Published on Nov 05, 2025 Updated 0 Hours ago

আফ্রিকা জুড়ে বেজিংয়ের খননের আধিপত্য এখন আরও নিবিড় ভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং আরও ন্যায্য স্বচ্ছতর অংশীদারিত্বের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আফ্রিকা চিনের খনন সংক্রান্ত আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে

গত দুদশক ধরে চিন আফ্রিকার খন খাতে একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু লক্ষণ দর্শাচ্ছে যে, জোয়ারের মোড় ঘুরতে শুরু করেছে।

আফ্রিকা সরকার এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয়তার ক্রমবর্ধমান নজরদারির ফলে প্রতিরোধের একটি নতুন প্রবাহ আফ্রিকার খনন শিল্পে চিনের দীর্ঘস্থায়ী আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করেছে। চিনা সংস্থাগুলি প্রায়শই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দক্ষতা স্থানান্তর বা অবকাঠামো প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলস্বরূপ, আফ্রিকা দেশগুলি ক্রমবর্ধমান ভাবে মূল্য সংযোজন উন্নয়নের জন্য তাদের অধিকার দাবি করছে। অবকাঠামো বা বিনিয়োগের বিনিময়ে কাঁচা সম্পদ আহরণের পুরনো মডেলটি আর ক্ষমতা, জবাবদিহিতা অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের দাবিদার অঞ্চলে স্থিতিশীল নয়।

আর নিষ্ক্রিয় অংশীদার নেই

আফ্রিকা বিশ্বের কিছু মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মজুতের আবাসস্থল। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি) একাই বিশ্বের ৮০% কোবাল্ট উৎপাদন করে, যা রিচার্জেবল ব্যাটারির জন্য অপরিহার্য খনিজ। চিন দীর্ঘস্থায়ী সিনো কঙ্গোলাইস ডেস মাইনস (সিকোমাইনস) চুক্তির মাধ্যমে এই উৎপাদনের প্রায় ৮০% নিয়ন্ত্রণ করে, যা অবকাঠামো প্রকল্পের বিনিময়ে চিনা সংস্থাগুলিকে খননের অধিকার দিয়েছে। তবে স্থানীয় কঙ্গোলিদের সুবিধা আসলে উত্তোলিত খনিজ সম্পদের তুলনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

চিন দীর্ঘস্থায়ী সিনো কঙ্গোলাইস ডেস মাইনস (সিকোমাইনস) চুক্তির মাধ্যমে এই উৎপাদনের প্রায় ৮০% নিয়ন্ত্রণ করে, যা অবকাঠামো প্রকল্পের বিনিময়ে চিনা সংস্থাগুলিকে খননের অধিকার দিয়েছে।

সিভিল সোসাইটি কোয়ালিশন কঙ্গো ইজ নট ফর সেল-এর (সিএনপিএভি) মতে, চিনা সংস্থাগুলিকে কর ছাড় দেওয়ার ফলে ২০২৪ সালেই ডিআরসি-র প্রায় ১৩২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং নাগরিকরা সিকোমাইনস চুক্তির পূর্ণ পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছে। সর্বোপরি, যেহেতু অর্থ প্রদান বাজার মূল্যের সঙ্গে জড়িয়ে, তাই মন্দার সময় দেশটি খুব কম বা কোনও অবকাঠামোগত বিনিয়োগ না পাওয়ার ঝুঁকি সামনে অরক্ষিত

ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সম্মুখীন হয়ে কঙ্গো সরকার চিনের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তিগুলি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছে, বিশেষ করে তামার দামের ওঠানামার আলোকে। ডিআরসি চিনা সংস্থা সিনোহাইড্রো এবং চায়না রেলওয়ে গ্রুপের সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগে তার অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গিয়েছে, যার ফলে এর মালিকানা ৩২% থেকে ৭০% বৃদ্ধি পাবে। গত বছর কঙ্গোর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খনি গেকামিনস এর বিরোধিতা করার পর ট্রাফিগুরা-সমর্থিত খন সংস্থা চেমাফ রিসোর্সেস চিনের নরিন মাইনিংয়ের কাছে বিক্রি বাতিল করা হয়েছিল। নামিবিয়ায় চিনের জিনফেং ইনভেস্টমেন্টস-এর বিরুদ্ধে ৫০ মিলিয়ন নেদারল্যান্ডস ডলার ঘুষের মাধ্যমে লিথিয়াম খনি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে জিনফেং চিনে হাজার হাজার টন কাঁচা লিথিয়াম আকরিক রফতানি করেছে, কিন্তু প্রতিশ্রুত প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলি তৈরি করেনি। সংস্থার কর্মীরা বিপজ্জনক কর্মপরিবেশ নিম্নমানের আবাসন সম্পর্কেও অভিযোগ করেছেন। ২০২৩ সালে চিনের ঝেজিয়াং হুয়াইউ কোবাল্ট জিম্বাবুয়েতে একটি লিথিয়াম প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ বাস্তবায়ন না করা হলে বেশির ভাগ কেন্দ্রকে সম্ভবত চিনেই ফিরে যেতে হবে।

