Author : Sarah Teo

Published on Mar 25, 2023 Updated 0 Hours ago
ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরে আসিয়ান এবং বহুপাক্ষিকতাবাদ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

এই নিবন্ধটি  ‘‌রাইসিনা ফাইলস ২০২৩’‌ জার্নালের একটি অধ্যায়।


ইন্দো–প্যাসিফিকের বহুপাক্ষিক স্থাপত্য গত দশকে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে আছে‌ ২০১১ সালে সম্প্রসারিত পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন (ইএএস), যা আশাবাদকে অনুপ্রাণিত করেছে;‌ ২০১২ সালে অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)–এর বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরে প্রথমবারের জন্য একটি যৌথ ইশতেহার জারি করতে ব্যর্থতা;‌ এবং ভূ–রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধির কারণে বহুপাক্ষিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্বেগ।

নিশ্চিতভাবে বলা যায় আঞ্চলিক ফোরামগুলির নেটওয়ার্ক, যাকে জনপ্রিয়ভাবে একটি ‘‌অ্যালফাবেট স্যুপ’‌ হিসাবে বর্ণনা করা হয়, তা সংখ্যা ও অ্যাজেন্ডা দুটোর  নিরিখেই ঠান্ডা যুদ্ধ–পরবর্তী যুগের বেশিরভাগ সময়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি মূলত প্রতিষ্ঠানগুলির জীবনকাল সংক্রান্ত প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, এবং সেই প্রত্যাশাই ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রাতিষ্ঠানিক ভূদৃশ্যে এগুলির ক্রমবর্ধমান সংখ্যার দিকে চালিত করেছে। আঞ্চলিক বহুপাক্ষিকতার ফাঁকগুলি মোকাবিলা করার জন্য, এবং বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মগুলির পরিপূরক হিসাবে বা সেগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য, বিভিন্ন মাত্রায় এই নতুন ব্যবস্থার উদ্ভব হয়। এই পটভূমিতে এই নিবন্ধটি আসিয়ান–এর ভূমিকার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এই অঞ্চলের আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক স্থাপত্যের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ খতিয়ে দেখেছে।

অতীত: আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক স্থাপত্যে আসিয়ান

ইন্দো–প্যাসিফিকের বিদ্যমান বহুপক্ষীয় ফোরামগুলি তুলনামূলকভাবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদিও ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠাতা পাঁচ সদস্য আসিয়ান চালু করেছিল (এবং ব্রুনেই ১৯৮৪ সালে ষষ্ঠ সদস্য হিসাবে যোগদান করেছিল), সংগঠনটি কিন্তু ১৯৯০–এর দশকের শেষের দিকে আজকের আসিয়ান–১০–এর পরিচিত আকারটি  নেয়। এশিয়া–প্যাসিফিক ইকনমিক কো–অপারেশন (অ্যাপেক) প্ল্যাটফর্ম ও আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম (এআরএফ) ১৯৮০–র দশকের শেষের দিকে এবং  ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিকে ঠান্ডা যুদ্ধ–পরবর্তী নতুন পরিবেশের প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আসিয়ান প্লাস থ্রি (এপিটি) ও ইএএস আবার ১৯৯০–এর দশকের শেষদিকে এশীয় আর্থিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিকতাকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন থেকে তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০০–এর দশকের শেষের দিকে প্রতিরক্ষা কূটনীতি কার্যক্রমের চাহিদা মেটাতে আসিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক (এডিএমএম) ও এডিএমএম–প্লাস চালু করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই অঞ্চলের দেশগুলি আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি (আরসিইপি) ও ট্রান্স–প্যাসিফিক অংশীদারির ব্যাপক ও প্রগতিশীল চুক্তির (সিপিটিপিপি) মতো মেগা মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই বৃহত্তর বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার পাশাপাশি, মালাক্কা স্ট্রেট প্যাট্রোল ও ত্রিপক্ষীয় সমবায় চুক্তির মতো বিভিন্ন অধিক–লক্ষ্যযুক্ত ক্ষুদ্রতর উদ্যোগও তৈরি হয়েছে।

