Author : Harsh V. Pant

Published on Apr 19, 2023 Updated 0 Hours ago

অস্ট্রেলিয়ার প্রাইম মিনিস্টার অ্যান্থনি আলবানিজের ভারত সফরের ফলে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শক্তি সহযোগিতা এবং বৃহত্তর নৌবাহিনীর সম্পৃক্ততার সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে। এগুলির বাস্তবায়ন হলে ইন্দো-প্যাসিফিকের কৌশলগত কাঠামো একটি বড় রূপান্তরের সম্মুখীন হতে পারে

ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত অভিন্নতাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার দৃঢ় পদক্ষেপ ভারতের জন্য সুযোগের দরজা খুলে দেবে

অস্ট্রেলিয়া তার বিদেশনীতির রূপরেখা পুনর্বিন্যাসে বদ্ধপরিকর। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিন ও ক্যানবেরার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি হওয়া সম্পর্কের বরফ গলানোর চেষ্টা চালাচ্ছে অ্যান্থনি আলবানিজের সরকার। অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ডন ফ্যারেল চিনের আগ্রাসী বাণিজ্য ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ এবং অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করার প্রয়াসের অংশস্বরূপ গত মাসে চিনের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা

আলবানিজ সরকার চিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা চালালেও এটি স্পষ্টতই তার বৈদেশিক নীতিতে স্পষ্ট পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সম্পৃক্ততার শর্তগুলি নির্ধারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি প্রাইম মিনিস্টার আলবানিজের ভারত সফর এবং তার পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকে এই প্রেক্ষাপটেই দেখা উচিত। চতুর্দেশীয় নিরাপত্তা আলাপ-আলোচনার সদস্য দুই অংশীদার গণতন্ত্রকে সংযুক্ত করার বার্তা চিন সংক্রান্ত আলোচনার আড়ালে চাপা পড়বে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ সরবরাহের জন্য ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত অউকাস চুক্তির চূড়ান্ত পরিণতি পাবে। অস্ট্রেলিয়া তিন থেকে পাঁচটি ইউএস ভার্জিনিয়া শ্রেণির ডুবোজাহাজ কিনবে এবং ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অ্যাডিলেডে নির্মিত একটি সাধারণ অউকাস ডুবোজাহাজের জন্য যৌথ নকশা বানাবে। ক্যানবেরার জন্য এটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ক্ষমতার ফাস্ট ট্র্যাক অধিগ্রহণ সুনিশ্চিত করবে। কারণ সুবিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এটি বৃহত্তর কৌশলগত ভারসাম্য প্রদান করবে বলে মনে করা হয় এবং এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চিন, ভারত ও রাশিয়ার পর অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ ব্যবহারকারী বিশ্বের সপ্তম দেশ হয়ে উঠেছে।

চতুর্দেশীয় নিরাপত্তা আলাপ-আলোচনার সদস্য দুই অংশীদার গণতন্ত্রকে সংযুক্ত করার বার্তা চিন সংক্রান্ত আলোচনার আড়ালে চাপা পড়বে না।

তবে চুক্তিটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজের চেয়েও অনেক বেশি; এটি সেই তিন ঐতিহ্যবাহী নিরাপত্তা অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করবে। যাতে দেশগুলি তাদের সম্মুখে উপস্থিত চ্যালেঞ্জগুলির যথাযথ মোকাবিলা করতে পারে, তাই তাদের অবিলম্বে গোয়েন্দা-ব্যবস্থা এবং উচ্চ-প্রযুক্তি সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক

কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক সঙ্কোচ বা আপত্তি থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায় এই মূল অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে যেতে একত্র হয়েছে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের বিষয়েও একই কথা বলা যেতে পারে, যেখানে একটি শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক ঐকমত্য অংশীদারিত্বটিকে একটি ঊর্ধ্বমুখী গতি প্রদান করেছে, যা বহু বছর ধরে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হচ্ছিল। সম্প্রতি আলবানিজের ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বিস্তৃতির সম্পূর্ণ গৌরব প্রতিফলিত হয়েছে, যা তাদের সম্পৃক্ততার প্রকৃত সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। ভারতে আলবানিজ শুধুমাত্র বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং শিক্ষা নিয়েই কথা বলেননি, একই সঙ্গে তিনি হোলি খেলেছেন ও ক্রিকেট উপভোগ করেছেন – দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কতটা প্রশস্ত ও সুগভীর হয়ে উঠেছে, এ সবই তার প্রতিফলন।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিলক্ষিত হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের দরুন গত বছর অস্ট্রেলিয়া দ্বারা ভারতের রফতানিকৃত পণ্যে ৮৫ শতাংশের বেশি শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষই শীঘ্র সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আলবানিজ বছরের শেষের দিকে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন।

