প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অর্থনীতি
ওপেনএআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটিতে বর্তমান পর্যায়ের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) শক্তিশালী ব্যবহার বিভিন্ন পরিসরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চালু হওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই প্রযুক্তি জগতের নতুন উদ্ভাবনটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছতে সমর্থ হয়েছে৷ এই ধরনের শ্রমবর্ধক বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনগুলি আমাদের ১৯৫৬ সালের বহিরাগত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সোলো-সোয়ান মডেলে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যা আধুনিক সময়ে দীর্ঘমেয়াদে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং উত্পাদনশীলতার বৃদ্ধির হার বাড়াতে পারে। এটি ফলাফলের গুণমান এবং পরিমাণের উন্নতির মাধ্যমে ঘটতে পারে, যার ফলে মাথাপিছু জিডিপি-র হার উচ্চতর হয়; অথবা গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) অবদান রাখে, যা উত্পাদনশীলতার হারকে ত্বরান্বিতকারী নতুন প্রযুক্তির জন্ম দিতে পারে।
চিত্র ১: সোলো-সোয়ান গ্রোথ মডেলে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন
সূত্র: স্রেদোইয়েভিক প্রমুখ (২০১৬)
(দ্রষ্টব্য: y হল কর্মী প্রতি আউটপুট; k হল মূলধন ও শ্রমের অনুপাত; d হল অবমূল্যায়ন; এবং n হল জনসংখ্যা বৃদ্ধি)
ভারতের যুবক সম্প্রদায়ের জন্য এর অর্থ কী?
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর (ডব্লিউপিআর) অনুমান অনুসারে, এই বছরটি দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারত চিনকে ছাপিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে ওঠে (চিনের ১.৪১২ বিলিয়নের তুলনায় তার জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১.৪১৭ বিলিয়নে)। এটি নয়াদিল্লির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে সশক্ত করতে এবং একটি বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার নিরিখে তার বিশাল মানবসম্পদ, বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায়কে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনার দিকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ স্থানান্তরিত করেছে। এ দেশের ৫২ শতাংশ জনসংখ্যা ৩০ বছরেরও কম বয়সি হওয়ায় এবং ৪৩ শতাংশের উচ্চ ইন্টারনেট অনুপ্রবেশের হার ভারতকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (৪আইআর) ঘটানোর অসীম সম্ভাবনা প্রদান করে।
প্রযুক্তিগত পরিসরগুলির অগ্রগতি যেমন এআই, তথ্য সুরক্ষা, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও স্থানান্তরণ এবং ডিএনএ সম্পাদনা অর্থনীতি জুড়ে উত্পাদনশীলতারই পরিপূরক, বিশেষ করে তরুণদের জন্য এবং তা দেশগুলির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিগুলিকে রূপান্তরিত করে৷ সুতরাং, এই সময়ের জরুরি প্রয়োজনীয়তা হল এমন ক্ষেত্রে কার্যকর ভাবে বিনিয়োগ করা, যা তরুণদের উপকৃত করবে এবং স্থিতিশীল আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সক্ষম করবে। মানব সম্পদ বিনিয়োগে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দু’টি অপরিহার্য উপাদান। এই ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি চালনা করতে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), বিশেষ করে এসডিজি৩ (সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ) এবং এসডিজি৪-এর (গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা) প্রচারে একটি দক্ষ এবং স্বাস্থ্যকর কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে পারে।
সারণি ১: এসডিজি সূচক এবং যুব জনসংখ্যার উপর সেগুলির প্রত্যক্ষ প্রভাব
মানবসম্পদ সূচনাকারী এসডিজি |
যুব সম্প্রদায়ের উপর প্রভাববিস্তারকারী প্রধান সূচক |
ইঙ্গিতমূলক পরিসংখ্যান |
এসডিজি৩-এর লক্ষ্য হল ‘সুস্থ জীবন সুনিশ্চিত করা এবং সব বয়সে সকলের জন্য সুস্থতার প্রচার করা’। |