এই সমস্ত উদ্যোগের সবগুলি আসিয়ান–কেন্দ্রিক বা নেতৃত্বাধীন নয়। তবে এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই যে বৃহত্তর ইন্দো–প্যাসিফিক (বা এশিয়া–প্যাসিফিক) অঞ্চলে এই সংস্থাটি বহুপাক্ষিক স্থাপত্যের কেন্দ্রস্থলে ছিল। এটি এমন একটি ভূমিকা যা আসিয়ান শীতল যুদ্ধের অবসানের পরে নিজেই নিজের জন্য চেয়েছিল, এবং এমন একটি  উদ্যোগ যা অ–আসিয়ান অংশীদারেরা ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে। ২০০৬ সালে ৩৮তম আসিয়ান অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকের যৌথ মিডিয়া বিবৃতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম উল্লেখিত হয় ‘‌আসিয়ান কেন্দ্রীয়তা’‌র ধারণাটি, যা এই সংগঠনটিকে আঞ্চলিক সহযোগিতার নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায়, এবং অ–আসিয়ান দেশগুলিকে এই অঞ্চলের সঙ্গে জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে আসিয়ান নিয়ম ও প্রক্রিয়া মাথায় রাখার পরামর্শ দেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে আঞ্চলিক বহুপাক্ষিকতার কেন্দ্র হিসাবে আসিয়ান–কে তুলে ধরার অর্থ হল আসিয়ান মডেলের মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক, বড়– তাঁবুর সম্পৃক্ততার বিস্তৃত আলিঙ্গন। এআরএফ, ইএএস, ও এডিএমএম–প্লাস–এর সদস্যপদ এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়। প্রকৃতপক্ষে, আসিয়ান–১০ নিজেই প্রদর্শন করে যে কীভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা ও সংলাপ সহজতর করা যেতে পারে।

সমমনস্ক ও অ–সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতার এই আসিয়ান মডেলটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভাল কাজ করেছে। ১৯৯০–এর দশকের শুরু থেকে ২০০০–এর দশকের শেষের দিক পর্যন্ত পরিস্থিতি আসিয়ান পদ্ধতির জন্য অনুকূল প্রমাণিত হয়েছিল। প্রধান বা আঞ্চলিক শক্তিগুলির পক্ষ থেকে একে অপরের সঙ্গে এবং একটি বহুপাক্ষিক স্থাপত্যের সঙ্গে জড়িত থাকার একটি সাধারণ ইচ্ছা ছিল, যা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশগুলিকে প্রাধান্য দিয়েছিল। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আসিয়ান এই সময়েও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল; যেমন ইএএস সদস্যপদ নিয়ে বিতর্ক অথবা এশীয় আর্থিক সঙ্কট ও ৯/১১ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আসিয়ান–মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক। এগুলোর দিকে নজর দিলে বোঝা যায় যে সেই সময়েও আসিয়ান এমন অনেক ভূ–রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল যার সঙ্গে মৌলিকভাবে বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জগুলির মিল আছে। আসিয়ান তবুও এই চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে কাজ করতে এবং আঞ্চলিক বহুপাক্ষিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল। যেমন চিন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও এই তিনটি উত্তর–পূর্ব এশিয়ার দেশ ১৯৯৭ সালে চালু হওয়া এপিটি কাঠামোতে অংশ নিতে সম্মত হয়েছিল। এমনকি সাধারণভাবে বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়াও ২০০০ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির প্রেক্ষাপটে এআরএফ–এর সদস্যপদ লাভ করে। বলা যায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতার আসিয়ান মডেলের যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছিল।

