Author : Mahdi Ghuloom

Published on Apr 10, 2025 Updated 1 Days ago
২০২৪ সালে বেড়েছে বাহরাইনের ক্ষমা প্রদানের ঘটনা: প্রসঙ্গ পুনর্বাসন ও ন্যায়বিচার

২০২৪ সাল জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি ও জাতীয় অনুষ্ঠান
দ্‌যাপনের সময়ে চার দফায় বাহরাইনের রাজা মোট ৩,৪৮২ জন বন্দিকে ক্ষমাপ্রদান করেছেন। বাহরাইনে ক্ষমাপ্রদানের ঘটনায় এটি এক উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিকেই দর্শায়। অনেকেই সঠিক ভাবে এ হেন ক্ষমাপ্রদানের ঘটনাপ্রবাহকে বাহরাইনের অনন্য রাজনৈতিক গতিপথের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করেছেন, যেমনটা মূল্যায়ন করা হয়েছে এই প্রতিবেদনেও

তা সত্ত্বেও কথাও লক্ষ্যণীয় যে, জাতীয় এবং/অথবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বন্দিদের ক্ষমা করার ঐতিহ্য উপসাগরীয় অঞ্চলে কিছুটা রাজনৈতিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে সৌদি আরব পবিত্র রমজান মাসে এই ধরনের ক্ষমাপ্রদানের কথা ঘোষণা করেছিল। আবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) এবং কাতার একই পথে হেঁটেছিল। নবীর জন্মদিনের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে ২০২৪ সালে ওমান ক্ষমা ঘোষণা করেছিল। ইতিমধ্যে একই বছরে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার এবং কুয়েতে জাতীয় দিবস উদ্‌যাপনের সময়ে ক্ষমাপ্রদানের ঘটনা ঘটেছে।

এই ধরনের ক্ষমাপ্রদান সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধান বা রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সূচনা করা হয় এবং ঘোষিত হয়, যা বন্দিদে তাঁদের পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকেই দর্শায়। তবে বেশ মজার বিষয় হল, সামাজিক নিরাপত্তা পুনর্বাসনের উদ্বেগ না থাকায় নাগরিকরা এই ধরনের ক্ষমাপ্রদানের ঘটনাকে প্রতিরোধ করার পরিবর্তে ব্যাপক ভাবে স্বাগত জানায়। এটি উপসাগরীয় দেশগুলির পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানগুলির উপর উচ্চ স্তরের আস্থার পাশাপাশি এই অঞ্চলের সামাজিক চুক্তির প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করাপ্রয়োজনীয়তাকেও দর্শায়।

শুধু বড় আকারের ক্ষমাপ্রদানই নয়, পুনঃসমন্বিতকরণবটে

২০২৪ সালে বাহরাইনে সবচেয়ে বড় ও প্রথম দফার ক্ষমাপ্রদান ঘোষণা হয়েছিল এপ্রিলে রমজান মাসে, যেখানে ঈদ-অল ফিতর উদ্‌যাপনের আগে ১,৫৮৪ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই ক্ষমাপ্রদানের ঘটনা বাহরাইনের নাগরিক সমাজের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আগের বছর একই উপলক্ষে মাত্র ২৮১ জন বন্দিকে ক্ষমা করা হয়েছিল ঈদ-অল ফিতরের জন্য  ন্দিদের ক্ষমা করার প্রথা থাকলেও ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরের সময়কালে এই সংখ্যা মাত্র ১৫৪ থেকে ২৮১ জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

তবে বারের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ক্ষমাপ্রাপ্ত বন্দিদের শ্রমবাজারে সমন্বিতকরণ সুনিশ্চিত করার জন্য প্রকাশিত সরকারি নির্দেশিকা। যে মাসে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছিল, ঠিক সেই মাসেই স্বরাষ্ট্র ও শ্রম মন্ত্রক (মিনিস্ট্রিজ অফ ইন্টিরিয়র অ্যান্ড লেবার) সরকারি বেকারত্ব কর্মসূচিতে ক্ষমাপ্রাপ্তদের বিমা প্রদান করার ব্যবস্থার কথাও ঘোষণা করেছিল। শ্রম মন্ত্রক লেবার ফান্ড ও তামকিনের মতো অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক উদ্যোগের রূপরেখাও তুলে ধরেছে, যাতে রাজকীয় ক্ষমাপ্রাপ্তদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়।

ক্ষমাপ্রদানকে পুনর্মিলন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করে বাহরাইন হয়তো এই অপরাধের মূল কারণগুলি মোকাবিলা করার জন্য একটি বাস্তবসম্মত প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