অফুরান সদিচ্ছা

ভারত অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিবিহীন অস্ট্রেলীয় কর্পোরেট ক্ষেত্রকে বিনিয়োগে আরও উৎসাহিত করতে ইচ্ছুক এবং অস্ট্রেলীয় সরকারের চিন থেকে সরে এসে বিকল্পে বৈচিত্র আনতে আগ্রহী হওয়া এই বার্তাই প্রেরণ করে যে, ভারতে উপস্থিত সুযোগগুলি গুরুত্বপূর্ণতার নিরিখে অবহেলা বা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

ভারত যখন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর মনোযোগ দিয়ে একটি শক্তি স্থিতিস্থাপক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, তখন সৌর ও হাইড্রোজেন প্রযুক্তি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার মূল ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আলবানিজের সফরের সময় উভয় পক্ষই ‘অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া সোলার টাস্ক ফোর্সের জন্য শর্তাবলি বিনিময় করেছে… (যাতে) আমাদের [ভারতীয় এবং অস্ট্রেলীয়] সরকারগুলিকে সৌর পিভি ব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলকে ত্বরান্বিত করার সুযোগের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে।’ গুরুত্বপূর্ণ খনিজের জন্য ভারতের দাবি বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন উভয় দেশই লিথিয়াম এবং কোবাল্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সংক্রান্ত স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।

ভারত যখন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর মনোযোগ দিয়ে একটি শক্তি স্থিতিস্থাপক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, তখন সৌর ও হাইড্রোজেন প্রযুক্তি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার মূল ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের গতিপথকে রূপ দেওয়ার জন্য মানুষে মানুষে সম্পৃক্ততা মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় প্রবাসীরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে এবং ভারতীয় মধ্যবিত্তরা অস্ট্রেলীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি ক্রমশ আকৃষ্ট হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয় ছাত্ররা শীর্ষ স্থানে রয়েছে এবং ভারত সরকার কর্তৃক ঘোষিত নতুন নিয়মের সুবিধা নিয়ে ডেকিন, ওলংগং এবং মেলবোর্নের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে ক্যাম্পাস স্থাপন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক সমন্বয়

ইন্দো-প্যাসিফিকের দুই সমমনস্ক অংশীদারের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা হয়তো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ২০০৭ সালে কোয়াডের প্রথম অধিবেশন থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত নিজেদের বিরত রেখেছিল, সেইখানে নয়াদিল্লি এবং ক্যানবেরাই বর্তমানে এই চতুর্পাক্ষিক অংশীদারিত্বকে একটি নতুন দিশা দেখাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়া এ বছর প্রথম বারের মতো মালাবার নৌ-মহড়ার আয়োজন করবে এবং ভারতও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে জড়িত তালিসমান সাবর অনুশীলনের একটি অংশ হয়ে উঠবে। কৌশলগত সমন্বয়ের এক অভিন্ন মনোভাব দ্বারা চালিত হয়ে সামুদ্রিক আদান-প্রদান বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে এবং সামরিক শক্তির তিনটি ভিন্ন ধারাকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এই গতিশীলতাকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে।

এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন পরিপক্বতাকেই দর্শায়, যেখানে জটিল বিষয়গুলি সম্পর্কেও অবাধ আলোচনা করা সম্ভব, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অস্ট্রেলিয়ার মন্দিরগুলিতে হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার প্রতিক্রিয়ায় প্রাইম মিনিস্টার আলবানিজ জানান যে, অস্ট্রেলিয়ায় হিন্দু মন্দিরগুলিতে হামলার জন্য দায়ীরা ‘আইনের পূর্ণ শক্তির সম্মুখীন হবে।’

অস্ট্রেলিয়া যখন তার বৈদেশিক এবং নিরাপত্তা নীতিগুলিকে নতুন রূপ দেওয়ার দ্রুত প্রয়াস চালাচ্ছে, ভারত তখন এই মুহূর্তে তার সামনে উপস্থিত ব্যাপক সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে পারে। ক্যানবেরা যখন ‘ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং তার সীমানার বাইরেও ভারতকে অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রস্থলে’ জায়গা করে দিয়েছে, তখন বর্তমান সময়ে এমন এক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনা উঠে এসেছে, যা ইন্দো-প্যাসিফিকের কৌশলগত কাঠামোকে রূপান্তরিত করার সম্ভাবনা রাখে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মানি কন্ট্রোল-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.