এই অনুকূল পরিস্থিতিগুলি পরবর্তিকালে আরও বিকশিত হয়েছিল, এবং পর্যবেক্ষকেরা ২০০০–এর দশকের শেষের দিকটিকে আসিয়ানের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে উল্লেখ করেন।[১] ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সঙ্কট বর্তমান  উদারনৈতিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় মার্কিন নেতৃত্বের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছিল, এবং এই পরিস্থিতিটি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছিল। তারপর ২০০০–এর দশকের শেষের দিকে দক্ষিণ চিন সাগরে উত্তেজনা বেড়ে যায়, পূর্ব চিন সাগরে সংঘর্ষের কারণে চিন–জাপান সম্পর্ক আরও খারাপ হয়, এবং উত্তর কোরিয়া তার প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। বিদেশনীতিতে বেজিংয়ের আপাত–দৃঢ়তা এবং বারাক ওবামা প্রশাসনের অধীনে এশিয়ায় ওয়াশিংটনের ভারসাম্য নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে চিন–মার্কিন সম্পর্ক আরও প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে প্রবেশ করে।

এই ঘটনাগুলির প্রভাব বহুপাক্ষিকতার আসিয়ান মডেলের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে।[২] পরবর্তিকালে চতুর্মুখী নিরাপত্তা সংলাপ (কোয়াড) ও অস্ট্রেলিয়া–ইউনাইটেড কিংডম–ইউএস (অওকাস) বিন্যাসের মতো ফোরামের পাশাপাশি ফ্রি অ্যান্ড ওপন ইন্দো–প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ–এর মতো নেটওয়ার্কগুলি আঞ্চলিক স্থাপত্যের মধ্যে সম্পর্কের একটি অতিরিক্ত স্তর হিসাবে আবির্ভূত হয়। এরপর চিন–মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিপ্রেক্ষিতে কোড অফ কনডাক্ট নিয়ে আলোচনার ধীর অগ্রগতির মধ্যে দক্ষিণ চিন সাগরের সামরিকীকরণ এবং আসিয়ান–নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফর্মগুলিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনাগ্রহের প্রেক্ষিতে নতুন ক্ষুদ্রতর বা বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার উত্থান গভীরভাবে উৎসাহিত হয়েছে। তার ফলে আসিয়ান–এর ভূমিকা বা আঞ্চলিক বিষয়ে এর দৃষ্টিভঙ্গির অব্যাহত প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ভিন্ন ভিন্ন আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির এই ঘটনাগুলি সম্পর্কে নিজস্ব মূল্যায়ন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু একটি প্রাতিষ্ঠানিক লেন্সের মাধ্যমে তাকানো হলে উদ্বেগের প্রধান উৎস হবে আসিয়ান–এর সংহতি ও কেন্দ্রীয়তার সম্ভাব্য ক্ষয়। এই বিষয়টি বহুপাক্ষিক স্থাপত্যের আকৃতি ও কার্যকারিতা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দেশগুলির অগ্রাধিকারকে রূপ দেবে। এই গতিশীলতার কথা মাথায় রেখে পরবর্তী বিভাগে তিনটি এমন বর্তমান প্রবণতা বিবেচনা করা হয়েছে যা নিকটবর্তী থেকে মধ্যমেয়াদি ভবিষ্যতে আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক স্থাপত্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

বর্তমানদেখার জন্য তিনটি প্রবণতা

প্রথমত, বহুপাক্ষিক সহযোগিতার চালক হিসেবে ‘‌সমমনস্কতা’‌র ধারণাটি বড় হয়ে উঠেছে। ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, ঐতিহাসিকভাবে বহুপাক্ষিকতাবাদের জন্য এক ধরনের সমমনস্কতা একটি প্রয়োজনীয় শর্ত। যাই হোক, অতীতের আঞ্চলিক উদ্যোগগুলিতে, বিশেষ করে আসিয়ান–এর নেতৃত্বে যা গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে সমমনস্কতা হিসাবে অভিন্ন স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতটি বেশি প্রতিফলিত হয়েছিল;‌ আর সাম্প্রতিক ব্যবস্থাগুলি রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও সিস্টেমের পরিপ্রেক্ষিতে সমমনস্কতার উপর নজর কেন্দ্রীভূত করেছে বলে মনে হচ্ছে৷ বিশেষ করে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, চিন–মার্কিন প্রতিযোগিতা ও মায়ানমারের রাজনৈতিক সঙ্কটের আলোকে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। অক্টোবর ২০২২–এ প্রকাশিত হোয়াইট হাউসের সর্বশেষ ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং  গণতন্ত্রের সামনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে রাশিয়া ও চিনের মতো ‘‌শক্তি যারা সংশোধনবাদী বিদেশনীতির সঙ্গে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সংযুক্ত করে’‌।[৩] ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলনে — যেখানে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠকে বাদ রাখা হয়েছিল — গণতন্ত্র ও অ–গণতন্ত্রের মধ্যে বিভাজনের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

