Published on Jul 02, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত মহাসাগরে তুর্কিয়ের বর্তমান উপস্থিতি এবং আকাঙ্ক্ষাকে একটি বৃহৎ কৌশলগত পরিকল্পনার পরিবর্তে মূলত সুবিধাবাদী বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

ভারত মহাসাগরে তুর্কিয়ে-কে নিয়ে বড় প্রশ্ন

ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় ভূ-রাজনীতি প্রতিযোগিতা যদি ইউরোপ এবং আটলান্টিককে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে, তবে আজ তা ঘটছে ইন্দো-প্যাসিফিককে কেন্দ্র করে। প্রকৃতপক্ষে, ভারত মহাসাগর অঞ্চলটিই গভীরতম রূপান্তরের সাক্ষী। এই সব কিছুই ঘটছে এক স্বতঃসিদ্ধ মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড বা  বহুমেরু বিশ্বের প্রেক্ষাপটে। এই জটিল পরিবেশে, ভারত মহাসাগরে বেশ কিছু অপ্রচলিত শক্তি দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে এবং তার মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে তুর্কিয়ে, যেটি এশিয়া ও ইউরোপের মিলনস্থলে অবস্থিত একটি উদীয়মান মধ্যশক্তি। কৃষ্ণসাগর, এজিয়ান সাগর এবং ভূমধ্যসাগরের উপকূল দ্বারা বেষ্টিত তুর্কিয়ে কোনভাবেই ভারত মহাসাগরে একটি প্রাকৃতিক সামুদ্রিক শক্তি নয়, তবে এটি তেমনটা হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। প্রকৃতপক্ষে, এটি সত্যিকারের বিশ্বশক্তি হয়ে উঠতে চায় এবং আঙ্কারার দৃষ্টি স্পষ্টতই ভারত মহাসাগরে নিবদ্ধ। টি কি সুবিধাবাদী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী নব্য-অটোমান মঞ্চ না কি এটিকে একটি দক্ষ আঞ্চলিক নবাগতের কৌশলগত শক্তির খেলা বলা চলে? সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে এক গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার অভিপ্রায়ের সঙ্গে তুর্কিয়ের ক্ষমতাগুলি সমানুপাতিক কি না… তার মধ্যে এর উত্তর নিহিত।

 

কৃষ্ণসাগর, এজিয়ান সাগর এবং ভূমধ্যসাগরের উপকূল দ্বারা বেষ্টিত তুর্কিয়ে কোনভাবেই ভারত মহাসাগরে একটি প্রাকৃতিক সামুদ্রিক শক্তি নয়, তবে এটি তেমনটা হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করে।

 

ভারত মহাসাগর অঞ্চলের সঙ্গে তুর্কিয়ের সম্পৃক্ততা

তুর্কিয়ের বিদেশনীতিতে ভারত মহাসাগরকে ক্রমশ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এবং সেই বিদেশনীতিতে সবচেয়ে দৃশ্যমান সাধনী হয়ে উঠেছে তুর্কিয়ের নৌবাহিনীশতাব্দীর শুরু থেকে তুর্কিয়ের নৌবাহিনীর উল্লেখযোগ্য আধুনিকীকরণ সম্প্রসারণ হয়েছে। নৌবাহিনীর অগ্রাধিকার বৃহত্তর বিনিয়োগ দ্বারা চালিত হয়েছিল এবং এটি তুর্কিয়ের বিদেশনীতির পদক্ষেপেরও অংশ ছিল, যার লক্ষ্য ছিল তুর্কিয়ের দক্ষিণ এবং পূর্বে সামুদ্রিক আঞ্চলিক এলাকায় বৃহত্তর সংযোগ প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা।