যুব জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করে এমন সূচকগুলির মধ্যে রয়েছে ‘মাতৃমৃত্যুর অনুপাত’; ‘সদ্যোজাত মৃত্যুর হার’; ‘এইচআইভি আক্রান্ত ঘটনার সংখ্যা’; এবং ‘কার্ডিওভাসকুলার রোগের জন্য মৃত্যুর হার’। |
২০১৮ সালে মৃত্যুর গড় সংখ্যা ছিল ১.৮২৭ মিলিয়ন যা ২০১৯ সালে ১৭.৭৩৯ মিলিয়নে নেমে এসেছে। ভারতে ‘অনূর্ধ্ব ৫ শিশুর মৃত্যুর’ সংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়নে পৌঁছেছে। |
এসডিজি৪-এর লক্ষ্য হল ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা সুনিশ্চিত করা এবং সকলের জন্য আজীবন শিক্ষার সুযোগের প্রচার চালানো। |
উপলব্ধ যুব-সম্পর্কিত সূচকগুলি ‘শিশু এবং যুবকদের লিঙ্গভিত্তিক অনুপাত যাঁরা পঠনক্ষমতা ও গণিতে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করেছেন’, ‘গত ১২ মাসে অনানুষ্ঠানিক এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অংশগ্রহণের হার’, ‘লিঙ্গভিত্তিক পরিপূর্ণতার হার, স্থানিক সম্পদ কুইন্টাইল এবং শিক্ষার স্তরে শতাংশ হার’ পরিমাপ করে। |
২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্ব শিক্ষা পরিপূর্ণতার গড় ২০১৮ সালের গড় ৬১.৩৪ শতাংশের তুলনায় ৬০.৬২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। কমনওয়েলথ দেশগুলির মধ্যে সাইপ্রাসে সবচেয়ে বেশি যুবকদের অনুপাত রয়েছে যেখানে শিক্ষাগ্রহণ সম্পূর্ণ করা যুবকদের পরিমাণ ৯৫.২৩ শতাংশ, তার পরেই রয়েছে ব্রিটেন, যেখানে এই পরিমাণের হার হল ৯৪.১৭ শতাংশ। |
সূত্র: অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (২০২২)
যুব সম্প্রদায়ের কাছে বহুমুখী শিক্ষার সুযোগ এবং উদীয়মান ডিজিটাল সুযোগগুলিকে সম্পূর্ণ রূপে গ্রহণ করার জন্য ভিত্তিগত ও মূল কাজের দক্ষতাগুলিতে বিনিয়োগের লভ্যতা থাকা উচিত। প্রথমত, ১.২ মিলিয়ন শিক্ষার্থী স্কুলের বাইরে (বেশির ভাগই প্রাথমিক স্তরে) থাকায় শিক্ষার গুণমান ভারতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গিয়েছে। এআই ব্যক্তিগত স্তরে শিক্ষার অভিজ্ঞতা প্রদান করার মাধ্যমে এই সমস্যাটির সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে এবং চ্যাটবট শিক্ষার্থীদের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও সহায়তা প্রদান করতে পারে, যাতে তারা তাদের নিজস্ব গতিতে শিখতে সক্ষম হয়। এর পাশাপাশি, এআই-চালিত অভিযোজিত শিক্ষার মঞ্চগুলি সেই পরিসরগুলিকে শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সুনির্দিষ্ট সহায়তা প্রদান করতে পারে।
এআই-চালিত চিকিৎসা অ্যাপ্লিকেশনগুলি সময় মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সার জন্য পরামর্শ প্রদান করার কাজে সহায়তা করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বিশেষত গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে এআই ভারতের চিকিৎসক ও রোগীর নিম্ন অনুপাতের সমস্যার সমাধান প্রদান করে স্বাস্থ্যের ফলাফল উন্নত করতে পারে। এ ছাড়া, এআই-চালিত চিকিৎসা অ্যাপ্লিকেশনগুলি বা পদ্ধতিগুলি সময় মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সার জন্য পরামর্শ প্রদান করার কাজে সহায়তা করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মুম্বইভিত্তিক স্টার্টআপ কিয়োর ডট এআই একটি এআই-চালিত মেডিক্যাল ইমেজিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা নির্ভুল ভাবে চিকিৎসা সংক্রান্ত স্ক্যানগুলিতে অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে পারে। এআই প্রযুক্তি ভারতে কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে; এটি কোভিড-১৯ আক্রান্তের প্রাথমিক শনাক্তকরণ, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং বা সংস্পর্শভিত্তিক সংক্রমণ, কোয়ারেন্টাইন বা অন্তরিন অবস্থা এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামজিক দূরত্ব বহাল করা, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ও রিমোট মনিটরিং বা দূর থেকে পর্যবেক্ষণ এবং টিকা ও ওষুধ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
এআইকে কি ভয় পাওয়া উচিত?
