প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের পরিমাপ করা হয় ইনপুট, আউটপুট, প্রক্রিয়াকরণ ও ডেটা স্টোরেজের ক্রমবর্ধমান দক্ষতার ভিত্তিতে। যে কোনও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজনীয় মূল দক্ষতাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে রয়ে গিয়েছে ডেটা স্টোরেজ । ব্লকচেন প্রযুক্তি এক পর্যায়ে ডেটা সঞ্চয়স্থান সুরক্ষিত করার জন্য একটি যুক্তিসঙ্গত সমাধান প্রদান করেছিল। কিন্তু ব্লকচেন প্রযুক্তির উপর উল্লেখযোগ্য জলবায়ু প্রভাব এটির উপর ভরসা কমিয়েছে।
১৯৫০–এর দশক থেকে চৌম্বকীয় টেপের রিলে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কিছু অন্যান্য উদ্ভাবন স্থান ও খরচ–বান্ধব কিছু কার্যকর বিকল্প সমাধান প্রদান করেছে। ডেটা স্টোরেজ কিন্তু তুলনামূলকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে, এবং বাইনারির (০ এবং ১) ভিত্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন গিগাবাইট ডেটা রয়েছে, এবং তা এখনও প্রতিদিন বাড়ছে। চৌম্বকীয় টেপে এই ডেটা সংরক্ষণ করতে অনেকটা জায়গা লাগে। উপরন্তু, এটি সময়ের সঙ্গেসঙ্গে জীর্ণ হতে পারে, এবং ডেটা ক্ষয় এড়াতে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে একাধিক সংস্থানকে গ্রাস করে, যেমন স্থান, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি, চৌম্বকীয় টেপ ও ধাতু।
ডিএনএ–তে ডেটা স্টোরেজ
গত দশকে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রটিতে ডিএনএ হিসাবে ডেটা সংরক্ষণের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ডিএনএ, যা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং যা একটি বোধগম্য কাঠামোগত ঘটনা, তা বাইনারি কোডের অনুরূপ কাঠামো সরবরাহ করে। যে অণুগুলি ডিএনএ তৈরি করে সেগুলি চার ধরনের: অ্যাডেনিন (এ), থাইমিন (টি), গুয়ানিন (জি) ও সাইটোসিন (সি)। এই চারটি রাসায়নিক হল সমস্ত ডিএনএ কোডের কাঠামোগত ভিত্তি, যা পৃথিবীতে জীবন সৃষ্টির ভিত্তি প্রদান করেছে। এই অণুগুলি বাইনারির অনুরূপ ভিত্তি ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দিয়ে স্টোরেজের বিকল্প উপস্থাপন করে। তাত্ত্বিকভাবে, আকারের সুবিধার কারণে, ডিএনএ কিন্তু একটি কফি মগের সমান আকারের মধ্যে বিশ্বের সমস্ত ডেটা সঞ্চয় করতে পারে, যেখানে চৌম্বকীয় টেপ স্টোরেজের জন্য অনেকগুলি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ স্থান প্রয়োজন হবে।
তাত্ত্বিকভাবে, আকারের সুবিধার কারণে, ডিএনএ কিন্তু একটি কফি মগের সমান আকারের মধ্যে বিশ্বের সমস্ত ডেটা সঞ্চয় করতে পারে, যেখানে চৌম্বকীয় টেপ স্টোরেজের জন্য অনেকগুলি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ স্থান প্রয়োজন হবে।
ডিএনএ অণুর আকার ও গঠনে জোড়া হিসাবে শুধু ‘এ’ ও ‘টি’, এবং ‘সি’ ও ‘জি’–র মধ্যে বন্ধনের অনুমতি দেয়, এবং তা ঘটতে থাকে পরিপূরক ক্রমগুলিতে, যাকে ওয়াটসন–ক্রিক পরিপূরক বলে। এ ভাবে একটি জোড়া তৈরি হওয়ার পর সঠিকভাবে অনুমান করা যায় এরপর কোন জোড়া আসবে। তারপর, এমনকি পুনর্গঠনের সময়েও, ডেটার কোনও ক্ষয় ছাড়াই জোড়াগুলি, এবং সেই সূত্রে বাইনারি কোড, সঠিকভাবে পুনরুৎপাদন করা যেতে পারে। অর্থাৎ, পেয়ারিং রিকোয়্যারমেন্ট–এর অর্থ হল ক্লোনিং ও প্রজননের সময় ডিএনএ সিকোয়েন্সিং সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে, এবং সঞ্চিত সিন্থেটিক ডিএনএ ডেটা সঠিকভাবে প্রতিলিপি করা যাবে। ফলস্বরূপ, উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বা প্রয়াস ছাড়াই ডিএনএ ব্যবস্থাপনা সম্ভব, এবং এর জন্য ভৌত ফাইলিং সিস্টেমের প্রয়োজন হয় না। তার অতিরিক্ত, ডিএনএ–তে সংরক্ষিত ডেটা সহজেই নগণ্য খরচে প্রতিলিপি করা যায়, এমনকি ডিএনএ প্রজননের বিভিন্ন প্রজন্মব্যাপী, ডেটার কোনও ক্ষয় বা বিকৃতি ছাড়াই।