তবে এ কথাও উল্লেখ্য যে, ছোটখাটো অপরাধের জন্য গ্রেফতার করা ন্দিদেক্ষেত্রে এই ক্ষমা ঘোষণা করা হয়নি। কারণ সরকার উল্লেখ করেছে যে, মুক্তিপ্রাপ্তদের অনেকেই মূলত সহিংস অপরাধ বা জনসাধারণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল।’ এক সরকারি মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ (যে দফায় ,৫৮৪ জনকে ক্ষমাপ্রদান করা হয়েছে) দাঙ্গা সম্পর্কিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, অন্যান্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রের বিপরীতে হেঁটে - যেখানে ক্ষমাপ্রদানকে প্রাথমিক ভাবে প্রতীকী হিসাবে দেখা হয় - বাহরাইনের দৃষ্টিভঙ্গি গভীর রাজনৈতিক অগ্রাধিকারকেই দর্শায়। ক্ষমাপ্রদানকে পুনঃসমন্বিতকরণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করে বাহরাইন হয়তো এই অপরাধের মূল কারণগুলি মোকাবিলা করার জন্য একটি বাস্তবসম্মত প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

বাহরাইনের সকলের জন্য উদ্‌যাপন: সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন

২০২৪ সালের জুন মাসে ঈদ-অল আযহা উপলক্ষে বাহরাইনের রাজকীয়  ক্ষমাপ্রদানের দ্বিতীয় দফায় ৫৪৫ জন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষই মনে করেছিলেন যে, এই দ্বিতীয় দফাই হয়তো ২০২৪ সালের শেষ ক্ষমাপ্রদানের ঘটনা। তবে ডিসেম্বর মাসে জাতীয় দিবস উপলক্ষে আবার ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এবং সবচেয়ে বড় কথা, ডিসেম্বর মাসে ৮৯৬ জন বন্দিকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণার আগে সেপ্টেম্বর মাসেও আর কটি ক্ষমাপ্রদানের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সময়ে রাজার রজতজয়ন্তী (রাজা হিসেবে তাঁর শাসনের ২৫ বছর) উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে ৪৫৭ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালে ক্ষমার পরিমাণ ও মাত্রা স্বাভাবিক ভাবেই অনেককে অবাক করেছেতবে এটি দেশটির জন্য রজতজয়ন্তীর গুরুত্ব মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার বার্তাকেই দর্শায়। দেশের নেতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই এই বার্তা দিতে চেয়েছেন।

তবুও এই ক্ষমাপ্রদানের ঘটনাপ্রবাহকে মূলত মানবিক কারণের জন্য দ্‌যাপন করা জরুরি। তবে এই ঘটনাপ্রবাহের দরুন রাষ্ট্রের উপর থেকে এখন যে বোঝা হ্রাস পেয়েছে, সেই কারণেও এই ক্ষমাপ্রদানের বিষয়টি দ্‌যাপন করা গুরুত্বপূর্ণ। বাহরাইনে এখন প্রায় ৩,৫০০-এরও কম ন্দি রয়েছেন, যা সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ সঙ্কট-সহ একাধিক সঙ্কটের পর অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পথে চালিত করার জন্য দেশটির আর্থিক পরিকল্পনায় অবদান রাখতে পারে (দ্য গার্ডিয়ান এই ঘটনাপ্রবাহকে ‘পরিবর্তন’ বলে বর্ণনা করেছে)। এ হেন মুক্তির ঘটনা আসলে ‘বাহরাইনের জন্য তার বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তি উন্নত করা, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করার একটি সুযোগকেও দর্শায়’

বাহরাইনে এখন প্রায় ৩,৫০০-এরও কম ন্দি রয়েছেন, যা সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ সঙ্কট-সহ একাধিক সঙ্কটের পর অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পথে চালিত করার জন্য দেশটির আর্থিক পরিকল্পনায় অবদান রাখতে পারে

