Author : Yossi Mann

Published on Jan 05, 2024 Updated 0 Hours ago

জলবায়ু সংকট মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রধান উদ্বেগ হয়ে উঠেছে, এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলন এই চাপের হুমকি মোকাবিলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে।

মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি সংকটের ছায়া: জলবায়ু পরিবর্তন

দক্ষিণ ইরাক, যা একসময় ইডেন উদ্যান (গার্ডেন অফ ইডেন) নামে পরিচিত ছিল, আসন্ন দশকগুলিতে একটি জ্বলন্ত পতিতভূমিতে পরিণত হতে চলেছে৷ ইজরায়েল মেটিওরোলজিক্যাল সার্ভিসের প্রধান গবেষক ডঃ ইয়োভ লেভির সহযোগিতায় এই লেখকের নেতৃত্বে করা একটি সমীক্ষা এই চিত্র তুলে ধরে যে এমন দিন খুব সুদূরে নয় যখন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা সহ্য করবেন। যদিও এই ভয়ঙ্কর পূর্বাভাসটি ভবিষ্যতের জন্য, তাপমাত্রার অশুভ বৃদ্ধি কিন্তু অনুমানমূলক নয়, বরং ইতিমধ্যে ইরাকে একটি বাস্তবতা।
  

একটি অঞ্চল যেটি ঐতিহ্যগতভাবে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সঙ্গেই বেশি করে সংযুক্ত ছিল, সেখানে এখন জলবায়ু সংকট একটি প্রধান উদ্বেগ হয়ে উঠেছে। এটি হিংস্রতা, দারিদ্র্য, অসমতা ও অভিবাসনের স্ফুলিঙ্গকে প্রজ্বলিত করে, এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তোলে।



২০১২ থেকে ২০১৯–এর মধ্যে তাপমাত্রা অনেকবার ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গিয়েছে। গত বছর, আমরা ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি তাপপ্রবাহ দেখেছি, যার ফলে বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে, ইরাকের জীবনরেখা ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর জলস্তর কমে যাচ্ছে, খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, অসহনীয় তাপের কারণে শ্রমের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে, এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে মরুঝড়, যা তেলের  ট্যাঙ্কারগুলির দক্ষিণের বন্দরগুলিতে যাওয়া ব্যাহত করে। এই চ্যালেঞ্জগুলি শুধুমাত্র আর্থ–সামাজিক অশান্তিই নয় বরং গুরুতর নিরাপত্তা ব্যাঘাতকেও উস্কে দিয়েছে, যা দক্ষিণ ইরাকে ২০১৮ সালের হিংসাত্মক বিক্ষোভের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন লিবিয়াতেও অনুভূত হচ্ছে। এক দশকব্যাপী বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ সহ্য করার পর, দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখিয়েছে। ২০১৮ সালে তেলের উৎপাদন প্রতিদিন মাত্র ৩১৫,০০০ ব্যারেল থেকে গত অক্টোবর মাসে ১.২ মিলিয়ন ব্যারেল হয়েছে। তবুও, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি বিপর্যয়কর সাইক্লোন লিবিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ নিমজ্জিত করে,
চারটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর বন্ধ করে দেয়, এবং এর তেল রপ্তানিকে বিপদের মুখে ফেলে। ঠিক ইরাকের মতো এখানেও জলবায়ু বিপর্যয় হিংসার আগুন জ্বালিয়েছিল, এবং সরকার বিক্ষেভের মুখে পড়েছিল বন্যার প্রতিক্রিয়ার খামতির জন্য। বন্যার ফলে ৫,০০০ জনেরও বেশি হতাহত হয়েছিলেন।

ইরাক ও লিবিয়ার বিপরীতে, যেখানে জলবায়ু বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দাঙ্গাগুলি তুলনামূলকভাবে স্বল্পমেয়া্দি ছিল, সিরিয়ায় ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত
আংশিকভাবে জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য ঘটেছিল। দেশটি ২০১০ সালে প্রায় এক সহস্রাব্দের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরার শিকার হয়েছিল, এবং তা ৮০০,০০০ মানুষের জীবিকা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল এবং দেশের কৃষির ৮৫ শতাংশ ধ্বংস করেছিল। এটি ১.৫ মিলিয়ন ব্যক্তিকে ইতিমধ্যেই ঘনবসতিপূর্ণ শহরে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করেছে, এবং অসন্তোষ ও অস্থিরতা তৈরি করেছে।

