Published on Aug 29, 2024 Updated 0 Hours ago

পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাগুলি রাশিয়াকে প্রভাবিত করলেও তা মোটেও প্রত্যাশামাফিক হয়নি।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা কি আদৌ কার্যকর হয়েছে?

পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ তৃতীয় বছরে প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুশ বাহিনী কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সহায়তা প্যাকেজ এবং ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের গোলাবারুদসম্পন্ন একটি অতিরিক্ত প্যাকেজ দিয়ে পুনরায় সহায়তা করেছে এবং এর পাশাপাশি তিনটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যথাক্রমে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সহায়তা প্যাকেজ প্রদান করা হয়েছে। জেনেভা শান্তি আলোচনা - যেটিতে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি - কোন উল্লেখযোগ্য ফলাফল প্রদান করতে পারেনি। তহবিলের পাশাপাশি ইউক্রেন বেলজিয়ামের কাছ থেকে ৩০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাবে। এর ফলে মস্কোর সঙ্গে বিরোধ আরও বেড়েছে, পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু পশ্চিমী দেশগুলি সৈন্য পাঠিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না, তাই ক্রেমলিনের কোষাগার নিষ্কাশনের জন্য পশ্চিমী দেশগুলি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এই যুদ্ধকে অর্থনৈতিক যুদ্ধতেও রূপান্তরিত করেছে।

নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সঙ্গে সরাসরি সমানুপাতিক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার ১৪তম দফার নিষেধাজ্ঞাগুলি চালু করছে, যা অন্যান্য বিধিনিষেধের মধ্যে রুশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়ার বৃহত্তম রফতানি পণ্য

নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সঙ্গে সরাসরি সমানুপাতিক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার ১৪তম দফার নিষেধাজ্ঞাগুলি চালু করছে, যা অন্যান্য বিধিনিষেধের মধ্যে রুশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়ার বৃহত্তম রফতানি পণ্য। অতএব রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ক্রমবর্ধমান সংখ্যার আলোকে এখন প্রশ্ন উঠেছে: নিষেধাজ্ঞাগুলি কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আদৌ কার্যকরী?

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা: একটি বিবর্তন

রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ এবং দেশটির বিরুদ্ধে ১৬০০০-এরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার তীব্রতা পরিবর্তিত হয়েছে। ক্রিমিয়ার অধিভুক্তির পরে ২০১৪ সাল থেকে প্রথম নিষেধাজ্ঞার দফায় ব্যক্তিদের উপর ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ক্রেমলিন অভিজাতদের সম্পদ আটক করা এবং রুশ অর্থনীতির শক্তি, প্রতিরক্ষা এবং আর্থিক খাতে সীমাবদ্ধতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইউক্রেনের যুদ্ধের আগে এই নিষেধাজ্ঞাগুলির সম্মতির কারণটি অভিন্ন ছিল না এবং সহজে প্রয়োগযোগ্য ছিল না। এই নিষেধাজ্ঞার বৈষম্যের কথাও উল্লেখযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ নিষেধাজ্ঞার দরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ-মার্কিন সংস্থাগুলির উপর অ-সম্মতির ক্ষেত্রে মোটা অঙ্ক জরিমানা করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনকারী মার্কিন সংস্থাগুলিকে ন্যূনতম অর্থ জরিমানা করা হয়েছিল এবং প্রায়শই সেই সব মামলা মার্কিন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি অনেক বেশি নিবিড় হয় এবং রাশিয়াকে তার যুদ্ধ ব্যবস্থার অর্থায়ন থেকে আর্থিক ভাবে পঙ্গু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। চারটি প্রধান রুশ ব্যাঙ্ক অর্থাৎ ভিটিবি, সভকোমব্যাঙ্ক, নোভিকমব্যাঙ্ক এবং অটক্রিটি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি বড় রুশ ব্যাঙ্ক তাদের সহযোগী সংস্থাগুলি নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছিল এবং সুইফট পেমেন্ট সিস্টেম থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রযুক্তি, সফ্টওয়্যার এবং সরঞ্জামের উপর রফতানি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল এবং ক্রেমলিন অভিজাত ও অলিগার্চদের সম্পদ আটক করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জি৭ রুশ তেলের মূল্য ৬০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে। নিষেধাজ্ঞা এবং ক্রমবর্ধমান আমদানির কারণে রফতানিমূলক রাজস্ব সঙ্কুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি রুবলের অবমূল্যায়ন ঘটে। মজুরি পেনশন বাড়ানোর কারণে এটি জীবনযাত্রার মানকে আমূল পরিবর্তন করতে পারেনি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি অনেক বেশি নিবিড় হয় এবং রাশিয়াকে তার যুদ্ধ ব্যবস্থার অর্থায়ন থেকে আর্থিক ভাবে পঙ্গু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞার ১১তম দফায় দেশ এবং সংস্থাগুলিকে নিষেধাজ্ঞাগুলি লঙ্ঘন করা থেকে প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা নিম্নলিখিত দফায় আরও শক্তিশালী করা হয়েছিলকারণ ইলেকট্রনিক উপাদানগুলির সমান্তরাল আমদানিতে অংশ নেওয়া সংস্থাগুলিকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১৩তম দফা নিষেধাজ্ঞায় চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং সেগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল ইইউ এমনকি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের জন্য ফৌজদারি বিচারের উদ্দেশ্যে ন্যূনতম মান নির্ধারণ করায় ফাঁক গলে অনিয়ম করার বিষয়টি আর তত সহজ ছিল না। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপর আরও ৫০০টি অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

