Published on Mar 31, 2023 Updated 0 Hours ago

নয়াদিল্লি মার্কিন উদ্যোগে আনা প্রস্তাব সমর্থন করায় বিরত থেকে যথাযথ কাজ করেছে। ভারতের এ–স্যাট ত্রয়ীর গুরুত্বের দিক থেকে দৃষ্টি সরানো উচিত নয়।

এ–স্যাট পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা অপেক্ষা করতে পারে: ভারতকে কাইনেটিক এ–স্যাট ক্ষমতা বাড়াতে হবে

২০১৯ সালের মার্চের শেষের দিকে মোদী সরকার ‘‌মিশন শক্তি’‌ নামে একটি কাইনেটিক অ্যান্টি–স্যাটেলাইট টেস্ট (এ–স্যাট) করার গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। এ–স্যাট স্পষ্টতই ভারত ও গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের (পিআরসি) মধ্যে কাউন্টার–স্পেস সক্ষমতায় ক্রমবর্ধমান অসামঞ্জস্যের প্রতিক্রিয়া ছিল। কাইনেটিক এনার্জি ওয়েপনস (কেইডব্লিউ’‌জ) কক্ষপথে ধ্বংসাবশেষের আকারে ধ্বংসাত্মক প্রভাব তৈরি করে যেভাবে দীর্ঘমেয়াদে কক্ষপথে থাকা মহাকাশযান ও মহাকাশ অনুসন্ধানকে বিপন্ন করে, তার প্রেক্ষিতে কাইনেটিক এ–স্যাট–এর বিরোধিতা রয়েছে। এই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) আনা প্রস্তাবটি ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। সমর্থনকারী সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ছিল ১৫৫। এটি স্পষ্টতই একটি অ–বাধ্যতামূলক প্রস্তাব ছিল, কারণ ইউএনজিএ রাষ্ট্রপুঞ্জের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা নয়। তেমন সংস্থা হল নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএমএসসি)। যা অনুমিত ছিল সেভাবেই সবচেয়ে বড় মহাকাশ সামরিক শক্তিগুলির মধ্যে গণ্য এবং ভেটো–ক্ষমতাসম্পন্ন ইউএনএসসি–র স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে চিন ও রাশিয়া এই মার্কিন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। যদিও প্রস্তাবটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে একে ভারতের জন্য একতরফা স্থগিতাদেশের প্রতিশ্রুতির আমন্ত্রণ হিসাবেও দেখা যেতে পারে। এর অর্থ হল নয়াদিল্লিও আমেরিকার মতো কাইনেটিক এনার্জি ওয়েপন (কেইডব্লিউ)–এর বিরুদ্ধে অন্তত একটি বাস্তব বা একতরফা নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি দেবে, যাতে কক্ষপথের ধ্বংসাবশেষ প্রতিরোধ বা অন্তত প্রশমিত করার সুযোগ তৈরি হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে,  ভারতের মতোই পাকিস্তানও রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব সমর্থন করা থেকে বিরত ছিল। তাদের বিরত থাকার অর্থ পাকিস্তানিরা অবশ্যই তাদের নিজস্ব একটি এ–স্যাট তৈরির বিকল্পটি ত্যাগ করতে রাজি নয়। আর পিআরসি–র কথা তো বাদই রাখা যায়। কাজেই নিজের কেইডব্লিউ ক্ষমতা জোরদার করার পথ ত্যাগ করে নয়াদিল্লির এ–স্যাট নিষেধাজ্ঞার পথে তাড়াহুড়ো করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

সবচেয়ে বড় মহাকাশ সামরিক শক্তিগুলির মধ্যে গণ্য এবং ভেটো–ক্ষমতাসম্পন্ন ইউএনএসসি–র স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে চিন ও রাশিয়া এই মার্কিন  প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।

এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ধ্বংসাবশেষ উৎপন্নকারী কাইনেটিক এ–স্যাট নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্রমবর্ধমান সমর্থন সত্ত্বেও নয়াদিল্লিকে প্রচ্ছন্ন বা স্পষ্টভাবে একতরফা বা বহুপাক্ষিক স্তরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার চাপ প্রতিহত করতে হবে। প্রতিপক্ষের প্রদক্ষিণকারী মহাকাশযানের বিরুদ্ধে কাইনেটিক ক্ষমতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারতকে এখন নিজের বিকল্পগুলিকে শক্তিশালী করতে হবে। নয়াদিল্লির জন্য সমস্যা এককভাবে চিন নয়, বরং চিন ও পাকিস্তানের দ্বারা উত্থাপিত যৌথ বিপদ, যার জন্য ভারতকে আরও পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। তা ছাড়া মার্কিন উত্থাপিত প্রস্তাব উপেক্ষা করা যেতে পারে, কারণ বিশ্বের প্রধান মহাকাশ শক্তিগুলির বেশিরভাগই এর বিরোধিতা করেছে বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে বা ভোটদান থেকে বিরত থেকে। দ্বিতীয়ত, বাইডেন প্রশাসনের একতরফাভাবে কেইডব্লিউ পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ মেনে চলার সিদ্ধান্তটি ভবিষ্যতে রিপাবলিকান প্রশাসন উল্টে দিতেই পারে। প্রকৃতপক্ষে রিপাবলিকানরা আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ব–আরোপিত এ–স্যাট নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছিল, কারণ ২০২২ সালের এপ্রিলে যখন তা ঘোষণা করা হয়েছিল তখনই স্পষ্ট ছিল রাশিয়া বা চিন এমন একতরফা সংযমের পথে হাঁটবে না। পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পাস হওয়া কাইনেটিক এ–স্যাটের বিরুদ্ধে ইউএনজিএ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মস্কো ও বেজিংয়ের ভোট দেওয়ার ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে।

