২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদের পর থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মহাদেশটিতে ফ্রান্সের জটিল এবং টানাপড়েনময় ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের কারণে আফ্রিকায় জাতীয় কৌশল, সম্পর্ক এবং হস্তক্ষেপের একটি বিস্তৃত পুনর্নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন। ওই বছরেরই নভেম্বরে মাসে বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগুতে একটি কূটনৈতিক সফরের সময়, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ আশ্চর্যজনকভাবে স্বীকার করেছিলেন যে, মহাদেশটিতে ফ্রান্সের কূটনীতিগত আর কোনও বৃহৎ কৌশল নেই। তিনি উভয় পক্ষকে তাদের অভিন্ন ইতিহাসকে স্বীকার করার এবং তাদের রাজনৈতিক সম্পর্কের পুনর্নবীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। ফ্রান্স বর্তমানে তার আফ্রিকার অংশীদারদের সঙ্গে একটি বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করতে চায়, যা আরও সমান ভিত্তির উপর নির্ধারিত। যদিও, আমলাতান্ত্রিক দ্বন্দ্ব, বিতর্কিত নীতি বিকল্প, লেনদেনমূলক অর্থনৈতিক ও সাহায্য নীতি এবং একটি সামরিকচালিত নিরাপত্তা নীতি, যা্সাহেল-এ চরমপন্থাকে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে এমন বেশ কয়েকটি কারণে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের এ ধরনের প্রচেষ্টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সীমিত ছিল এবং যা এই অঞ্চলের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ গ্যাবন, অ্যাঙ্গোলা, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে চতুর্দেশীয় সফরে যাওয়ার আগে আফ্রিকার সঙ্গে একটি নতুন অংশীদারিত্ব সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেন। এই কৌশলটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফ্রাঙ্কোফোন দেশগুলিতে ফরাসি ঔপনিবেশিকতার উত্তরাধিকারকে মোকাবেলা করার ইচ্ছা এবং একই সঙ্গে আফ্রিকার পরিচিতিকে সম্মান করার পাশাপাশি দেশটির সঙ্গে একটি ‘নতুন, ভারসাম্যপূর্ণ, পারস্পরিক এবং দায়িত্বশীল সম্পর্ক’ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো।
ফ্রান্স বর্তমানে তার আফ্রিকার অংশীদারদের সঙ্গে একটি বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করতে চায়, যা আরও সমান ভিত্তির উপর নির্ধারিত।
আফ্রিকার সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্কের ‘নতুন যুগ’-এ প্রবেশের এই সিদ্ধান্তটি এমন একটি সময়ে গৃহীত হয়েছে, যখন মহাদেশটিতে ফ্রান্সের প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে। পশ্চিম এবং উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশে ফরাসি-বিরোধী মনোভাব দ্বারা উদ্দীপিত রাস্তার বিক্ষোভ একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠছিল। ফ্রাঙ্কাফ্রিক নামে পরিচিত ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী প্রভাবের দিনগুলি যা ফরাসিরা ঔপনিবেশকতার সময়ের পরেও ধরে রেখেছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি অস্থিতিশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একই সময়ে আফ্রিকার দেশগুলি পাশ্চাত্যের সাহায্যের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে তাদের বাহ্যিক অংশীদারদের প্রসঙ্গে বৈচিত্র্য আনতে ইচ্ছুক। বর্তমানে বহুমুখী বিশ্ব বলতে বোঝায় যে, চিন, ভারত এবং তুর্কিয়ের মতো গ্লোবাল সাউথের দেশগুলি আফ্রিকার দেশগুলিকে অনুসরণ করার জন্য একটি বিকল্প উন্নয়ন মডেল প্রদান করে।