বাহরাইনের জন্য এই ক্ষমাপ্রদানের ঘটনা কেবল সদিচ্ছা নয়, বরং আর্থিক বোঝা কমানো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়ার জন্য একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ এবং বিশেষ করে তা এমন একটি দেশের জন্য তো বটেই, যেখানে নিজের উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের তুলনায় বাহরাইন স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এ প্রসঙ্গেই এ বিষয়টিও অবশ্যই ক্ষ্যণীয় যে, রাজনৈতিক ঝুঁকি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি প্রধান নির্ণায়ক উপাদান। বাহরাইন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নিজের দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করার জন্য ব্যাপক ভাবে কাজ করলেও সন্দেহবাদী বিনিয়োগকারীরা সর্বদা দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশের উপর নজর রাখবেন। এত সংখ্যক বন্দিকে মুক্তি দিয়ে বাহরাইন বিনিয়োগকারীদের কাছে এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাই প্রেরণ করছে যে, পুনর্বাসনমূলক অনুশীলনের উপর বাহরাইনের আস্থা রয়েছে এবং এক সময় যে অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল, মূলত দেশটির পুনর্বাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতার কারণে তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা আর নেই। কারণ দেশটির ক্ষমতা দ্রুত রূপান্তরিত অর্থনীতি প্রাক্তন বন্দিদের সমাজে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।

যুব প্রজন্মের জায়গা কারাগার হতে পারে না’: বাহরাইন আস্থা রাখছে বিকল্প শাস্তির প্রতি

২০২৪ সালে এ হেন ক্ষমাপ্রদানের ঘটনার দরুন যা সম্ভবত আড়ালে চলে গিয়েছে, তা হল বাহরাইনের বিকল্প শাস্তির অনুশীলনের প্রচেষ্টা। রয়টার্সের মতে, বাহরাইন ২০১৭ সালের বিকল্প সাজা আইনের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে। এই আইনের ফলে যে সব বন্দি কমপক্ষে অর্ধেক কাল সাজা কারাগারে কাটিয়েছেন, তাঁরা কমিউনিটি সার্ভিস, পুনর্বাসন কোর্স এবং ইলেকট্রনিক নজরদারি-সহ বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাইরে সেই সাজা সম্পূর্ণ করতে পারবেন। রয়টার্স এ ক্ষেত্রে সরকারি যোগাযোগ অফিসের বিবৃতি তুলে উল্লেখ করেছে, ‘২০১৭ সালে সূচনা হওয়ার পর থেকে বিকল্প শাস্তিপ্রদান কর্মসূচির দরুন বাহরাইনের প্রায় ৬,৫০০ বন্দি উপকৃত হয়েছেন।’

বিকল্প শাস্তি সংক্রান্ত নীতিতে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও বাহরাইন একটি ওপেন প্রিজনস প্রোগ্রাম বা উন্মুক্ত কারাগার কর্মসূচিও চালু করেছে। এটি আমেরিকান কারেকশনাল অ্যাসোসিয়েশন বা মার্কিন সংশোধনমূলক সমিতি (এসিএ) তরফে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বাহরাইনের বিদেশমন্ত্রীর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এই ধরনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রথম দেশ হল বাহরাইন। এই ধরনের সংশোধনাগারে ভাল আচরণ কম ঝুঁকিপূর্ণ ভাবমূর্তিসম্পন্ন যোগ্য বন্দিদের আরও নমনীয় স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ প্রদান করা হয়। এ হেন বন্দিদের কেন্দ্রের ভিতরে চলাচলের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাঁদের দক্ষতা বিকাশের জন্য বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষামূলক কর্মসূচির সুযোগ প্রদান করা হয়।

ইন্টিরিয়র মিনিস্ট্রি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে ভার্ডিক্ট এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড অল্টারনেটিভ সেন্টেন্সিং-এর ডিরেক্টর জেনারেল (রায় প্রয়োগ বিকল্প শাস্তি বিভাগের মহাপরিচালক) শেখ খলিদ বিন রশিদ আল-খলিফার মতে, ন্দিদের পুনর্বাসনে ওপেন প্রিজনস প্রোগ্রাম ৯৭.৫% সাফল্য অর্জন করেছে, যার মধ্যে ৭,৬০০ জনেরও বেশি পরিবার এখন পর্যন্ত এর সুবিধা লাভ করেছে। সুবিধাভোগীরা গালফ ইউনিভার্সিটি ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি-সহ বাহরাইনের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে আংশিক সম্পূর্ণ বৃত্তিও পান। সর্বোপরি, তাঁরা দেশের উদ্ভাবনী অভিযানে অবদান রাখছেন। এ হেন সুবিধাভোগীরা গাড়ির ট্র্যাফিক দ্বারা চালিত বায়ু টারবাইন, কৃষি বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য যন্ত্র এবং নির্মাণ ঠিকাদারদের জন্য কাঠের বিকল্প ফাইবারগ্লাস তৈরির প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন। এটিও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বৈচিত্র্যকরণ অভিযানে অবদান রেখে বাহরাইনের অর্থনীতিতে আর্থিক বোঝা কমাতে সাহায্য করবে।

