২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর হামাসের আক্রমণ এবং ফলস্বরূপ ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া - যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে - আসিয়ান এবং এর সদস্যদের বিভ্রান্ত করেছে। ইজরায়েল ও ফিলিস্তিনের প্রতি আসিয়ানের সব দেশের প্রতিক্রিয়া এক রকম নয়। গাজার জনগণের প্রতি এখন মানুষের সহানুভূতি ক্রমশ বাড়ছে, যাঁরা ইজরায়েলি পদক্ষেপের দরুন ভুগছেন।
গাজার প্রতিক্রিয়া
হামাসের হামলার পর আসিয়ানের বিদেশমন্ত্রীরা বৈরিতার অবসান এবং আটক হওয়া আসিয়ান নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সঙ্কটের বিষয়ে একটি পাঁচ অনুচ্ছেদের বিবৃতি জারি করেছেন। বিবৃতিটি অনেক দেশের স্বতন্ত্র জাতীয় বিবৃতিকে স্বীকৃতি প্রদান করলেও মূলত দু’টি জিনিসের কথা বলেছে: প্রথমত তারা এই অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘাত বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বিগ্ন; দ্বিতীয়ত, হিংসার নিন্দা এবং আলোচনার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলা হয়েছিল। বিবৃতিটির দীর্ঘ দু’টি অনুচ্ছেদে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। এই মানুষদের মধ্যে আসিয়ান দেশগুলির মানুষও রয়েছে, যাদের জন্য আসিয়ান নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং জরুরি সহায়তা চেয়েছে। আসিয়ান দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছে। তবে এই বিবৃতিটি মূলত আসিয়ান নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সাহায্যের উদ্দেশ্যে একটি আবেদন হয়েই থেকেছে এবং বাকিটা ছিল শুধু মাত্র নিরবচ্ছিন্ন আশাবাদ।
হামাসের হামলার পর আসিয়ানের বিদেশমন্ত্রীরা বৈরিতার অবসান এবং আটক হওয়া আসিয়ান নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সঙ্কটের বিষয়ে একটি পাঁচ অনুচ্ছেদের বিবৃতি জারি করেছেন।
প্রথম হামলায় তাইল্যান্ডের ২৪ জন মানুষকে আটক করা হয় এবং ৩২ জন নাগরিক নিহত হন। এঁরা বেশির ভাগই প্রধানত খামারী ছিলেন এবং প্রায় ৩০০০০ মানুষ ইজরায়েলে কাজ করতেন। ইজরায়েলে ফিলিপিন্সের প্রায় ৩০,০০০ কর্মী ছিলেন এবং তাঁদের আটক করা হয়। তিন ফিলিপিনো এবং একজন কম্বোডিয়ান ছাত্র মারা গিয়েছেন বলে খবর। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া কিছু স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে মিলে গাজায় একটি সফল ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল খুলেছে, যেটির অর্থায়ন ২০১১ সাল থেকে মুহাম্মাদিয়া এবং অন্যান্য সুশীল সমাজ সংস্থা করেছিল। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ইজরায়েলি বাহিনী এটিকে হামাসের অভয়ারণ্য ভেবে ঘেরাও করে এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অঞ্চলটিকে ঘাঁটি হিসাবে দখল করে।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েলকে সমর্থনকারী পশ্চিমী ব্র্যান্ডগুলির বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ায় একটি স্থানীয় ফতোয়া জারি করা হয়েছিল। এই কারণে ইন্দোনেশিয়ায় পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলি ২৫ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই পদক্ষেপটি ২০২৪ সালের মার্চ মাসে একটি সমীক্ষায় ৬৫ শতাংশ সমর্থন কুড়িয়েছিল। ১২১টি ব্র্যান্ডকে বয়কটের তালিকাভুক্ত করা হলে স্থানীয় ম্যাকডোনাল্ডস নিজের ইন্দোনেশীয় মালিকানা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনি পতাকা দেখিয়েছিল। মালয়েশিয়ায় বয়কটটি ট্যাক্সি অ্যাপ গ্র্যাবের মতো সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংস্থাগুলিতেও প্রসারিত হয়েছিল। মালয়েশিয়া তার বন্দর থেকে ইজরায়েলি জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। তা সত্ত্বেও ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা শিল্প ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিঙ্গাপুর এয়ারশোতে অংশগ্রহণ করেছিল।
