Author : Kabir Taneja

Published on Jul 18, 2022 Updated 0 Hours ago
আল কায়দা, ইসলামিক স্টেট, এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আলোচনা ঘিরে অনলাইন প্রচার

নবি মহম্মদকে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বি জে পি)–র দলীয় নেতাদের করা কিছু সাম্প্রতিক মন্তব্য ইসলামিক দেশ ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত কূটনৈতিক সংকট তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার ১৫টিরও বেশি ইসলামি দেশ এই মতামতের নিন্দা করে বিবৃতি প্রকাশ করে। ভারত ক্ষতি সামলানোর চেষ্টায় কোমর বেঁধে নামে এবং কূটনীতিকরা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন যে দলীয় কর্মকতার বক্তব্য থেকে সরকারের অবস্থান পুরোপুরি পৃথক।

এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে ইসলামি গোষ্ঠীগুলি। এরা ভারতে সাম্প্রদায়িক ফাটলের, বিশেষ করে বিজেপি–র হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নকশার প্রেক্ষিতে হিন্দু–মুসলিম উত্তেজনার সুযোগ নেওয়া ও তার মধ্যে কাজ করার কৌশল নিয়েছে। বিভিন্ন দেশ বিবৃতি প্রকাশ করা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের আল কায়দা (এ কিউ আই এস)–ও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ভারতীয় টেলিভিশনে নবির বিরুদ্ধে দেওয়া বিবৃতির নিন্দা করে এবং ভারতীয় শহর ও রাজ্যগুলিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার হুমকি দেয়। বিবৃতিটি ভারতের মুসলমানদের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধে অংশ নিতে প্ররোচিত করারও চেষ্টা করেছিল। এই বিবৃতিকে তাদের মূলত আদর্শগত কথন থেকে বিচ্যুতি হিসেবে দেখা যেতে পারে, এবং এ থেকে বোঝা যায় তারা এখন ভূমি ও ভূগোলকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে।

বিভিন্ন দেশ বিবৃতি প্রকাশ করা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের আল কায়দা (এ কিউ আই এস)–ও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ভারতীয় টেলিভিশনে নবির বিরুদ্ধে দেওয়া বিবৃতির নিন্দা করে এবং ভারতীয় শহর ও রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হামলার হুমকির দেয়।

এর আগে আল কায়দা‌র প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর দীর্ঘ এবং প্যাঁচালো স্বকথনের মধ্যে একটিতে এই বছরের মার্চ মাসে তুঙ্গে থাকা হিজাব বিতর্কের মতো ভারতীয় বিষয়গুলিও তুলে ধরেছিলেন। আই এস এবং আল কায়দা উভয়ের প্রচারপত্রের প্রচ্ছদেই হিজাব বিতর্ক রাখা হয়েছিল। জাওয়াহিরি, যাঁর হদিস ২০২১ সাল পর্যন্ত অজানা ছিল, তিনি আরও প্রকাশ্য ভাবে দৃশ্যমান হয়ে ফিরে এসেছেন এবং প্রচার সামগ্রী প্রকাশ করে চলেছেন। জাওয়াহিরির ‘প্রত্যাবর্তন’ আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়, এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের মূল্যায়নে বলা হয়েছে যে  আল কায়দা ও তালিবানের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠই রয়ে গেছে, যদিও তালিবানের তরফে তা অস্বীকার করা হয়েছে। এ কিউ আই এস–এর হুমকি বিবৃতি মূলধারার আউটলেটগুলিতে ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পায় এবং তার দৌলতে উল্লেখযোগ্য মাইলেজ অর্জন করে। ঠিক এই লক্ষ্য পূরণের জন্যই এই ধরনের প্রোপাগান্ডা তৈরি করা হয়েছে। মজার বিষয় হল, এ কিউ আই এস–এর বিবৃতিটি উর্দু, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছিল। এ থেকে এর উৎসের  সম্ভাব্যতার হদিশও মেলে, কারণ এ কিউ আই এস–এর উপস্থিতির দুটি শক্তিশালী অঞ্চল হল আফগানিস্তান–পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সংগঠনটির তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু হিসেবে পরিচিত।

