Published on Apr 29, 2023 Updated 0 Hours ago

পিআরসি বাহিনীকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হলে আইএ–র ক্রমিক উন্নতি নয়, একটি বাস্তব রূপান্তর প্রয়োজন

কৌশলগত অগ্রাধিকারের সঙ্গে সম্পদের সামঞ্জস্য: মার্কিন মেরিন কোর ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্বেগ

ইউনাইটেড স্টেটস মেরিন কোর (ইউএসএমসি) এমন একটি রূপান্তরের মাঝপথে  রয়েছে, বা অন্ততপক্ষে এমন একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন শুরু করার পথে এগিয়েছে, যা মেরিন কোরের গঠন ও শক্তি–কাঠামোতে একটি বিশাল পরিবর্তন আনবে। ইউএসএমসি একে ফোর্স ডিজাইন ২০৩০ নাম দিয়েছে। মেরিন কোর হল একটি অভিযানমূলক বাহিনী, যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর (ইউএসএন) একটি অংশ এবং সঙ্কট বা সামরিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে প্রাথমিক মার্কিন প্রতিক্রিয়া জানানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত। ইউএসএমসি বেশ কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিপদের পূর্বাভাস দেয়, যেমন সেন্সর প্রযুক্তি, সিগন্যাল প্রসেসিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও এর বৈকল্পিক মেশিন লার্নিং (এমএল), এআই ও এমএল–এর রোবোটিক অ্যাপ্লিকেশন, সস্তা ড্রোনগুলি যারা অস্ত্র সরবরাহ ও বুদ্ধিমত্তার আকারে ঘোরাফেরার কাজ সম্পাদন করে, এবং নজরদারি ও প্রাথমিক নিরীক্ষণ (আইএসআর) মিশন। এছাড়াও ইউএসএমসি দেখভাল করে আকাশ, সামুদ্রিক ক্ষেত্র, মহাকাশ, সাইবারস্পেস, বা আরও সাধারণভাবে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম (ইএমএস)। এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় ‘‌…স্থলভিত্তিক, দীর্ঘ পরিসর, নির্ভুল ভূতল ও আকাশ প্রতিরক্ষা’‌ ক্ষমতা, যা অ্যান্টি–অ্যাকসেস অ্যান্ড এরিয়া ডিনায়াল (এটুএডি) কৌশলের মাধ্যমে বন্ধু রাষ্ট্রগুলিকে ব্যাপক প্রাণঘাতী ও হানাদারি শক্তি যোগায়। যদি একক প্রতিপক্ষ বা অনেক প্রতিপক্ষ প্রবেশ–বিরোধী (‌অ্যান্টি–অ্যাকসেস)‌ কৌশলে অনুপ্রবেশ করতে পারে, তবে এটুএডি অনুসরণকারী রাষ্ট্রটি ঐতিহ্যগত ভরযুক্ত স্থলসেনা, তাদের কৌশলগত উপাদান এবং যোগাযোগ সহায়তার গাঁটগুলির বিরুদ্ধে ঘনীভূত দীর্ঘ পরিসরের নির্ভুল আক্রমণ চালাতে পারে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইউএসএমসি–র মাথায় আছে চিনের কথা, কিন্তু এই মূল্যায়নও করা হয়েছে যে বন্ধু নয় এমন অন্য কিছু রাষ্ট্র্রেরও প্রবেশ–বিরোধী কৌশলে অনুপ্রবেশ করার ক্ষমতা থাকবে। বর্তমানে, প্রচুর পরিমাণে নিয়োগ করার পর যেগুলি  ইউএসএমসি–র বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলি হল লজিস্টিক ইনটেনসিভ ধাতব–সুরক্ষিত গঠন বা যুদ্ধের ট্যাঙ্ক, স্বল্প পরিসরের কম সহনশীল মানবহীন আকাশযান (ইউএভি), ক্যানন আর্টিলারি, ভাল সংখ্যার হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রন, এবং কিছু পদাতিক ব্যাটালিয়ন। ফলস্বরূপ ইউএসএমসি এই উত্তরাধিকার হিসাবে পাওয়া প্ল্যাটফর্ম ও ক্ষমতাগুলির একটি বিকল্প অনুসরণ করতে চায়। তাদের প্রতিস্থাপনের জন্য নতুনভাবে কল্পনা করা ইউএসএমসি বাহিনীর মূল উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার আর্টিলারি রকেট ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এডিএস), দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, উচ্চ সহনশীলতাসম্পন্ন ইউএভি যা আক্রমণের পাশাপাশি আইএসআর মিশনের উপযোগী, আর এর সঙ্গে  সংযুক্ত মহাকাশ, সাইবার পরিসর ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের (ইডব্লিউ) ক্ষমতা। এই লক্ষ্যপূরণের জন্য কোরের পরিকল্পনাকারীরা ক্রমিক পরিবর্তন নয়, বরং তাৎপর্যপূর্ণ রূপান্তরের পথ অনুসরণ করতে চান। ভবিষ্যতে যুদ্ধ যথেষ্ট দূরত্ব থেকে পরিচালিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং সমস্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইউএসএমসি–র মাথায় আছে চিনের কথা, কিন্তু এই মূল্যায়নও করা হয়েছে যে বন্ধু নয় এমন কিছু রাষ্ট্র্রেরও প্রবেশ–বিরোধী কৌশলে অনুপ্রবেশ করার ক্ষমতা থাকবে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর প্রভাব: অগ্নিবীর প্রকল্প

