Author : Oommen C. Kurian

Published on Nov 19, 2021 Updated 0 Hours ago

স্থিতিশীল উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কাজকর্ম ও কোভিড–১৯ থেকে নিরাময় সম্পর্কিত অভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন সবচেয়ে অসহায় মানুষদের রক্ষার জন্য।

‌জলবায়ু ও স্বাস্থ্যের লক্ষ্যগুলির সমন্বয় প্রসঙ্গে

এই নিবন্ধটি ‘‌এক কম–কার্বন ও জলবায়ু–স্থিতিস্থাপক পৃথিবীর পথে:‌‌ কপ২৬ থেকে প্রত্যাশা’‌ শীর্ষক সিরিজের অংশ।


কোভিড–১৯ অতিমারি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চলতি যৌথ প্রয়াসের গুরুতর ক্ষতি করেছে। এই প্রয়াসের মূল কথা হল সম্পদ অধিগত করার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা, যথাযোগ্য ব্যবহার ও পরিকল্পনা, গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো শক্তিশালী করা, ও প্রতিকূলতার মুখে অসহায় জনগোষ্ঠীকে সক্ষম করা। আন্তর্জাতিক পৃথিবী এখন যে বহুমাত্রিক সঙ্কটের মোকাবিলা করছে, এবং যা আরও জটিল হয়েছে কোভিড–১৯–এর কারণে, তা সব দেশের জন্যই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নীতি অনুসরণের বিষয়টিকে আরও জরুরি করে তুলেছে। এই নীতির লক্ষ্য হবে রক্ষণযোগ্য অতিক্রমণ, অভিযোজন ও সহনশীলতা তৈরির কাজ ত্বরান্বিত করা, এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ ও মানসম্পন্ন করে তুলতে ঢেলে সাজা। এই ক্ষেত্রে গ্লাসগোয় ২০২১ ইউনাইটেড নেশনস ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স অফ পার্টিজ (‌কপ২৬)‌ সব দেশকে সুযোগ করে দিয়েছে স্থায়ী হবে এমন উন্নয়নের চোখ দিয়ে অতিমারি –উত্তর পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে দেখতে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর প্রভাব

গবেষণায় দেখা গিয়েছে আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এশিয়া মহাদেশ। ১৯৯০ থেকে ২০১৬–র মধ্যে এমন ২,৮৪৩টি ঘটনার রেকর্ড আছে, যেগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন ৪৮০ কোটি মানুষ, আর মৃত্যু হয়েছিল ৫০৫,০১৩ জনের। প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে মৃত্যু সাধারণত গরিব দেশেই ঘটে থাকে।[১] জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ও শ্রমের উৎপাদনশীলতার ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে তাঁদের জন্য যাঁরা গরম এলাকায় অনাচ্ছাদিত জায়গায় কায়িক শ্রম করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শ্রমিকের ক্ষমতা কমে যাওয়ার ঘটনাও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় সর্বাধিক। স্বাস্থ্যের জন্য জলবায়ু তথ্য পরিষেবা, যেমন লক্ষভিত্তিক বা বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি তথ্য, পণ্য বা পরিষেবা যা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাজে লাগবে, তা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে কম পাওয়া যায়।[২]

২০৩০–এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপরিবর্তনীয় নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যমোচন কৌশলের অনেকটাই ব্যর্থ করে দিয়ে ১০ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র‌্যের মুখ ঠেলে দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন স্বাস্থ্যের নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো, যেমন বায়ু দূষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হৃদযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্র সম্পর্কিত অসুখ, আরও বাড়িয়ে দেবে। চরম আবহাওয়া ঘটনাবলি, সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়া, তাপমাত্রার বৃদ্ধি এবং বৃ্ষ্টিপাতের পরিবর্তনশীল ধরনধারণ স্বাস্থ্যের ওপর নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের  শ্রমের উৎপাদনশীলতার ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকেবিশেষ করে তাঁদের জন্য যাঁরা গরম এলাকায় অনাচ্ছাদিত জায়গায় কায়িক শ্রম করেন।

