Published on Jul 31, 2023 Updated 0 Hours ago

অস্ট্রেলিয়ার ডিএসআর–এর পর্যালোচনা শুধু দেশটির নিজের জন্য নয়, সমগ্র ইন্দো–প্যাসিফিক জুড়ে তার অংশীদারদের জন্য মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান জানায়

অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ দেশটির প্রতিরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়

২৪ এপ্রিল সর্বজনীনভাবে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা কৌশলগত পর্যালোচনা ২০২৩   (ডিএসআর২০২৩) অন্তত ৫০ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। পর্যালোচনাটি, যা ২০২২ সালে নির্বাচিত আলবেনিজ লেবার সরকার দ্বারা কমিশন করা হয়েছিল, তা দ্রুত পরিবর্তনশীল হুমকির পরিবেশে প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্ট্রেলিয়ার মৌলিক প্রতিরক্ষা কৌশল ও ক্ষমতার জরুরি পুনর্গঠনের জন্য একটি পথ নির্ধারণ করেছে। পর্যালোচনায় মন্তব্য করা হয়েছে যে অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী (এডিএফ) এখন যেভাবে গঠিত ও সজ্জিত তা ‘‌উদ্দেশ্য সাধনের জন্য উপযুক্ত নয়’‌। সেই কারণে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা কৌশল ও দৃষ্টিভঙ্গিতে মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, এবং এর সব সুপারিশ সরকার গ্রহণ করেছে।

পর্যালোচনাটি অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা কৌশল এবং সামগ্রিক প্রতিরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গিতে নিম্নলিখিত মূল পরিবর্তনগুলি প্রস্তাব করেছে:

❁ জাতীয় প্রতিরক্ষা: অনেক দশক ধরে অস্ট্রেলিয়ার কৌশলের ভিত্তি ছিল এই ধারণা যে অস্ট্রেলীয়  প্রতিরক্ষা বাহিনী (‌এডিএফ) ‘‌অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা’‌ নিশ্চিত করবে। এর পরিবর্তে এবার ‘‌জাতীয় প্রতিরক্ষা’‌র কেন্দ্রবিন্দু হবে সার্বিক সরকারি/‌রাষ্ট্রীয় প্রয়াসের মাধ্যমে সমস্ত ক্ষেত্রব্যাপী (সমুদ্র, বায়ু, ভূমি, সাইবার ও মহাকাশ) সর্বাত্মক স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করা।

❁ অস্বীকৃতির কৌশল: অস্ট্রেলিয়া অস্বীকৃতির মাধ্যমে পূর্ব–প্রতিরোধের একটি কৌশল অনুসরণ করবে, যার মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার হানাদারি ও সমুদ্রের জলের নিচের সক্ষমতা সহ অগম্যতা/ক্ষেত্র অস্বীকার (অ্যান্টি–অ্যাকসেস/এরিয়া ডিনায়াল)‌‌ ক্ষমতার উপর মনোনিবেশ।

❁ জোট ও আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা ও কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে, এবং আগামী দশকগুলিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ভারত–সহ অন্যান্য ইন্দো–প্যাসিফিক অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ করাও অপরিহার্য হবে।

❁ একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাহিনী থেকে একটি কেন্দ্রীভূত বাহিনীতে পরিবর্তন: এডিএফ একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাহিনী থেকে একটি ফোকাসড ফোর্সে রূপান্তরিত হবে। এতদিন এডিএফ–এর এমন সক্ষমতা ছিল যা দিয়ে মহাদেশীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত নিম্নস্তরের হুমকির মোকাবিলা, আঞ্চলিক অভিযান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৈশ্বিক সমর্থন–সহ বিস্তৃত ক্ষেত্রে বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব। পরিবর্তে, এডিএফ–কে ভবিষ্যতে অতি–গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হবে, যার জন্য অপ্রয়োজনীয় (যেমন সাঁজোয়া সক্ষমতা) বলে বিবেচিত ক্ষমতাগুলিকে অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

❁ একটি যৌথ বাহিনী থেকে একটি সমন্বিত বাহিনীতে রূপান্তর: এডিএফ একটি যৌথ বাহিনী হিসাবে তার বর্তমান আকৃতি থেকে (যেখানে সমস্ত বাহিনী যৌথ কমান্ডের অধীনে কাজ করলেও তিনটি পরিষেবা পৃথকভাবে তাদের বাহিনীর নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও প্রতিপালনের প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করে) সরে গিয়ে সমস্ত ক্ষেত্রব্যাপী সমন্বিত শক্তি হয়ে উঠবে। এতে সমন্বিত লজিস্টিকস ও যোগাযোগের মতো যৌথ সক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

