নবী মহম্মদ সম্পর্কে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্য এক বহুস্তরীয় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও তার সীমার বাইরের সব মুসলিম দেশই প্রকাশ্যে এ হেন দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা করেছে এবং ভারত সরকার সংশ্লিষ্ট দলীয় কর্মীদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মীদের তাদের পদ থেকে বরখাস্ত করেছে এবং কূটনীতিকরা দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি প্রশমনে সব রকমের চেষ্টা চালাতে বাধ্য হয়েছেন।
১৫টিরও বেশি ইসলামিক দেশ, যাদের অধিকাংশেরই নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক বর্তমান, বিবৃতি জারি করেছে এবং নবীর বিরুদ্ধে করা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সে দেশে কর্মরত ভারতীয় দূতদের ডেকে পাঠায়। ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমির-আবদোল্লাহিয়ান তাঁর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাঁচ দিনের ভারত সফরে এসে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি, জ্বালানি নিরাপত্তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়ের থেকেও অধিক গুরুত্ব দিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে নবীর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালান।
গালফ-ভারত ফ্রি ওয়ে?
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নয়াদিল্লির মরিয়া চেষ্টা স্পষ্টতই দৃশ্যমান। বিগত কয়েক বছরে গালফ এবং পশ্চিম-এশীয় দেশগুলি ভারতীয় বিদেশ নীতির সমীকরণে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশেষ রকমের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আশ্চর্যজনক ভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল এবং ভারতের মধ্যে সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপগুলির অধিকাংশই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে গৃহীত হয়েছে। মোদীর সময়ে গালফ অঞ্চলে ভারতের আগ্রহ শুধু মাত্র দেশগুলির অধিবাসী ও জ্বালানি তেলকেন্দ্রিক থাকেনি, বরং সংশ্লিষ্ট সময়ে অর্থনীতি, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আন্তঃসহযোগিতার অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতেও পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হতে দেখা গিয়েছে। ক্ষমতাসীন উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলির সঙ্গে দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের মোদী সরকারের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক এবং আদর্শগত ফারাকের প্রেক্ষিতে এই বাস্তবতা আরও চমকপ্রদ হয়ে ওঠে। উভয় পক্ষই এখনও পর্যন্ত গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট বা শীর্ষ স্তরে এই পার্থক্যগুলির সঙ্গে সফল ভাবে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
বিগত কয়েক বছরে গালফ এবং পশ্চিম-এশীয় দেশগুলি ভারতীয় বিদেশ নীতির সমীকরণে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশেষ রকমের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় সমাজ এবং রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক অনৈক্য কোনও নতুন ঘটনা নয়। একই সঙ্গে এ কথাও সত্যি যে ভারত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলাপ-আলোচনা চালানোতেও পারদর্শী যেটি তার অসংখ্য সুবিধা ও গুটিকয়েক ত্রুটি-সহ ভারতের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ভারতের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সম্পর্ক, বিশেষত পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে, ১৯৯২ সালে অযোধ্যা মসজিদ ধ্বংস, ২০০২ সালে গুজরাতের গোধরা দাঙ্গা এবং এ রকম আরও অনেক সুতীব্র দোলাচলের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এবং প্রতি বারই উভয় তরফেই কুশলী কূটনীতি অবলম্বন করে, আদর্শগত ও ধর্মতান্ত্রিকগত বিভাজন থাকা সত্ত্বেও পারস্পরিক সম্পর্ককে জটিল হয়ে ওঠা থেকে রক্ষা করা এবং পারস্পরিক লাভজনক জাতীয় স্বার্থগুলিকে সুরক্ষা জোগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ইসলামি নেতৃবৃন্দ এবং মুফতিরা উক্ত ঘটনার ফলস্বরূপ গালফ অঞ্চলে সম্ভাব্য অশান্তি রুখতে ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করেছেন। সেই সময়ে এই অঞ্চলটিতে কর্মসূত্রে দক্ষিণ এশিয়ার এক্স প্যাট কমিউনিটির লক্ষাধিক মানুষ বাস করতেন। এই সকল ঘটনা থেকে অনেকটা এগিয়ে এসে ২০১০-এর দশকে দ্রুত গতিতে বর্ধনশীল ভারতীয় অর্থনীতি ভারতের প্রতি গালফ অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী মনোভাব বদলাতে সাহায্য করে। ১৯৯০-এর দশকে এ হেন পারস্পরিক লাভজনক বাস্তবতা সম্ভবপর হত না। কারণ সে সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সংক্রান্ত আন্তঃসহযোগিতা প্রায় ছিল না বললেই চলে। এ ছাড়াও পাকিস্তানের প্রতি গালফ অঞ্চলের অনুরক্তি এবং আগ্রহ ভারতের তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল। এমনকি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত পুলিশের পলাতক তালিকাভুক্ত আসামীরাও সহজেই গালফ অঞ্চলে আশ্রয় পেয়ে যেতেন। কিন্তু মোদীর নির্বাচনে জয়লাভ করা এবং ভারতে জোট সরকারের বদলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকারের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ঘটনা গালফ অঞ্চলের দেশগুলি স্বাগত জানিয়েছে। গালফ অঞ্চলের অধিকাংশ দেশেই মোদীর ‘টপ ডাউন’ ধারার প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুস্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ করা যেতে পারে, যা দেশগুলির মতে আমলাতন্ত্রের প্রভাব হ্রাস করে দ্রুত ও কার্যকরী ফল প্রদানে সক্ষম।