ফ্রান্সের নব্য আফ্রিকা কৌশল থেকে শিক্ষা
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর বক্তৃতা অবশ্যই আফ্রিকার সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ককে গভীরভাবে পরিবর্তন করার ইচ্ছেকে উস্কে দিয়েছে। তবে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি নতুন নয়। অতীতে তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও বাস্তবে তা রূপান্তরিত হয়নি। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর বক্তৃতা থেকে তিনটি বড় শিক্ষা ছিল: প্রথমত, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ স্বীকার করেছেন যে, আফ্রিকা এখন ‘প্রতিযোগিতার দেশ’। তিনি ফরাসি ব্যবসায়ীদের ‘সজাগ হতে’ এবং আফ্রিকার অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। ফ্রান্স বর্তমানে এমন একটি অর্থনৈতিক মডেল উন্নীত করার চেষ্টা করছে, যা একটি ‘ত্রাণ মনোভাব’ থেকে সরে এসে অংশীদারিত্বভিত্তিক যৌথ বিনিয়োগ পদ্ধতির দিকে চালিত হয়।
দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সামরিক শাসনের বিপরীতে আফ্রিকার গণতন্ত্রের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে এটা স্পষ্ট যে, প্যারিস গণতন্ত্রটির এক অভিভাবক হিসেবে তার ভূমিকা বজায় রাখতে চাইলেও মধ্য আফ্রিকার মতো কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতি তার সমর্থন কখনও কখনও তার মানবাধিকার সংক্রান্ত বাগাড়ম্বরের বিষয়টি জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। যখন ফ্রান্স একটি সমঝোতামূলক অবস্থান গ্রহণ করে এবং মালি ও গিনির অভ্যুত্থানের নিন্দা করা সত্ত্বেও ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে চাদের সামরিক দখলকে সমর্থন জানায়, তখন ফ্রান্সের দ্বৈত মনোভাব বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
ফ্রান্স বর্তমানে আপাতদৃষ্টিতে আফ্রিকার দেশগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করে একটি নিরপেক্ষ কথোপকথন হিসেবে কাজ করার লক্ষ্য রেখেছে।
এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল মহাদেশটিতে ফরাসি হস্তক্ষেপকে অতীতের বিষয় করে তোলার বিষয়ে প্যারিসের অভিপ্রায়। ফ্রান্স বর্তমানে আপাতদৃষ্টিতে আফ্রিকার দেশগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করে একটি নিরপেক্ষ কথোপকথন হিসেবে কাজ করার লক্ষ্য রেখেছে। প্যারিস আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে একটি নতুন নিরাপত্তা অংশীদারিত্বে প্রবেশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এটি সমগ্র মহাদেশ জুড়ে এর সামরিক ঘাঁটিতে ফরাসি সৈন্য ও কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটানোর পাশাপাশি আফ্রিকার আধিকারিক এবং কর্মীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করবে। এর নেপথ্যে লক্ষ্য হল আফ্রিকায় ফরাসি সামরিক ঘাঁটি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ না করা, বরং সেগুলিকে আফ্রিকার অংশীদারদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে রূপান্তর করা।
যদিও এ কথা লক্ষ করার মতো হবে যে, আফ্রিকায় ফরাসি সৈন্য সংখ্যা হ্রাসের বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা বা সময়রেখা বেঁধে দেওয়া হয়নি এবং এই ধরনের হ্রাসের কোনও যাচাইযোগ্য সূচকও প্রদান করা হয়নি।
সামরিক হস্তক্ষেপবাদের একটি বিন্যাসে আটকা পড়া?
