Published on Jul 15, 2024 Updated 0 Hours ago

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উন্নয়ন সহযোগিতা স্থিতিশীল বৃদ্ধি এবং সাধারণ দুর্বলতা মোকাবিলার জন্য গুরুত্বপূর্ণযাই হোক, এটি অত্যধিক প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে এবং সম্ভাব্য আঞ্চলিক অংশীদারদের ক্ষতি করছে

ইন্দো-প্যাসিফিকের উন্নয়ন কূটনীতির ‘স্থিতিশীলতা’র মূল্যায়ন

উন্নয়ন অংশীদারিত্ব সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে। প্রথাগত দাতা-গ্রহীতা সম্পর্ক এখন অতীত সমসাময়িক সময়ে দেশগুলি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে, প্রয়োজনীয় সংস্থানগুলিকে একত্রিত করতে এবং এই ভাবে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের পণ্যগুলিকে কাজে লাগানোর জন্য একে অপরের সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতামূলক কাঠামো তৈরি করতে আগ্রহী। এ ছাড়া বর্তমান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কাঠামো একাধিক বাধা দ্বারা গভীর ভাবে বিদ্ধ হয়েছে যেমন কোভিড-১৯ অতিমারি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং গাজা ও ইউক্রেনে অস্থিরতার কারণে খাদ্য ও জ্বালানির দাম, মূল্যস্ফীতি এবং ঋণের বোঝা বেড়েছে। এই বহুমাত্রিক অথচ আন্তঃসংযুক্ত শৃঙ্খলগুলি একটি জরুরি ধরনের পরিস্থিতির উদ্রেক করেছে যেখানে স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) জন্য অর্থায়ন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে এসডিজি অর্থায়নের ব্যবধান ২০২০ সালে ২.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩ সালে বিস্ময়কর ৪.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তা ছাড়া, অনেক উন্নয়নশীল অর্থনীতি - বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি), নিম্ন আয়ক্ষম দেশ এবং ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র (এসআইডিএস) — নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়ে চলেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ঋণ পরিষেবা ব্যয়ের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঋণ স্বল্পোন্নত দেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে চাপ দিচ্ছে।

 

বর্তমান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কাঠামো একাধিক বাধা দ্বারা গভীর ভাবে বিদ্ধ হয়েছে যেমন কোভিড-১৯ অতিমারি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং গাজা ও ইউক্রেনে অস্থিরতার কারণে খাদ্য ও জ্বালানির দাম, মূল্যস্ফীতি এবং ঋণের বোঝা বেড়েছে।

 

যাই হোক, অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (ওডিএ) এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও কিছুটা ভাল ফল প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের জিডিপিতে দৃশ্যমান হ্রাস সত্ত্বেও চিরাচরিত দাতাদের দ্বারা প্রদত্ত ওডিএ-র পরিমাণ অর্থাৎ  অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর (ওইসিডি) ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স কমিটি (ডিএসি) ২০২০ সালে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, যার পরিমাণ হল ১৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকৃতপক্ষে, এটি ওডিএ-র একটি মূল উপাদানের ইঙ্গিত দেয় অর্থাৎ সঙ্কটের সময়ে শক অ্যাবজর্বার হিসেবে কাজ করে বা ধাক্কার তীব্রতা সামলাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও, অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে ডিএসি দাতাদের দ্বারা ওডিএ ‘ধীর কিন্তু ইতিবাচক জিডিপি বৃদ্ধিসঙ্গে ওইসিডি দেশগুলিতে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার অনুভব করেছে। যাই হোক, অতিমারি চলাকালীন জরুরি প্রতিক্রিয়া পরিমাপ হিসাবে ব্যবহার ওডিএ-কে অতিরিক্ত চাপের মুখে ফেলেছে। এটি অন্য বিষয়গুলির মধ্যে দারিদ্র্য, জলবায়ু এবং খাদ্য ও জলের ঘাটতি মোকাবিলায় এর গুরুত্ব আরোপ করে উন্নয়ন সহযোগিতার কার্যকর অর্থনৈতিক মাত্রা তুলে ধরে।

একটি কৌশলগত অর্থে উন্নয়ন অংশীদারিত্ব একটি দেশের বৈদেশিক নীতির উদ্দেশ্যগুলিকে শক্তিশালী ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও আধুনিক সময়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরিসর অনুযায়ী শুধুমাত্র একটি দেশ অন্যকে সংস্থান এবং পরিষেবা প্রদান করে না। এটি একাধিক অভিপ্রায় বিভিন্ন মাত্রার প্রভাব এবং সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ফলাফলের স্বার্থ-সহ রাজনৈতিক কৌশলের একটি জটিল উপকরণকে নির্দেশ করে। এ ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত ভূ-রাজনৈতিক স্রোতে পথ খুঁজে পাওয়ার সময় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলি প্রকাশ্যে আসা বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতায় সাড়া দেওয়ার জন্য অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়।

এই পটভূমিতে ইন্দো-প্যাসিফিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে এই অঞ্চলটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এটি অত্যাবশ্যক নিরাপত্তা বাজি এবং মূল স্থিতিশীল সমস্যাগুলির একটি অনন্য মিশ্রণ প্রতিফলিত করে। এই অঞ্চলে নিরাপত্তাভিত্তিক আখ্যানের ক্রমাগত আধিপত্য এই উদ্বেগ তৈরি করেছে যে, কী ভাবে দেশগুলি এসডিজি অর্জনে কার্যকর ভাবে সহযোগিতা করতে পারে, যেখানে সম্পদের অভাব রয়েছে এবং এই সম্পদগুলি অর্জন করার ক্ষমতা সীমিত।