একটি সিঙ্ক হোলের সৃষ্টি
বিজেপি মুখপাত্রের মন্তব্যকে ঘিরে কূটনৈতিক বচসা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। ইন্টারনেটের ব্যাপক বৃদ্ধি, সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংযোগকারী প্রযুক্তির গতি কোনও বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সরকারি অবস্থান এবং বাস্তবে ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহের মাঝের বিভাজিকা রেখা অস্পষ্ট করে দিয়েছে। বর্তমান সময়ে কূটনৈতিক পরিস্রবণের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ছে এবং আমরা যত এক অতিরিক্ত সংযুক্ত বা হাইপার কানেক্টেড বিশ্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, সরকারি আখ্যান এবং প্রতি-আখ্যানের উপরে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ছে। সরকারের অবস্থান গ্রহণ অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায় যখন কোনও ঘটনার অডিয়ো এবং ভিডিয়ো প্রত্যক্ষ ভাবে উপলব্ধ থাকে এবং একাধিক মঞ্চের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ফলে তা নিমেষে সহস্রাধিক মানুষের কাছে পৌঁছয়। গালফ দেশগুলিতেও অনুরূপ ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে, যেখানে আমাদের কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের সৌজন্যে বিজেপি মুখপাত্রের নবী সংক্রান্ত ভিডিয়োটি দ্রুত গতিতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। দেশগুলিতে উপস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের তরফে বিবৃতি জারি করে ভারত কূটনৈতিক চাপানউতোরকে শান্ত করতে আংশিক ভাবে সমর্থ হলেও গণস্তরে যা ক্ষতি হওয়ার তা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে।
ইসলামি নেতৃবৃন্দ এবং মুফতিরা উক্ত ঘটনার ফলস্বরূপ গালফ অঞ্চলে সম্ভাব্য অশান্তি রুখতে ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করেছেন। সেই সময়ে এই অঞ্চলটিতে কর্মসূত্রে দক্ষিণ এশিয়ার এক্স প্যাট কমিউনিটির লক্ষাধিক মানুষ বাস করতেন।
বিশেষত অঞ্চলটিতে বসবাসকারী এক্স প্যাটদের দ্বারা সোশ্যাল মিডিয়ায় করা মুসলিম বিরোধী বক্তব্যের অতীত ঘটনার ক্ষেত্রে গালফ দেশগুলির তরফে মার্জিত অথচ লক্ষ্যণীয় প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। বিগত বছরগুলিতে অনেক ভারতীয়কেই অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অঞ্চলস্থিত ভারতীয় দূতাবাসগুলির তরফে সমগ্র অঞ্চলটি জুড়ে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকদের নিজেদের অনলাইন কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন ও সংবেদনশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও বিশেষ লাভ হয়নি। যদিও গালফ দেশগুলি এই ঘটনাগুলিকে বিক্ষিপ্ত বলেই মনে করেছে এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে তাদের বৃহত্তর সম্পর্কের প্রেক্ষিতে এইগুলিকে দেখেনি। কিন্তু এই বিষয়টি বিশেষ করে বর্তমান সময়ে মনোযোগের দাবি রাখে।
এই ঘটনার সবচেয়ে ক্ষতিকারক অংশটি হল স্থিতাবস্থায় ভাঙন ধরানোর বক্তব্যটি এক জন দলীয় মুখপাত্রের তরফে করা হয়েছে, কোনও ‘অজ্ঞ’ সাধারণ মানুষ এমনটা করেননি। প্রতিটি বক্তব্য দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরেও একই ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় রাখা যে কোনও বক্তব্যেরই প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। এই সাধারণ বোধের গুরুত্ব দলের আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থায় উপেক্ষা করা উচিত হয়নি। নবী সম্পর্কে মন্তব্য করা পশ্চিম এশিয়ার অধিকাংশ স্থানেই বিপদসীমার সমতুল্য বলে বিবেচিত হয়, যা ইসলামি বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাকে সাধারণত গালফ দেশগুলি ভারতের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে না, যেমনটা তারা চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শিনজিয়াং এবং উইঘুর অঞ্চলস্থিত মুসলিমদের বেলাতেও করেনি।
…এবং বিষয়টির ভূ-রাজনীতি
