Author : Shairee Malhotra

Published on Aug 26, 2023 Updated 0 Hours ago

স্পষ্টবাদী ভারত গ্লোবাল সাউথকে ইউরোপীয় কর্মসূচির অংশ করে তুলেছে

স্পষ্টবাদী ভারত গ্লোবাল সাউথকে ইউরোপীয় কর্মসূচির অংশ করে তুলেছে

এটি সর্বজনবিদিত সত্য যে, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, উন্নয়ন সংক্রান্ত সমস্যা এবং ঋণ সঙ্কট-সহ বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতাই গ্লোবাল সাউথকে অসম ভাবে প্রভাবিত করে। গ্লোবাল সাউথ হল উন্নয়নশীল দেশগুলির একটি অসম গোষ্ঠী, যা আন্তর্জাতিক জিডিপির ৩৯ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে৷ স্টিমসন সেন্টারের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত জাজ্বল্যমান তথ্য অনুযায়ী খাদ্য, জ্বালানি বা অর্থের সঙ্কট অন্তত ১০৭টি উন্নয়নশীল দেশের ১.৭ বিলিয়ন মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তবুও বিশ্বব্যবস্থা এবং পশ্চিমকেন্দ্রিক বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলি এই বাস্তবতাগুলিকে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ঠিক যেমনটা প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, ‘সমাধানের অনুসন্ধান আমাদের ভূমিকা বা কণ্ঠকে প্রভাবিত করে না।’

স্টিমসন সেন্টারের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত জাজ্বল্যমান তথ্য অনুযায়ী খাদ্য, জ্বালানি বা অর্থের সঙ্কট অন্তত ১০৭টি উন্নয়নশীল দেশের ১.৭ বিলিয়ন মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

এই ভারসাম্যহীনতা সংশোধনের প্রচেষ্টায় ভারত গ্লোবাল সাউথের উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরেছে এবং অঞ্চলটিকে তার জি২০ সভাপতিত্বের কেন্দ্রে জায়গা করে দিয়েছে। তার সভাপতিত্বের একেবারে শুরুতে ভারত ১২৫টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের আয়োজন করেছিল। এমনকি ভারত এ কথাও সুনিশ্চিত করেছিল যে, এই বছরের মে মাসে হিরোশিমায় সংঘটিত জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে অঞ্চলটি যেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে।

মনোযোগের কেন্দ্রে

তবে গ্লোবাল সাউথ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কারণেও আলোচনায় উঠে এসেছে।

জি২০ সভাপতিত্বের সময় এই অঞ্চলের উপর ভারতের বিশেষ গুরুত্বপ্রদান বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের দ্বিতীয় বর্ষের সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে। যুদ্ধটি এক সত্যকে তুলে ধরেছে, এটি গ্লোবাল নর্থ ও সাউথের মধ্যে বোধের পার্থক্যকে প্রকাশ্যে এনেছে, যার ফলে দীর্ঘদিনের অন্তঃসলিলা উত্তেজনাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বেশির ভাগ দেশই রাশিয়ার বিরোধিতা করবে… এ হেন ইউরোপীয় প্রত্যাশার বিপরীতে দেশগুলি অগণিত জটিল কারণে সংঘাতের নিরিখে এক মিশ্র অবস্থান গ্রহণ করেছে। সুস্পষ্ট বাস্তব রাজনৈতিক সমীকরণ বা রিয়েল পলিটিক ক্যালকুলেশনের পাশাপাশি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার প্রতি ঐতিহাসিক ক্ষোভ  এবং বর্তমান বহুপাক্ষিক কাঠামোয় গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্বের অভাব ইউরোপের সঙ্গে মতপার্থক্য বৃদ্ধি করেছে। এটি অনভিপ্রেত ফলাফলের জন্ম দিয়েছে— সুপ্রাচীন মহাদেশটি অবশেষে দীর্ঘ অবহেলিত অঞ্চলটির উপর বেশি মনোযোগ দিতে শুরু করেছে।

যুদ্ধের শুরু থেকে ইউরোপ সক্রিয় ভাবে ভারতকে রাশিয়ার নিন্দা করার জন্য জোরালো ভাবে চাপ দিয়েছে। তার বিনিময়ে জি২০ এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সভাপতিত্বের দায়িত্বে থাকা ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠা ভারত খাদ্য, জ্বালানি ও সারের মতো তিনটি F সঙ্কটের নিরিখে গ্লোবাল সাউথের উপর যুদ্ধের অসম প্রভাবকে দর্শিয়েছে এবং সেই সংক্রান্ত নিজস্ব মনোভাব ব্যক্ত করেছে। তীব্র মেরুকরণের সময়কালে এই ভারতীয় প্রচেষ্টাগুলি জি২০-কে সম্পূর্ণ ভাবে ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ দ্বারা চালিত না হওয়ার সুযোগ প্রদান করেছে এবং তার পরিবর্তে এটির অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত প্রবিধানের উপর মনোযোগ দিতে বাধ্য করেছে।

ইউরোপের ক্ষমতার অলিন্দে অভূতপূর্ব আত্মবীক্ষণের সূচনা করে জয়শঙ্করের মন্তব্য এই প্রসঙ্গকেই আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে যে, গ্লোবাল সাউথের চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি উদাসীনতা বজায় রেখে ইউরোপ সমর্থন এবং সংহতির আশা করতে পারে না।

