Author : Soumya Bhowmick

Published on Feb 15, 2024 Updated 0 Hours ago

শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ভারতের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশকে কাজে লাগালে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগতে পারে

ভারতের পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক ভূচিত্রের বিশ্লেষণ

অর্থবর্ষ ২৩–২৪–এর প্রথম ত্রৈমাসিকে ৭.৮ শতাংশের জিডিপি বৃদ্ধির হার (জি২০–র দ্রুততম বর্ধনশীল দেশ)–সহ ভারত ২০২৬–২৭ সালের মধ্যে তার ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির লক্ষ্য অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশটি তার অর্থনৈতিক বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে উপাদানগুলির একটি গতিশীল ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া তার অর্থনৈতিক ভূচিত্র ও জনসংখ্যার কাঠামোকে নতুন আকার দেয়।

ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে চিহ্নিত করে বেশ কিছু মূল উপাদান।
জিডিপি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২–২৩–এর অনুমানগুলি ইঙ্গিত করে যে ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার ৬.০ শতাংশ থেকে ৬.৮ শতাংশের মধ্যে হবে, আর প্রকৃত অর্থে বেসলাইন জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে ৬.৫ শতাংশ। তবে, ভারতের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি একটি অবিরাম উদ্বেগ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মূল সুদের হার বৃদ্ধি–সহ সাম্প্রতিক আর্থিক ও মুদ্রানীতির মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়েছে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতও সক্রিয়ভাবে আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করছে।


জিডিপি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২–২৩–এর অনুমানগুলি ইঙ্গিত করে যে ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার ৬.০ শতাংশ থেকে ৬.৮ শতাংশের মধ্যে হবে, আর প্রকৃত অর্থে বেসলাইন জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে ৬.৫ শতাংশ।

ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রটি বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খল (জিভিসি)–এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখে, তবে শ্রমের প্রয়োজনের সঙ্গে আয়তনের ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এই প্রেক্ষাপটে, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভারত কীভাবে এই সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে পারে, তা অন্বেষণ করা জরুরি।

ভারতে পরিষেবা ক্ষেত্রটি পূর্ব এশীয় সমকক্ষের তুলনায় জনসংখ্যার কম শতাংশকে কাজে নিয়োগ করে, তবে ক্ষেত্রটি ধারাবাহিকভাবে জাতীয় মোট মূল্য সংযোজনে (জিভিএ) অবদান রাখছে। নির্মাণশিল্পও শিল্পক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে, এবং গত দুই দশক ধরে এর কর্মশক্তি ক্রমাগতভাবে প্রসারিত হচ্ছে। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র, যার কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (৪৯.১ শতাংশ) সরকারি ক্ষেত্রে কাজ করেন, মোট ১.৬ মিলিয়ন ব্যক্তির কর্মসংস্থান করে। এর উপর গিগ কর্মীরা আসরে এসেছেন, যাঁরা বর্তমানে কর্মশক্তির ১.৫ শতাংশ, এবং ২০২৯–৩০ সালের মধ্যে মোট কর্মসংস্থানে তাঁদের অবদান ৪.১ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতীয় অভ্যন্তরীণ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের জিভিসি–র মধ্যে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে, এবং এভাবে এর ক্রিয়াকাণ্ডের আয়তনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তা সত্ত্বেও, ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রটি আরও পুঁজিনিবিড় হওয়ার জন্য প্রস্তুত, যার ফলে মূলধন–আউটপুট অনুপাত বৃদ্ধি পাবে এবং ফলস্বরূপ শ্রমের চাহিদা হ্রাস পাবে। আয়তন বৃদ্ধি ও উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তির ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা আগামী দশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে।


গিগ কর্মীরা আসরে এসেছেন, যাঁরা বর্তমানে কর্মশক্তির ১.৫ শতাংশ, এবং ২০২৯–৩০ সালের মধ্যে মোট কর্মসংস্থানে তাঁদের অবদান ৪.১ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই অতিক্রমণকালে ম্যানুফ্যকচারিংয়ের মধ্যে শ্রমনিবিড় উপক্ষেত্রগুলি উৎপাদনশীলতায় নেট বৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারতের রপ্তানি ঝুড়ি, যার মধ্যে ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, লোহা ও ইস্পাতের ক্রমবর্ধমান অংশ রয়েছে, তা ম্যানুফ্যাকচারিং ও প্রতিযোগিতামূলক পরিশোধন পরিষেবাগুলির জন্য একটি বর্ধিত ক্ষমতাকে নির্দেশ করে৷ শ্রমনিবিড় রপ্তানি ক্ষেত্র —যেমন খেলনা, বস্ত্রবয়ন, জুতো ও আসবাবপত্র — অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রাখে, এবং বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য এদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

সরকারি হস্তক্ষেপ

ভারতে একটি প্রাণবন্ত ও গতিশীল কর্মীবাহিনীর পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ ও নীতির মধ্যে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক চাকরি সৃষ্টির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশের পথ প্রশস্ত করতে পারে। দেশটি তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের যাত্রায় অগ্রসর হওয়ার সময় এই সুযোগ–ক্ষেত্রগুলি ভারতের কর্মসংস্থানের ভূচিত্র গঠনে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত, যা অনুঘটিত হয় সরকারি উদ্যোগের কৌশলগত সমর্থন ও হস্তক্ষেপ দিয়ে। কয়েকটি মূল সরকারি উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে:

ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম

২০১৫ সালে চালু হওয়া
ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম ভারতকে জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার জন্য একটি ব্যাপক সরকারি উদ্যোগ। ডিজিটাল পুশ ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে এটি ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রচার করে, ডিজিটাল পরিকাঠামো প্রসারিত করে, ই–সরকার পরিষেবাগুলিকে উন্নত করে, এবং এভাবে একটি ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্র তৈরি করে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার বিস্তৃত ছত্রছায়ায় ছোট শহরগুলিতে তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য প্রযুক্তি–সক্ষম পরিষেবাগুলিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার ইন্ডিয়া বিপিও প্রোমোশন স্কিম ও নর্থ–ইস্ট বিপিও প্রোমোশন স্কিম চালু করেছে, এবং ইতিমধ্যে প্রায় ৫২,০০০ কর্মসংস্থান করেছে।

প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা

প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (
পিএমকেভিওয়াই) হল ভারতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি উদ্যোগ। দক্ষতা উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রকল্পটি ২০১৫ সালে চালু করা হয়েছিল। এটি বিনামূল্যে স্বল্পমেয়াদি দক্ষতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়, দক্ষতার শংসাপত্রের উপর আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করে, শিল্পের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে শ্রমশক্তির দক্ষতাকে সারিবদ্ধ করে, এবং ব্যক্তিদের আরও নিয়োগযোগ্য করে তোলে। পিএমকেভিওয়াই নিয়োগযোগ্যতার ব্যবধান মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং নিয়োগযোগ্যতার উন্নতি ও অংশগ্রহণকারীদের আরও ভাল চাকরির সুযোগ পাওয়ার জন্য ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় দক্ষতা বিকাশের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
 
স্টার্টআপ ইন্ডিয়া:

স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ইনিশিয়েটিভ ২০১৬ সালে চালু হয়েছিল। এর লক্ষ্য রেজিস্ট্রেশন সহজ করে, ট্যাক্স ছাড় দিয়ে এবং একটি ডেডিকেটেড ফান্ড তৈরি করে স্টার্টআপগুলিকে সমর্থন করা। এটি নিয়ামক পরিবেশকে মসৃণ করেছে এবং স্টার্টআপের জন্য বাধা কমিয়েছে। বৃহত্তম স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রগুলির মধ্যে একটিকে সক্ষম করে ভারত ডিপার্টমেন্ট ফর প্রোমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টারনাল ট্রেড স্বীকৃত স্টার্টআপগুলির মাধ্যমে ৯০০ হাজারেরও বেশি চাকরি তৈরি করেছে৷

কৌশলগত ক্ষেত্রে উৎপাদন সংযুক্ত প্রণোদনা:

২০২০ সালে চালু করা ভারতের
প্রোডাকশন–লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ম্যানুফ্যাকচারিংকে শক্তিশালী করার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। এর মূল উদ্দেশ্য হল দেশীয় ম্যানুফ্যাকচারিংকে উৎসাহিত করা এবং ইলেকট্রনিক্স, ফার্মাসিউটিক্যালস, অটোমোবাইল, টেক্সটাইল, সোলার ও টেলিযোগাযোগের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তার উপর এটি ব্যয় প্রতিযোগিতার উন্নতি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নির্দিষ্ট করা দায়বদ্ধতা মেনে চলা এবং রপ্তানিকে উন্নত করে ভারতীয় ম্যানুফ্যাকচারিংকে বিশ্বস্তরে প্রতিযোগিতামূলক করার চেষ্টা করে। পিএলআই স্কিমটি ২০২১–২২ সালে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে এফডিআই–তে একটি উল্লেখযোগ্য ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি এনেছে, এবং ২০২১–২২ থেকে শুরু করে পাঁচ বছরে ৬ মিলিয়ন চাকরি তৈরি করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা হল কামার, স্বর্ণকার, কুমোর, ছুতোর ও ভাস্করদের মতো বিভিন্ন ব্যবসায় ঐতিহ্যবাহী কারিগর ও শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা ও দক্ষতা উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের জন্য একটি সরকারি উদ্যোগ। যোগ্য সুবিধাভোগীরা জামানত ছাড়াই ৩০০,০০০ ভারতীয় রুপি পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন, যা তাঁদের ব্যবসা শুরু বা প্রসারিত করতে সক্ষম করে। ঐতিহ্যবাহী কারিগরদের ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের দক্ষতা তুলে ধরার মাধ্যমে এই উদ্যোগটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প সংরক্ষণে অবদান রাখে এবং উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার সুযোগ দেয়। এভাবে শেষ পর্যন্ত ওই যোজনা ভারতে স্বনিযুক্তি এবং অন্যান্য জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করে।

মানব পুঁজির ব্যবহার

‌২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চিনের ১.৪১২ বিলিয়ন জনসংখ্যা ছাপিয়ে ১.৪১৭ বিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নতুন দিল্লির ব্যাপক মানবসম্পদ, বিশেষ করে তার তরুণ জনসংখ্যা, তার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা এবং একটি বিশিষ্ট বৈশ্বিক উপস্থিতি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতার প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

ভারতের ৫২ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দার বয়স ৩০ বছরের নিচে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৪৩ শতাংশ হওয়ায় ভারত
যথেষ্ট সম্ভাবনার অধিকারী। অবশেষে, যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, বয়সগত ভাগ একইসঙ্গে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে। শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এই জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের সুযোগ নেওয়া গেলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়তে পারে, তবে এই ক্রমবর্ধমান কর্মশক্তির জন্য কার্যকর সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সুযোগের ব্যবস্থারও প্রয়োজন।



সৌম্য ভৌমিক সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সহযোগী ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.