Author : Gurjit Singh

Published on Mar 16, 2024 Updated 0 Hours ago

আসিয়ান-জিসিসি অংশীদারিত্বের নেপথ্যে সদর্থক মনোভাব থাকলেও উভয় পক্ষের সদস্যদের মধ্যে উন্নততর সহযোগিতা আগ্রহের প্রয়োজন রয়েছে।

আসিয়ান-জিসিসি শীর্ষ সম্মেলন: নতুন অংশীদারিত্বের সূচনা

২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়া আসিয়ান-গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) বৈঠকের নিজস্ব একটি তাৎপর্য রয়েছেহামাস-ইজরায়েল সঙ্কট গালফ রাষ্ট্রগুলির নজর কাড়া সত্ত্বেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিসিসি-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন অনন্য হয়ে উঠেছে।

জিসিসি আসিয়ান-এর নিরবচ্ছিন্ন অংশীদার নয় এবং মাত্র সাম্প্রতিক বছরগুলিতেই আগ্রহ প্রদর্শন করেছে। আসিয়ানও তার আলাপ-আলোচনা এবং ক্ষেত্রীয় অংশীদার হিসাবে উন্নত দেশগুলির উপর মনোনিবেশ করেছে। জিসিসি দেশগুলির মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিই (ইউএই) আসিয়ান-এর একমাত্র সেক্টরাল পার্টনার বা ক্ষেত্রীয়  অংশীদারজিসিসি যে আসিয়ান-এর সঙ্গে একটি শীর্ষ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ছিল সেই শান্তির বহিঃপ্রকাশ, যা উভয় দেশেরই চিরাচরিত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে বিরাজমান অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন করার আগ্রহকে দর্শায়। জিসিসি ট্রয়কা ২০১৮ সালের রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ বা ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে (ইউএনজিএ) আসিয়ান-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় এবং পরের বছর ইউএনজিএ-তেও বিদেশমন্ত্রীরা সাক্ষাৎ করেন।

 

আসিয়ান-জিসিসি-র পুনরুজ্জীবিত অংশীদারিত্ব একটি শান্তিপূর্ণ পশ্চিম এশিয়ার ফল

আসিয়ান-জিসিসি-র পুনরুজ্জীবিত অংশীদারিত্ব একটি শান্তিপূর্ণ পশ্চিম এশিয়ার ফলযৌথ বিবৃতি থেকে এটির সুপরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তাদের অন্বেষণ নির্ভর করবে এই অঞ্চলে বিদ্যমান শান্তির ধারাবাহিকতার উপর, যা বর্তমানে হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে। টিকে দু’বছরে এক বার করে আয়োজন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী বৈঠক ২০২৫ সালে মালয়েশিয়ায় হওয়ার কথা।

 

ক্রমবর্ধমান আগ্রহ

আসিয়ান-এর তিনটি বিস্তৃত উদ্দেশ্য রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি পৃথক আসিয়ান দেশগুলির নেতৃত্বাধীন, যাদের আবার পৃথক পৃথক জিসিসি দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তেমন অনেক দেশের জন্যই প্রবাসী এবং রেমিট্যান্স বা অর্থপ্রেরণ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ফিলিপিন্সের সুবিশাল সংখ্যক প্রবাসী গালফ দেশগুলিতে বসবাস করেন এবং প্রচুর পরিমাণে অর্থ প্রেরণ করেন; তাঁদের কল্যাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমগ্র গালফ প্রেক্ষিতে না হলেও আসিয়ান-এর প্রধান মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেইয়ের জন্য হজ কোটা সৌদি আরবের নিরিখে আর কটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

আসিয়ান দেশগুলি গালফ দেশগুলির সঙ্গে বিশেষ করে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং তেল ও গ্যাস সংক্রান্ত বিষয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে আগ্রহী। আসিয়ান দেশগুলি বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) অধীনে চিন থেকে এফডিআই এবং বিদেশি অর্থায়নে অবকাঠামো প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রাপক। তাদের বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে গালফ দেশগুলি একটি বড় ভূমিকা পালন করে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি বিশেষ করে পৃথক আসিয়ান দেশগুলির দিকে নজর দিলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আলোচনার সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি

গালফ রাষ্ট্রগুলির জন্য প্রধান উদ্দেশ্য হল, এমন এক অঞ্চলের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ে তোলা যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জিসিসি-র ভারতের সঙ্গে একটি সুদৃঢ় সম্পর্ক থাকার দরুন ইন্দো-প্যাসিফিক পদ্ধতিটির উন্নতি সাধনের আকাঙ্ক্ষার অর্থ হল আসিয়ান-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। জিসিসি নীতির বৈচিত্র্যকরণের তাৎপর্য হল আসিয়ান-এর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গভীরতর করার আকাঙ্ক্ষা। পৃথক জিসিসি দেশ এবং পৃথক আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। দুটি আঞ্চলিক সংস্থার মধ্যে একটি সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও সম্ভবপর।

আসিয়ান চায় যে, জিসিসি দেশগুলি আসিয়ান কানেক্টিভিটি ২০২৫ রুব্রিকের অধীনে প্রকল্পগুলিতে অংশগ্রহণ করুক, যা সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছিল এটি আর কটি সুনির্দিষ্ট প্রকল্প, যার সঙ্গে আসিয়ান সংযোগ থাকতে পারে। ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ-ইকোনমিক করিডোর (আইএমইসি) ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জাকার্তায় ভারত-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের সঙ্গে আসিয়ান দেশগুলিতে সম্প্রসারিত এই ধরনের সংযোগের কথা বলেছিলেন। তাই আলোচনার পাশাপাশি ভারত যা চায়, জিসিসি তার পরিপূরক। আসিয়ান কি জিসিসি-সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্বকে স্বাধীন ভাবে দেখছে না কি তা ভারতকেও তার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেছে? এখনও পর্যন্ত আসিয়ান সর্বদা ভারতকে একটি পৃথক অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করে এসেছে এবং গ্লোবাল সাউথেও স্বাধীন ভাবে অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে কাজ করেছে। ভারত-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর পরামর্শের উপর ভিত্তি করে আসিয়ান গালফ দেশগুলির সাথে একটি আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প নির্মাণ করবে, যার মধ্যে ভারত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটিকে গালফ দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গি বলেও মনে করা যেতে পারে। আসিয়ান নিজেদের দেশের মধ্যে আসিয়ান সংযোগ প্রকল্পে জিসিসি বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী বলে মনে করা হচ্ছে, ঠিক যেমনটা বিআরআই করেছে।

জিসিসি এবং আসিয়ান দুই পক্ষই বিশ্বাস করে যে, তারা তাদের অঞ্চলের নিরিখে কেন্দ্রীয় অবস্থানে রয়েছে এবং বর্তমানে দুটি অঞ্চলের সংযোগ ঘটা জরুরি। আসিয়ান সংযোগের জন্য জিসিসি এবং আসিয়ান-এর ব্যবসা, শিক্ষা ক্ষেত্র ও গণমাধ্যমের ব্যক্তিদের মধ্যে একটি প্রাক-সম্মেলন বৈঠক সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তারা সম্মত হয়েছিল যে, এমনকি ট্র্যাক স্তরেও অপরিহার্য উপাদানটি ছিল কৌশলগত ভাবে এগিয়ে যাওয়া এবং আরও বেশি ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি নজর দেওয়া। গালফ চেম্বার ফেডারেশন এবং আসিয়ান একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে পারে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তা নিয়ে পরবর্তী বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

 হরমুজ প্রণালী-সহ গালফ এবং মালাক্কা প্রণালী-সহ আসিয়ান এশিয়ার কৌশলগত ঘাঁটি রূপে বিবেচিত। তারা কি একে অপরের প্রতি নিজেদের মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারে? এবং এই মনোযোগ কি অটুট রাখা সম্ভব? কারণ, জিসিসি এবং আসিয়ান ১৯৯০ সাল থেকে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। নিশ্চিত ভাবেই জিসিসি এবং আসিয়ান উভয়ই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছেএবং সেই কারণেই বর্ধিত সহযোগিতা যৌক্তিক পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। উভয় পক্ষই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো একে অপরকে সমর্থনকারী দেশকে নিজেদের অংশীদার বলে মনে করে।

 

নিশ্চিত ভাবেই জিসিসি এবং আসিয়ান উভয়ই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছেএবং সেই কারণেই বর্ধিত সহযোগিতা যৌক্তিক পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। উভয় পক্ষই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো একে অপরকে সমর্থনকারী দেশকে নিজেদের অংশীদার বলে মনে করে।

 

তা সত্ত্বেও কথা স্পষ্ট নয় যে, তারা সেই অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে না কি আসিয়ানে আরও গালফ বিনিয়োগ আনার জন্য এই সকল অংশীদারের পূর্ব পরিচয়কে কাজে লাগাবে?