এই অঞ্চলের আরেকটি দেশ যেটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু সংকটের কারণে ধারাবাহিক দাঙ্গার সম্মুখীন হয়েছে, তা হল ইরান। এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের (পশ্চিম এশিয়া) গমের ব্রেডবাস্কেট ইরান জলবায়ু–প্ররোচিত প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে। ২০১৮ সালে এবং আবার ২০২১ সালে তীব্র খরা আরও ভাল জল ব্যবস্থাপনার দাবিতে এবং বৃহত্তরভাবে জমানার বিরোধিতা করে
ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল। ২০২৩ সালের আগস্টে দীর্ঘস্থায়ী খরা কৃষি ও নিয়মিত জল সরবরাহকে প্রভাবিত করায় দক্ষিণ ইরানে বিক্ষোভের আরেকটি ঢেউ শুরু হয়।

২০১৯ সালের অক্টোবরে কর বাড়িয়ে পেট্রলের উপর ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকারের অভিপ্রায়ের কথা প্রকাশ্যে আসার পর লেবাননে সহিংস দাঙ্গা শুরু হয়। তবে, রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত দেশটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ এই প্রথম নয়। কিন্তু
দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে আছে জলবায়ু পরিবর্তনও। বিক্ষোভের কয়েক সপ্তাহ আগে এক তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছিল, যার ফলে শুফ পর্বতমালায় বিশাল দাবানল হয়েছিল। ফলস্বরূপ বায়ু দূষিত হয়েছিল এবং কিছু উৎসের জল পান করার অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছিল। এই অগ্নিকাণ্ডগুলি ছড়িয়ে পড়ে ‘লেবাননের গাছের দেশ’‌ নামে পরিচিত জমিতে, যা দেশের পতাকায় প্রতিফলিত হয়। এর অর্থ, যে দেশটি হাজার হাজার বছর ধরে তার উঁচু উঁচু সিডার গাছের স্বতন্ত্র পরিচয় রক্ষা করেছে, তা এমন আগুনের তরঙ্গের সম্মুখীন হয় যা এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। এলাকাটি সিডার গাছে পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে একের পর এক গ্রাম, এমনকি শহরগুলিকে, আগুন গ্রাস করার ঝুঁকি তৈরি হয়। অতএব, যদিও অনেকের দৃষ্টিতে জল ও বিদ্যুতের সুযোগের তাৎক্ষণিক হুমকিগুলি আরও গুরুতর, লেবাননে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন তাৎক্ষণিক হুমকি হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।

ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের জটিল চ্যালেঞ্জের প্রতীক। দেশটি চরম দারিদ্র্যের শিকার,
বেকারত্ব ১৩.৫৯ শতাংশ বলে হিসাব করা হয়, নিরক্ষরতার মাত্রা উদ্বেগজনক, এবং বিশুদ্ধ জলের সুযোগ ন্যূনতম। এটি শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠীগুলির একটি কেন্দ্র হিসাবেও কাজ করে। এই সবের উপরে ইয়েমেন জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে, এনডি–গেন সূচকে ১৮১টি দেশের মধ্যে ১৭১তম স্থানে রয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মতোই, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধের মধ্যে একটি সংযোগ পাওয়া যেতে পারে — মানুষের জলের মারাত্মক প্রয়োজন।