এটা প্রত্যাশিত যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাগুলোর কারণে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এই ধরনের ঘটনাগুলো এখন আরও ঘনঘন ঘটবে, সেগুলোর তীব্রতা, সময় ও ভৌগোলিক প্রসারতাও বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরও যে সব বিপদ বাড়বে তার মধ্যে আছে ইউভি বিকিরণ, বায়ুদূষণ, খাদ্য ও জলবাহিত সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া;‌ ইঁদুর ও পোকামাকড়–বাহিত নতুন সংক্রামক অসুখ শুরু হওয়া বা পুরনো অসুখ বেড়ে যাওয়া;‌ আর প্রতিকূলতার সামনে অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যের সমস্যা। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট চরম আবহাওয়া ক্ষতি করতে পারে হাসপাতাল ভবনগুলোর, বিচ্ছিন্ন করতে পারে বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগ, এবং ব্যাহত করতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবা। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে (‌বিদ্যুৎ বা জল সরবরাহের মতো)‌ অত্যাবশ্যক সরবরাহ বিঘ্নিত হবে, এবং রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আসার সুযোগও বাধাপ্রাপ্ত হবে।

হু–এর বক্তব্য, ২০৩০ থেকে ২০৫০–এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া, ডায়ারিয়া ও গরমের কারণে প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা আরও আনুমানিক আড়াই লক্ষ বেড়ে যাবে। ২০৩০–এর মধ্যে প্রতি বছর স্বাস্থ্যের প্রত্যক্ষ ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ দাঁড়াবে ২০০ থেকে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় মানুষ অতিরিক্ত গরম, বদলে–যাওয়া অসুখের ধরনধারণ, বিপর্যয়কর ঘটনাবলি এবং খাদ্য ও জলের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উষ্ণায়নের সম্ভাব্য বিপর্যয়কর প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছেন। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অবশ্য সর্বত্র সমান হবে না, কারণ বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি, সংবেদনশীলতা ও অভিযোজনের ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন রকমের।

জলবায়ু পরিবর্তনের সংশ্লিষ্ট চরম আবহাওয়া ক্ষতি করতে পারে হাসপাতাল ভবনগুলোরবিচ্ছিন্ন করতে পারে বিদ্যুৎ  জলের সংযোগএবং ব্যাহত করতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবা। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে (‌বিদ্যুৎ বা জল সরবরাহের মতো)‌ অত্যাবশ্যক সরবরাহ বিঘ্নিত হবেএবং রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আসার সুযোগও বাধাপ্রাপ্ত হবে।

স্বাস্থ্যের নির্ণায়কসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশগত পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হয়, এবং তা প্রকাশ্যে আসে বায়ুর গুণগত মানের পতন, তাপমাত্রার ব্যাপক ওঠানামা, যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপদ পানীয় জলের অভাব, খাদ্যের অপ্রতুলতা ও রোগের ব্যাপ্তির মধ্যে দিয়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও পরিবর্তনশীল বৃষ্টিপাতের ধরন প্রভাব ফেলে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর উপর, এবং নষ্ট করে সম্পত্তি ও খাদ্যের উৎস।

চরম তাপমাত্রার সঙ্গে সরাসরি জড়িত হল হৃদযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্র সম্পর্কিত অসুখ, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে ওজোন ও অন্যান্য দূষক কণার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায়। যেমন ইওরোপে ২০০৩–এর গ্রীষ্মের দাবদাহের সময় অতিরিক্ত ৭০,০০০ মৃত্যু ঘটেছিল‌ আর সূক্ষ্ম কণাসমূহের সামনে দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতির ফলে বেড়ে গিয়েছিল ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ক্ষমতাহ্রাসের ঘটনা, এবং ফুসফুসের ক্যানসার ও হার্টের অসুখের কারণে মৃত্যুর হার। তা ছাড়া জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয়ের ঘটনার সংখ্যা এখন ১৯৬০–এর দশকের থেকে তিন গুণের বেশি হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যে হেতু সমুদ্র থেকে ৬০ কিমি দূরত্বের মধ্যে বসবাস করেন, সেই কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও উষ্ণতর তাপমানের কারণে জীবনহানি ও জীবিকার হানির বিপদ থাকছে, আর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে সংক্রামক অসুখ (‌যেমন জলবাহিত কলেরা ও জিয়ার্ডিয়াসিস, স্যালমনেলোসিস, ও ক্রিপ্টোস্পোরিডায়োসিস–এর মতো পেটের অসুখ)‌ ও মানসিক অসুখ (যেমন পোস্ট–ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার)‌।

