Author : Harsh V. Pant

Published on May 12, 2023 Updated 0 Hours ago

বর্তমান  বিশ্বে শক্তির ভারসাম্য পুনর্বিন্যাসে ভারতের আকাঙ্ক্ষা পূরণ বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ  ভুমিকা পালন করছে তার উপর নির্ভর করে। কাজেই এটা মো‌টেই আশ্চর্যজনক নয় যে নতুন বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি দেখে মনে হচ্ছে তা অতীতের কুণ্ঠাকে বাদ দিয়েছে।

গ্লোবাল ইন্ডিয়া’র জন্য একটি উচ্চাভিলাষী বাণিজ্য কর্মসূচি

বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন এমন একাধিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে চলেছে যেগুলির শীঘ্র সুরাহার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ভারতীয় অর্থনীতি কিন্তু এই সময়েই দুর্দান্ত স্থিতিস্থাপকতা ও প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে। এটি অন্যান্য বড় অর্থনীতির তুলনায় কোভিড–১৯ অতিমারি থেকে অনেক ভালভাবে বেরিয়ে এসেছে, এবং ভূ–রাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কার্যত নিয়মিতভাবে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও বৃদ্ধির গতিপথে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রেখেছে। আইএমএফ বলেছে, ভারত   অর্থনীতিতে একটি আপেক্ষিক ‘‌উজ্জ্বল স্থান’‌ হিসাবে থেকে গেছে, এবং ভারতীয় অর্থনীতি একাই ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বৃদ্ধিতে ১৫ শতাংশ অবদান রেখেছে। ভারতের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়েছে কার্যকর ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি বিচক্ষণ রাজস্বনীতির মতো অনেকগুলি কারণ, এবং সেইসঙ্গে মূলধন বিনিয়োগের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন। এগুলি শুধু অতিমারি সঙ্কটের পরে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতেই নয়, বরং বৈশ্বিক বিপর্যয় ও নৈরাশ্যের মধ্যেও বৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।

এই পটভূমিতে মোদী সরকার নতুন বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি (এফটিপি) নিয়ে এসেছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের রপ্তানি ২ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। অতীতের এই জাতীয় নীতিগুলির বিপরীতে, এটির কোনও নির্দিষ্ট শেষ তারিখ নেই এবং যেমন ও যখন প্রয়োজন সংশোধন করার বিকল্প রয়েছে। এটি ২০২০ সালে শেষ হওয়া পূর্ববর্তী এফটিপি-কে প্রতিস্থাপিত করেছে, যদিও কোভিডের কারণে নতুন নীতি বিলম্বিত হয়েছে। এখন বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন মন্দার প্রবণতার সঙ্গে লড়াই করছে, ভারত তার নতুন নীতি–সহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য নতুন প্রতিশ্রুতি ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তাদের পরিধির চারপাশে চিনের আগ্রাসন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য তাদের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি অনুসরণ করার পরিসর সঙ্কুচিত করেছে।

ভূ–রাজনৈতিকভাবে প্রধান বৈশ্বিক শক্তিগুলি বিভক্ত, এবং তাদের মধ্যে চ্যুতি রেখা দিন দিন প্রশস্ত হচ্ছে। মহাশক্তি মেরুকরণ হল নতুন বাস্তবতা, যার পরিপ্রেক্ষিতে আজ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সমস্ত রাষ্ট্রকে সাড়া দিতে হবে। তাদের পরিধির চারপাশে চিনের আগ্রাসন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য তাদের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি অনুসরণ করার পরিসর সঙ্কুচিত করেছে। পাশাপাশি ভূ–অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক বিষয়গুলির উপর ঠান্ডা যুদ্ধ–উত্তর ঐকমত্যটি দ্রুত ভেঙে পড়ছে। রাজনৈতিক আস্থা তৈরির জন্য বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সহযোগিতার জায়গায় এখন বিশ্বাসভিত্তিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তি অংশীদারিত্বের পথ তৈরি হচ্ছে। যে দেশগুলি অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন নিয়ে বিতর্কের নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা নজিরবিহীনভাবে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

বিভিন্ন ফ্রন্টে বৈশ্বিক শৃঙ্খলার জন্য চ্যালেঞ্জগুলি বৃদ্ধি পেলেও এই সময়টিকে ভারতের মুহূর্ত হিসাবে দেখা হচ্ছে, এবং ভারতীয় নীতি নির্ধারকেরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন যে ভারত যেন এইবার বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নিজের জন্য একটি অনন্য স্থান তৈরি করার সুযোগটি না–হারায়। ভারতের জন্য অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ঘর গুছোনোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা তার বিশ্বব্যাপী উত্থানের চাবিকাঠি। বিশ্ব বাণিজ্য ম্যাট্রিক্সে যাতে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিমুখ–সমন্বিত শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয় তা নিশ্চিত করা অতএব একটি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, এবং তা নতুন বাণিজ্যনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। কারণ এটি রপ্তানিকারকদের জন্য প্রক্রিয়াগুলিকে আরও ডিজিটাইজড এবং ঘাতবিহীন করার চেষ্টা করে, ই–কমার্স রপ্তানি বাড়াতে এবং এমএসএমই–র জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তৈরি করতে চায়, এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে রুপি–বাণিজ্য করার জন্য ভারতের ক্ষমতা বাড়াতে চায়।

