Author : Shoba Suri

Published on Jul 06, 2022 Updated 0 Hours ago

এই বছরের বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস উন্নত স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্যের ভূমিকার উপর জোর দিয়েছে; গোষ্ঠী এবং সরকারকে এই লক্ষ্যের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস: লক্ষ্য নিরাপদ খাদ্য এবং উন্নততর স্বাস্থ্য

সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এস ডি জি) ২ বা স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ২-এর  লক্ষ্য ‘ক্ষুধার অবসান ঘটানো এবং সমস্ত মানুষের, বিশেষ করে দরিদ্র এবং শিশু-সহ অরক্ষিত পরিস্থিতিতে বসবাসকারী মানুষদের সারা বছর নিরাপদ, পুষ্টিকর এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবারের জোগান সুনিশ্চিত করা।’ খাদ্য সুরক্ষা একটি জনস্বাস্থ্যমূলক অগ্রাধিকার এবং তা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউ এইচ ও) মতে, প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ দূষিত খাবার গ্রহণের কারণে মারা যায়। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা খাদ্যজনিত অসুস্থতায় সবচেয়ে বেশি ভোগে এবং প্রতি বছর শিশু মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১,২৫,০০০।

সূত্র : https://foodsafety.osu.edu/

খাদ্যজনিত অসুস্থতা শুধু মাত্র জনস্বাস্থ্যকেই ব্যাহত করে না, উৎপাদনশীলতা হ্রাসের কারণে অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে। খাদ্যজনিত অসুস্থতার অর্থনৈতিক বোঝা সংক্রান্ত ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদন আয় বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির বর্ধিত বোঝাকেই প্রতিফলিত করে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, খাদ্যজনিত অসুস্থতার কারণে উৎপাদনশীলতা হ্রাসের ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে প্রতি বছর প্রায় ৯৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয় এবং চিকিৎসা খাতে খরচের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, খাদ্যের বাজারে খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি জনস্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। খাদ্যজনিত রোগের বিস্তার এড়াতে খাদ্য সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং খাদ্য সুরক্ষা অনুশীলনের জন্য সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

যদিও কোভিড-১৯ একটি খাদ্যবাহিত রোগ নয়, তবুও এটি মানব স্বাস্থ্য, খাদ্য সুরক্ষা এবং খাদ্যের ব্যবসার জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। ভোক্তাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য খাদ্যের ব্যবসাগুলিকে কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস নির্দেশিকাগুলির উপর ভিত্তি করে ভাল স্বাস্থ্যকর অনুশীলন এবং খাদ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ‘নিরাপদ খাদ্য এবং উন্নততর স্বাস্থ্য’ এই বছরের বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবসের জন্য একটি উপযুক্ত ভাবনা। কারণ এটি উন্নততর স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্যের ভূমিকার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। ওয়ান হেলথ পন্থা একটি স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা, খাদ্য সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে এস ডি জি-গুলির সংযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করে।

১৭টি এস ডি জি-এর মধ্যে অনেকগুলি অর্জনের ক্ষেত্রে খাদ্য সুরক্ষা অবিচ্ছেদ্য অংশ যা কিছু লক্ষ্যমাত্রার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। নিচের সারণিটি খাদ্য নিরাপত্তা এবং এস ডি জি-এর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ককেই তুলে ধরে:

স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা খাদ্য সুরক্ষার উপরে প্রভাব
এস ডি জি ১ (শূন্য দারিদ্র) দারিদ্র্য সৃষ্টি এবং তা বহাল রাখার ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যের অভাব একটি প্রধান কারণ। খাদ্যবাহিত রোগগুলি স্বাস্থ্যহীনতার প্রধান কারণ।
এস ডি জি ২ (শূন্য ক্ষুধা) খাদ্য নিরাপত্তা খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করে এবং অসুরক্ষিত খাদ্য নষ্ট করে দেওয়ার ফলে লভ্য খাদ্যের পরিমাণ হ্রাস করে।
এস ডি জি ৩ (সুস্বাস্থ্য এবং ভাল থাকা) এফ বি ডি (খাদ্যবাহিত রোগ) স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবং এটি ব্যাপক খরচ ও মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণার সঙ্গে জড়িত। ফলে তা  সুস্বাস্থ্য এবং ভাল থাকাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে।
এস ডি জি ৫ (লিঙ্গ বৈষম্য) খাদ্য একটি লিঙ্গভিত্তিক পণ্য এবং খাদ্য গ্রহণ সংক্রান্ত অনেক কুসংস্কার রয়েছে যার ফলে সামগ্রিক ভাবে মহিলারা পুষ্টিগত দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এস ডি জি ৬ (পরিস্রুত জল এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা) অনেক সংক্রামক খাদ্যবাহিত রোগ জলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে এবং এই রোগে সংক্রমিত মানুষ ও প্রাণী জলকে দূষিত করার মাধ্যমে বিপদ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এস ডি জি ৮ (উপযুক্ত কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি) এফ বি ডি-র (খাদ্যবাহিত রোগ) ফলে ব্যাপক খরচ হয়, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এস ডি জি ৯ (শিল্প উদ্ভাবন এবং পরিকাঠামো) খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় কৃষি-খাদ্য শৃঙ্খল দ্রুত বর্ধিত ও পরিবর্তিত হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য পরিকাঠামো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এস ডি জি ১০ (বৈষম্যের হ্রাস ঘটানো) এফ বি ডি (খাদ্যবাহিত রোগ) দুর্বল জনসংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুতর। বিশেষত অল্পবয়সি, বৃদ্ধ, গর্ভবতী, অপুষ্টিতে আক্রান্ত এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের মধ্যে বেশি করে দেখা যায়। সুতরাং এফ বি ডি (খাদ্যবাহিত রোগ) বৈষম্যকে তীব্রতর করে তুলতে পারে।
এস ডি জি ১১ (স্থিতিশীল শহর এবং সম্প্রদায়) খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ শহুরে কৃষি এবং ওয়েট মার্কেটকে (যেখানে তরতাজা মাছ, মাংস এবং কৃষিজ পণ্য বিক্রি হয়) ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
এস ডি জি ১২ (দায়িত্বশীল ব্যবহার) বর্জ্য ও ক্ষয়ক্ষতির উচ্চ পরিমাণ কমিয়ে আনা এবং খাদ্যাভ্যাসে প্রাণিজ পণ্যের অংশ পুনর্বিন্যস্ত করা  স্থিতিশীলতা এবং সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এস ডি জি ১৪ (জলভাগের জীবকুল) মাছ খাদ্যতালিকাগত প্রোটিনের একটি প্রধান উৎস। কিন্তু দূষণের সম্মুখে অরক্ষিত থাকার দরুন রোগ বাড়ে এবং খাদ্যের সমূহ ক্ষতি হয়।
এস ডি জি ১৫ (স্থলভাগের জীবকুল) প্রাণিসম্পদ পণ্যগুলি অত্যন্ত পুষ্টিকর। তবে সেগুলি এফ বি ডি-র  (খাদ্যবাহিত রোগ) ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে অবদান রাখে।

খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা থেকে গৃহীত

ইউনাইটেড নেশনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইউ এন  আই ডি ও) একটি প্রতিবেদন স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য, কৃষি এবং বাণিজ্য নীতির মধ্যে সংযোগকারী হিসেবে খাদ্য সুরক্ষার পরামর্শ দেয়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির রেজোলিউশন ৭৩.৫ অনুযায়ী খাদ্যজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধ এবং এই প্রেক্ষিতে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার সুদৃঢ়করণের জন্য খাদ্য সুরক্ষার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফ এ ও) একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে খাদ্য সুরক্ষাকে প্রভাবিত করে, এমন চালিকাশক্তি এবং প্রবণতাগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে (দ্রষ্টব্য নিচের চিত্র)।