এর স্পষ্ট প্রকাশ দেখা যায় তুর্কিয়ের মাভি ভাতানবা ব্লু হোমল্যান্ড মতবাদে, যা কিনা একটি সামুদ্রিক কৌশল এবং এটি তুরস্কের সার্বভৌমত্ব এবং বিদেশের কাছাকাছি সমুদ্রসীমার স্বার্থকে জোরদার করে। ২০০৬ সালে প্রথম প্রবর্তিত মাভি ভাতান একটি বর্ধিত সামুদ্রিক এক্তিয়ারে তুর্কিয়ের দাবির জন্য আইনি, কূটনৈতিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিকভিত্তি প্রদান করে এবং তুর্কিয়ের রাজনৈতিক অভিজাত কৌশলগত সম্প্রদায় উভয়ের মধ্যে এটি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নিজের নতুন নৌ পেশীগুলিকে প্রদর্শন করার জন্য আঙ্কারা ২০১৯ সাল থেকে ব্লু হোমল্যান্ড নৌ মহড়া সিরিজের আয়োজন করে এসেছে, যেটিতে ১০০টিরও বেশি জাহাজ এবং বিমান রয়েছে এবং এটি কৃষ্ণ, এজিয়ান এবং ভূমধ্যসাগরে একই সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে।

এর প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও অনুরূপ আধুনিকীকরণের উদ্যোগ দেখা গিয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের বিশেষ অস্ত্র তৈরিতে অবদান রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় বায়কার মাকিনা নির্মিত বেরাখতার টিবি২, মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিকল (ইউএভি) বা ড্রোন, সাঁজোয়া যান এবং বিশ্বের প্রথম ড্রোন বিমানবাহী বাহক। তুর্কিয়ের প্রতিরক্ষা নিবন্ধগুলি মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার সঙ্গে প্রচার ও সম্পৃক্ততা সহায়তা করেছে। তুর্কিয়ে প্রতিরক্ষা সামগ্রী বিক্রয় এবং বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউএই) সঙ্গে প্রতিরক্ষা শিল্পের চুক্তি থেকে শুরু করে জিবুতির সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণ হয়ে সোমালিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা চুক্তিও অন্তর্ভুক্ত সোমালিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে আঙ্কারা সোমালিয়ার নৌবাহিনীকে প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম উভয়ই সরবরাহ করবে বলে জানা গিয়েছে

 

তুর্কিয়ের প্রতিরক্ষা নিবন্ধগুলি মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার সঙ্গে প্রচার ও সম্পৃক্ততা সহায়তা করেছে। তুর্কিয়ে প্রতিরক্ষা সামগ্রী বিক্রয় এবং বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

 

এই চুক্তিগুলি বেশ আকর্ষণীয় কারণ চুক্তির স্বাক্ষরকারীরা ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় রাষ্ট্র হলেও তারা তুর্কিয়ের বর্তমান কার্যকলাপের ন্যূনতম অংশেরই প্রতিনিধিত্ব করে। মলদ্বীপের কাছে টিবি২ ড্রোন বিক্রি করার তুর্কিয়ের সিদ্ধান্ত এবং কুয়ালালামপুরের তুর্কি অ্যাডা-ক্লাস বা লিটোরাল মিশন শিপ (এলএমএস) ব্যাচ কর্ভেট সংগ্রহের আকারে মালয়েশিয়ার সঙ্গে তুর্কিয়তের বর্ধিত প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ভারতীয় উপমহাদেশে এবং তার আশপাশে আঙ্কারার ক্রমবর্ধমান প্রভাবকেই দর্শায়। তুর্কিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও নৌ সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে। পাকিস্তান নৌবাহিনী আয়োজিত দ্বিবার্ষিক আমান মহড়ায় তুর্কিয়ে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী হিসেবে শুধুমাত্র দুটি নৌবাহিনীর যৌথ নৌ মহড়াই পরিচালনা করেনি, বরং আঙ্কারা ২০২৩ সালে ইসলামাবাদের কাছে চারটি সংশোধিত বাবর-শ্রেণির কর্ভেট বিক্রি করেছিল। এটি যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য, কারণ এতে জড়িয়ে থাকা সংবেদনশীল প্রযুক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিগত সম্পত্তির অধিকার হস্তান্তর ভারত মহাসাগরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর সামরিক সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে শক্তিশালী করতে পারে। এটি তুর্কিয়ের সুদূরপ্রসারী মিলজেম প্রকল্পকেও বৃহত্তর প্রেরণা দিয়েছে। এই প্রকল্পটি হল এমন একটি জাতীয় যুদ্ধজাহাজ কর্মসূচি, যা কর্ভেট, ফ্রিগেট এবং ডেস্ট্রয়ারের মতো বহুমুখী নৌযান তৈরি এবং আমদানি করতে বদ্ধপরিকর এবং যা পুনঃসূচনা অ্যান্টি-সাবমেরিন যুদ্ধের মতো বিভিন্ন কাজে সক্ষম।