জিসিসি এবং আসিয়ান-এর সূচনার ব্যবধান পাঁচ বছর। আসিয়ান ১৯৭৬ সালে পাঁচটি সদস্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১০। জিসিসি ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি তার সদস্য। জিসিসি-র মধ্যে বিরোধপূর্ণ গোলমালের তুলনায় সম্ভবত আসিয়ান ক্যকে কম চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়। উভয়ই তাদের অঞ্চলে নিজেদের সংগঠনের কেন্দ্রিকতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আসিয়ান-এর কোন প্রকৃত প্রভাবশালী শক্তি নেই। জিসিসি মূলত সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরবের কার্যকলাপ দ্বারা চালিত যেখানে বাহরাইন এবং কাতার প্রায়শই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এখন যেহেতু উভয় গোষ্ঠীই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাই তারা একে অপরের কেন্দ্রিকতাকে সমর্থন করতে আগ্রহী এবং সম্ভবত এমন এক কৌশলগত ক্ষেত্র তৈরি করতে চায়, যেখানে তাদের সদস্যদের মধ্যে নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে উঠতে পারে।

এর জন্য তাদের ২০২৪ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে সহযোগিতার সর্বপ্রথম অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সেটি বাস্তবায়িত হলে তা সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করবে। যা দেখার, তা হল, এটি অর্থায়ন কী ভাবে হবে। জিসিসি এবং আসিয়ান দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতায় আগ্রহী হলেও আসিয়ান তার উন্নত এবং উন্নয়নশীল অংশীদারদের মধ্যে পার্থক্য করার কাজটিকে কঠিন বলে মনে করে এবং সর্বদা আশা করে যে, অংশীদার তাদের সমস্ত কার্যকলাপের অর্থায়ন করবে। সহযোগিতার এই অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বেশ কিছু দেশ দ্বারা দ্বিপাক্ষিক ভাবে চালানো অর্থনৈতিক এবং ধর্মভিত্তিক বিনিময়ের ঊর্ধ্বে উঠে বিকল্প হয়ে দাঁড়ানোবর্তমানে তারা সন্ত্রাসবাদ দমন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মেরুকরণ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর নজর দিতে আগ্রহী।

 

বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি

২০২২ সালে জিসিসি-আসিয়ান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এটি জিসিসি দেশগুলিকে চি, ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর (ইইউ) পরেই আসিয়ান-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তোলে। যাই হোক, বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, প্রায় ৫.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যসম্পন্ন সম্মিলিত জিডিপি-সহ জিসিসি এবং আসিয়ান অনেক বেশি পরিমাণে বাণিজ্য করতে সক্ষম

২০১০ সালে আসিয়ান-জিসিসি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালে ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে এবং তার পর দ্রুত বেড়ে ২০২২ সালে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আসিয়ান-২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে জিসিসি-র বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বেশির ভাগই এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে এবং প্রধানত তা প্রদান করা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে। জিসিসি-আসিয়ান অংশীদারিত্বের মূল বিষয় হল সমান অধিকার অর্জন করা, যেখানে প্রতিটি সদস্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেসিঙ্গাপুর জিসিসি-র ইতিমধ্যেই ২০১৩ সালে একটি এফটিএ কার্যকর হয়েছে সেই চুক্তির আওতায় ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হওয়া বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারঅন্য আসিয়ান দেশগুলি কি জিসিসি-সঙ্গে পৃথক এফটিএ-তে স্বাক্ষর করবে, না কি আসিয়ান জিসিসির একটি বাণিজ্যিক ব্যবস্থা থাকবে?