ভারতের কী করা উচিত? ভারতের উচিত একটি জাহাজ–ভিত্তিক কাইনেটিক এ–স্যাট পরিচালনা করার পাশাপাশি আকাশ থেকে উৎক্ষেপিত কেইডব্লিউ–র বিকাশ ও পরীক্ষা করা। মার্চ ২০১৯–এর ভারত স্থল–উৎক্ষেপিত সরাসরি আরোহণ কেইডব্লিউ পরীক্ষা চালিয়ে তার নিজস্ব একটি অকেজো উপগ্রহ ধ্বংস করেছিল। এবার ভারতের উচিত এ–স্যাটের জন্য নিম্ন উচ্চতার কক্ষপথ দিয়ে সমুদ্র ও আকাশ থেকে উৎক্ষেপণ, যা ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করবে। মার্চ ২০১৯–এর পরীক্ষাটি ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) দ্বারা ৩০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পরিচালিত হয়েছিল। এটি প্রায় ৪০০ টুকরো ধ্বংসাবশেষ তৈরি করেছিল, যার বেশিরভাগ বা ৯৫ শতাংশ প্রথম মাসের মধ্যে মাটিতে পড়েছিল। খুব সম্ভবত এখনও পর্যন্ত ভারতীয় পরীক্ষার ফলে উৎপন্ন প্রায় সমস্ত ধ্বংসাবশেষের মেঘ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং কক্ষপথে থাকা কোনও মহাকাশযানের জন্য কোনও সত্যিকারের বিপদ তৈরি করেনি। যতক্ষণ ভারতের কেইডব্লিউ পরীক্ষাগুলি পৃথিবীর ৮০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত সবচেয়ে জনাকীর্ণ কক্ষপথের  বাইরে বা নীচে থাকে, ততক্ষণ নয়াদিল্লি এগিয়ে যেতে পারে। মার্চ ২০১৯–এর ভারতীয় এ–স্যাট ধ্বংসাবশেষের দিক থেকে জানুয়ারি ২০০৭ ও নভেম্বর ২০২১–এর যথাক্রমে চিনা ও রুশ এ–স্যাটের মতো বিপজ্জনক ছিল না। মহাকাশে ধ্বংসাবশেষ তৈরির বিষয়ে উদ্বেগ মোকাবিলা করার জন্য নয়াদিল্লির আর একটি বিকল্প হল মহাকাশে ‘খালি বিন্দু’‌–র বিরুদ্ধে সমুদ্র বা আকাশ থেকে উৎক্ষেপিত এ–স্যাট, যেখানে একটি ক্ষেত্র বা মহাকাশের পূর্বনির্ধারিত বিন্দুর মধ্য দিয়ে কাইনেটিক ক্ষেপণাস্ত্রটি যাবে এবং কোনও প্রকৃত মহাকাশযান ধ্বংসের প্রয়োজন হবে না। এর জন্য ভারতের আরও ভাল সেন্সর প্রযুক্তির প্রয়োজন, যাতে কাইনেটিক প্রোজেকটাইলগুলি সঠিকভাবে ট্র্যাক করা যায়, এবং যার মধ্য দিয়ে তারা যাবে সেই ‘‌খালি বিন্দু’‌ সনাক্ত করা যায়। ক্ষেপণাস্ত্রটিকে পুনরায় কনফিগার করতে হবে এবং কাইনেটিক ইন্টারসেপশনের জন্য এর সফটঅয়্যার পরিবর্তন করতে হবে। ধনুশ জাহাজভিত্তিক ব্যালিস্টিক মিসাইল (এসএইচএলবিএম) এর একটি ভাল প্রার্থী এবং একে বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীর সুকন্যা শ্রেণির অফ–শোর প্যাট্রল ভেসেলগুলিতে (ওপিভি) মোতায়েন করা হয়েছে। ডিআরডিও এবং ভারতীয় নৌবাহিনীকে স্থির করতে হবে যে ভারতীয় নৌবাহিনীর সারফেস ফ্লিট–এর সবচেয়ে উন্নত ডেস্ট্রয়ার বিশাখাপত্তনম ক্লাস গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকেও ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের জন্য অভিযোজিত হতে পারে কি না। বিকল্পে একটি সারফেস ভেসেল থেকে উৎক্ষেপণের জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন কাইনেটিক ইন্টারসেপ্টর মিসাইল তৈরি করা যেতে পারে, যা আদর্শভাবে একটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার হওয়া উচিত।

মার্চ ২০১৯–এর ভারতীয় এ–স্যাট ধ্বংসাবশেষের দিক থেকে জানুয়ারি ২০০৭ ও নভেম্বর ২০২১–এর যথাক্রমে চিনা ও রুশ এ–স্যাটের মতো বিপজ্জনক ছিল না।

উপরে যা বলা হয়েছে তা থেকে একটি অনুসিদ্ধান্ত হল যে সমুদ্রভিত্তিক ও আকাশ থেকে উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করে ভারতের এ–স্যাট ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের জন্য বিকল্প তৈরি করে, যা নমনীয়তা এনে দেয় এবং অতিরিক্ত ক্ষমতা তৈরি করে। নয়াদিল্লি যথাযথভাবে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করা থেকে বিরত ছিল, তবে ভারতের একটি এ–স্যাট ত্রয়ীর গুরুত্বের দিক থেকে দৃষ্টি সরানো উচিত নয়। গত ডিসেম্বরে পাস হওয়া ইউএনজিএ প্রস্তাবের সুবিধা যাই হোক না কেন, ভারতকে অবশ্যই তার বারুদ শুকিয়ে রাখতে হবে, এবং তার কাউন্টার–স্পেস কেইডব্লিউ প্রয়োজন পূরণ করতে হবে। ধ্বংসাবশেষ–উৎপ‌ন্নকারী এ–স্যাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন আছে ঠিকই, তবে এখনও তার সময় আসেনি। এইভাবে, নয়াদিল্লিকে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে দেওয়া প্রতিরোধ করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.