 

ভারত মহাসাগরে তুর্কিয়ের উপস্থিতি

এই প্রেক্ষাপটে ভারত মহাসাগরে নিজের ক্ষমতা এবং প্রভাব প্রসারিত করার জন্য তুরস্কের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার পরবর্তী অংশ বলে মনে হচ্ছে নীতির পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালে ‘সেঞ্চুরি অব তুর্কিয়ে’ শীর্ষক জাতীয় বিদেশনীতি নথিতে ভারত মহাসাগরের কৌশলগত গুরুত্বের পাশাপাশি তুর্কিয়ের ‘জ্বালানি ও সরবরাহ শৃঙ্খলের নিরাপত্তা’র গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। টিতে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন-এ (আইওআরএ) তুর্কিয়ের সদস্যতার ঘটনাকেও তুলে ধরা হয়, যা ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়েছিল।

ভারত মহাসাগরকে ২০১৫ সালের তুর্কিয়ে নৌবাহিনীর কৌশল হিসাবে কৌশলগত গুরুত্ব’-এক্ষেত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। কৌশলটিতে আরও বলা হয়েছে যে, তুর্কিয়ের লক্ষ্য হল লজিস্টিক ঘাঁটি এবং স্থানীয় বন্দর সুবিধাগুলি অর্জন করে আন্তঃকার্যক্ষমতাকে উন্নত করাসেই লক্ষ্যে, এই নীতি নথিগুলির সঙ্গে সম্পর্কহীন হওয়া সত্ত্বেও তুর্কিয়ের আলবায়রক সংস্থা ২০১৩ সাল থেকে মোগাদিশু বন্দর পরিচালনা ও প্রসারিত করেছে এবং সম্প্রতি আর কটি ১৪ বছরের ছাড়ের জন্য সম্প্রসারণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। আর কটি তুর্কি সংস্থা ফাভোরি এলএলসি ২০১৫ সালে একটি নতুন টার্মিনালের উদ্বোধন করে এবং মোগাদিশুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনার কাজ চালায়। তুর্কিয়ে ২০১৭ সালে মোগাদিশুতে সোমালিয়ার সামরিক এবং বিশেষ বাহিনীর জন্য একটি সামরিক প্রশিক্ষণের সুবিধা চালু করেছিল। এটি ২০২২ সালের মধ্যে হাজার হাজার সৈন্যের পাশাপাশি ৫০০০ কম্যান্ডো, ৩১৬ জন আধিকারিক এবং ৩৯২ জন এনসিওকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সুদানের প্রাক্তন সরকারের সঙ্গে ২০১৭ সালের একটি আরও বিতর্কিত চুক্তি – যার লক্ষ্য ছিল লোহিত সাগরের তীরে সুয়াকিনে একটি অটোমান যুগের ফাঁড়ি পুনরুদ্ধার করা - এই জল্পনার জন্ম দেয় যে, পদক্ষেপটি একটি নৌ ডক এবং পুনঃসরবরাহ সুবিধার জন্য শুধু মাত্র আড়াল করার প্রয়াস ছিল মাত্র।