❁ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেশে তৈরি করা: অস্ট্রেলিয়া দেশীয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে।

❁ জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ত্রাণ: ভবিষ্যতে এডিএফ অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ ত্রাণের জন্য শুধু শেষতম অবলম্বন হিসাবে কাজ করবে। দুর্যোগ ত্রাণ ভূমিকা পালন করবে অন্যান্য ফেডারেল ও রাজ্য সংস্থা।

❁ জরুরি প্রয়োজন: পর্যালোচনায় বলা হয়েছে যে অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত অবস্থান আর ১০ বছরের সতর্কতা–সময়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা নয়। পরিবর্তে, পর্যালোচনা তিনটি সময়কাল চিহ্নিত করেছে: জরুরি বিষয়গুলির জন্য সময়কাল ২০২৩–২৫, সময়কাল ২০২৬–২০৩০, সময়কাল ২০৩১ এবং তার পরবর্তী।

বাহিনী সমুদ্রতীরবর্তী অভিযানগুলিতে মনোনিবেশ করবে
ডিএসআর২০২৩ সুস্পষ্টভাবে অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনীর জন্য কিছু পরিবর্তনের সংকেত দেয়। বাহিনী তার দীর্ঘস্থায়ী ভারসাম্য শক্তি কাঠামো পরিত্যাগ করবে, এবং পরিবর্তে মূলত সমুদ্রতীরবর্তী অভিযানের জন্য আদর্শভাবে প্রস্তুত হবে (কিছুটা মেরিনদের মতো)। অনেক ইউনিট অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূলে স্থানান্তরিত হবে।

অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনী যে মূল পরিবর্তনগুলি নিয়ে আসবে:

❁ অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া সক্ষমতা অনেক কমে যাবে। এটি নতুন ট্যাঙ্ক ও পদাতিক যুদ্ধের যানবাহনের খরচ বিরাটভাবে কমাবে (‌দুই–তৃতীয়াংশের বেশি)‌।

❁ অতিরিক্ত স্বচালিত হাউইৎজার, যার পরিসীমা বা প্রাণঘাতী ক্ষমতা অপ্রতুল বলে মনে করা হয়, আর নেওয়া হবে না।

❁ ছোট নৌযান ও অবতরণ নৌযান–সহ সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে পরিবর্তনশীল সক্ষমতার জন্য ব্যয়ের পুনর্বন্টন করা হবে।

❁ সেনাবাহিনী হিমার্স সিস্টেম সহ নতুন দূরপাল্লার স্থলভিত্তিক সামুদ্রিক আক্রমণ সক্ষমতা অর্জন করবে।

নৌবাহিনী আরও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী হবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সিংহভাগ ইতিমধ্যেই যাচ্ছে সামুদ্রিক সক্ষমতার উপর, যা ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

পর্যালোচনাটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন থেকে পারমাণবিক শক্তি চালিত (এবং প্রচলিত অস্ত্রে সজ্জিত) সাবমেরিনগুলির একটি বহর অর্জনের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হিসাবে উল্লেখিত হয়েছে, যার জন্য প্রতিবেদিত খরচ হল ৩৬৮ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার পর্যন্ত.   ৷ এগুলি মূলত অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে ফ্রেম্যান্টলে থাকবে, যেখানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মার্কিন ও ব্রিটিশ পারমাণবিক সাবমেরিনগুলিও নোঙর ফেলবে। পর্যালোচনাটিতে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে আরও একটি পরমাণুচালিত সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

ডিএসআর২০২৩ সুস্পষ্টভাবে অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনীর জন্য কিছু পরিবর্তনের সংকেত দেয়। বাহিনী তার দীর্ঘস্থায়ী ভারসাম্য শক্তি কাঠামো পরিত্যাগ করবে, এবং পরিবর্তে মূলত সমুদ্রতীরবর্তী অভিযানের জন্য আদর্শভাবে প্রস্তুত হবে (কিছুটা মেরিনদের মতো)।