ইউএসএমসি কমান্ড্যান্ট হিসাবে জেনারেল ডেভিড বার্গার ভবিষ্যতে ইউএসএমসি বাহিনীর নকশা সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন: ‘‌‘‌অতিরিক্ত সংস্থান পাব না এই ধারণা নিয়ে কাজ করার সময় আমাদের অবশ্যই কিছু বিদ্যমান সক্ষমতাকে বিদায় দিয়ে অত্যাবশ্যক নতুন ক্ষমতার জন্য সংস্থান জোগাড় করতে হবে।” প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় সরকার ও ভারতীয় সেনাবাহিনীও (‌আইএ)‌ একইভাবে এগিয়েছে, এবং সে ক্ষেত্রেও এমন অভিন্ন ধারণা থাকতে পারে যে আইএ–র জন্য অন্তত নিকট থেকে মধ্যমেয়াদি  ভবিষ্যতে নতুন সংস্থান পাওয়া যাবে না, এবং যতক্ষণ না আইএ আধুনিকীকরণের জন্য আরও অর্থ পায় ততদিন আইএ–কে কাঠামো পুনর্গঠনের পথ বেছে নিতে হবে, যাতে একে আরও ভাল ক্ষমতা দিয়ে সজ্জিত করা যায়। ইউএসএমসি–র মতোই আই–র জন্য বোঝা হল ভারী জনশক্তি ও প্রবীণ সৈনিকদের একটি বড় দল, যাঁদের বেতন ও পেনশন দিতেই আই–র বার্ষিক বাজেটের বেশির ভাগটাই খরচ হয়ে যায়। ফলে আরও সক্ষম দীর্ঘ–পরিসীমার নির্ভুল আক্রমণশক্তি–নিবিড় লড়াকু বাহিনীর জন্য সংস্থানগুলির প্রাপ্যতার অভাব হতাশা নিয়ে আসে৷ প্রকৃতপক্ষে, যদি কার্যকরভাবে শত্রুর মোকাবিলা করতে হয়, বিশেষ করে পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি)–র সঙ্গে ভারতের বর্ধিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্থলসীমান্ত বরাবর, তা হলে আইএ–র যা প্রয়োজন তা ক্রমিক উন্নতি নয়, বরং একটি বাস্তব রূপান্তর। তিনটি মূল ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আইএ–র আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন: দূরপাল্লার আর্টিলারি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। এই প্রেক্ষাপটে অগ্নিবীর প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সরকারকে খরচ ছাঁটাই বা জনশক্তি খরচ সীমিত করতে সহায়তা করবে, এবং আইএ–র প্রকল্পটি থেকে সঞ্চিত সংস্থান বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য ব্যবহার করতে দেবে। এটি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ সহ নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের পরিষেবার মেয়াদ চার বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে বেতন ও পেনশন উভয়ই বাঁচাতে সহায়তা করে। জনবল হ্রাসের থেকে সঞ্চয় বৃদ্ধি পেলে তা দীর্ঘ পাল্লার আর্টিলারি, ক্ষেপণাস্ত্র ও উচ্চ–সহনশীল ড্রোন অধিগ্রহণে অর্থায়নে সহায়তা করবে। এটি আইএ–র ডিজিটাইজেশনের পথও প্রশস্ত করতে পারে। আইএ–কে দূরপাল্লার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (এডিএস), আর্টিলারি রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র ড্রোনগুলির সঙ্গে সমন্বিত আরও সাইবার ও স্পেস–সক্ষমতাসম্পন্ন বাহিনী হতে হবে। ভারতীয় বাহিনী এমন বিষয়গুলি নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছে, যেমন  অ্যান্টি–ট্যাঙ্ক মিশনের জন্য পাম ৫০০ রিমোটলি পাইলটেড ভেহিকেলস (আরপিভি)। যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যবহারের জন্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রেরও প্রয়োজন। সৌভাগ্যবশত বাহিনী ১৫০–৫০০ কিলোমিটার (কিমি) পরিসীমা–বিশিষ্ট প্রলয় সারফেস টু সারফেস মিসাইল পাচ্ছে। অবশ্য ব্যাখ্যাতীতভাবে, কিছু রিপোর্ট অনুসারে, আইএ মাত্র ১২০টি প্রলয় ক্ষেপণাস্ত্র পাবে, যা একটি দুঃখজনকভাবে কম সংখ্যা, বিশেষ করে যেহেতু চিনা ও পাকিস্তানিরা ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে অনেক বেশি সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে। আইএ–কে অবশ্যই এই প্রজেক্টাইলগুলিকে বহু শতাধিক করতে হবে। উপরন্তু আইএ–কে অবশ্যই মার্কিন–ওরিজিন ট্রাক থেকে প্রক্ষেপণসক্ষম তিন–ব্যক্তি চালিত হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (হাইমার) অধিগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এর প্রমাণিত রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার, যা একটি পরিসরের বিকাশের পরে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে এগুলির ব্যবহার প্রমাণ করেছে এগুলি যথেষ্ট কার্যকর ও প্রাণঘাতী। জর্ডন, পোল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রোমানিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই)–র মতো বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে হাইমার–গুলিকে মোতায়েন করেছে। হাইমার সি–১৩০, যা ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) ব্যবহার করে, তা সহজেই পরিবহণযোগ্য।