কোয়াড ও চিপ ৪ উদ্যোগের মতো নতুন আঞ্চলিক ব্যবস্থাতেও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সম্পর্কে অনুরূপ অনুভূতি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথমটির (অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত) উৎপত্তি হয়েছিল জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ‘‌এশিয়ার গণতান্ত্রিক নিরাপত্তা হীরা’‌ তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা থেকে’‌ আর দ্বিতীয়টিকে (বর্তমানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত) তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং–ওয়েন ‘‌গণতন্ত্রের চিপস’‌–এর জন্য সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।[৪]

আসিয়ান চার্টারেও গণতন্ত্রের নীতিগুলি মেনে চলা ও মানবাধিকার প্রচারের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতার কারণে সংগঠনটি সাধারণত ‘‌গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার/কর্তৃত্ববাদ’ নিয়ে বিতর্কে যাওয়া এড়িয়ে গিয়েছে। আসিয়ান নেতৃত্বাধীন সহযোগিতা এইভাবে রাজনৈতিক মূল্যবোধের পরিবর্তে পারস্পরিক স্বার্থ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অপ্রচলিত নিরাপত্তা বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে। আসিয়ান–এর জন্য এই পদ্ধতির স্থিতিশীলতা অবশ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে মায়ানমারে রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর, যেখানে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক জুন্টা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের থেকে ক্ষমতা দখল করেছে।

আসিয়ান কূটনীতিতে অভ্যুত্থানের প্রভাব দ্বিগুণ হয়েছে। এক স্তরে, আসিয়ান তর্কযোগ্যভাবে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন ও মন্ত্রী-পর্যায়ের বৈঠকে জুন্টা থেকে উচ্চস্তরের প্রতিনিধিত্ব রোধে যৌথ ইচ্ছার প্রয়োগ করেছে। অন্য স্তরে আসিয়ান কিন্তু মায়ানমার ও রাশিয়ার সহ–আয়োজিত এডিএমএম–প্লাস ওয়ার্কিং লেভেল মিটিং থেকে সংলাপের কিছু অংশীদারের নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া রোধ করতে পারেনি।[৫] যদি ধরে নেওয়া হয় যে এটি আসিয়ান ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা হয়ে উঠেছে, এবং যদি সেই ঘটনাকে এই অঞ্চলের অন্যত্র ‘সমমনস্ক’‌ নেটওয়ার্কগুলির বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তাহলে বলা যায় সামগ্রিকভাবে ইন্দো–প্যাসিফিকের বহুপাক্ষিক সহযোগিতা আরও বেশি করে রাজনৈতিক মূল্যবোধের সাদৃশ্য দ্বারা চালিত হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক স্থাপত্যে মাঝারি আকারের শক্তিগুলি আরও সুস্পষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলির জন্য অবশ্যই এটি অপরিচিত অঞ্চল হবে না। আসিয়ান–এর প্রাচীনতম সংলাপ অংশীদারদের মধ্যে ক্যানবেরা ও টোকিও আসিয়ান–এর সম্প্রদায়–নির্মাণ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে, এবং আসিয়ান–এর নেতৃত্বাধীন অনেক ফোরামের তারা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আবার উভয় দেশই অ্যাপেক ও ট্রাইল্যাটরাল স্ট্র‌্যাটেজিক ডায়ালগ–এর মতো অ–আসিয়ান গোষ্ঠীর সক্রিয় সূচনাকারী এবং অংশগ্রহণকারী। সেং ট্যান তাঁর ২০১৬–র বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে এই অ–আসিয়ান অংশীদারেরা ‘‌এশিয়ার বহুপাক্ষিক স্থাপত্যের আকৃতি ও সারবত্তাকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে আসিয়ান–এর মতোই প্রভাব ফেলেছে’‌।[৬] এটি অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে, এবং তার পাশাপাশি এই অংশীদারদের নিয়ে ক্ষুদ্রতর স্বল্পপাক্ষিক গোষ্ঠীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।