দীর্ঘদিনের অবিচার

হু জানিয়েছে, সমস্ত কোভিড–১৯ ভ্যাকসিনের ৮৭ শতাংশ দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী দেশগুলোকে, আর নিম্ন আয়ের দেশগুলো পেয়েছে ভ্যাকসিন সরবরাহের মাত্র ০.‌২ শতাংশ। বিশেষ ভাবে সাব–সাহারান আফ্রিকার মাত্র ১ শতাংশের কম মানুষের টিকাকরণ হয়েছে। পিপল্‌স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স–এর বক্তব্য, সম্পদশালী দেশগুলোতে সেকেন্ডে একজনের টিকাকরণ হচ্ছে, আর দরিদ্রতম দেশগুলোর অধিকাংশে এখনও একটা ডোজও দেওয়া হয়নি।

কপ–২৬ আলোচনায় ন্যায়ের বিষয়টি এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ল্যান্ডমার্কে পরিণত হওয়া প্যারিস চুক্তির অনেক কিছুর সময়সীমা ছিল ২০২০। কপ–২৬ সুযোগ দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে কতটা কাজ হল তা নিয়ে আলোচনা করার, নজর অতিমারির মধ্যে ‘‌বিল্ডিং ব্যাক বেটার’‌–এর উপর কেন্দ্রীভূত করার, এবং যা স্থিতিস্থাপকতা ও পুনরুদ্ধারের কর্মসূচি ব্যাহত করছে সেই অসাম্যের বিষয়টি নিয়ে ভাবার। তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলির অনেকের পক্ষে অতিমারির সময়কার ভিসা ও ভ্রমণের বিধিনিষেধ পেরিয়ে সশরীরে হাজির হওয়াই কঠিন হচ্ছে, বিশেষ করে যখন গ্লোবাল সাউথ–এর অনেক দেশই ইউকে ভ্রমণের নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে। অনেকে সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিনও পাননি। তা ছাড়া অতিমারির কারণে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট উন্নয়নশীল ও অসহায় দেশগুলির প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থের সংস্থানও কঠিন করে তুলেছে।

চরম আবহাওয়া ঘটনাসমূহ ও স্বাস্থ্য সঙ্কট আরও জটিল হচ্ছে কোভিড–১৯ অতিমারির স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের সম্মিলনে। জিএইচজি নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি ছাড়া উন্নত অর্থনীতিগুলোর এখন, বিশেষ করে এই অতিমারির সময়, জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে অসহায় দেশগুলির জলবায়ু লক্ষ্যপূরণে অর্থনৈতিক সম্পদ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা উচিত। কপ২৬ সুযোগ করে দিয়েছে দেশগুলির মধ্যে আস্থা ও সমন্বয় গড়ার, এবং আরও জলবায়ু কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা ও রাজনৈতিক মনোযোগ আকর্ষণ করার।

স্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে

কপ২৬ প্যারিস চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশ যতটা নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পর্যালোচনা করবে। অতিমারির পর বোঝা গিয়েছে জীবন বিপদগ্রস্ত করে এমন সঙ্কটের সঙ্গে লড়ার জন্য দ্রুত, লক্ষ্যভিত্তিক, সমন্বিত ব্যবস্থাগ্রহণ কতটা জরুরি। এই শিক্ষার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে জলবায়ু সক্রিয়তায়, কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বব্যাপী অতিমারির পরের সময়টার মধ্যে একটা অন্তঃসংযোগ রয়েছে, যে হেতু বিশ্বে অবিচার ও অসাম্য বেড়ে গিয়েছে। এখন যা আবশ্যক তা হল বিশ্বজুড়ে গ্রিন নিউ ডিল ও অন্যান্য ব্যবস্থাগত বিকল্প। এগুলোর মাধ্যমে বদলাতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে স্থিতিশীল নয় এমন উন্নয়নের ধারা যা বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন করে, পরিবেশ রক্ষার আইনগুলোকে অর্থহীন করে তোলে, এবং শ্রমিকের অধিকার বা সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে। জলবায়ু সমস্যা মেটাতে প্রয়োজন উৎপাদন, উপভোগ ও বাণিজ্য ব্যবস্থা, এবং সেই সঙ্গে মানুষ ও প্রকৃতির বন্ধন ঢেলে সাজা।