দক্ষতামূলক উন্নয়ন নীতিগুলির বিকাশে এবং সেগুলির বাস্তবায়নে সরকার, নিয়োগকর্তা, কর্মী ও যুবকদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, বিশেষ করে কাজের ভবিষ্যতের প্রেক্ষিতে উদীয়মান প্রযুক্তির দ্বারা উপস্থাপিত সুযোগ ও চ্যালেঞ্জগুলির কথা বিবেচনা করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এআই-এর ক্ষেত্রে একটি প্রধান উদ্বেগ হল অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয়তার কারণে সম্ভাব্য মধ্যমেয়াদি বেকারত্ব। অনুমান করা হচ্ছে যে, আগামী ২০ বছরে স্বয়ংক্রিয়তার দরুন ভারতে প্রায় ৬৯ শতাংশ চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়বে। এর পাশাপাশি, শহুরে এবং গ্রামীণ জনসংখ্যা, সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং নানা বয়সের মানুষের প্রাযুক্তিক দক্ষতার ফারাক অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কর্মীদের রিস্কেলিং বা পুনর্দক্ষতা ও আপস্কেলিং বা উচ্চ দক্ষতার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে।
আর একটি উদ্বেগের বিষয় হল এআই-চালিত ব্যবস্থা বিদ্যমান পক্ষপাত ও বৈষম্যকে স্থায়ী করতে পারে, বিশেষ করে জাতিগত সংখ্যালঘু, নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি-সহ প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এটি বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এসডিজির সামাজিক সম্পদের লক্ষ্যের নিরিখে অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে। উপরন্তু, স্বাস্থ্যপরিষেবা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং আইন প্রয়োগের মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রগুলিতে এআই-এর ব্যবহার গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এআই-চালিত মেডিকেল ডিভাইস বা চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং সেই তথ্যের অপব্যবহার গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
শহুরে এবং গ্রামীণ জনসংখ্যা, সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং নানা বয়সের মানুষের প্রাযুক্তিক দক্ষতার ফারাক অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কর্মীদের রিস্কেলিং বা পুনর্দক্ষতা ও আপস্কেলিং বা উচ্চ দক্ষতার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে।
ভারতের জন্য এই ধরনের প্রযুক্তিচালিত শ্রম বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যে পৌঁছনোর জন্য দ্রুত গতির দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগগুলি অপরিহার্য হয়ে উঠবে। এটি শুধু মাত্র একটি সমগ্র প্রজন্মকে জীবিকা নির্বাহের সুযোগই করে দেবে না, বরং তরুণদের বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারের জন্য উপযুক্ত করে তুলবে। ভারত সরকার এআই ব্যবহারের প্রচার চালানোর জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টাস্ক ফোর্স প্রতিষ্ঠা এবং নীতি আয়োগ দ্বারা ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স #AIFORALL বা #এআইফরঅল-এর নির্মাণ। এর পাশাপাশি, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার একাধিক এআই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই পরিসরে উদ্যোগের সতর্ক বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারত দ্রুত বিকশিত বিশ্ব অর্থনীতির চাহিদা মেটাতে সক্ষম এক দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করতে পারে, যা আরও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম।
পুনশ্চ: এই নিবন্ধটি একটি গবেষণামূলক সাধনী হিসাবে ওপেনএআই জিপিটি-৩.৫ (চ্যাটজিপিটি ৩.৫) ব্যবহার করে লেখা হয়েছে। চ্যাটজিপিটি-র সাহায্য নিয়ে লেখা অংশগুলি রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সৌম্য ভৌমিক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি-র একজন সহযোগী ফেলো।
১) ওপেনএআই জিপিটি-৩.৫
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.