২০২৩ সালের অক্টোবরে বেঙ্গালুরু–ভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান জনাগরা সেন্টার ফর সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি, যাঁরা শহুরে (আরবান) রূপান্তর নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন যার শিরোনাম ‘অ্যানুয়াল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’জ সিটি–সিস্টেমস: শেপিং ইন্ডিয়া’জ আরবান অ্যাজেন্ডা’ (এএসআইসিএস)। সমীক্ষাটি ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে করা হয়েছিল৷ এর লক্ষ্য ছিল দেশের নগর শাসন এবং তার গুণমানের একটি ব্যাপক মূল্যায়ন করা৷ প্রদর্শিত ফলাফলগুলির মধ্যে ভারতীয় শহরগুলিতে নগর পরিকল্পনার অবস্থার কথাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই সমীক্ষাটি পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রকাশিত হয়েছে, এবং এর আলোকপাতের বিষয় পরিবর্তিত হয়েছে। এবার এটি শাসন সূচকের উপর ভিত্তি করে শহরগুলির র্যাঙ্কিংয়ের অতীত অনুশীলনের পরিবর্তে একটি ইউনিট হিসাবে রাজ্যের উপর জোর দিয়েছে। প্রতিবেদনে ভারতের ৩৫টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪,৮০০ শহর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি দেশের ৮২টি পৌরসভা আইন, ৪৪টি শহর ও দেশ পরিকল্পনা সংবিধি, ১৭৬টি সম্পর্কিত আইন বা বিধি, এবং ৩২টি নীতি ও সম্পর্কিত নথির মূল্যায়ন করেছে।
প্রতিবেদনের মূল পর্যবেক্ষণটি হল, আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের (এমএইচইউএ) ব্যয় করার পরিমাণ বাড়ছে৷ তা ৪৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে: ২০০৯–১০ সালের প্রায় ৮০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি থেকে ২০২১–২২–এ ৪৭০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি হয়েছে৷ এমএইচইউএ বিভিন্ন শহুরে মিশন ও প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থের জোগান দিয়েছে, যেমন অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফরমেশন (অম্রুত), স্বচ্ছ ভারত মিশন আরবান (এসবিএম–ইউ), স্মার্ট সিটি মিশন (এসসিএম), মেট্রো রেলের মতো পরিবহণ প্রকল্প এবং অন্যান্য পরিকাঠামো প্রকল্প। যাই হোক, এগুলি অপ্রতুল ছিল, কারণ নগরায়ণ একে ছাপিয়ে গিয়েছে। ফলস্বরূপ, জীবনযাত্রার মানের চ্যালেঞ্জগুলি ক্রমশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনের মূল পর্যবেক্ষণটি হল, আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের (এমএইচইউএ) ব্যয় করার পরিমাণ বাড়ছে৷
আরও যে সব উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে তা হল: রাজ্যগুলি ১৯৯২ সালের ৭৪তম সংবিধান সংশোধনী আইনের বিধানগুলির মাত্র ৪২ শতাংশ প্রয়োগ করেছে; গড়ে পৌরসভার ব্যয়ের মা্ত্র ২০ শতাংশ সম্পত্তি করের আওতায় আনা গিয়েছে; এবং ৯০ শতাংশ শহর ও নগরে ডিজিটাল পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম না থাকলেও আরবান লোকাল বডি (ইউএলবি)–তে অনুমোদিত পদের ৩৬ শতাংশ খালি রয়েছে।
প্রতিবেদনটি ‘শহুরে’–র সংজ্ঞাগত দিকগুলিও ব্যাখ্যা করেছে, এবং ভারতে প্রকৃত নগরায়ণের আয়তন সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। কার্যত, শহুরে বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে আদমশুমারি গণনা ও প্রস্তাবগুলিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিবেদন এবং ইউরোপীয় কমিশনের গ্লোবাল হিউম্যান সেটেলমেন্ট লেয়ার–এর গ্রুপ অন আর্থ অবজারভেশন–এর স্যাটেলাইট ডেটা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, ভারতের শহুরে জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি, আর ইউরোপীয় কমিশন ২০১৫ সালে এটি প্রায় ৬৩ শতাংশ বলে অনুমান করেছিল।
নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে ৩৯ শতাংশ শহর, যেগুলি রাজ্যের রাজধানী ছিল, সেগুলির সক্রিয় স্থানিক পরিকল্পনা নেই। তার উপর, শহর স্তরে পরিকল্পনা সংক্রান্ত কাজ সামান্যই বিকেন্দ্রীকৃত, কারণ মুম্বই বাদে সর্বত্র পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছিল বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে শহর–স্তরের পরিকল্পনা পরিবর্তনের সমস্যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, কারণ বেশিরভাগ শহরেই এমন যোগ্য নগর পরিকল্পনা পেশাদারের অভাব রয়েছে যাঁরা একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন। প্রতিবেদনের অন্য প্রধান পর্যবেক্ষণগুলি ছিল একই রাজ্যে একাধিক পৌর বিধির অস্তিত্ব, মেয়রের সাধারণ অ–ক্ষমতায়ন, এবং শহরের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের জন্য পরিসরের অভাব সম্পর্কিত।
শহরগুলির স্তরে পরিকল্পনা সংক্রান্ত কাজ সামান্যই বিকেন্দ্রীকৃত, কারণ মুম্বই বাদে সর্বত্র পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছিল বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
বেঙ্গালুরুতে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রী এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন যে ১৩তম ও ১৫তম অর্থ কমিশনের মধ্যে ইউএলবি–গুলিতে আর্থিক সংস্থান বরাদ্দ ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ১৫তম অর্থ কমিশন প্রথমবারের মতো মিলিয়ন প্লাস শহর ও অন্য ইউএলবি–গুলির মধ্যে পার্থক্য করেছে, এবং ৫০টি ইউএলবি–কে ১০০ শতাংশ ফলাফল–ভিত্তিক ৩৮,১৯৬ কোটি ভারতীয় রুপি অর্থায়ন করেছে।
সমীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এই উপসংহার টানা হয়েছে যে ভারতের শহুরে চ্যালেঞ্জগুলি এত গভীর ও পদ্ধতিগত যে ‘কিছু স্বল্পমেয়াদি কৌশলগত আঘাতের’ (ফিউ ট্যাকটিকাল স্ট্যাবস) মাধ্যমে তা ঠিক করা যাবে না। শহুরে রূপান্তরের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। প্রতিবেদনে ১০টি ‘পরিবর্তনের উপকরণ’ সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলি এইরকম:
❁ অর্থনীতি, ইক্যুইটি, পরিবেশ ও সংযুক্ততাকে একীভূত করে এমন স্থানিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রস্তুতি ও বাস্তবায়ন
❁ মানসম্মত চুক্তির মাধ্যমে রাস্তা ও পাবলিক স্পেস ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
❁ সাংবিধানিক সংশোধনী এনে শহরগুলিকে ক্ষমতায়িত করা এবং তাদের শাসনের স্বতন্ত্র ইউনিট হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া
❁ চার মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার শহরগুলির শাসনের জন্য মেট্রোপলিটন অথরিটি তৈরি করা
❁ ভারতীয় শহরগুলির সম্ভাবনা উন্মোচন করার জন্য মেয়র ও কাউন্সিল্রদের ক্ষমতায়িত করা
❁ এমন শহর কাঠামো তৈরি করা যা প্রযুক্তি ও স্বচ্ছতার দ্বারা চালিত, এবং যার একটি ডেটা ও মেট্রিক্স–ভিত্তিক ইন্টারফেস রয়েছে যা নাগরিক ও সরকারকে রিয়েল–টাইমে সংযুক্ত করে
❁ নগর সরকারকে অনুমানযোগ্য হস্তান্তর এবং নিজস্ব রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা
❁ পৌর ঋণের মাধ্যমে নগর পরিকাঠামোর জন্য বৃহৎ আকারের অর্থায়নের অনুঘটন
❁ নগর সরকারকে সময়মত অনুদান হস্তান্তরের জন্য ডিজিটাল অনুদান ব্যবস্থাপনা সরঞ্জাম প্রদান করা, এবং একক বিশ্বস্ত ডেটাসূত্রে পরিকাঠামো প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতির ট্র্যাকিং, রিপোর্টিং ও নজরদারি
❁ অভিন্ন সার্ভিস এবং ক্যাডার ও নিয়োগের নিয়ম