রুশ এলএনজি-র উপর নিষেধাজ্ঞা

ইইউ নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবিত ১৪তম দফা মস্কোর জন্য আর কটি ধাক্কা হবে কারণ এটি শুধুমাত্র রুশ এলএনজি-র ট্রান্সশিপমেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করবে না, উপরন্তু ইউরোপীয় টার্মিনালগুলির মাধ্যমে ইইউ দেশগুলিকে পুনরায় এলএনজি রফতানি করার বিষয়টিকেও নিষিদ্ধ করবে গত বছরের নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি এলএনজি প্রকল্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং সেগুলি হল আর্কটিক এলএনজি-২, উস্ট-লুগা এবং মুরমানস্ক। এর ফলে বিদেশি অংশীদাররা এসব প্রকল্প থেকে সরে এসেছে। এলএনজি রফতানি করার জন্য বরফ ভেঙে এগোতে পারে এমন এলএনজি ক্যারিয়ার তৈরি করার বিষয়ে রাশিয়ার সক্ষমতা হ্রাস করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ভেজদা শিপইয়ার্ডের উপর আরও একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট সম্প্রতি ওবস্কি এলএনজি, আর্কটিক এলএনজি-১, আর্কটিক এলএনজি-৩, মুরমানস্ক এলএনজি এবং ভোস্টক তেলের জন্য পাইপলাইন অবকাঠামো নির্মাণকারী সংস্থাগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং পাইপলাইন প্রযুক্তিতে রাশিয়ার সীমাবদ্ধতা পশ্চিমী সংস্থাগুলির উপর তার নির্ভরতা বিবেচনা করে এ হেন নিষেধাজ্ঞাগুলি ভবিষ্যতে রুশ এলএনজি প্রকল্পের উপর প্রভাব ফেলতে পারে

২০২২ সাল থেকে ইউরোপ রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি কমিয়েছে এবং এখন এলএনজি-র উপর নির্ভর করছে, যা রাশিয়া, কাতার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উত্স থেকে আসে। এর ফলে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় এলএনজি টার্মিনাল পোর্ট হয়েছে, যেমন নেদারল্যান্ডসের জিব্রুগ, রুশ এলএনজি ইউরোপের জন্য আমদানির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হাঙ্গেরির মতো কিছু ইউরোপীয় দেশ এখনও রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রয় করে, যার শক্তির মূল্য শৃঙ্খল রাশিয়ার স্বার্থে নিহিত। কারণ হাঙ্গেরির অভ্যন্তরীণ শক্তি শিল্প সোভিয়েত যুগ থেকে রাশিয়ার উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল

চিত্র ১.১: ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আর্কটিক এলএনজি ২-র মাসিক এলএনজি উৎপাদন

সূত্র: ওএসডব্লিউ, সেন্টার ফর ইস্টার্ন স্টাডিজ

নিষেধাজ্ঞা কি আদৌ কাজ করেছে?

নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে প্রভাবিত করলেও তা প্রত্যাশামাফিক নয়। রুশ অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার অধীনে কাজ করার জন্য নিজের পুনর্বিন্যাস ঘটিয়েছে। রাশিয়ার সরকার অর্থনীতিকে বিভিন্ন খাতে ভাগ করেছে: লাভ-উৎপাদনকারী খাত অর্থাৎ হাইড্রোকার্বন, ধাতু, খনিজ, কৃষি ইত্যাদি; ভাড়া নির্ভর খাত অর্থাৎ অটোমোবাইল, বিমান, জাহাজ নির্মাণ, পেনশন এবং সরঞ্জাম-নির্ভর খাত, যা কিনা আমদানির উপর নির্ভরশীল। ২০১৫ সালে আমদানি প্রতিস্থাপন নীতিগুলি ২০৩০-এর লক্ষ্যমাত্রা-সহ ক্ষেত্রব্যাপী চালু করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক জ্বালানির চাহিদা এবং পণ্য বাজারে মূল্যস্ফীতির হুমকির ফলে পশ্চিমী দেশগুলি রুশ তেল ক্রয় এবং পরিশোধনকে উপেক্ষা করে চলে। রাশিয়া তার পণ্যগুলির জন্য বাজার খুঁজে পেতে সক্ষম হলেও লাভের মাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্র অন্যদের তুলনায় আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিমান চালনায় সুখোই সুপারজেট ১০০ সিরিজের মতো একটি অভ্যন্তরীণ ভাবে উত্পাদিত বিমানের জন্য রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দেশগুলি থেকে এর ৭০ শতাংশের বেশি উপাদান আমদানি করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাবকে কমিয়ে দিয়েছেকারণ সমস্ত দেশ মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থায় যোগ দেয়নি। শুরুতে পশ্চিমী আর্থিক পরিসরের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্ত দেশ কিছু ধরনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলেছিল, যেমন আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বা দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্যের আমদানিমূলক বিধিনিষেধ। এই বছরের শুরু থেকে রাশিয়ার নিকটতম অংশীদার বেজিং গৌণ নিষেধাজ্ঞার হুমকির কারণে রুবল লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ করে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মস্কো এবং বেজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য গত বছর ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। একই ভাবে, নয়াদিল্লির সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য যা যুদ্ধের আগে প্রায় ১০-১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, তা ২০২৩ আর্থিক বর্ষের ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ভূমিকা