আল কায়দা এবং তথাকথিত ইসলামিক স্টেট উভয়েই ভারতে অনলাইন প্রচার চালাতে লড়াই করেছে, তবে খুব বেশি সাফল্য পায়নি। আফগানিস্তানে আই এস–এর উইলায়াহ ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্স (আই এস কে পি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী কথনকে আক্রমণ করে একটি ৫৫ পৃষ্ঠার দীর্ঘ পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। আকর্ষণীয় বিষয় হল এতে ভারত সরকারের চেয়েও বেশি করে কাবুলে ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে সহযোগিতা ও বৈঠকের জন্য তালিবানকে আক্রমণ করা হয়েছে। আরও কৌতূহলোদ্দীপক হল এই পুস্তিকাটিতে যে সংগঠনটি তাদের ভারতীয় শাখা বলে পরিচিত সেই ইসলামিক স্টেট হিন্দ প্রদেশ (আই এস এইচ পি)‌–কে আই এস কে পি ‘‌নীরবতা ভাঙতে’‌ এবং ‘‌কাজে নামার জন্য তৈরি হতে’‌ বলেছে। এটি একটি আকর্ষণীয় প্রশ্ন উত্থাপন করে: যদি আই এস এইচ পি প্রকৃতপক্ষে আইএস–এর বৈশ্বিক সাংগঠনিক কাঠামোর একটি মূল ও আনুষ্ঠানিক অংশ হয়, তা হলে কেন মনে হচ্ছে আই এস কে পি মোটেই আই এস এইচ পি–র কর্মক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত নয়?

আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে বললে, আই এস ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মাঝখানে নিজের জায়গা তৈরির চেষ্টা করে এবং তা ব্যবহার করে সম্প্রদায়গত বিভাজন আরও বাড়িয়ে তুলে তরুণদের তার অনুসারী উগ্রপন্থী করে তোলার চেষ্টা করে। আই এস–এর ভারতনির্দিষ্ট অনলাইন প্রকাশনার প্রথম সংখ্যা ‘‌সাওত আল হিন্দ’‌ (ইংরেজিতে ভয়েস অফ হিন্দ) ভারতের রাজধানীতে সাম্প্রদায়িক গোলযোগের সময় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর থেকে, আই এস–এর প্রোপাগান্ডা কাশ্মীরে ছোট হামলাগুলির কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা যখন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা শেষ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা প্রচার করেছিলেন, তখন তারা কাশ্মীরে ইসলামি উলেমাদের মধ্যে দুর্নীতির কথা প্রচার করতে নেমেছিল।

একাধিক–দেশভিত্তিক ইসলামি গোষ্ঠী হিসেবে আল কায়দা এবং আই এস–এর নানা বিষয়ে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি আছে;‌ কিন্তু যারা ভারতে এবং বিশেষ করে কাশ্মীরে তাদের সহযোগী, যেমন পাকিস্তান–সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লস্কর–এ–তৈবা ও জইশ–ই–মহম্মদ, তাদের মূল লক্ষ্য কাশ্মীর থেকে চোখ না–সরানো, এবং তারা পাকিস্তানপন্থী অবস্থান বজায় রেখেছে। এই অফলাইন বাস্তবতা ভারতের সবচেয়ে অস্থির অংশে  আল কায়দা এবং আই এস–এর অনলাইন উপস্থিতির বিপরীত, এবং তা দেশের সবচেয়ে অস্থির সংঘাত–অঞ্চলে একাধিক–দেশব্যাপ্ত জিহাদি গোষ্ঠীগুলিকে স্থান না–দিয়ে প্রায় একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।

তবে টার্গেটেড প্রোপাগান্ডা বাড়ানো সত্ত্বেও আই এস বা আল কায়দার জন্য ভারত থেকে নিয়োগ বেড়েছে,এমন কথা বলার মতো কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, সামগ্রিক ভাবে এই গোষ্ঠীগুলির যে কোনওটিতে যোগদানকারী ভারতীয়দের সংখ্যা নগণ্য রয়ে গেছে। ভারতীয় দৃষ্টান্ত থেকে দেখা যায় আই এস–এর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়োগের হাতিয়ার ছিল খিলাফত, এবং সেই ভৌগোলিক অঞ্চলে যাওয়ার জন্য ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কয়েক ডজন লোক ওই গোষ্ঠীটিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং যোগ দিয়েছিল। খিলাফতের বিষয়টি ভেঙে পড়ার পর গোষ্ঠীটি ও এর অনুগামীরা শক্তিশালী স্তরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অনলাইনে প্রচার করা সত্ত্বেও ভারত থেকে আই এস–এ যোগদানের ঘটনাও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।

আই এস–এর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়োগের হাতিয়ার ছিল খিলাফত, এবং সেই ভৌগোলিক অঞ্চলে যাওয়ার জন্য ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কয়েক ডজন লোক ওই গোষ্ঠীটিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং যোগ দিয়েছিল।