চিনের আধিপত্য পরিবেশগত ও সামাজিক উদ্বেগেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিম্বাবুয়ের হোয়াঙ্গে জাতীয় উদ্যানে চিনা সংস্থা সানি ই ফেং-এর কয়লা খনির অনুমতির আবেদন পরিবেশ কর্তৃপক্ষ দ্বারা স্থগিত করা হয়েছে। জাম্বিয়ায় চিনা মালিকানাধীন একটি তামার খনি থেকে বিপর্যয়কর অ্যাসিড ছড়িয়ে পড়ার ফলে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলের উৎস কাফু নদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী দূষিত হয়েছে। ক্যামেরুনে চিনের সিনোস্টিল কর্পোরেশনের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিনোস্টিল ক্যাম এস.এ.-এর নেতৃত্বে বিশাল লোবে-ক্রিবি লৌহ আকরিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্রমশ বাড়ছে। স্থানীয় এনজিওগুলি সতর্ক করেছে যে, এই প্রকল্পটি বাস্তুতন্ত্র, জনস্বাস্থ্য সাংস্কৃতিক পরম্পরার জন্য হুমকিস্বরূপ। অনেক সম্প্রদায়ের সদস্য এই প্রকল্পটিকে একটি বাস্তব সাফল্য হিসেবে দেখেন, যা পর্যাপ্ত পরামর্শ বা সুবিধা ভাগ না করেই সম্পন্ন করা হয়েছে।

আফ্রিকা জুড়ে বেজিংয়ের এক সময়ের প্রশ্নাতীত খননের আধিপত্য এখন আরও নিবিড় ভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং আরও ন্যায্য স্বচ্ছতর অংশীদারিত্বের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আফ্রিকা সরকারগুলির একটি নতুন দৃঢ়তার ইঙ্গিত দেয়, যারা আর সম্পদ শোষণে নিষ্ক্রিয় অংশীদার হিসাবে কাজ করে সন্তুষ্ট নয়।

নীতি পরিবর্তন

এ দিকে কৌশলগত নীতি পরিবর্তনও ঘটছে। ২০২২ সালে জিম্বাবুয়ে বিনিয়োগকারীদের স্থানীয় প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র তৈরি করতে বাধ্য করার জন্য অপ্রক্রিয়াজাত লিথিয়াম রফতানি নিষিদ্ধ করে। ২০২৩ সালে নামিবিয়া অপ্রক্রিয়াজাত লিথিয়াম অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের উপর একই রকম রফতানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে। এই দেশগুলি স্থানীয় সুবিধা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার মাধ্যমে তাদের খনিজ সম্পদ থেকে আরও মূল্য ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেমহাদেশ জুড়ে একই রকম আখ্যান প্রকাশ্যে উঠে আসছে।

অস্বচ্ছ চুক্তিগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে, পরিবেশগত মান প্রয়োগ করে এবং মূল্য সংযোজনের দাবি করে, তারা সম্পৃক্ততার শর্তাবলি পুনর্নির্মাণ করছে।

তবুও কেবল নীতিই যথেষ্ট নয়। প্রক্রিয়াকরণ রূপান্তরে স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এই রফতানি নিষেধাজ্ঞাগুলিকে বৃহত্তর অর্থনৈতিক কৌশলগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। অন্যথায়, তারা কেবল এক রূপ থেকে অন্য রূপে শোষণ স্থানান্তরের ঝুঁকিতে থাকবে। আফ্রিকা নেতাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকরণ কেবল অভিজাত দখলের একটি নতুন পর্যায় নয়, বরং মৌলিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের দিকে পরিচালিত করে।

চিন এখনও আফ্রিকার বৃহত্তম খনির অংশীদার হতে পারে, তবে এর আধিপত্যের ভবিষ্য আর নিশ্চিত নয়। সর্বোপরি, একটি স্পষ্ট পরিবর্তন চলছে, যেখানে আফ্রিকা দেশগুলি তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছে। অস্বচ্ছ চুক্তিগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে, পরিবেশগত মান প্রয়োগ করে এবং মূল্য সংযোজনের দাবি করে, তারা সম্পৃক্ততার শর্তাবলি পুনর্নির্মাণ করছে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তা হলে আফ্রিকা দেশগুলি খনিজ পদার্থের জন্য বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল এর মধ্যে তাদের ভূমিকা পুনর্নির্মাণ করতে প্রস্তুত এবং কাঁচামাল রফতানিকারক থেকে উদীয়মান সবুজ অর্থনীতিতে অবিচ্ছেদ্য অংশীদার হয়ে উঠবে। এই পরিবর্তন আফ্রিকান খন খাতে চিনের দীর্ঘস্থায়ী আধিপত্যের বিনিময়ে হবে

 


প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।


 নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.