Author : Seema Sirohi

Published on Jul 08, 2022 Updated 0 Hours ago

পশ্চিমের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কী নিয়ে আসবে?

পশ্চিমের যুদ্ধের লক্ষ্য কি প্রসারিত হচ্ছে?

এই নিবন্ধটি ‘‌দ্য ইউক্রেন ক্রাইসিস: কজ অ্যান্ড কোর্স অফ দ্য কনফ্লিক্ট’‌ সিরিজের অংশ।


রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে ‘‌দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের’‌ জন্য তৈরি, এবং তিনি ‘সম্ভবত আশা করছেন’‌ মূল্যস্ফীতি, খাদ্য ঘাটতি ও ক্রমবর্ধমান শক্তির দামের মুখে পশ্চিমী মিত্রদের সংকল্পের দৃঢ়তায় ফাটল ধরবে।

কিছুদিন আগে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স–এর ডিরেক্টর এভ্রিল হেইনস মার্কিন কংগ্রেসে বলেছিলেন যে পুতিন এখনও তাঁর লক্ষ্য অর্জন করতে চান, কারণ তাঁর বিবেচনায় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাশিয়া তার প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি ইচ্ছুক। ডিফেন্স ইনট্যালিজেন্স এজেন্সি–র প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্কট বেরিয়ার স্বীকার করেছেন যে যুদ্ধটিতে ‘খানিকটা অচলাবস্থা’‌ দেখা দিয়েছে এবং কোনও পক্ষই জয়ী হয়নি। অচলাবস্থা কিছু দিন স্থায়ী হতে পারে, কিন্তু রাশিয়া যদি যুদ্ধ ঘোষণা করে (এখনকার প্রয়াসটিকে সামরিক অভিযান বলার বিপরীতে) এবং আরও হাজার হাজার সৈন্যকে একত্র করে, পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে

দুই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার মার্জিত মূল্যায়ন ডিফেন্স সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন সহ  অন্যান্য ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্যের বিপরীত। অস্টিন সম্প্রতি বলেছিলেন যে তাঁর লক্ষ্য যুদ্ধের ফলে রাশিয়াকে এত ‘‌দুর্বল’‌ করে দেওয়া যে দেশটি ভবিষ্যতে অনুরূপ আক্রমণ চালানোর সমস্ত খিদে হারিয়ে ফেলবে।

ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগদানের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে—প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো এবং প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন মে মাসের ১২ তারিখে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে দেশটিকে বিলম্ব না করে সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।

ইউরোপে কেউ কেউ অস্টিনের লক্ষ্যগুলির অংশীদার। ফরাসি সামরিক বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জেনারেল থিয়েরি বুরখার্ড সম্প্রতি অস্টিনের অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে বলেছিলেন, ‘‌‘‌ইউরোপীয় দেশগুলির স্বার্থে  রাশিয়াকে দুর্বল করতে হবে।’‌’‌ ব্রিটিশ বিদেশ সচিব লিজ ট্রাস ‘‌পুরো ইউক্রেন থেকে রাশিয়াকে বার করে দেওয়ার জন্য আরও বেশি করে এবং দ্রুত’‌ এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ ইউরোপের নিরাপত্তা ভূচিত্র বদলে দিয়েছে। ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগদানের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে—প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো এবং প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন মে মাসের ১২ তারিখে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে দেশটিকে বিলম্ব না করে সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। এই প্রশ্নে রাজনৈতিক ভাবে আরও বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও সুইডেন এই পথই অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনে তার লাভ ধরে রাখতে লড়াই করে চলা রাশিয়ার জন্য এটি আরেকটি ধাক্কা। এই দুটি নর্ডিক দেশ যোগ দিলে ক্রেমলিন তার ‘‌পরিণাম’‌ এবং একটি নির্দিষ্ট ‘‌প্রতিসম প্রতিক্রিয়া’‌ সম্পর্কে সতর্ক করেছে। এর অর্থ যাই হোক না কেন, রাশিয়ার পাশে আপাতত কমপক্ষে একটি ন্যাটো সদস্য রয়েছে। তুরস্ক ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের জন্য ন্যাটো সদস্যতার বিরোধিতা করেছে, এবং সুইডেনে কুর্দি আন্দোলনকারীদের উপস্থিতির কারণে ওই দেশগুলিকে ‘‌অনেক সন্ত্রাসী সংগঠনের আবাস’‌ বলে অভিহিত করেছে৷ যে হেতু ন্যাটো সদস্যতার জন্য এখনকার সদস্যদের ঐকমত্য প্রয়োজন, নর্ডিক দেশগুলির জোটে যোগদানের পথ পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। এরদোগান বলেছেন, তুরস্ক মোটেই সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান সমর্থন করে না