এই নিবন্ধে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের উপকরণগুলির একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এই উপকরণগুলিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। তাদের মধ্যে দুটি শহুরে স্থানিক পরিকল্পনা ও শহুরে নকশা নিয়ে কাজ করে। অন্য দুটি ডিজিটাইজেশনের দিকে মনোনিবেশ করে। দুটি সুপারিশ পৌরসভার অর্থ সংক্রান্ত এবং চারটি নগর শাসন সংক্রান্ত। প্রথমে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও নগর নকশার দুটি সুপারিশ বিবেচনা করা যাক। প্রতি ২০ বছরে স্থানিক পরিকল্পনা তৈরি করা একটি বাধ্যতামূলক কার্যকলাপ যা সমস্ত শহরকেই করতে হবে। পরিকল্পিত সত্তা এবং স্থানিক পরিকল্পনা ছাড়া শহরের উন্নয়ন করা যায় না। রাস্তা ও গণ–পরিসরের ডিজাইনের মান সম্পর্কে অন্য সুপারিশগুলি শহরের নান্দনিকতা ও কার্যকারিতার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি প্রশংসনীয় প্রয়াস এবং শহরের কাজে একে যুক্ত করা উচিত। যেসব শহরে তা বিদ্যমান সেখানকার স্থানিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্তরের তথ্য থাকলে তা খুবই উপযোগী হত। তা স্থানিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শহরগুলির সম্পূর্ণ অক্ষমতাকে প্রকাশ করত, কারণ পরিকল্পিত সুবিধাগুলির অনেকগুলির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। এটি শহরগুলির আর্থিক দুর্বলতার কারণে তাদের আয়ত্তের বাইরে।
অনেক সংস্থা এবং শহুরে শিক্ষাবিদরা নগর স্থানীয় সংস্থা (ইউএলবি) এবং সেগুলির মেয়রদের ক্ষমতায়নের পক্ষে রয়েছে।
পৌরসভার কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশনের একটি উদার অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কিত সুপারিশগুলি বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে এবং সরকারগুলি এর পক্ষে রয়েছে। কিন্তু পৃথক শহরগুলি বিভিন্ন উপায়ে এবং বিভিন্ন মাত্রায় এটি গ্রহণ করেছে। ফলস্বরূপ, বেশিরভাগ শহর বর্তমানে নিজেদেরকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ডিজিটাইজড বলার মতো অবস্থানে নেই। এর কোনও রাজনৈতিক বিরোধিতা নেই, তবে বাস্তবায়নের দিকটিতে কাঙ্ক্ষিত অনেক কিছু এখনও করা হয়নি। ভাগ করা পরিষেবা এবং ক্যাডার ও নিয়োগ বিধিগুলি নিয়ে কোনও বড় সমস্যা থাকা উচিত নয়।
যাই হোক, শহর ও মেট্রোপলিটন গভর্নেন্স এবং ইউএলবি–র অর্থায়ন সংক্রান্ত পরামর্শগুলি বেশিরভাগই নতুন নয়। অনেক সংস্থা এবং শহুরে শিক্ষাবিদেরা নগর স্থানীয় সংস্থা (ইউএলবি) এবং তাদের মেয়রদের ক্ষমতায়নের পক্ষে রয়েছে। আরও অনেকে পৌরসভার বিষয়ে সক্রিয় নাগরিকদের অংশগ্রহণের পক্ষপাতী। এছাড়াও, মিউনিসিপ্যাল বন্ডের ধারণা এবং তাদের কর–মুক্ত করা সহ মিউনিসিপ্যাল ফাইন্যান্সে কাজ করা বেশিরভাগ লোকের জন্য ইউএলবি–র অর্থায়ন একটি সাধারণ দাবি। এই বিষয়গুলি ৭৪তম সংবিধান সংশোধনী আইনের চেতনাতেও জড়িত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, সমস্ত রাজ্য গত ত্রিশ বছর ধরে এই সংস্কারগুলি নিয়ে ধীরে চলেছে এবং কোনও অগ্রগতি হয়নি। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) এবং পরবর্তী কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি কেন্দ্রীয় বরাদ্দের সঙ্গে যুক্ত করে এই সংস্কারগুলির কয়েকটিকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। যদিও কিছু শহর কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ করেছিল, পরে তারা তা আর অনুসরণ করেনি এবং সংস্কারের সম্পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম না–করেই কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে টাকা পেতে সক্ষম হয়েছিল। ভারত সরকার তাদের অপকর্মের জন্য রাজ্যগুলিকে শাস্তি দিতে ঘৃণা বোধ করেছিল।
উদ্ধৃত প্রসঙ্গে, এই পরামর্শগুলি বধির কানে গিয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারও ইস্যুটি নিয়ে জোরাজুরি করার আগ্রহ দেখায়নি, এবং রাজ্য সরকারগুলি জানিয়ে দিয়েছে যে শাসন বা অর্থের ক্ষেত্রে শহরের ক্ষমতায়ন তাদের সাধ্য নয়।
রমানাথ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিংগুইশড ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.