একটি উদাহরণ হল কোয়াড, যা আঞ্চলিক কূটনীতির একটি নিয়মিত বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। ওয়ার্কিং গ্রুপ, মন্ত্রী-পর্যায়ের বৈঠক বা নেতাদের শীর্ষ বৈঠকে ব্যস্ততা ছাড়াও কোয়াড–এর অ্যাজেন্ডার মধ্যে আছে জলবায়ু পরিবর্তন, অতি–গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি, এবং পরিকাঠামোর মতো বিভিন্ন বিষয়। অওকাস হল পর্যবেক্ষণ করার মতো আরেকটি গোষ্ঠী, বিশেষ করে এটি অবশেষে জাপানকে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রসারিত হতে পারে বলে প্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে।[৭]কোয়াড ও অওকাস প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিকশিত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে আঞ্চলিক স্থাপত্যে তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভূমিকা ক্রমান্বয়ে উন্নত হবে।

যে দেশগুলি ঐতিহ্যগতভাবে আঞ্চলিক কৌশলগত বিষয়গুলি থেকে দূরে ছিল তারাও ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরে নিজেদের জন্য একটি বৃহত্তর প্রোফাইল তৈরি করছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দো–প্যাসিফিকের ধারণাটি বৃহত্তর অঞ্চলে ভারতকে একটি বড় ভূমিকা প্রদান করতে চেয়েছিল। যদিও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে ভারতের আগ্রহ একটি বিতর্কের বিষয় হিসাবে রয়ে গেছে,[৮] তবে কোয়াড এবং তার ইন্দো–প্যাসিফিক ওশন ইনিশিয়েটিভ (আইপিওআই)–এ ভারতের অংশগ্রহণ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির আরও বৃহত্তর অঞ্চলে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনাই তুলে ধরে। দক্ষিণ কোরিয়াও কয়েক বছরের দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর তার ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল প্রকাশ করেছে। কৌশলটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে, এবং অর্থনীতি ও কার্যকরী ক্ষেত্রের দিকে বেশি ঝুঁকে–থাকা সিওলের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি নিরাপত্তা ও কৌশলগত মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করেছে।

উপরন্তু, ব্রিটেন এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার জন্য তার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। এই দেশটি শুধুমাত্র অওকাস বিন্যাসেরই অংশ নয়, আসিয়ান–এর নতুন সংলাপ অংশীদারও। কানাডা, ফ্রান্স ও জার্মানি–সহ অন্য কুশীলবও একইভাবে ইন্দো–প্যাসিফিকের জন্য তাদের সম্পৃক্ততার কৌশল তৈরি করেছে। ২০২৩ সাল থেকে কানাডা, ফ্রান্স ও ব্রিটেন এডিএমএম–প্লাস বিশেষজ্ঞদের ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যক্রমে পর্যবেক্ষক হিসাবে থাকবে। এই ঘটনাগুলি আসিয়ান ও অ–আসিয়ান উভয় চ্যানেলের মাধ্যমে ইন্দো–প্যাসিফিক বহুপাক্ষিকতাবাদে মধ্যশক্তির দেশগুলির ভূমিকা প্রসারিত ও গভীর করার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

তৃতীয়ত, আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক স্থাপত্যে আসিয়ানের কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিঃসন্দেহে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে। কতটা পরিবর্তন হতে পারে তা অবশ্য অস্পষ্ট। অ–আসিয়ান ফোরামগুলির সাম্প্রতিক প্রতিষ্ঠার মধ্যে এটি সম্ভবত একটি আশাব্যঞ্জক লক্ষণ যে এই অঞ্চলের সঙ্গে জড়িত দেশগুলির জন্য আসিয়ান এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আসিয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্সের আগ্রহের কথা আগেই বলা হয়েছে। আসিয়ান ও অস্ট্রেলিয়া, চিন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারির প্রশস্তি এর আরও প্রমাণ বহন করে। এ সব থেকে অন্তত এই সংকেত স্পষ্ট যে সংলাপ  অংশীদার এবং এই অঞ্চলের বাইরের দেশগুলি এখনও এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।