তবে জনসাধারণ এই ধরনের প্রোপাগান্ডা কতটা দেখছে সে সম্পর্কে তথ্য ও গবেষণার অনেক খামতি রয়েছে। যেমন এ কিউ আই এস তিনটি ভাষায় তার বিবৃতি প্রকাশ করছে, কিন্তু হিন্দিতে নয়, যেটি কি না ভারতের ঘনবসতিপূর্ণ উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের, হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই, সবচেয়ে বেশি কথ্য এবং বোধগম্য ভাষা। এর ফলে তাদের লক্ষ্য কারা সে সম্পর্কে আকর্ষণীয় প্রশ্ন তৈরি হয়। এবং যদিও এটি আপাতত শুধুমাত্র উপাখ্যানমূলক প্রমাণভিত্তিক, তবে দেখা যাচ্ছে যে ভারতে আল কায়দা এবং আই এস–এর বেশিরভাগ প্রোপাগান্ডা স্থানীয় মানুষ ও সম্প্রদায়ের উপর খুব সীমিত প্রভাব ফেলেছে, এবং তা ঘটেছে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে এই ধরনের বিষয়বস্তুকে ইন্টারনেট থেকে মুছে ফেলার ক্ষেত্রে সামগ্রিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও।

যদিও আমরা অনলাইন র‌্যাডিক্যালাইজেশন থেকে অফলাইন সন্ত্রাসবাদের মধ্যে চলাচল অধ্যয়ন করার জন্য অনেক সময় ব্যয় করি, অনলাইন জিহাদিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং মতাদর্শগত হিংসাত্মক চরমপন্থার অন্যান্য রূপও সমান গুরুত্বপূর্ণ, যেমন অফলাইনে চলে আসা অতি দক্ষিণপন্থীরা। বাস্তব–বিশ্বের সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক  ঘটনাগুলিকেও মতাদর্শগত লড়াই ও ক্ষোভ তীক্ষ্ণ করে তোলার জন্য অনলাইনে ব্যবহার করা হয়। তাই আমরা যদিও জানি যে সন্ত্রাস ও চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি প্রোপাগান্ডার জন্য তাদের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ইন্টারনেট ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করে, তারা ছাড়াও কিন্তু আদর্শগত উত্তেজনার বিষয়বস্তুগুলিও এই ধরনের উত্তেজনা বাড়াতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, এবং এই ভাবে যা স্থানীয় ক্ষোভ হতে পারত তা একটি জাতীয় বিতর্কে পরিণত হয়।

টেলিগ্রাম সহ বেশিরভাগ প্ল্যাটফর্মে আই এস–এর ভারত–সম্পর্কিত বিষয়বস্তু খুঁজে পাওয়া ইতিমধ্যেই কঠিন হয়ে গিয়েছে, কারণ গোষ্ঠীগুলিকে এবং অ্যাকাউন্টগুলি আজ আগের চেয়ে আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেটের বিশালতা সত্ত্বেও এটি একটি মৌলিক এবং কার্যকর প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে, কারণ এই জাতীয় প্ল্যাটফর্মের বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান খুব প্রাথমিক পর্যায়ের। কিন্তু যাঁরা এই ধরনের বিষয়বস্তু সক্রিয় ভাবে খোঁজেন তাদের এখনও অনলাইনে চরমপন্থী বিষয়বস্তু পেতে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হবে না।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির মধ্যেও ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি করা পাল্টা কথন, ইন্টারনেটের জন্য তৈরি করা সি ভি ই প্রোগ্রাম, এবং এই জাতীয় অন্যান্য কাজকর্ম সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তি খুব কম খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও এমন একটি চিন্তাধারা রয়েছে যে পাল্টা কথন এবং সি ভি ই প্রোগ্রামগুলি কাঙ্খিত ফলাফল প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, উন্নয়নশীল বিশ্বের বৃহৎ অংশে কিন্তু অনলাইন র‌্যাডিক্যালাইজেশনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়টি কম অধ্যয়ন করা হয়, এবং তার জন্য সম্পদও কম ব্যবহার করা হয়, যদিও ইন্টারনেটের ব্যবহার বিশ্বের এই অংশে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।


এই ধারাভাষ্যটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল গ্লোবাল নেটওয়র্ক অন এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড টেকনোলজি (‌জি এন ই টি)‌–তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.