সূত্র : কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা এবং খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রধান চালিকাশক্তিগুলি এবং প্রবণতা

জলবায়ু পরিবর্তন উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চয়স্থান এবং বণ্টন… সমস্ত স্তরে খাদ্য ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। এ ভাবে সরবরাহ শৃঙ্খল জুড়ে খাদ্য সুরক্ষাকে সুনিশ্চিত করাকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলির গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে যে, ভোক্তাদের খাদ্যাভ্যাস এবং খাওয়ার ধরনের উপর খাদ্য সুরক্ষা উদ্বেগগুলির প্রভাব পড়ে। ১৮ বছর এবং তার বেশি বয়সি মানুষদের নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (ইউ এস) করা একটি ভোক্তা সমীক্ষায় ফল, শাকসবজি এবং বাড়িতে রান্না করা খাবারের তুলনায় কাঁচা মাংস ও রেস্তোরাঁর খাবারে খাদ্যজনিত অসুস্থতার সম্ভাবনা সম্পর্কে ভোক্তাদের উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। ২০২০ সালের একটি ওয়েবভিত্তিক সমীক্ষা দর্শিয়েছে যে, ৫৬ শতাংশ ভোক্তা ফুড লেবেলের মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত তথ্য পেতে পছন্দ করেন, এর ঠিক পরেই আছেন ৪৩ শতাংশ মানুষ যাঁরা ওয়েবসাইট ইত্যাদির মাধ্যমে এমনটা করেন। অতিমারি চলাকালীন নিরাপদ খাদ্যের চাহিদার মোকাবিলা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে ‘খাদ্য জালিয়াতি’কে খাদ্য সুরক্ষার পথে বৃহত্তম অন্তরায় রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ঠিক পরেই রয়েছে ‘অ্যালার্জেন’ (অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান) এবং ‘বিনিয়োগের অভাব’-এর মতো বিষয়গুলি।

২০২১ সালের গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স অনুযায়ী যে সব দেশে খাদ্য সুরক্ষা কর্মসূচি নেই, সে সব দেশে শিশুদের ক্ষুধা ও খর্বতার হার বেশি। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সুরক্ষা সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৭১তম এবং ‘গুণমান ও সুরক্ষা’ সূচকের ক্ষেত্রে ১০০-র মধ্যে ৫৯.১ নম্বর অর্জন করে ভারত ৭৪তম স্থানে রয়েছে। ১১৩টি দেশের মধ্যে গুণমান ও সুরক্ষায় ৯৪.৫ নম্বর অর্জন করে কানাডা শীর্ষে রয়েছে। খাদ্য সুরক্ষার জন্য ডব্লিউ এইচ ও-র গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি ফর ফুড সেফটি ২০২২-২০৩০ সদস্য দেশগুলিকে খাদ্য সুরক্ষা এবং গুণমান, পরিবেশ, কৃষি এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব অবলম্বনে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ, সংশোধন এবং সশক্তিকরণের আহ্বান জানায়।

মহাদেশগুলি জুড়ে নানা কেস স্টাডি দেখিয়েছে যে, কী ভাবে গোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলি জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশুদ্ধ জল, স্বাস্থ্যবিধান, মজুতকরণ ইত্যাদির উপর জোর দিয়ে খাদ্য সুরক্ষার মান উন্নত করতে পারে। ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট ২০০৬ খাদ্য নিরাপত্তাকে এমন একটি আশ্বাস রূপে সংজ্ঞায়িত করেছে যেখানে অভিপ্রেত ব্যবহারের ভিত্তিতে খাদ্য মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং একই সঙ্গে তা নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হবে। ‘ফার্ম টু ফর্ক’ অর্থাৎ উৎপাদক থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছনো পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.