একই সঙ্গে ভারত ইউরোপীয়দের আত্মবীক্ষণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিদেশমন্ত্রী  এস জয়শঙ্করের প্রবল আলোড়ন ফেলা বক্তব্য, ‘ইউরোপকে নিজের এই মানসিকতার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে যে ইউরোপের সমস্যা সারা বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু বিশ্বের সমস্যা ইউরোপের সমস্যা নয়’… কেবল গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির মধ্যেই নয়, বহু দূরেও অনুরণিত হয়েছে। কারণ খাস ইউরোপের মধ্যে জার্মান চ্যান্সেলর স্কোলজ ২০২৩ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জয়শঙ্করকে উদ্ধৃত করেছেন। ইউরোপের ক্ষমতার অলিন্দে অভূতপূর্ব আত্মবীক্ষণের সূচনা করে জয়শঙ্করের মন্তব্য এই প্রসঙ্গকেই আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে যে, গ্লোবাল সাউথের চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি উদাসীনতা বজায় রেখে ইউরোপ সমর্থন এবং সংহতির আশা করতে পারে না।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে ইইউ বিদেশ নীতির প্রধান জোসেফ বোরেল এই বছরের রাইসিনা ডায়লগ এবং নয়াদিল্লিতে জি২০ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তাঁর উপস্থিতির পরে লিখেছেন, ‘বিশ্ব জুড়ে আমাদের অ-পশ্চিমী অংশীদার দেশগুলির অনেকেই কী ভাবে বর্তমানের সঙ্কটজনক সময়কে দেখেন, তা লক্ষ করা আকর্ষণীয়।’ বোরেলের নিজের কথায়, তাঁর হাত ধরে ব্রাসেলসে যে সব সিদ্ধান্ত পৌঁছেছে, তার মধ্যে ভারত এবং বৈচিত্র্যময় গ্লোবাল সাউথের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া অন্তর্ভুক্ত। একই সঙ্গে  এটিতে বহুপাক্ষিকতার টেবিলে ন্যায্য ভাবে জায়গা করে নেওয়ার জন্য অঞ্চলটির আকাঙ্ক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী একটি ব্লগে বোরেল সম্ভবত জয়শঙ্করের কথার সূত্র ধরে উল্লেখ করেছেন যে, যুদ্ধের সময়ে গ্লোবাল সাউথের ‘শুধু মাত্র দর্শকের’ ভূমিকা নেওয়ার কারণটি এই ‘দ্বিচারিতা ও হতাশা দ্বারাই চালিত যে, অন্য সমস্যাগুলি একই গুরুত্ব বা সংস্থান পায় না।’

একটি ক্রমবিবর্তিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা

প্রকৃতপক্ষে গ্লোবাল সাউথে উদীয়মান শক্তির উত্থানকে প্রতিফলিত করার জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বিকশিত হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং ব্রাজিল নিয়ে গঠিত বর্তমান জি২০ ত্রোইকা ২০২৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা অনুসৃত হবে। ‘ফরেন পলিসি’র প্রধান সম্পাদক রবি আগরওয়াল যেমনটা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, গ্লোবাল সাউথের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং দৃশ্যমানতা হল ২০২৩ সালের জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির সবচেয়ে অর্থবহ প্রবণতা। ইউরোপ যদি এখন মনোযোগ না দেয়, তা হলে সে নিজের অজান্তেই আর একটি সঙ্কটে জড়িয়ে পড়বে।

গ্লোবাল সাউথের উপলব্ধি ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে ভারতের স্পষ্ট ও ধারাবাহিক বক্তব্য ইউরোপীয় চিন্তাধারায় বিলম্বিত হলেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনে অবদান রেখেছে।

গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরদার করার মাধ্যমে ভারত কেবল নিজের কথাই তুলে ধরেনি, বরং একটি নবীন, দ্রুত বর্ধনশীল দৃঢ় অথচ দুর্বল অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী বেশ কয়েকটি দেশের হয়েও সওয়াল করেছে। আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র পূর্ণ সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর চাপই সেই কথা দর্শায়। যুক্তিটি ধারণাগত ভাবে সঠিক— যদি ৪৫০ মিলিয়নের কম জনসংখ্যাবিশিষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন জি২০-র একটি সদস্য হতে পারে, তা হলে ১.৩ বিলিয়নের বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট আফ্রিকান ইউনিয়ন কেন সদস্য হতে পারে না?

ইউরোপের দিক থেকে গ্লোবাল সাউথের আখ্যানের যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য তার সংগ্রাম এই অঞ্চলের সঙ্গে ইউরোপের সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মৌলিক পুনর্বিবেচনাকে চালিত করেছে। গ্লোবাল সাউথের উপলব্ধি ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে ভারতের স্পষ্ট ও ধারাবাহিক বক্তব্য ইউরোপীয় চিন্তাধারায় বিলম্বিত হলেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনে অবদান রেখেছে।

গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক একটি বাঁকবদলকারী মুহূর্তে দাঁড়িয়ে। আরও সাম্যবাদী এবং কম পৃষ্ঠপোষকতামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে ইউরোপ ধীরে ধীরে এবং স্থির ভাবে এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাটিন আমেরিকার দিকে তার কূটনৈতিক প্রসার বৃদ্ধি করছে। তাই অন্তত কিছুটা হলেও নয়াদিল্লিকে এর কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে- যা আন্তর্জাতিক গতিশীলতাকে রূপ দেওয়ার সম্ভাবনা-সহ একটি আত্মবিশ্বাসী উদীয়মান শক্তি হিসাবে ভারতের মর্যাদারই প্রমাণ।


শায়রী মলহোত্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.