অগ্নিবীর প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সরকারকে খরচ ছাঁটাই বা জনশক্তি খরচ সীমিত করতে সহায়তা করবে, এবং আইএ–র প্রকল্পটি থেকে সঞ্চিত সংস্থানকে বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য ব্যবহার করতে দেবে।

বাহিনী পুনর্গঠন করার জন্য ইউএসএমসি–র প্রচেষ্টার বিপরীতে ভারত এখনও ভারী ট্যাঙ্ক থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না। তবে চিন–ভারত সীমানা বরাবর ভূখণ্ডে, বিশেষ করে লাদাখে, পাঞ্জাবের সমতল ভূমিতে ও রাজস্থানের মরুভূমিতে এমন ট্যাঙ্ক মোতায়েনের সুযোগ রয়েছে। এখন ভারত চিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য একটি হালকা ট্যাঙ্কের উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। এটি এমন একটি সক্ষমতা যা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)–র ৭৫ তম গ্রুপ আর্মি ইতিমধ্যেই টাইপ–১৫ লাইট ট্যাঙ্কের আকারে সীমান্তে মোতায়েন করেছে। এদিকে চিন বা পাকিস্তান তাদের বাহিনী থেকে ট্যাঙ্ক সরিয়ে নেওয়ার কোনও দৃশ্যমান ইঙ্গিত দেখাচ্ছে না। একটি জনশক্তি নিবিড় পরিষেবা হিসাবে আইএ–র পরিকল্পনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খরচ ছাঁটাইয়ের উপায় হল নিয়মিত পদাতিক বাহিনী। যাই হোক, হাইমার ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, মহাকাশ, সাইবারস্পেস, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ (ইডাবলু) এবং এআই–সক্ষমতার সঙ্গে সমন্বিত উচ্চ–সহনশীল ড্রোনের মতো নির্ভুল দূরপাল্লার বিধ্বংসী ক্ষমতা–নিবিড় প্রজেক্টাইলগুলি বিকাশ বা অর্জনের মাধ্যমেই শুধু বড় রূপান্তরের সমার্থক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এই পথ মসৃণ নয়। ইতিমধ্যেই অগ্নিবীর প্রকল্পটি কিছু তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি প্রতিরোধের মুখে পড়েছে, এবং এটিকে পরিমার্জিত করা হচ্ছে। এর ফলে প্রকল্পটি থেকে সেই ধরনের সঞ্চয় না–হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে যা আইএ–র পিআরসি–কে মোকাবিলা করার মতো সুসজ্জিত সমন্বিত যুদ্ধশক্তিতে পরিণত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। একজন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের একটি বাক্য ধার করে বলা যায়: ‘‌‘‌এ হল সম্পদের সঙ্গে কৌশলগত অগ্রাধিকারের মিলিত হওয়ার পুরনো সমস্যা।’‌’‌

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.