তুর্কিয়ের অটোমান অতীতের উল্লেখ অনিবার্য ভাবে এই প্রশ্ন তোলে যে, ভারত মহাসাগরে তুর্কিয়ের ব্য আবিষ্কৃত আগ্রহ কি কেবল একটি স্মরণীয় অতীতের জন্য নস্টালজিয়া মাত্র, যা কেবল সুবিধাবাদী নীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সর্বোপরি, উসমানীয় সুলতানরা মালাক্কা প্রণালী পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে নৌ অভিযান পাঠিয়েছিলঅটোমান-পর্তুগিজ দ্বন্দ্বের সময় লোহিত সাগর (১৫৩৮-১৫৬০) বেশিরভাগ খ্রিস্টান ইথিওপিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে বর্তমান সোমালিল্যান্ডে মুসলিম আদাল সালতানাতকে সমর্থন করেছিল এবং পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে নৌ যুদ্ধ করেছিল।

 

সুদানের প্রাক্তন সরকারের সঙ্গে ২০১৭ সালের একটি আরও বিতর্কিত চুক্তি – যার লক্ষ্য ছিল লোহিত সাগরের তীরে সুয়াকিনে একটি অটোমান যুগের ফাঁড়ি পুনরুদ্ধার করা - এই জল্পনার জন্ম দেয় যে, পদক্ষেপটি একটি নৌ ডক এবং পুনঃসরবরাহ সুবিধার জন্য শুধু মাত্র আড়াল করার প্রয়াস ছিল মাত্র।

 

তুর্কিয়ের নীল জলরাশির উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে নব্য-অটোমান হিসাবে বর্ণনা করা অত্যন্ত সরলীকরণ হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান যখন তুর্কিয়ের জাতীয় স্বার্থকে সুয়েজ খাল, সংলগ্ন সমুদ্রাঞ্চল এবং সেখান থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে বর্ণনা করেন তখন ভূমিকার ধারণা দ্বারা অবহিত দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি যতটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হো না কেন, তুর্কিয়ে তার সীমিত ভূমিকা নিয়ে কখনই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনি। ১৯২৩ সাল থেকে এবং প্রজাতন্ত্রের সূচনা থেকে রাজনৈতিক বর্ণালী জুড়ে তুর্কিয়ের  নেতারা কেমালপন্থী থেকে শুরু করে ইসলামপন্থী হয়ে জাতীয়তাবাদী পর্যন্ত বিভিন্ন মাত্রায় তুর্কিয়েকে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেনপ্রথমে দেশের নিকটস্থ প্রতিবেশে এবং তার পরে নিরন্তর প্রসারিত ঘনকেন্দ্রিক বৃত্তগুলিতে তেমনটা প্রসারিত করতে চেয়েছেন।

১৯৭০ বা ১৯৯০-এর দশকে আঙ্কারার নেতারা যে সমস্যার মুখোমুখি হন, তা হল এই বিদেশনীতিগুলিকে ধারাবাহিক ভাবে কার্যকর করার জন্য তাঁদের জাতীয় শক্তির অভাব ছিল। এখন কাগজে-কলমে তুর্কিয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সক্রিয় বিদেশনীতিতে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও সীমাবদ্ধতাকে অস্বীকার করা যায় না। মধ্য এশিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা এবং ভারত মহাসাগরের অববাহিকার দেশগুলির সঙ্গে তুর্কিয়ের সম্পৃক্ততা এই দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝা উচিত। এই কার্যকলাপগুলি প্রাক্তন অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত শুধুমাত্র দুটি কারণকে দর্শায়: একটি হল আংশিক ভৌগোলিক অগ্রাধিকার এবং দ্বিতীয়টি হল দেশ-রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে তুর্কিয়ের স্বাভাবিক ভূমিকায় আঙ্কারার বর্তমান রাজনৈতিক অভিজাতদের বিশ্বাস কিন্তু যেখানে অটোমানরা আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী ছিল, তুর্কিয়ের বর্তমান নেতারা তেমনটা করতে আগ্রহী নন।

 