অ–আসিয়ান গোষ্ঠীগুলির তুলনায় আসিয়ান এবং এর ফোরামগুলি তর্কসাপেক্ষভাবে বহুপাক্ষিক সংলাপ ও সহযোগিতার জন্য সমস্ত প্রতিযোগী শক্তির কাছে ইন্দো–প্যাসিফিকের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য চ্যানেল হিসাবে থেকে গিয়েছে। তবুও কেউ এই সম্ভাবনাকেও বাদ দিতে পারেন না যে আসিয়ান–এর অংশীদারেরা, এবং এমনকি সম্ভবত এর নিজস্ব সদস্য রাষ্ট্রগুলিও, আসিয়ান কেন্দ্রিকতার ধারণাকে শুধু মুখে আউড়ে চলবে। সর্বোপরি, আসিয়ান–এর সদস্য রাষ্ট্র বা এর বহিরাগত অংশীদারদের কেউই সংগঠনের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে জড়িত থাকতে বাধ্য নয়, যদি না তারা এটিকে তাদের স্বার্থের অনুকূল বলে মনে করে। আসিয়ান থেকে ইন্দোনেশিয়ার সম্ভাব্য মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ২০১৯ সালে আসিয়ান–নেতৃত্বাধীন বৈঠকগুলিতে আমেরিকার তরফে প্রতিনিধিদলের গুরুত্ব হ্রাসের ঘটনাগুলি এই ধরনের পরিস্থিতির উদাহরণ।

বাস্তবসম্মতভাবে বলতে গেলে, আঞ্চলিক দেশগুলির কাছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ ও সহযোগিতার আসিয়ান মডেলের মূল্য মূলত নির্ভর করবে বৃহত্তর ভূ–রাজনৈতিক গতিশীলতার উপর, যার বেশিরভাগই আসিয়ান–এর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, সম্পর্কের মন্দার সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি এখনও আসিয়ান–নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিকতার মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে জড়িত থাকবে কি না তা অনুমান করা কঠিন। এই প্রেক্ষাপটে, এমনও হতে পারে যে সহযোগিতার আসিয়ান মডেলটি আসিয়ান+১ ব্যবস্থার দিকে আরও বিকশিত হবে। এর কারণ হল, যেমন উপরে উল্লিখিত সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি দেখায়, আসিয়ান ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বহিরাগত অংশীদার উভয়েই একে অপরের সঙ্গে জড়িত থাকাকে মূল্য দেয়। এই ধরনের ব্যবস্থা বৈশ্বিক শক্তি–সম্পর্ক বা আঞ্চলিক ক্ষমতার রাজনীতির ওঠানামা থেকে আরও বেশি দূরে থাকতে পারে, কারণ আসিয়ানকে একবারে শুধু একটি অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এর বিপরীতে এআরএফ, এডিএমএম–প্লাস ও ইএএস–এর মতো বহুপাক্ষিক ফোরামগুলি, যারা অনেক বেশি সদস্যপদ দিয়ে প্রতিযোগী শক্তিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, তারা অ–আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে টানাপড়েনের কারণে বেশি প্রভাবিত হবে। একটি এডিএমএম–প্লাস ওয়ার্কিং লেভেল মিটিং থেকে কিছু সংলাপ অংশীদারের উপরে উল্লিখিত সরে দাঁড়ানোর ঘটনা এর একটি উদাহরণ। এই ধরনের ঘটনার ধারাবাহিকতা কিন্তু অংশগ্রহণকারীদের কাছে এই বৃহত্তর আসিয়ান–নেতৃত্বাধীন ফোরামগুলির উপযোগিতা হ্রাস করবে।