জিএইচজি নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি ছাড়া উন্নত অর্থনীতিগুলোর এখনবিশেষ করে এই অতিমারির সময়জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে অসহায় দেশগুলির জলবায়ু লক্ষ্যপূরণে অর্থনৈতিক সম্পদ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা উচিত।

সমান্তরাল ভাবে অতিমারি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে জ্বালানি হিসেবে সৌরশক্তি, ব্যাটারি বা বৈদ্যুতিক উৎস ব্যবহার করে এমন গাড়ির ক্ষেত্রে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বাজারকে। স্বচ্ছ শক্তি প্রযুক্তি, যেমন সৌর ও বায়ুশক্তি, হাইড্রোজেন, ব্যাটারি বা কার্বন ধরে রাখে এমন স্বচ্ছ প্রযুক্তির উন্নয়ন, ব্যবহার ও সমন্বয়ের জন্য বিরাট ভাবে বিনিয়োগ করতে হবে, এবং সেটাকেই রাখতে হবে অতিমারি মোকাবিলার পরিকল্পনার কেন্দ্রে। কারণ এর থেকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা ও স্বচ্ছ শক্তিতে অতিক্রমণ, এই দুই লক্ষ্যই সিদ্ধ হবে। কপ২৬ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে এই স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে অতিক্রমণের পরিকল্পনা ও দায়বদ্ধতার প্রশ্নে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি করে দেবে।

কোভিড–১৯ অভিজ্ঞতা হয়তো ‘‌বিশ্বজনীন সংহতি’‌র কাহিনিকে স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করল। দুনিয়া জুড়ে টিকার বন্টন দেখলেই পুরো ব্যবস্থার মধ্যে নিহিত অবিচারের এবং তা ঘোচাতে কিছুই যে করা হল না সেই ছবি স্পষ্ট হবে। কোভিড–১৯ সঙ্কট আয়, স্বাস্থ্য, এবং সম্পদ অধিগত করার অধিকার–সহ মানব উন্নয়নের স্তম্ভগুলোকেই ভেঙে দিয়েছে। এই সঙ্কটের তীব্রতা দেখে সকলেরই উদ্বুদ্ধ হওয়া উচিত জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ ফলগুলো কাটাতে বর্তমান ও নতুন অসাম্যের দিকে নজর ঘোরানো। স্থিতিশীল উন্নয়ন, জলবায়ু সক্রিয়তা ও কোভিড–১৯ নিরাময়ের মধ্যে যে অভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে, তা আরও সংহত করা প্রযোজন, এবং তার লক্ষ্য হওয়া উচিত সবচেয়ে অসহায় মানুষের কল্যাণ, এবং সেই সঙ্গে আরও সুস্থ, আরও নিরাপদ ও আরও স্থিতিশীল পৃথিবীতে অতিক্রমণ।


ভাব্য পান্ডে ওআরএফ–এর সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসি–র রিসার্চ ইন্টার্ন, আর উমেন সি. কুরিয়েন ওআরএফ–এর হেল্থ ইনিশিয়েটিভ–এর সিনিয়র ফেলো।


[১] নিক ওয়াট্‌স ও অন্যরা, “দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন হেল্থ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ: ফ্রম টোয়েন্টি–ফাইভ ইয়ার্স অফ ইনঅ্যাকশন টু আ গ্লোবাল ট্রান্সফরমেশন ফর পাবলিক হেল্থ”, দ্য ল্যানসেট (২০১৭)
[২] ওয়াট্‌স, “দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন হেল্থ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ: ফ্রম টোয়েন্টি–ফাইভ ইয়ার্স অফ ইনঅ্যাকশন টু আ গ্লোবাল ট্রান্সফরমেশন ফর পাবলিক হেল্থ”

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.