গাজার সঙ্কট যখন নতুন করে শুরু হয়, তখন ইন্দোনেশিয়া নির্বাচনী প্রচারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ইন্দোনেশিয়া ২০২১ সালে ফিলিস্তিনের জন্য এনএএম-এর সমর্থন চেয়েছিল। জোকোভির বৈদেশিক নীতির ইসলামিক আভাস ফিলিস্তিনের প্রতি অবিচল সমর্থন দর্শিয়েছে এবং ইজরায়েলের সঙ্গে কোনও রকমের যোগাযোগ না করাও অন্তর্ভুক্ত। মালয়েশিয়া এই সংঘর্ষের সময়কালে একই ধরনের নীতি অনুসরণ করে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার এবং বিদেশমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাবে ইজরায়েলের নিন্দা এবং ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার জন্য সরব হয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষস্থানীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রাবোও ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার এবং বিদেশমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাবে ইজরায়েলের নিন্দা এবং ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার জন্য সরব হয়েছেন।
ব্রুনেই – যার সঙ্গে ইজরায়েলের সম্পর্ক নেই - তারা নিঃশব্দ থাকলেও ইজরায়েলের সঙ্গে ১৯৬৭-এর পূর্বের সময়কার সীমান্ত ফিরে পেতে ইচ্ছুক। তবে আসিয়ানের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে। এই সংঘাত যে ভাবে পরিণতি পেয়েছে তাতে সমস্ত আসিয়ান দেশ হতবাক এবং সেই দেশগুলির কিছু নাগরিক গাজায় নিহত হয়েছেন বা আটক হয়ে পড়েছেন। ফলে আসিয়ানের দেশগুলি একটি অভিন্ন সাধারণ উপায় খুঁজে পেতে অক্ষম। সাধারণ ভাবে দেশগুলি সকলেই একমত যে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান-সহ একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকেই কার্যকর বিকল্প হিসাবে ফিরে পেতে হবে। আসিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে একটি বিবৃতি জারি করেছেন।
সমস্ত আসিয়ান দেশ শান্তিতে ফিরে আসা এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তবে মূলত মুসলিম প্রসঙ্গের কারণে মতপার্থক্য রয়েছে, যা ধারাবাহিক ভাবে ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যাকে গুরুতর করে তুলেছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেই এই প্রসঙ্গে আসিয়ানে গ্লোবাল সাউথের অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সব দেশই কী করণীয় তা নিয়ে ভাবছে এবং কী ভাবে এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে যেতে হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখন চ্যালেঞ্জ হল, ৫৫ বছরেরও বেশি সহযোগিতা সত্ত্বেও আসিয়ান এখনও আন্তর্জাতিক সঙ্কটে একটি সাধারণ অবস্থান খুঁজে বের করার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না, যেমনটা ইউক্রেন সঙ্কটের সময় দেখা গিয়েছিল। ঐকমত্যের এই অভাব তাদেরকে সমাধানের দিকে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দিচ্ছে।
২০ অক্টোবরের এই বিবৃতিটি গাজার উন্নয়নের বিষয়ে আসিয়ান উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) বিবৃতি প্রদানের সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল। আসিয়ান জিসিসি-র সঙ্গে তার প্রথম শীর্ষ সম্মেলন করেছে এবং সেই অংশীদারিত্বের সম্ভাব্যতা উপলব্ধি করেছে। এই ভাবে গাজা সঙ্কট সত্ত্বেও আলোচনা স্থগিত করেনি। পাঁচ অনুচ্ছেদের বিবৃতিগুলিতে আসিয়ানের নিজস্ব মতই রেখেছে, যাতে এটি একটি স্থিতিশীল যুদ্ধবিরতি, আটক থাকা বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তির সুরক্ষা, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), আরব লিগ, মিশর এবং জর্ডন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করতে অতিরিক্ত সমর্থন-সহ একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানায়। এই অনুচ্ছেদটিতে জিসিসি-কে ছাড় দেওয়া হয়। কারণ এতে আসিয়ান-এর কোনও বিশেষ ভূমিকা নেই।