ভবিষ্যৎইন্দোপ্যাসিফিকের বহুপাক্ষিক স্থাপত্যের বিকাশ

উল্লেখিত তিনটি প্রবণতা থেকে ইঙ্গিত গ্রহণ করে আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক স্থাপত্যের আরও সমাপতন (‌ওভারল্যাপ)‌ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ এটি বিভক্তকরণ ও প্রান্তিকীকরণ উভয় চাপের সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরির চেষ্টা করছে। যেহেতু মাঝারি আকারের শক্তিগুলি ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে, এবং  সহযোগিতা যেহেতু ক্রমবর্ধমানভাবে রাজনৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা চালিত হচ্ছে, তাই আরও বহুপাক্ষিক ও স্বল্পপাক্ষিক গোষ্ঠী আবির্ভূত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর থেকে মনে হয় এই অঞ্চলের মূল অংশীদারদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকবে, যাদের সকলেরই আদর্শ ইন্দো–প্যাসিফিক স্থাপত্য সম্পর্কে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।

যেহেতু আসিয়ান–এর মূল্যসংক্রান্ত ধারণা ঐতিহ্যগতভাবে তার আহ্বায়ক ক্ষমতা ও সহযোগিতার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে[৯], যার ভিত্তি অভিন্ন রাজনৈতিক মূল্যবোধের চেয়ে বেশি পারস্পরিক স্বার্থ, তাই এই প্রবণতাগুলি এই অঞ্চলে আসিয়ান–এর ভূমিকার উপর প্রভাব ফেলবে। প্রকৃতপক্ষে, এই নিবন্ধে আগে আলোচিত তিনটি প্রবণতা আসিয়ান–এর কেন্দ্রিকতার স্থান সংকীর্ণ হবে বলে নির্দেশ করে। সময়ের সঙ্গে বহুপাক্ষিক স্থাপত্যে আসিয়ানের ‘‌হাব’‌ মর্যাদা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে। যদিও আসিয়ান+১ ব্যবস্থা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে থেকে যেতে পারে, তা হলেও আসিয়ান–এর বৃহত্তর বহুপাক্ষিক ফোরামে আগ্রহ বজায় রাখা এবং অগ্রগতি করা ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর  মানে এই নয় যে আসিয়ান–নেতৃত্বাধীন ফোরামগুলি ভেঙে যাবে। বরং তাদের থাকার সম্ভাবনাই বেশি, কিন্তু তারা স্থবির হয়ে পড়বে এবং অবশেষে আঞ্চলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। এমনটি ঘটলে, সদস্য রাষ্ট্রগুলি পুনরায় মূল্যায়ন করবে যে সংস্থাটি তাদের স্বার্থে কতটা ও কীভাবে কাজ করছে, এবং এইভাবে আসিয়ান–এর মূল্য সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতে পারে।

এসব কথা বলার উদ্দেশ্য উদ্বেগজনক ছবি তুলে ধরা নয়। এখনও পর্যন্ত মায়ানমার জুন্টা বাদে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে কেউই কোনও সুনির্দিষ্ট শর্তে এমন ইঙ্গিত দেয়নি যে আসিয়ান তাদের স্বার্থের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। আবার এটি স্বীকার করাও গুরুত্বপূর্ণ যে সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে বৈদেশিক নীতির জন্য আসিয়ান সর্বোত্তম প্রস্তাব বা শেষ কথা নয়। বরং দ্বিপাক্ষিক, স্বল্পপাক্ষিক, বহুপাক্ষিকের মতো অন্যান্য কূটনৈতিক উপায়ের পাশাপাশি আসিয়ান–এর উপরেও সদস্য রাষ্ট্রগুলি  নির্ভর করবে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য। এই বিষয়টি নিশ্চিত করার মূল কথা হল আসিয়ানকে এমনভাবে মূল্য তৈরি করতে হবে যা অন্যদের করার সম্ভাবনা নেই।

