Published on Oct 25, 2024 Updated 1 Days ago

"লুকিং ইস্ট" থেকে "অ্যাক্ট ইস্ট"-‌এ রূপান্তরটি এই অঞ্চলে আরও সক্রিয় এবং কৌশলগত ভূমিকা পালন করার জন্য ভারতের অভিপ্রায়ের সংকেত দেয় চারটি বিষয়ের উপর জোর দিয়ে: সংস্কৃতি, সংযোগ, বাণিজ্য, ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।

১০-এ পড়ে ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতির জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ

অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি (এইপি) তার দশ বছরের সীমায় পৌঁছনোর পর এই উচ্চাভিলাষী বৈদেশিক নীতির উদ্যোগটি কীভাবে বিকশিত হয়েছে, এটি কী অর্জন করেছে এবং কীভাবে এটিকে উন্নত করা যেতে পারে তা প্রতিফলিত করে। লুক ইস্ট পলিসি (এলইপি)-‌র একটি উন্নততর সংস্করণ হিসাবে ২০১৪ সালে এটি চালু করা হয়েছিল। এইপি কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততাকে আরও গভীর করার চেষ্টা করেছে।

ভারতের সম্পৃক্ততার ভৌগোলিক পরিধিতে শক্তিশালী কূটনৈতিক প্রয়াস ও সম্প্রসারণ হল গত দশকে এইপি-র সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানগুলির মধ্যে দুটি। পূর্বের এলইপি প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে ভারতকে একীভূত করার লক্ষ্য রেখেছিল। তার বিপরীতে, এইপি-‌র এই দুটি দিক দৃঢ়ভাবে একটি স্বতন্ত্র কৌশলগত মাত্রা দ্বারা আবদ্ধ। যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীনে এইপি একটি বিস্তৃত পন্থা গ্রহণ করে, এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা ও আঞ্চলিক সংযোগ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি (আসিয়ান) ও পূর্ব এশীয় দেশগুলির সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা অন্তর্ভুক্ত করে।  "লুকিং ইস্ট" থেকে "অ্যাক্ট ইস্ট"-‌এ রূপান্তরটি এই অঞ্চলে আরও সক্রিয় এবং কৌশলগত ভূমিকা পালন করার জন্য ভারতের অভিপ্রায়ের সংকেত দেয় চারটি বিষয়ের উপর জোর দিয়ে: সংস্কৃতি, সংযোগ, বাণিজ্য, ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।

এইপি-র ১০ বছরের মধ্যে অন্যতম প্রধান মাইলফলক আসিয়ানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করা। এই গভীর সহযোগিতা ভারত-আসিয়ান স্মারক সম্মেলনের সময় ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মতো ক্ষেত্রে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বর্ধিত সহযোগিতাকে প্রতিফলিত করে। ২০১৫ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ভারতের কূটনৈতিক দৃশ্যমানতার উন্নতির পাশাপাশি এশিয়ান দেশগুলি থেকে ভারতের রপ্তানি ও বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।


সামুদ্রিক নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নেট নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে এর ভূমিকা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দ্বারা ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত।



আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হল ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা, বিশেষত সাংগ্রি-লা সংলাপে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ২০১৮ সালের বক্তৃতায়। এটি  বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক আলোচনায় ভারতের আনুষ্ঠানিক প্রবেশকে চিহ্নিত করেছে, যেখানে এটি একটি মুক্ত, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চলের উপর জোর দিয়েছিল। সামুদ্রিক নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নেট নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে এর ভূমিকা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দ্বারা ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত। এই পরিবর্তনটি ছিল ভারতের কূটনৈতিক নাগালের সম্প্রসারণ এবং এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তাকে ঘিরে অস্পষ্টতার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত।

তৃতীয়ত, ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পৃক্ততা এইপি-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত তার সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে। ভারত সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা-নির্মাণের উপর ফোকাস করে তার প্রতিরক্ষা কূটনীতিকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কাঠামোর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।

পরিশেষে, ভারত-মায়ানমার-তাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক, অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ ও বাণিজ্যের প্রোটোকল, এবং ভারতে ও ভারত থেকে পণ্য পরিবহণের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার মতো পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য ভারতের প্রচেষ্টা এর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে, যদিও এর মধ্যে অনেকগুলি প্রকল্প বিলম্বের কারণে জর্জরিত। ভারতকে অবশ্যই সামুদ্রিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার কেন্দ্র হিসাবে তার অবস্থান উন্নত করতে সামুদ্রিক পরিকাঠামো সম্প্রসারণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, বিশেষ করে তার পূর্ব সমুদ্রতীরে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে ইন্দো-প্যাসিফিকের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের কারণে ভারতকে আসিয়ান দেশগুলি ও কোয়াড অংশীদার উভয়ের সঙ্গেই তার নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করতে হবে।

অর্থনৈতিক ফ্রন্টে ভারতকে অবশ্যই তার বাণিজ্য কূটনীতির পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, বিশেষ করে চিনের উপর আঞ্চলিক অর্থনীতিগুলির শক্তিশালী নির্ভরতার প্রেক্ষাপটে। আসিয়ানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বেড়েছে, কিন্তু তার পূর্ণ সম্ভাবনার নিচে থেকে গিয়েছে। একটি শক্তিশালী বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা তার কৌশলগত ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের সঙ্গে তুলনীয়ভাবে গতিশীল হতে পারেনি। ভারত আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিগুলি অনুসরণ করতে পারে, বা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে তার দেশীয় শিল্পগুলিকে আরও ভালভাবে রক্ষা করে এমন নতুন কাঠামো তৈরি করতে পারে। ডিজিটাল অর্থনীতি অংশীদারিত্ব, বিশেষ করে ফিনটেক ও ই-কমার্সের মতো ক্ষেত্রগুলিতে, সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন সুযোগ এনে দেয়৷

ভারত সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা-নির্মাণের উপর ফোকাস করে তার প্রতিরক্ষা কূটনীতিকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কাঠামোর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।



পরিশেষে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দৃঢ় সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারতকে অবশ্যই তার নরম শক্তি ব্যবহার করতে হবে। ভারতের কূটনৈতিক অস্ত্রাগারে অব্যবহৃত হাতিয়ার হিসাবে থেকে গিয়েছে এই অঞ্চলের ভারতীয় প্রবাসীরা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, এবং শিক্ষাগত সহযোগিতা। যেহেতু আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি আরও জটিল হয়ে উঠছে, এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে দৃঢ় করার জন্য সেতু হিসাবে কাজ করতে পারে। ক্রমবর্ধমান গতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার জন্য এইপি বিকাশের পরবর্তী দশক গুরুত্বপূর্ণ হবে।



এই ভাষ্যটি প্রথম হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.