ডিএনএ স্টোরেজ অবশ্য বর্তমানে একটি ব্যয়বহুল উদ্যোগ, কারণ ডিএনএ থেকে ডেটা নিষ্কাশনের জন্য উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রয়োজন; কিন্তু আর্কাইভ করার ক্ষেত্রে এটি সম্ভাব্যভাবে খরচ, শক্তি, ও সময়ের প্রেক্ষিতে বেশি দক্ষ। অধিকন্তু, যদি ঠিকভাবে লবণের মধ্যে রাখা হয়, তবে এটিকে খুব বেশি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কয়েক দশক ধরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যা নিয়ন্ত্রিত ডেটা সেন্টারের ডেটার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। যেমন উদ্ভিদের বীজে সংরক্ষিত ডেটার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হবে না, ডেটার দীর্ঘায়ু নিশ্চিত হবে, এবং ডেটার ক্ষয় ছাড়াই সহজেই প্রতিলিপি করা যাবে।
সীমাবদ্ধতা ও বিকল্প
যদিও সবুজ সমাধান ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য ডিএনএ স্টোরেজ একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, সেখানেও ত্রুটি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে, ডিএনএ সংশ্লেষণ পদ্ধতি জৈব রসায়নের উপর নির্ভর করে, এবং এটি একটি অভিনব উদ্ভাবন। প্রক্রিয়াটিকে আরও কম ব্যয়বহুল করা প্রয়োজন, এবং এটি নিয়মিত ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতিদিনের সমাধান হয়ে ওঠার আগে অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। তদুপরি, এটি শুধু উচ্চ আর্থিক বিনিয়োগই দাবি করে না, সেইসঙ্গেই ডিএনএ–তে ডেটা সিকোয়েন্স করা এবং ডেটা বার করা সময়সাপেক্ষ ঘটনা। এই দুটি কারণে বর্তমান সুপারিশ হল আর্কাইভ করার উদ্দেশ্যে, বা ব্লকচেন পাসওয়ার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ডেটার জন্য ব্যাকআপ তৈরি করতে, ডিএনএ স্টোরেজ ব্যবহার করা।
এর অতিরিক্ত, যদিও ডিএনএ ডেটা স্টোরেজের জন্য উদ্ভিদ জাতীয় প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভূত ডিএনএ–র ক্ষেত্রে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না, সিন্থেটিক ডিএনএ–র জন্য কিন্তু ঠান্ডা ও অন্ধকার স্টোরেজ প্রয়োজন, যা চৌম্বকীয় টেপের মতোই স্টোরেজ–এর জন্য স্থানের সমস্যা আবার ফিরিয়ে আনে। প্রথাগত ইলেকট্রনিক ডেটার প্রতিস্থাপক হিসাবে এই কারণে ডিএনএ–ভিত্তিক ডেটা স্টোরেজ ব্যবস্থা সুপারিশ করা হচ্ছে যে এর স্থায়িত্ব বেশি, কিন্তু খরচ ও স্থানের প্রয়োজন কম। যাই হোক, যেহেতু কৃত্রিম ডিএনএ বা অণুজীবের স্টোরেজের জন্য পরিবর্তন (মডিফিকেশন) ও জেনেটিক কোডিং প্রয়োজন, তাই একটি বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে উদ্ভিদের মধ্যে, বা সিন্থেটিক ডেটা সংরক্ষণের পরিবর্তে বীজে ডেটা সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়।
যদিও ডিএনএ ডেটা স্টোরেজের জন্য উদ্ভিদ জাতীয় প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভূত ডিএনএ–র ক্ষেত্রে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না, সিন্থেটিক ডিএনএর জন্য কিন্তু ঠান্ডা ও অন্ধকার স্টোরেজ প্রয়োজন, যা চৌম্বকীয় টেপের মতোই স্টোরেজ–এর জন্য স্থানের সমস্যা আবার ফিরিয়ে আনে।