সংশ্লিষ্ট সঙ্কটের নিরিখে যে চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তার নেপথ্যে একটি ভূ-রাজনৈতিক উপাদানও বিদ্যমান। বিজেপির রাজনীতিকের মন্তব্যের বিরুদ্ধে দেশ হিসেবে সম্ভবত কাতারই সর্বপ্রথম প্রতিবাদ জানায়। কাতারের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং নবীর সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর উপরে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকতে পারে। এ ছাড়াও, এই ঘটনাপ্রবাহের রূপদানে আন্তঃগালফ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভূমিকাও অনস্বীকার্য। দোহা প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার পরে, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো অন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলির তাকে অনুসরণ করা শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। যখন ইসলামিক দেশগুলি তাদের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে, তখন সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির চুপ করে থাকা শোভনীয় হতে পারে না। ফলে কয়েকটি দেশকে এ বিষয়ে নরম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্য পেশ করতে দেখা গিয়েছে, যেখানে ভারতীয় রাজনৈতিক ধারার সমালোচনা করার পাশাপাশি কটূক্তিকারী আধিকারিককে ভারত সরকার দ্বারা অবিলম্বে বরখাস্ত করার পদক্ষেপের প্রশংসাও করা হয়েছে। ভারতের তরফে জারি করা বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট মুখপাত্রকে ‘ফ্রিঞ্জ এলিমেন্ট’ বা ‘মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ রকম আর একটি ঘটনা ঘটে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে যখন কুয়েতি অ্যাসেম্বলি ভারতে ঘটা একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনার নিন্দা করে। যদিও সেই সময়ে বিষয়টি এখনকার মতো অঞ্চলজোড়া আকার ধারণ করেনি।
প্রতিটি বক্তব্য দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরেও একই ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় রাখা যে কোনও বক্তব্যেরই প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। এই সাধারণ বোধের গুরুত্ব দলের আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থায় উপেক্ষা করা উচিত হয়নি।
বিগত কয়েক বছরে আঞ্চলিক শক্তিকেন্দ্র রিয়াধ ও আবু ধাবির সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক মৌলিক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তার উপর থেকে আর্থিক বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও তত দিনে দোহা অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চিন্তাভাবনার স্রোতবদল করেছে এবং ইরান ও তুরস্কের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাচুর্যের দরুন অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তিতে বর্তমানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই দোহা স্বাধীনতর অবস্থান গ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যখন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নেতৃত্বে আব্রাহাম চুক্তির আওতায় ইজরায়েল এবং একগুচ্ছ আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় এবং এমনকি যখন সৌদি আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদি দেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করে, তখনও কাতার এক স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের পক্ষপাতী ছিল। কাতার তার সমর্থন বজায় রাখে এবং প্যালেস্তাইনিদের জন্য সরব হয়ে ওঠে যখন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অন্যরা ধীরে ধীরে এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা বন্ধ করে দেয়। এটা সম্ভব যে, আগের মতোই গালফ দেশগুলি ভারতের কাছে ব্যক্তিগত ভাবে ঘটনার কারণ জানতে চাইত অথবা খুব বেশি হলে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনের (ও আই সি) মাধ্যমে এমনটা করত। কিন্তু দোহা প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় প্রসঙ্গটি অন্য দিকে বাঁক নিয়েছে।
উপসংহার
সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বেশ কয়েকটি গালফ দেশকে দোহার পথ অনুসরণ করে বিবৃতি জারি করতে চাপ সৃষ্টি করলেও সমগ্র ব্যাপারটি শুধু মাত্র প্রশ্নের আড়ালে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই অভিজ্ঞতা থেকে নয়াদিল্লির শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে, এই অতি-সংযোগের যুগে অভ্যন্তরীণ ভাবে এমন এক রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রচার করা যা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচারিত মতাদর্শের চেয়ে আলাদা, তা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। একাধিক সীমাবদ্ধতা থাকার পাশাপাশি এ হেন দ্বিচারিতা খুব সহজেই আন্তর্জাতিক স্তরে প্রকাশ্যে চলে আসতে পারে। গালফ দেশগুলিও ধর্মের বিষয়ে কোনও বিধিনিষেধ ছাড়া খোলাখুলি আলোচনায় অভ্যস্ত নয়। ইতিপূর্বে ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও বিতর্কিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে একই রকম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। অতীত উদাহরণের ধারা মেনেই বর্তমানে সঙ্কটটিও ভারত-গালফ সম্পর্কের সভ্যতার ভিত্তির শক্তিশালী মৌলিক নীতিগুলিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে না বলেই আশা করা যায়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.