একটি পারিপার্শ্বিক শক্তি

তুর্কিয়ে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার অভিপ্রায় স্পষ্ট করলেও সেই সম্পৃক্ততা কোন আকার নেবে এবং তুর্কিয়ে এমনটা করতে সক্ষম হবে কি না, তা দেখার বিষয়। আঙ্কারার প্যান-ইসলামিক ভাষা এবং ঔপনিবেশিক বিরোধী ভাষ্য সত্ত্বেও এই অঞ্চলে তুর্কিয়ের সম্পৃক্ততা মূলত বাণিজ্যিক প্রকৃতির এবং অ-সতর্কতামূলক। এমনকি মলদ্বীপের কাছে ড্রোন বিক্রি করা বা পাকিস্তান নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণে আঙ্কারার সম্পৃক্ততা মূলত বাণিজ্যিক স্বার্থ দ্বারা অনুপ্রাণিত কারণ আঙ্কারা ভারতকে পাশ কাটিয়ে বা পশ্চিম ভারত মহাসাগরে একটি আবাসিক শক্তি হওয়ার কৌশলগত লক্ষ্যের পরিবর্তে নিজের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা শিল্পকে প্রসারিত করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে, তুর্কিয়ের নীল স্বদেশ কৌশলের স্থপতি সেম গার্দেনিজ যখন সুদূর ভারত মহাসাগরে তুর্কি নৌবাহিনীর উপস্থিতির ন্যায্যতা প্রমাণ করেছিলেন, তখন শুধু মাত্র দেশটির ব্যবসায়িক স্বার্থ সম্পর্কে কথা বলেছিলেন।

 

১৯৭০ বা ১৯৯০-এর দশকে আঙ্কারার নেতারা যে সমস্যার মুখোমুখি হন, তা হল এই বিদেশনীতিগুলিকে ধারাবাহিক ভাবে কার্যকর করার জন্য তাঁদের জাতীয় শক্তির অভাব ছিল।

 

সমস্ত দেশের মতোই তুর্কিয়ের নিজস্ব ক্ষমতা সীমিত। নিজের দেশ থেকে দূরে অবস্থিত অঞ্চলগুলিতে শক্তি প্রদর্শন করার জন্য বাহিনী পুনরায় মোতায়েন করার ক্ষেত্রে আঙ্কারার ক্ষমতা যথেষ্ট সীমাবদ্ধ। দেশের ভেতরে এবং দেশের কাছাকাছি তুর্কিয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা সংক্রান্ত বোঝার অর্থ হল এর সংস্থানগুলি মূলত অঞ্চল বহির্ভূত সামরিক দুঃসাহসিকতায় জড়িত না হয়ে স্বদেশকে রক্ষা করতে আগ্রহী। এমনকি তুর্কিয়ে চাইলেও তার নৌবাহিনীর কাছে দূরবর্তী জলসীমায় উল্লেখযোগ্য এবং প্রভাবশালী স্থাপনার জন্য কোনও সংস্থান নেই।

ভারত মহাসাগরে তুর্কিয়ের বর্তমান প্রচার উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলিকে কেউ কেউ স্বাগত জানাতে পারে এবং কেউ কেউ নিন্দাও করতে পারে। তবে এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, দেশটি কিছু বৃহৎ কৌশলের পরিবর্তে মূলত সুবিধাবাদী ভাবনাই পোষণ করছে। যখন এই অঞ্চলে একগুচ্ছ বৃহত্তর শক্তির আরও বেশি বাজি রয়েছে এবং তারা আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে ও তার মোকাবিলা করবে, তখন উপস্থাপক হিসেবে তুর্কিয়ে অদূর ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগরে সীমিত ভূমিকাই পালন করবে।

 


রুশালি সাহা নয়াদিল্লিভিত্তিক স্বাধীন গবেষক, যিনি ভারত মহাসাগরের ভূ-রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন।

ব্র্যান্ডন জে ক্যানন আবু ধাবির খলিফা ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.