এইভাবে দেখা হলে আসিয়ানকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেকে শক্তিশালী করতে হবে। এর অর্থ হল যে এর অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও মতবিরোধগুলি আসিয়ান–এর নেতৃত্বে বৃহত্তর সহযোগিতাকে যাতে প্রভাবিত না করে তা নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বার করা, সংলাপ অংশীদারদের সঙ্গে আরও সমতাভিত্তিক অংশীদারি গড়ে তোলা, এবং সেইসঙ্গে ভূ–রাজনৈতিক গতিশীলতার পরিবর্তনের দিকে অঞ্চলব্যাপী প্রতিক্রিয়াগুলিকে সহজতর করার জন্য নেতৃত্ব দেওয়া। এর জন্য শুরুতেই আসিয়ান–এর সদস্য দেশগুলিকে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া যেসব কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেগুলি সম্পর্কে, এবং তাদের বৈদেশিক নীতিতে আসিয়ান–এর গুরুত্ব সম্পর্কে, স্বচ্ছ দৃষ্টি রাখতে হবে। মায়ানমার সঙ্কটের মতো বিষয়গুলি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আসিয়ানকে কিছু ধরনের পরিকল্পিত দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই লক্ষ্যগুলি পূরণ করা কঠিন হলেও ইন্দো–প্যাসিফিকের বহুপাক্ষিক স্থাপত্যের বিবর্তনের মধ্যে আসিয়ানের ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয়।


এন্ডনোট

[১] উদাহরণস্বরূপ দেখুন কাই হে, “প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বহুপাক্ষিকতা ২.০ এবং আঞ্চলিক আদেশে পরিবর্তন: কারণ ও প্রভাব,” প্যাসিফিক রিভিউ ৩২, নং। ২ (২০১৯): ২১০–২২০; ক্রিস্টোফার লেন, “মার্কিন আধিপত্যের ক্ষয় — কল্পকথা না বাস্তবতা? একটি পর্যালোচনা প্রবন্ধ,” ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ৩৪, নং. ১ (২০০৯): ১৪৭-১৭২

[২] ভুবিন্দর সিং ও সারা তিও, ‘‌ইন্ট্রোডাকশন: মিনিলেটারালিজম ইন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক’‌, যা এই বইয়ের অংশ:‌ মিনিলেটারালিজম ইন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক, দ্য কোয়াড্রিল্যাটরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ, ল্যাঙ্কাং-মেকং কোঅপারেশন মেকানিজম, অ্যান্ড আসিয়ান, সম্পাদনা ভুবিন্দর সিং ও সারা তিও (অক্সন: রাটলেজ, ২০২০): ১-১২

[৩] হোয়াইট হাউস, জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল, অক্টোবর ২০২২

[৪] শিনজো আবে, “এশিয়ার গণতান্ত্রিক নিরাপত্তা হিরা,” প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ডিসেম্বর ২৭, ২০১২; “ইউএস স্টেট গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে তাইওয়ান ‘গণতন্ত্রের চিপস’ তুলে ধরল,” দ্য স্ট্রেটস টাইমস, ২৩ আগস্ট, ২০২২

[৫] নিউজিল্যান্ড মায়ানমার জুন্টার সহ-সভাপতিত্বে সন্ত্রাসবিরোধী বৈঠক থেকে সরে দাঁড়াল  ” মায়ানমার নাউ, ৪ জুলাই, ২০২২

[৬] দেখুন সেং ট্যান, মাল্টিল্যাটরাল এশিয়ান সিকিউরিটি আর্কিটেকচার: নন-আসিয়ান স্টেকহোল্ডারস (অক্সন: রাটলেজ, ২০১৬), ২

[৭] মারিয়া সিও, ” জাপান অওকাস-এ যোগ দিচ্ছে: ‘লজিক্যাল চয়েস’, কিন্তু সে কি জোটে পূর্ণ অংশীদার হবে?  “, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ২৭ নভেম্বর, ২০২২

[৮] মনোজ জোশী, “ হোয়াটস ইন আ নেম? ইন্ডিয়া’‌স রোল ইন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক,” অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ২২ জুলাই, ২০২১

[৯] সারা তিও, ” ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক বহুপাক্ষিকতার প্রবণতা: আসিয়ানের জন্য দৃশ্যকল্প  ,” ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজ ফিউচারস হাব, এপ্রিল ১, ২০২০।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.