ডিএসআর২০২৩ নৌবাহিনীর সারফেস ফ্লিটে সম্ভাব্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত  দেয়। এর মধ্যে ভাইস অ্যাডমিরাল উইলিয়াম হিলারাইডস, ইউএসএন (অবসরপ্রাপ্ত) দ্বারা নৌবাহিনীর সারফেস ফ্লিটের পর্যালোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এমন জল্পনা করা হচ্ছে যে পরিকল্পিত ব্রিটেনে ডিজাইন করা নয়টি হান্টার ক্লাস ফ্রিগেটের সংখ্যা হ্রাস করা হবে, যেগুলি খুব হালকাভাবে সশস্ত্র বলে সমালোচিত হয়েছে। অন্যদিকে বেশি সংখ্যক ভারী সশস্ত্র কর্ভেট তৈরি করা হবে।

বিমান বাহিনী সম্পদ রক্ষা করবে এবং ছড়িয়ে দেবে
অস্ট্রেলিয়ার বিমান বাহিনীকে নিজের সম্পদ রক্ষা করা এবং ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উত্তর অস্ট্রেলিয়া (ভারত মহাসাগরের কোকোস দ্বীপ অঞ্চল সহ) জুড়ে তার এয়ারফিল্ডের নেটওয়ার্ককে জরুরি ভিত্তিতে সশক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হবে ।

অস্ট্রেলিয়া এই পর্যায়ে ব্রিটেনে তৈরি বি–২১ বোমারু বিমান নেবে না। সেই সঙ্গে পর্যালোচনাটি মানবচালিত বিমানের পাশাপাশি ব্যবহৃত অ্যাট্রিটেবল ‘‌লয়্যাল উইংম্যান’‌ ড্রোনগুলি দেশে আরও বেশি করে উৎপাদনকে সমর্থন করেছে।

অস্ট্রেলিয়া ও ভারত মহাসাগর অঞ্চল
পর্যালোচনাটি প্রতিরক্ষা কৌশলগত আপডেট ২০২২–এর পূর্ববর্তী বিবৃতিগুলিকে নিশ্চয়তা দিয়েছে, যাতে বলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সামরিক স্বার্থের প্রাথমিক ক্ষেত্র হল তার নিকটবর্তী অঞ্চল যা উত্তর–পূর্ব ভারত মহাসাগর হয়ে সামুদ্রিক দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার মধ্য দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং এর উত্তরের পথগুলিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ভারতের জন্য এর অর্থ হল এডিএফ ভারত মহাসাগরের পূর্ব দিকে মনোনিবেশ করবে, এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরে ভবিষ্যতের জন্য কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া এড়াতে চাইবে।

যদিও পর্যালোচনাটি মূলত অস্ট্রেলিয়ার সামর্থ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, আঞ্চলিক সম্পর্কের উপর নয়, তবে এতে বিশেষভাবে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কর্মসূচি সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি সম্ভাব্যভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে অস্ট্রেলিয়ার প্যাসিফিক মেরিটাইম সিকিউরিটি প্রোগ্রামের সম্প্রসারণকে (যা জনপ্রিয়ভাবে প্যাসিফিক প্যাট্রল বোট প্রোগ্রাম নামে পরিচিত)।

উপসংহার
জিএসআর২০২৩ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণের প্রতিনিধিত্ব করে। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা কৌশল ও দৃষ্টিভঙ্গিতে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান শুধু অস্ট্রেলিয়ার জন্য নয়, সমগ্র ইন্দো–প্যাসিফিক জুড়ে এর অংশীদারদের জন্য একটি জাগরণের আহ্বান হওয়া উচিত। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সময় আমাদের পক্ষে নেই।


এই নিবন্ধটি অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগের সহায়তায় অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা কর্মসূচির একটি অংশ হিসাবে লেখা হয়েছিল। এই নিবন্ধে প্রকাশিত সমস্ত মতামত শুধুই লেখকদের।


ডেভিড ব্রিউস্টার অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দেন এবং তিনি ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজ, এএনইউ-এর একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলোও।

স্যামুয়েল ব্যাশফিল্ড অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা প্রোগ্রামে একজন প্রতিরক্ষা গবেষক

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

David Brewster

David Brewster

David Brewster is one of Australias leading experts on Australias security relationships in South Asia and the Indian Ocean region. He leads the Australia India ...

Read More +
Samuel Bashfield

Samuel Bashfield

Samuel Bashfield is a defence researcher on the Australia India Institutes Defence Program. Sams research interests include Indo-Pacific security defence and foreign policy Indo-Pacific security ...

Read More +