আসিয়ান জিসিসি-র সঙ্গে তার প্রথম শীর্ষ সম্মেলন করেছে এবং সেই অংশীদারিত্বের সম্ভাব্যতা উপলব্ধি করেছে। এই ভাবে গাজা সঙ্কট সত্ত্বেও আলোচনা স্থগিত করেনি।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি শীর্ষ সম্মেলনে আসিয়ান নেতারা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন, ভয়ানক মানবিক সঙ্কট ও বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। তাদের সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়া-আসিয়ান মেলবোর্ন ঘোষণায় উদ্বাস্তু, মানবিক পুনর্গঠন, মানবিক প্রবেশাধিকার এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
যাই হোক, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর যখন রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে অবিলম্বে স্থিতিশীল মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি গাজা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, তখন ১১টি আসিয়ান সদস্যের মধ্যে মাত্র ন’টি দেশ এটির পক্ষে ভোট দেয়। কম্বোডিয়া অনুপস্থিত থেকেছে এবং ফিলিপিন্স মতদানে বিরত ছিল। আসিয়ান মন্ত্রীরা তাদের নিজস্ব বা তাদের অংশীদারদের সঙ্গে যে সাধারণ অবস্থানগুলি ঘোষণা করে চলেছেন তা সত্ত্বেও ১১টি দেশই রাষ্ট্রপুঞ্জে একসঙ্গে ভোট দেয়নি। তাদের মতদানের বিন্যাসও তাদের আলোচনা অংশীদারদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না, বিশেষ করে যারা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং এর মতো উন্নত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। বিস্তৃত ভাবে বলতে গেলে, আসিয়ান দেশগুলি বেশির ভাগই সূক্ষ্মতা-সহ গ্লোবাল সাউথ লাইন অনুসরণ করছে।
গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ রাশিয়ার দ্রুত নিন্দা করেছিল, যখন রাশিয়া ইউক্রেনে অনুপ্রবেশ করেছিল। কিন্তু এখন ইজরায়েল এবং পশ্চিমের অবস্থানের যাচাই-বাছাই আর পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং সব কিছুই আসলে আসিয়ানের অস্থায়ী অবস্থাকে দর্শায়।
আরব লিগ, অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এবং ব্রিকসের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলিতে পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গিয়েছে। সেই বিষয়েও স্পষ্টতা এখনও অনুপস্থিত। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জে ফিলিস্তিনকে অতিরিক্ত অধিকার প্রদানের ভোটে সিঙ্গাপুর ইজরায়েলপন্থী হওয়া সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং পরে স্পষ্টীকরণের একটি বিবৃতিও জারি করেছে।
আসিয়ানে ঐকমত্যের অভাব
স্বাভাবিক ভাবেই, গাজা সঙ্কট নিয়ে আসিয়ান দেশগুলির নিজেদের মধ্যে একই অবস্থান নয়। ১৯৫৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার দরুন ইজরায়েলের সঙ্গে মায়ানমারের প্রাচীনতম সম্পর্ক রয়েছে। কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনামেরও সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ড এবং ফিলিপিন্সের মতো ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আসিয়ান-এর মুসলিম প্রধান দেশ অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেই ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না এবং তীব্র ভাবে প্যালেস্তাইনপন্থী। ন্যায্য সমাধানের আহ্বান এবং ফিলিস্তিন সমস্যা আসিয়ান নথিতে বারবার আলোচিত হয়েছে। আসিয়ান-এর ১১তম সদস্য তিমুর লেস্তেও ২০০২ সাল থেকে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
আসিয়ান-এর মুসলিম প্রধান দেশ অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেই ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না এবং তীব্র ভাবে প্যালেস্তাইনপন্থী।