জল সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও খারাপ হয়েছে, এবং এটি দেশটির  অস্থিরতার একটি অন্তর্নিহিত গুরুত্বপূর্ণ কারণ। শুধু তাই নয়, এটি চলতি সংঘাতকে সম্ভাব্যভাবে দীর্ঘায়িত ও খারাপ করতে পারে। জ্বালানির দাম, যা ইয়েমেনে জলের দামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, ২০১৪ সালে
বিক্ষোভকে উস্কে দিতে সাহায্য করেছিল। ইয়েমেন, বিশ্বের অন্যতম উষ্ণতম দেশ, ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক খরা এবং অত্যন্ত শুষ্ক জলবায়ুর কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জলের সংকট বর্তমান যুদ্ধের জন্য একটি অনুঘটক ছিল, কিন্তু কতটা তা স্পষ্ট নয়। ২০১১  সালের একটি রিপোর্ট সম্ভাব্যভাবে দেশটিকে নাগরিক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে এমন কারণগুলি তুলে ধরেছিল, যার মধ্যে রয়েছে জলের ঘাটতি, যা এতটাই তীব্র যে কৃষির উপর ভিত্তি করে বেঁচে থাকা মানুষের জীবিকা ও জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে। উপরন্তু, ফেব্রুয়ারি ২০১৬–র রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে সৌদি বিমানগুলি এমন একটি জলাধারে বোমা হামলা চালিয়েছে ও ধ্বংস করেছে
যা প্রায় ৫,০০০ কিউবিক মিটার জল সহ ৩০,০০০–এরও বেশি ইয়েমেনির পানীয় জলের আধার ছিল। এর ফলে আক্রমণের এলাকার কাছাকাছি আবার একটি সংঘাত তৈরি হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনাগুলি জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অস্থিরতা এবং একটানা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে সংযোগের উপর জোর দেয়।


সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে এই বিপদের হুমকি মোকাবিলায় কাজে নেমে পড়ার জন্য জাগরণের আহ্বান হিসাবে কাজ করেছে।



একটি অঞ্চল যেটি ঐতিহ্যগতভাবে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সঙ্গেই বেশি করে সংযুক্ত ছিল, সেখানে এখন জলবায়ু সংকট একটি প্রধান উদ্বেগ হয়ে উঠেছে। এটি হিংস্রতা, দারিদ্র্য, অসমতা ও অভিবাসনের স্ফুলিঙ্গকে প্রজ্বলিত করে, এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তোলে। উচ্চ জন্মহার ও উপভোগের দ্বারা চিহ্নিত একটি অঞ্চলে খাদ্যের ঘাটতি, অসহনীয় গরম অঞ্চল থেকে তুলনায় শীতল অঞ্চলে চলে যাওয়া, এবং মধ্যপ্রাচ্যের ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা এখনও যে কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত সেখানে উদ্ভূত বিপদ বুঝিয়ে দেয় জলবায়ু সংকটের কারণে এই অঞ্চলের চ্যালেঞ্জের মাত্রা কত ব্যাপক। এই ঘটনা শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নয়, বিশ্বের জন্য বিপদস্বরূপ।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে এই বিপদের হুমকি মোকাবিলায় কাজে নেমে পড়ার জন্য জাগরণের আহ্বান হিসাবে কাজ করেছে। ইজরায়েলের উপর হামাসের নৃশংস হামলার পর ইজরায়েলের ক্রমবর্ধমান প্রতিক্রিয়া এবং এই অঞ্চলে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার মধ্যে, সম্মেলনটি ছিল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ঐতিহাসিক ও বর্তমান শত্রুতা ও দ্বন্দ্ব এবং দ্রুত আঞ্চলিক পরিবর্তনের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের যৌথ হুমকিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। জ্ঞানের আদান–প্রদান, দুর্যোগ মোকাবিলা কৌশল এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে।

রূপান্তরমূলক অভ্যন্তরীণ নীতি এবং ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাবের প্রমাণিত রেকর্ড আছে এমন একটি দেশ দ্বারা আয়োজিত কপ২৮ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতির মধ্যে যে জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড–১৯ অতিমারি এবং অবশ্যই যুদ্ধের মতো সমস্যাগুলির আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমাধান প্রয়োজন৷ এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, যে বিষয়টিকে অনেকেই এই অঞ্চলের তাৎক্ষণিক ও অস্তিত্বের হুমকি হিসাবে বুঝতে পেরেছেন তার মোকাবিলা করার প্রচেষ্টা চালাতে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি একটি বিশেষভাবে উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে।



ডঃ ইয়োসি মান বার ইলান ইউনিভার্সিটি এবং রিচম্যান ইউনিভার্সিটির লডার স্কুল অফ গভর্নমেন্ট মিডল ইস্ট বিভাগের একজন সিনিয়র লেকচারার ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.