দ্বিতীয়ত, রাশিয়ায় নিষেধাজ্ঞাকে নরম করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের প্রথম মাসগুলিতে সুদের হার অস্থায়ী ভাবে ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল এবং সংস্থাগুলিকে বিদেশে তহবিল স্থানান্তর করা থেকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল, যা মূলধনের বহিঃপ্রবাহকে টকে দিয়েছিল। এর পাশাপাশি সংস্থাগুলিকে তাদের বৈদেশিক রাজস্বের ৮০ শতাংশ রুবলে রূপান্তর করতে হয়েছিল। এই ধরনের মূলধন নিয়ন্ত্রণ আইন রুবলকে ধাক্কা সামলাতে সাহায্য করে। কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের এক কর্মী আলেহান্দ্রা প্রোকোপেনকোর মতে, পুতিন তিনটি প্রধান কাজের সম্মুখীন হয়েছেন: সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান যাতে মারাত্মক ভাবে হ্রাস না পায় তা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধে অর্থায়ন চালিয়ে যাওয়া। তিনি তাঁর সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য হারাবেন না। এটি অর্জন করা অবশ্যই কঠিন কারণ এই ধরনের দায়িত্বগুলি একে অপরের বিপরীত।

যুদ্ধের প্রথম মাসগুলিতে সুদের হার অস্থায়ী ভাবে ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল এবং সংস্থাগুলিকে বিদেশে তহবিল স্থানান্তর করা থেকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল, যা মূলধনের বহিঃপ্রবাহকে টকে দিয়েছিল। এর পাশাপাশি সংস্থাগুলিকে তাদের বৈদেশিক রাজস্বের ৮০ শতাংশ রুবলে রূপান্তর করতে হয়েছিল। এই ধরনের মূলধন নিয়ন্ত্রণ আইন রুবলকে ধাক্কা সামলাতে সাহায্য করে।

নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলেও দেশে কর্মসংস্থানের মাত্রা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে; এটি একটি যুদ্ধ অর্থনীতি হিসাবে রাশিয়ার অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে শিল্প চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ঘটেছে। যাই হোক, সামরিক-শিল্প ক্ষেত্রের সক্ষমতা বাড়ানো এবং ইউক্রেনের নতুন অঞ্চল পুনর্নির্মাণে ক্রমবর্ধমান ব্যয় শুধু মাত্র মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে না, বরং এক ধরনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাবে যা শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিকে স্থবির করে দেবে। রুশ এলএনজি-র উপর নিষেধাজ্ঞার ক্রমবর্ধমান স্তর অবশ্যই মস্কোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারেকারণ এটির আমদানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটি সম্ভাব্য রফতানি আয়কে সঙ্কুচিত করতে পারে।

উপসংহার

১৩ জুন জার্মানি এই নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ বাস্তবায়নের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে কারণ কয়েকটি জার্মান সংস্থা নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হতে পারে। আন্তর্জাতিক শক্তি বাজার সরবরাহ এবং চাহিদা উপর নির্ভর করে। এলএনজি-পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও চাহিদা মেটাতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। একটি প্রধান গ্যাস রফতানিকারক দেশ কাতারের ২০২৭ সাল পর্যন্ত নতুন ক্রেতাদের কাছে এলএনজি রফতানি করার অতিরিক্ত ক্ষমতা নেই এবং শক্তি নিরাপত্তাকে একটি জাতীয় অগ্রাধিকার দেওয়ার দরুন প্রায়শই নিষেধাজ্ঞাগুলি এড়াতে বা ছাড় পাওয়ার উপায় খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কাজ করলেও ইরান বা উত্তর কোরিয়ার বিপরীতে জাতীয় শক্তির উপাদান, জনসংখ্যার আকার, সম্পদের ভাণ্ডার এবং সম্পদ… সবটাই রাশিয়ার পক্ষে, যেটি বিশ্বব্যাপী শক্তি রফতানিকারক হিসেবে রাশিয়ার ভূমিকাকে অব্যাহত রেখেছে। এর অর্থ হল এই যে, ৪৫টি দেশ – যারা রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে - তাদের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য প্রথমে রাশিয়াকে বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন করতে হবে। যেহেতু স্বল্পমেয়াদে এমনটা ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই, তাই এই মুহূর্তে সাধারণ রুশদের জীবন আমূল পরিবর্তন না-আসতে পারে।

 


রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.