকালে, জেভিপি একটি কট্টর ভারতবিরোধী সংগঠন ছিল, যার আদর্শ ছিল মার্কসবাদ ও সিংহলি জাতীয়তাবাদ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় "সম্প্রসারণবাদ"-‌এর বিরুদ্ধে লড়াই করা ছিল এর মূল আদর্শগত বিষয়গুলির মধ্যে একটি। ১৯৭১ সালে শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এর প্রথম বিদ্রোহ দ্রুত শেষ হয়। সে সময় শ্রীলঙ্কা সরকারের অনুরোধে ভারত কলম্বো বিমানবন্দরকে সুরক্ষিত করে এবং সমুদ্রে টহল দেয়। যাই হোক, ১৯৮৭-১৯৯০-‌এর দ্বিতীয় বিদ্রোহটি ছিল আরও বেশি ভারতবিরোধী। সেই সময় জেভিপি ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সেই চুক্তিটির বিরোধিতায় নেমেছিল যা শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী (আইপিকেএফ) মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছিল।


অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তববাদকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে — সেক্ষেত্রে ভারত ও চিনের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ভারসাম্য বজায় রাখবে।



যদিও জেভিপি এরপর তার সশস্ত্র সংগ্রাম পরিত্যাগ করেছিল এবং ১৯৯৪ সালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিল, এটি মানুষের কাছে একটি অ-প্রথাগত পছন্দ ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক সঙ্কট ও ২০২২-‌এর আরাগাল্যা আন্দোলনের সময় দিসানায়েকে ঐতিহ্যবাহী অভিজাতদের থেকে বিমুখ জনগণের জন্য একটি জনপ্রিয় পছন্দ হিসাবে আবির্ভূত হন। জেভিপি-র ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ভারতকে এই দলটির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বাড়াতে বাধ্য করেছে। নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটার সম্ভাবনার তাৎপর্য এই ছিল যে ভারত সমস্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছিল। দিল্লি দিসানায়েকেকে একটি সরকারি সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় শ্রীলঙ্কার সব দলের নেতাদের (জেভিপি-‌সহ) সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

ভারতের বাস্তবসম্মত সম্পৃক্ততা তার নেবারহুড ফার্স্ট নীতি এবং এই অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা ও বৃদ্ধি (সাগর) দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। শ্রীলঙ্কার ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য বৃদ্ধির সাথে সাথে ভারত তার সুবিধার জন্য সংযোগের উপর জোর দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, দ্বীপরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় ভারত ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করেছিল। ফলস্বরূপ, ভারত শ্রীলঙ্কায় বিমানবন্দর ও সামুদ্রিক বন্দরগুলি পরিচালনা ও আপগ্রেড করবে, ত্রিনকোমালি অঞ্চলের উন্নয়ন ঘটাবে, এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্প, তেল শোধনাগার, একটি শক্তি গ্রিড ও একটি দ্বি-অভিমুখী পেট্রোলিয়াম পাইপলাইনে বিনিয়োগ করবে৷ একাধিক ভারতীয় সংস্থা শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগে (এসওই) বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং ভারত ও শ্রীলঙ্কা একটি স্থলসেতু এবং অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি সহযোগিতা চুক্তি (ইটিসিএ) নিয়েও আলোচনা করছে৷

তাদের পক্ষ থেকে জেভিপি বোঝে যে ঠান্ডা যুদ্ধ-যুগের জোট ও অনুষঙ্গ সমসাময়িক বিশ্বব্যবস্থায় সামান্যই অর্থবহ। এই উপলব্ধি নির্বাচনের আগেও ছিল এবং ‌তা ভারতের দিকে এর এগিয়ে আসাকে জোরদার করেছে। এটি স্বীকার করে যে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি দেশটিকে তার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। দিসানায়েকের ইসতেহারে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি — যেমন শ্রীলঙ্কাকে একটি মেরিটাইম হাব, একটি বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র এবং একটি আঞ্চলিক লজিস্টিক ম্যানেজমেন্ট হাব হিসাবে গড়ে তোলা — ভারতের সঙ্গে তার সংযোগের উপর নির্ভর করবে। দিসানায়েকে পর্যটন ও তথ্যপ্রযুক্তি আয়ের উন্নতি করতে চান, যার জন্য ভারত আবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে প্রমাণিত হবে। সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সুবিধার এই ক্রমবর্ধমান গুরুত্বই জেভিপি-‌কে ভারতের উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল হতে প্ররোচিত করেছে, এবং সেই কারণেই এর ইসতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশের স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথ কোনও দেশের, বিশেষ করে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বা ঝুঁকির কারণ হয় এমন কোনও ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না।


দিসানায়েকের ইসতেহারে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি — যেমন শ্রীলঙ্কাকে একটি মেরিটাইম হাব, একটি বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র এবং একটি আঞ্চলিক লজিস্টিক ম্যানেজমেন্ট হাব হিসাবে গড়ে তোলা — ভারতের সঙ্গে তার সংযোগের উপর নির্ভর করবে।



এটি বলেছে, নতুন সরকার চিনের সঙ্গেও সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখবে। বেজিং অবশ্যই নতুন শাসনের কমিউনিস্ট ঝোঁককে কাজে লাগিয়ে তার সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করবে। দিল্লি সফরের আগে দিসানায়েক বেজিং সফর করেছিলেন; নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের চিনা প্রতিনিধিও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং শ্রীলঙ্কার অন্যতম বৃহত্তম ঋণদাতা হিসাবে বেজিং ভারত মহাসাগরে তার স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারের সঙ্গে জড়িত থাকবে। বিনিয়োগ ও সহায়তা করার এই ক্ষমতা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অব্যাহত রাখবে।

তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রেখে নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় সরকারের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা আরও বেশি চাপের মুখে পড়বে। দিসানায়েকের লক্ষ্য হল সমস্ত বিদেশী বিনিয়োগের জন্য একটি কড়া ও স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়া ব্যবহার করা, গুরুত্বপূর্ণ এসওই-এর বেসরকারিকরণ এড়ানো, বিদেশী ঋণের উপর বিস্তারিত ঋণ নিরীক্ষা করা, এবং এই ঋণের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি  ব্যবস্থা গ্রহণ করা। স্বল্পমেয়াদি ভিত্তিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ এসওই এবং সেখানে বিনিয়োগের জন্য বর্তমান ভারতীয় ও চিনা প্রতিযোগিতার জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। আদানি জ্বালানি প্রকল্প স্থগিত করার আহ্বান একটি উদাহরণ।

যাই হোক, দীর্ঘমেয়াদে ঋণের যাচাই-বাছাই এবং নতুন বিনিয়োগের শর্তগুলি (যদি বাস্তবায়িত হয়) বেজিংয়ের সঙ্গে ভালভাবে সারিবদ্ধ হওযার সম্ভাবনা নেই, কারণ চিন সিস্টেমিক ত্রুটিগুলিকে কাজে লাগায়, দুর্নীতির প্রসার ঘটায় এবং অস্বচ্ছ ঋণ দিয়ে থাকে। বিপরীতে, এটি ভারত এবং এর সমমনস্ক অংশীদারদের জন্য আরও উপকারী হতে পারে, যারা প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের শাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে সত্যিই আগ্রহী।



এই ভাষ্যটি প্রথম হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.