সুবিধাভোগীরা গালফ ইউনিভার্সিটি ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি-সহ বাহরাইনের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে আংশিক সম্পূর্ণ বৃত্তিও পান।

বাহরাইন তার বিকল্প শাস্তিমূলক কর্মসূচির জন্য গর্বিত এবং রাজা এটিকে  এমন এক উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর এই বিশ্বাসকেদর্শায় যে, যুব প্রজন্মের জায়গা কারাগার হতে পারে না’এই অঞ্চলে এই ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী প্রথম দেশ হয়ে ওঠার দরুন বাহরাইন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জন্য একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে। এটি এমন এক সময় ঘটেছে, যখন ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস-এর (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ের সঙ্গে বাহরাইন সম্পৃক্ততা সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে এবং আপাতদৃষ্টিতে এই কর্মসূচির কারণেই সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার অগ্রাধিকার অবশ্য প্রয়োজন এ হেন দেশের তালিকা থেকে বাহরাইনকে বাদ দিয়েছে। সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘মানবাধিকার অগ্রাধিকার প্রয়োজন এ হেন দেশের তালিকা থেকে বাহরাইনকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি বেশ কয়েক বছর ধরে আসলে এই ক্ষেত্রে দেশটির ধারাবাহিক অগ্রগতির প্রতিফলন। সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রও বাহরাইনের এ হেন কর্মসূচিকে প্রত্যক্ষ ভাবে সমর্থন করেছে।’

বিদেশে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষায় শিক্ষা প্রদান-সহ এক স্থায়ী পরিবর্তন

অবশেষে ‘সিটিজেনস ফর বাহরাইন নামে একটি নাগরিক সামাজিক গোষ্ঠীর মতে, সাম্প্রতিক সংস্কারগুলি ২০০১ সালের জাতীয় সনদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এবং ২০১১ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার চ্যালেঞ্জের প্রতিক্রিয়ায় তা বিকশিত হতে শুরু করে ও স্থায়ী পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন করে। এই পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে এ কথা সুনিশ্চিত করা যে, ন্দিদের প্রকৃতপক্ষে পুনর্বাসন দেওয়া হচ্ছে এবং যে অপরাধের কারণে তাঁদের কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, রাজার রজতজয়ন্তী শেষ হওয়ার পর বাহরাইনের নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ার আগে সেই সব কারণের সমাধান করা হচ্ছে।

আগামিদিনে বাহরাইন এই অঞ্চলের জন্য একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করতে পারে এবং সমগ্র অঞ্চলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকগুলিকে একই ধরনের কর্মসূচি উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারে, যা তারা দ্রুত বাস্তবায়ন করেছে। ইতিমধ্যেই, বাহরাইন নিজের ওপেন প্রিজনস কমপ্লেক্সে অন্যান্য দেশের তরফে সর্বোচ্চ প্রতিনিধিদের, বিদেশে অবস্থানরত দেশীয় রাষ্ট্রদূতদের জন্য সফরের আয়োজন করেছে। এই ধরনের সফর বাহরাইনের রাষ্ট্রদূতদের বিশ্ব জুড়ে তার অংশীদারদের কাছে সংশোধনমূলক অনুশীলনে অগ্রণী বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এই অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে বাহরাইনের মনোভাব থেকে উপকৃত হতে পারে, বিশেষ করে যখন অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বাহরাইনের এ হেন পদক্ষেপের প্রভাব লক্ষ করা যায়কারণ সমস্ত উপসাগরীয় দেশ ব্যয় হ্রাসের উপর মনোনিবেশ করছে। একই ভাবে, পুনঃসমন্বিতকরণ কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত তহবিল সংগ্রহের জন্য দাতব্য সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি সহ-নাগরিকদের সংহতির পথে চালিত করার মাধ্যমে এ হেন পদক্ষেপ বাহরাইনের জাতীয় পরিচয়কে সুদৃঢ় করবে।

তবে একটি সতর্ক ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে শেষ করাও জরুরি: বাহরাইনের রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন এখনও শেষ হয়নিরমজান বা ঈদ-উল ফিতর উদ্‌যাপনের সময়কালে ক্ষমাপ্রদানের ঘটনা অব্যাহত থাকাই স্বাভাবিক। তবে একটি যুক্তিসঙ্গত মূল্যায়ন হল এই যে, রজতজয়ন্তীর শেষ কয়েক সপ্তাহেই ইসলামি উৎসব হওয়ার দরুন বাহরাইন এই বছরের মার্চ মাসেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্দিকে ক্ষমাপ্রদান করতে পারে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওআরএফ মিডল ইস্ট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.