গত পাঁচ বছরে আফ্রিকায়, বিশেষ করে সাহেল অঞ্চলে, ফ্রান্সের সামরিক ও নিরাপত্তার ভূমিকা সমালোচিত হয়েছে এবং বিষয়টিকে জনসাধারণের তদন্তের আওতায় রাখা হয়েছে। প্যারিসের নিরাপত্তাচালিত পদ্ধতি মালি, বুরকিনা ফাসো, চাদ এবং মধ্য আফ্রিকার প্রজাতন্ত্রের মতো দেশে জটিল সামরিক পদক্ষেপের বিন্যাসে আটকা পড়েছে। বেশিরভাগ অংশে ফ্রান্স একটি নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসাবে আফ্রিকায় তার ভূমিকা তৈরি করেছে, যার সঙ্গে কেন্দ্রে সন্ত্রাস দমনের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। এই পদ্ধতিটি ২০১৩ সালে মালিতে অপারেশন সার্ভালের সূচনার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছিল, যা ২০১৪ সালে অপারেশন বারখানে নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অপারেশনগুলি মালিতে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা এবং শাসন সংক্রান্ত উদ্বেগের সমাধান করতে পারেনি এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর ফরাসি সৈন্য এবং সামরিক সম্পদ প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়। মালির সামরিক অভ্যুত্থান এবং মালিতে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের মতো কারণগুলি ফরাসি নীতিনির্ধারকদের নিশ্চিতভাবে এই প্রত্যাহারের সুযোগ দেয়। এই প্রত্যাহার শেষ পর্যন্ত সাহেল অঞ্চলের দেশগুলিকে নিরাপত্তার শূন্যতা পূরণের জন্য রুশ ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার গ্রুপের মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য করে।
মালির সামরিক অভ্যুত্থান এবং মালিতে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের মতো কারণগুলি ফরাসি নীতিনির্ধারকদের নিশ্চিত ভাবে এই প্রত্যাহারের সুযোগ দেয়।
আপাতত ফ্রান্সের আফ্রিকা নীতি নিরাপত্তা মাত্রা দ্বারা চালিত হচ্ছে। এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি রক্ষা ও বজায় রাখা হয়েছে প্যারিসের স্বার্থের অনুকূল। এটি কেবল মহাদেশে রুশ প্রভাবকে সীমিত করার জন্য নয়, বরং এ কথা উপলব্ধি করার জন্য যে, আফ্রিকার যে কোনও অস্থিতিশীলতা তাদের ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে ইউরোপের সুরক্ষার জন্য সরাসরি হুমকির সৃষ্টি করে।
সাম্রাজ্যবাদী আর্থিক নীতির ধারাবাহিকতা?
সর্বোপরি, ফ্রান্স-আফ্রিকা ব্যস্ততার অর্থনৈতিক মাত্রাও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। কম্যুনাতে ফিনানচেরে আফ্রিকানে (আফ্রিকান ফিন্যান্সিয়াল কমিউনিটি) ফ্রাঙ্ক, যা সিএফএ ফ্রাঙ্ক নামে পরিচিত এবং ১৯৪৫ সালে স্থাপিত, তাকে এখনও দু’টি আর্থিক অঞ্চলে ব্যবহার করা হয়। সেগুলি হল পশ্চিম আফ্রিকান অর্থনৈতিক ও আর্থিক ইউনিয়ন (ডব্লিউএইএমইউ) এবং মধ্য আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও আর্থিক সম্প্রদায়ে। এগুলি মূলত ব্যবস্থার অংশ হিসাবে ফ্রান্সের প্রাক্তন উপনিবেশগুলির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৫০ শতাংশ ফরাসি কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য ছিল। সিএফএ বিষয় দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা রাজনৈতিক সমালোচনাকেই তুলে ধরে, যা পরবর্তী কালে মাদাগাস্কার এবং মৌরিতানিয়ার মতো দেশগুলিকে তাদের নিজস্ব মুদ্রা গ্রহণের জন্য সিএফএ ফ্রাঙ্ক ছেড়ে দিতে বাধ্য করে।
আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য ফ্রান্সের নতুন কৌশল স্পষ্টতই অতীতের ভুলগুলি সংশোধন করতে এবং আফ্রিকায় তার কূটনৈতিক প্রসার পুনর্বিবেচনা করার প্যারিসের ইচ্ছাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। এটি ফ্রান্সকে তার হারানো জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করার এবং মহাদেশে তার নিরাপত্তা-প্রথম পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন করার সুযোগ দিয়েছে। আফ্রিকায় সামরিক হস্তক্ষেপের আর কাঙ্ক্ষিত প্রভাব না থাকলেও নতুন কৌশল ফ্রান্সকে আফ্রিকার দিকে তার অতীতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দূরে সরে যেতে সক্ষম করে কি না, তা উত্তর ভবিষ্যতই দেবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.