উদ্ভিদের বীজে ডেটা সংরক্ষণ করা বর্তমানে ডেটা স্টোরেজের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ও টেকসই সমাধান। তদ্ব্যতীত, এই সমাধানটি পূর্বে উল্লিখিত সীমাবদ্ধতাগুলির প্রতিকার করে, কারণ উৎসগুলি স্ব–সংরক্ষক এবং অতিরিক্ত সিন্থেটিক সুরক্ষা ছাড়াই সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
এই ত্রুটিগুলি সত্ত্বেও, এই ক্ষেত্রে আসন্ন বিকল্প উদ্ভাবনের কারণে, গত পাঁচ বছরে অনেক সংস্থা এই পরিষেবাটি বিক্রি করতেও শুরু করেছে, এবং সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভূত ডিএনএ এবং সিন্থেটিক ডিএনএ উভয় জায়গাতেই ডেটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
ডিএনএ ডেটা স্টোরেজে সরকারি বিনিয়োগ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালে একটি মলিকিউলার ইনফরমেটিকস প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়েছিল, যা ডিএনএ–ভিত্তিক ডেটা স্টোরেজের জন্য গবেষণাকে অর্থায়ন করেছিল। মলিকুলার ইনফরমেশন স্টোরেজ টেকনোলজি (এমআইএসটি) ২০১৮ নামক আরেকটি অনুরূপ প্রোগ্রামের লক্ষ্য হল প্রতিদিন ডিএনএ ডেটা স্টোরেজকে ১ টিবি ধারণক্ষম করা এবং ১০ টিবি ডেটা পড়া/পুনরুদ্ধার করা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাশাপাশি ইউরোপিয়ান বায়োইনফরমেটিক্স ইনস্টিটিউট ২০১৩ সাল থেকে এই ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য অর্থ পেয়েছে।
এই উদ্ভাবনগুলি ডিএনএ ডেটা স্টোরেজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং ডেটা স্টোরেজ শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে এগুলি তৈরি করা হয়েছে।
এই গবেষণা ক্ষেত্রগুলিতে সরকারি অর্থায়ন ইঙ্গিত দেয় যে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলি এমন ডেটা রিডিং ডিভাইস উদ্ভাবন করবে যা আজকের তুলনায় অনেক দ্রুত ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। উপরন্তু, এই ডিভাইসগুলিতে অবশ্যই র্যানডম অ্যাকসেস রিট্রিভ্যাল পদ্ধতি থাকতে হবে, এবং কাস্টমাইজ করার যোগ্য ডিএনএ স্টোরেজ ডিভাইস তৈরি করতে হবে। এই উদ্ভাবনগুলি ডিএনএ ডেটা স্টোরেজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং ডেটা স্টোরেজ শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে এগুলি তৈরি করা হয়েছে।
ডিএনএ ডেটা স্টোরেজ স্বল্পমেয়াদে দৈনন্দিন বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য কোনও সমাধান না হলেও এটি আর্কাইভগুলিকে আরও টেকসই করার সুযোগ দেয়, এবং ডেটা ও ডেটা স্টোরেজের মতো প্রযুক্তি বৃদ্ধির মৌলিক বিষয়গুলির ক্ষেত্রে জলবায়ু দক্ষতা, পরিসর ও অন্যান্য সম্পদের আরও মিতব্যয়ী ব্যবহারের দিকে নিয়ে যেতে সহায়তা করে।
এইভাবে, এই উদ্ভাবনটি দৈনন্দিন প্রযুক্তির অংশ হয়ে ওঠার আগে একে আর্কাইভ করা ও রেকর্ড রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহার করে বিশ্বের তথ্য ধারণ করার জন্য বিদ্যমান বৃহৎ ডেটাব্যাঙ্কগুলিকে প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে। উপরন্তু, এটি ডেটা স্টোরেজ ও ব্লকচেন প্রযুক্তির উপর জলবায়ু প্রভাবের মতো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যারও মোকাবিলা করবে, এবং দীর্ঘমেয়াদে ডেটা সেন্টারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় খরচই কমিয়ে দেবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.