জিসিসি থেকে প্রধান রফতানিমূলক পণ্য হল অপরিশোধিত তেল এবং অন্য দিকে আসিয়ান প্রধানত ইলেকট্রনিক্স এবং যন্ত্রপাতি রফতানি করে থাকে। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া জিসিসি দেশগুলিতে হালাল বাজারকে আরও বেশি কোণঠাসা করবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং হালাল সংক্রান্ত গুণমানের জন্য সার্টিফিকেশন বা শংসাপত্র প্রদানের প্রক্রিয়াগুলির সমন্বয়কাজ শুরু করেছে। সিঙ্গাপুর একটি আর্থিক কেন্দ্র হিসাবে দুবাই, আবু ধাবি, মানামা এবং রিয়াধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছে। নির্ভরযোগ্য তেল সরবরাহ ও জ্বালানির রূপান্তরের আগ্রহের কথা বলা হলেও জিসিসি দেশগুলি তেলের উপর অতিরিক্ত মনোযোগ প্রদান করছে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির পরিমাণ যথেষ্ট কম। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি আয়োজিত কপ২৮ শীর্ষ সম্মেলনে সেই কথাই উঠে এসেছে। আসিয়ান এ বিষয়ে আগ্রহী যে, তারা যে আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে, সেখানে জিসিসি দেশগুলি বিনিয়োগ করা উচিত।

 

আসিয়ান-জিসিসি শীর্ষ সম্মেলন

জিসিসি এবং আসিয়ান-এর মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলের ভিত্তি হিসাবে শান্তির উপরেই মনোযোগ দেওয়া হয়। আসিয়ান তার মডেল হিসাবে ট্রিটি অফ অ্যামিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন-কে (টিএসি) তুলে ধরেছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সৌদি আরব টিএসি-তে যোগদান করেছে এবং বর্তমানে জিসিসি দেশগুলি টিএসি-র সঙ্গে সংযুক্ত। এটি তাদের একটি অভিন্ন সাধারণ মঞ্চ প্রদান করে। রায়েল-হামাস সঙ্কটের পুনরুত্থান আবার জিসিসি এবং আসিয়ান-এর অভ্যন্তরের পার্থক্যকে দর্শিয়েছে। আসিয়ান-এর সভাপতি হিসাবে ইন্দোনেশিয়া এবং আসিয়ান-জিসিসি অংশীদারিত্বের বর্তমান সমন্বয়কারী হিসাবে মালয়েশিয়া এ কথা সুনিশ্চিত করেছে, যে সমসাময়িক টালমাটাল পরিস্থিতি সত্ত্বেও শীর্ষ সম্মেলন সফল হয় এবং গাজা বিষয়ে আসিয়ান বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতি জিসিসি-সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতি বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম না হলেও এগুলি মানবিক আইন ও পদক্ষেপ, নাগরিক সুরক্ষা এবং একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু সাধারণ মতামত তুলে ধরেছে।

এ নিয়ে আসিয়ান দেশগুলি তাদের নিজস্ব অবস্থান গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিপিন্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ইরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে; সিঙ্গাপুর হামাসের নিন্দা করেছে; ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া আরও বেশি করে প্যালেস্তাইনের পক্ষ অবলম্বন করেছে এবং ইরায়েলের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্য ছটি আসিয়ান দেশ তাদের মতামত প্রকাশে দ্বিধাগ্রস্ত থেকেছে। অবস্থানের এই ভিন্নতা একটি দুর্বল আসিয়ান-জিসিসি বিবৃতিকেই তুলে ধরেছে।

২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ইউএনজিএ ভোটে অবিলম্বে মানবিক সন্ধি ও গাজার ত্রাণ প্রদানের দাবিতে আহ্বান জানিয়ে ১২০টি দেশ পক্ষে, ১৪টি দেশ বিপক্ষে মত দান করেছে এবং ৪৫টি মত দানে বিরত থেকেছে। জিসিসি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আসিয়ান দেশগুলির কিছু বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়; ব্রুনে, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, এমনকি তিমুর লেস্তে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ফিলি্পিন্স প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয় এবং কম্বোডিয়া অনুপস্থিত থেকেছে

আসিয়ান-জিসিসি অংশীদারিত্বের নেপথ্যে সদর্থক মনোভাব থাকলেও উভয় পক্ষের সদস্যদের মধ্যে উন্নততর সহযোগিতা ও আগ্রহের প্রয়োজন রয়েছে। এটি এমন কয়েকটি দেশ দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা নজর রাখবে যে, কী ভাবে আসিয়ান সম্পর্কিত অংশীদারিত্বের সঙ্গে বা তা ব্যতীত সর্বাধিক লাভ অর্জন করা যায়। উভয় অঞ্চলের কৌশলগত বিবর্তন বর্তমানে তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে

 


গুরজিৎ সিং জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, আসিয়ান ও অন্যান্য আফ্রিকান দেশে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.