গত দুই দশকে ইজরায়েল আসিয়ানের সঙ্গে তার বাণিজ্যে উন্নতি করেছে। তাদের কৃষি, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা রয়েছে। ভিয়েতনামের বাণিজ্য ২০২২ সালে ১৮ শতাংশ বেড়ে ২.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। তারা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে একটি এফটিএ-তে স্বাক্ষর করে। ২০২২ সালে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ৩.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তাইল্যান্ডের সঙ্গে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ফিলিপিন্সের সঙ্গে ০.৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মালয়েশিয়ার সঙ্গে ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়।
ইজরায়েলের দখলের আইনি প্রশ্ন
ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইজরায়েলি দখলকে অবৈধ ঘোষণা, ইজরায়েলি সেনাদের অপসারণ এবং ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল। আইসিজে-তে এই কার্যক্রমগুলি আইসিজে-র আগেকার দক্ষিণ আফ্রিকার মামলা থেকে ভিন্ন, যা সরাসরি হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং গণহত্যা চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ইজরায়েলকে অভিযুক্ত করে। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার বিদেশমন্ত্রীরা ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইজরায়েলের দখলের আইনি প্রশ্নে আইসিজে-তে ভাষণ দিয়েছেন। তাঁরা আইসিজে-র ঘোষণা চেয়েছিলেন যে, ইজরায়েলি দখল সম্পূর্ণ ভাবে অবৈধ এবং এর অবসান ঘটাতে হবে। এটি আইসিজে-কে প্রথম বারের মতো দ্বিতীয় বার তলিয়ে দেখতে বাধ্য করবে। কারণ ১৯৬৭ সাল থেকে ইজরায়েল যতটা ভূমি দখল করে ছিল, সেই দখলদারিত্বের আইনি পরিণতিগুলি খতিয়ে দেখবে আইসিজে।
আসিয়ানের দ্বিধা
ফিলিস্তিন প্রসঙ্গটি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং যেহেতু এটি আবার প্রকাশ্যে এসেছে, আসিয়ান সদস্যদের তাদের জাতীয় নীতিগুলিকে সামনে রেখে অবস্থান নেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, যা একটি পূর্ণাঙ্গ আসিয়ান ঐকমত্যকে বাধা দেয়। অভ্যন্তরীণ ভাবে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া বিশেষ করে প্রসঙ্গটি প্রভাবশালী মুসলিম সম্প্রদায়গুলিকে উগ্রপন্থী করে তুলতে চায় না এবং তাই প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য কিছু পদক্ষেপ করতে হবে। আন্তর্জাতিক ভাবে, আসিয়ান তাদের কেন্দ্রীয়তা এবং গুরুত্বের জন্য এটিকে আর একটি চ্যালেঞ্জ মনে করে। কারণ ইউক্রেনের মতো এটি তাদের তৈরি বা তাদের পছন্দের সঙ্কট নয়। তারা এখন দক্ষিণ চিন সাগর এবং মায়ানমারের সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যেখান থেকে গাজার মতো সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি ঘটলে মনোযোগ সরে যেতে বাধ্য হবে।
আন্তর্জাতিক ভাবে, আসিয়ান তাদের কেন্দ্রীয়তা এবং গুরুত্বের জন্য এটিকে আর একটি চ্যালেঞ্জ মনে করে। কারণ ইউক্রেনের মতো এটি তাদের তৈরি বা তাদের পছন্দের সঙ্কট নয়।
আসিয়ান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির ক্ষমতার সীমা এবং আঞ্চলিক সংঘাতকে প্রভাবিত করার অক্ষমতা উপলব্ধি করেছে। সুতরাং, আসিয়ান একটি সংশয়ের সম্মুখীন। এই রূপান্তরকালীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করার জন্য এটিকে অবশ্যই তার নিজস্ব পরিসর খুঁজে পেতে হবে। কারণ যে নীতিগুলির উপর ভিত্তি এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং অব্যাহত রয়েছে তা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। এই ধরনের আঞ্চলিক সঙ্কট - যার আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে – কী ভাবে মোকাবিলা করা যায় আসিয়ানকে সে বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গিতে আরও সংহতি আনতে হবে।
গুরজিত সিং জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, আসিয়ান এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি এশিয়া আফ্রিকা গ্রোথ করিডোরের (এএজিসি) সিআইআই টাস্ক চেয়ার ফোর্সের সভাপতি।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.