 

ইন্দো-প্যাসিফিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে এই অঞ্চলটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

 

যাই হোক, কৌশলগত কর্মসূচিগুলির ভূমিকা স্বীকার করা সাহায্যের প্রেরণা এবং কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে এবং তুলে ধরে যে, রাজনৈতিক চালকরা সহজাত ভাবে অনৈতিক বা বিপরীতমুখী নয়। বরং পরিবর্তে, তারা প্রায়শই সহায়তা কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেতাই এই অঞ্চলে ভূ-কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার সর্বাত্মক কৌশলগত লক্ষ্যগুলিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগিতার উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ভাবে কাজ করতে হবে, যা পারস্পরিক সুবিধা প্রদানকারী অংশীদারিত্বের দিকে পরিচালিত করে।

ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং উন্নয়ন সহযোগিতার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আজ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং এটি প্রায়ই সাহায্য কর্মসূচির সাফল্য নির্ধারণ করে। ১৯৯৬ সালে ওইসিডি স্বীকার করেছে যে, দাতা দেশগুলি স্বার্থ সংক্রান্ত উন্নয়ন সহযোগিতায় ভূমিকা পালন করে, একতরফা মডেলের পরিবর্তে পারস্পরিক সুবিধার পক্ষে সওয়াল তোলে পরিশেষে, এই কৌশলগত ভিত্তিগুলি বোঝার জন্য সহায়তা কার্যকারিতার একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়নের অনুমতি দেয়, যা নিশ্চিত করে যে উন্নয়ন উদ্যোগগুলি জড়িত সমস্ত পক্ষের চাহিদা পূরণ করার সময় ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সমন্বয় সাধন অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন সহযোগিতার উন্নতির জন্য এটি অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নমনীয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত অর্থনৈতিক স্বার্থকে জায়গা করে দিতে হবে। এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো অঞ্চলে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মতো প্রধান শক্তিগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা জটিল সমীকরণ তৈরি করে। এখানে অংশীদারিত্ব প্রায়শই আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলা করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রচার করা বা প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির প্রভাবকে ভারসাম্যহীন করার বিষয়গুলিকে আকার দেয়।

 

সমন্বয় ছাড়াই অনুরূপ প্রকল্পে কাজ করা একাধিক দাতা প্রচেষ্টার অনুকরণ, সম্পদের অব্যবস্থাপনা এবং প্রাপক দেশগুলিতে বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে।

 

তা সত্ত্বেও, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব আঞ্চলিক অংশীদারদের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠার বিষয়ে উদ্বেগ রয়ে গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তাদের নিজ নিজ কৌশলগত উদ্যোগের সঙ্গে, ছোট দেশগুলিকে কৌশলগত ভাবে নিয়োগ করতে বাধ্য করে, যা গঠনমূলক আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগী অংশীদারিত্ব অভিন্ন সাধারণ লক্ষ্য এবং অদক্ষতা-সহ খণ্ডিত সাহায্য কর্মসূচির দিকে চালিত করতে পারে। সমন্বয় ছাড়াই অনুরূপ প্রকল্পে কাজ করা একাধিক দাতা প্রচেষ্টার অনুকরণ, সম্পদের অব্যবস্থাপনা এবং প্রাপক দেশগুলিতে বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। তৃতীয়ত, প্রতিযোগিতা আঞ্চলিক অংশীদারদের দাতাদের দাবি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে, যা স্থানীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না-ও হতে পারে। এটি প্রাপক সংস্থার ক্ষমতাকে হ্রাস করে, যা প্রকৃত প্রয়োজনের প্রতি উন্নয়ন সহযোগিতাকে কম প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। চতুর্থত, কিছু অংশীদার অবিলম্বে অবকাঠামোগত বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে পারে, যা স্থিতিশীলতা বা পরিবেশগত উদ্বেগকে অবহেলা করে। এটি পরিবেশগত অবক্ষয় এবং সামাজিক স্থানচ্যুতি ঘটাতে পারে, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে ক্ষুণ্ণ করে। পঞ্চমত, প্রতিযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতাকে শক্তিশালী করে এমন দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে দুর্বল করে। আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলি আন্তঃসীমান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষমতাকে সীমিত করে ঐক্য এবং সহযোগিতামূলক কাঠামো বজায় রাখতে সংগ্রাম করতে পারে। অবশেষে, প্রতিযোগিতামূলক সাহায্য এমন প্রকল্পের দিকে চালিত করতে পারে, যা কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল বা সামাজিক গোষ্ঠীকে অন্যদের তুলনায় সমর্থন করে, বিদ্যমান বৈষম্যকে বাড়িয়ে তোলে।

এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক ধাক্কার মতো অভিন্ন সাধারণ দুর্বলতাগুলি মোকাবিলার জন্য উন্নয়ন সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতিকর ফলাফল রোধ করার জন্য উন্নয়ন অংশীদারদের স্বচ্ছ, সমন্বিত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, প্রকল্পের কঠোর মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে, অংশীদারিত্বের বৈচিত্র্যকরণ এবং যে কোন একক দাতার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে সুষম সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রেক্ষাপট এবং অংশীদারদের সম্পৃক্ততা বিবেচনা করে সমবায় কাঠামোগুলিকে অবশ্যই ন্যায্য ভাবে পরিচালনা করতে হবে।

 


স্বাতী প্রভু অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

প্রত্নশ্রী বসু ওআরএফ-এর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.