ভারতের রপ্তানি ২০২০–২১ সালে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে এই বছর ৭৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যদিও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাজারে দেশের শেয়ার এখনও ৩২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা তুলনামূলকভাবে খুবই ক্ষুদ্র। তাই নয়াদিল্লির এমন একটি গতিশীল বৈদেশিক বাণিজ্যনীতির লক্ষ্যে কাজ করা অপরিহার্য, যা ভারতের ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি নতুন ভূ–অর্থনৈতিক ভূচিত্রে সাড়া দিতে সক্ষম।

ভারতের অর্থনৈতিক রূপান্তর দেশটিকে উদীয়মান বিশ্ব ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছে, এবং ক্ষমতার রাজনীতির মধ্যে টেনে এনেছে।

ভারতের অর্থনৈতিক উত্থান গত তিন দশকে ভারতীয় বিদেশনীতির গতিপথকে রূপ দিয়েছে। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা তাঁদের দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্থানে সাড়া দিতে, এবং সেই অনুযায়ী বিদেশনীতিকে পুনর্নির্মাণ করতে, বাধ্য হয়েছেন। ভারতের অর্থনৈতিক রূপান্তর দেশটিকে উদীয়মান বৈশ্বিক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছে, এবং মহাশক্তি রাজনীতির মধ্যে টেনে এনেছে। আজ মনে হচ্ছে ভারত একটি প্রধান বৈশ্বিক শক্তির মর্যাদা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, এবং নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য উপাদান হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে, যা দেশটির ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির উদাহরণ। ভারতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী ফলাফল প্রদান করা শুরু করার পরে ভারতীয় গণতন্ত্র অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

ভারতের অর্থনীতি ইতিমধ্যে বৈশ্বিক কৌশলগত সমীকরণে পরিবর্তন আনছে, এবং ক্ষমতার উদীয়মান ভারসাম্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। আজ ভারত যদি যুক্তি দিতে সক্ষম হয় যে এটি বৈশ্বিক ব্যবস্থায় একটি ‘‌নেতৃস্থানীয় খেলোয়াড়’‌ হতে চায়, শুধু  নিয়মাবলিতে মান্যতা দেওয়ার পরিবর্তে নিয়ম–নির্মাতা হতে চায়, তবে তা এই আত্মবিশ্বাসের পরিণতি যে ভারতীয় অর্থনৈতিক কাহিনিটি প্রাণবন্ত এবং সুস্থ। ভারত আজ একটি দায়িত্বশীল বৈশ্বিক অংশীদারের ভূমিকা পালন করতে পারে, কারণ এর অর্থনৈতিক সক্ষমতা সেই সম্ভাবনার অনুমতি দেয়।

বিশ্ব ব্যবস্থা আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে যাওয়ায় প্রধান শক্তিগুলি প্রকাশ্যে পরস্পর পস্পরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত। বিশ্বে প্রতিষ্ঠানগুলি কার্যত অকার্যকর হয়ে উঠছে, এবং অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন খণ্ডিত হওয়ার মুখোমুখি। এমতাবস্থায় ভারত এই বিতর্কগুলির বেশিরভাগেরই কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন বিশ্ব ভারতের কথা শোনে, কারণ একটি গণতান্ত্রিক ভারত ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এটি এমন একটি কাহিনি যা বিশ্বাস করা এবং লালন করার মতো। কয়েক দশক ধরে পশ্চাদমুখী অর্থনৈতিক নীতি পরিবেষ্টিত জনগণের সুপ্ত শক্তিকে উন্মোচন করার মাধ্যমেই ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা আজ এই মাত্রায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে পেরেছেন।

আসলে, শক্তির ভারসাম্য পুনর্বিন্যাসে ভারতের আকাঙ্ক্ষা পূরণ বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ  ভুমিকা পালন করছে তার উপর নির্ভর করে।   কাজেই এটা মো‌টেই আশ্চর্যজনক নয় যে নতুন বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি দেখে মনে হচ্ছে তা অতীতের কুণ্ঠাকে বাদ দিয়েছে। এই বার্তাটিই নতুন বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি থেকে উঠে আসে, এবং আশা করা যায় এটি সময়ের আগেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য ভারতের বাণিজ্য সম্প্রদায়কে যথেষ্ট পরিমাণে স্থায়িত্ব প্রদান করবে।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস’-এ বেরিয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.