ওয়াশিংটনের সম্প্রসারিত যুদ্ধের লক্ষ্য এবং ইউরোপীয় দেশগুলির মার্কিন নেতৃত্ব মেনে চলার পটভূমিতে কেউ আর শান্তির কথা বলছে না। তুরস্ক এবং ইজরায়েলের মতো অতীতে যারা চেষ্টা করেছে তারা হাল ছেড়ে দিয়েছে, কারণ মূল নায়ক—রাশিয়া, ইউক্রেন এবং পশ্চিমী মিত্ররা—আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। ইউরোপের বৃহৎ দেশগুলিতে আনুপাতিক ভাবে স্বায়ত্তশাসনের কথা কম এবং মার্কিন নেতৃত্বে ঐক্যের কথা বেশি শোনা যাচ্ছে।

ন্যাটো মিত্ররা ভান করে চলেছে যে তারা সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছে না, যদিও তারা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা ও লক্ষ্য–নির্ধারণ তথ্য সরবরাহ করেছে। আর তা ছাড়া হাজার হাজার কোটির সামরিক সহায়তা তো আছেই। ওয়াশিংটন, যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যেই ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র পাঠিয়েছে, সে এখন একটি ৪,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ বিবেচনা করছে।

পুতিনও এক ধরনের ভান করার খেলা খেলছেন। তিনি জানেন যে তিনি ন্যাটোর বিরুদ্ধে ‘জিততে’‌ পারবেন না, তবে দীর্ঘদিন চেষ্টা করে করে ইউরোপে একটি সিরিয়া তৈরি করতে পারবেন। কিয়েভ দখল করা এবং সে দেশে রুশপন্থী সরকার চাপিয়ে দেওয়া থেকে তাঁর যুদ্ধের লক্ষ্য সঙ্কুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে আধিপত্য বিস্তার। সৈন্যদের নিম্ন মনোবল এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ব্যর্থতার ফলে এরপর ওয়র অফ অ্যাট্রিশন শুরু হবে। মারিউপোল অবরোধ করা এবং এর ধ্বংস ছিল তার প্রথম ধাপ।।

মনে হচ্ছে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সংঘাত বাড়িয়ে তোলা এবং ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি বিবেচনা করতে অনিচ্ছুক, যদিও শত্রুতা একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে তারা অন্যদের তা–ই করতে বলে থাকে।

রুশ টেলিভিশনে আলোচনার মাঝেমধ্যেই চলে আসছে পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে অশুভ ইঙ্গিত। এটি ঘটছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া অস্ত্র চুক্তির মেয়াদ পেরিয়ে যেতে দিয়েছে, যদিও তা যুক্তির মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয় না। মার্কিন টেলিভিশনে আলোচনার বিষয়বস্তু হল পুতিনের ভুল এবং যুদ্ধাপরাধ, যাকে বড়সড় ভাবে উৎসাহিত করছে ইউক্রেনের এবং ওয়াশিংটনে রাশিয়া সম্পর্কে সংশয়বাদীদের লবিস্টরা, যাঁরা সামান্যতম সুযোগ পেলেই এসে উপস্থিত হন। আর পুতিন এবার তাঁদের একটা বড় সুযোগ উপহার দিয়েছেন।

পশ্চিমী দেশগুলির আলোচনায় এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আধিপত্য রয়েছে, এবং তিনি দৃঢ় ভাবে তা তাঁর পক্ষে রাখছেন। সামরিক সাহায্যের বন্যা সীমিত করা উচিত কি না, তা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে অনেকদিন বাদে বাদে এবং খুব কম প্রশ্ন উঠছে। মনে হচ্ছে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সংঘাত বাড়িয়ে তোলা এবং ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি বিবেচনা করতে অনিচ্ছুক, যদিও শত্রুতা একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে তারা অন্যদের তা–ই করতে বলে থাকে।

যেসব ঝুঁকি রয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে শেষ লক্ষ্য কী তা স্পষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, কারণ রাশিয়া ইতিমধ্যেই ‘‌দুর্বল’‌ হয়ে গিয়েছে এবং প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে। পশ্চিমের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে না চাইলেও ইউক্রেন ধ্বংস হচ্ছে, কারণ যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌঁছেছে।

প্রশ্ন হল একটি নড়বড়ে, মরিয়া রাশিয়া বেশি বিপজ্জনক, না কি কম।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.