Author : Akanksha Khullar

Published on Apr 25, 2023 Updated 0 Hours ago

তালিবানের অধীনে নারীদের প্রতি বৈষম্যকে ‘‌জেন্ডার অ্যাপারথেড’‌ (লিঙ্গবৈষম্যবাদ)‌ হিসেবে চিহ্নিত করা হলে তা আফগানিস্তানে পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে

আফগানিস্তান: তালিবান শাসনের অধীনে জেন্ডার অ্যাপারথেড

২০২১ সালের আগস্টে তালিবানের আফগানিস্তান দখল, এবং তার পরে আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তার ব্যাঘাত, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে শুধুই গভীর অর্থনৈতিক, মানবিক ও মানবাধিকার সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটি বিশেষ করে আফগান নারী ও কমবয়সী মেয়েদের জন্য মারাত্মক পরিণতি নিয়ে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে, মহিলাদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান চালিয়ে যেতে দেবে এমন একটি মধ্যপন্থী শাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠীটি সেই সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে যা এক সময় এই মহিলারা অবাধে উপভোগ করতেন।

ফলস্বরূপ, আজ আফগানিস্তানে নারীদের লেখাপড়া, ঘরের বাইরে কাজ করা, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ, পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরা, বিনোদন পার্কে যাওয়া ইত্যাদি নিষিদ্ধ হয়েছে। নারী ও মেয়েদের প্রতি এই ধরনের জঘন্য আচরণ অসহনীয় এবং অন্যায্য, কিন্তু নারী ও মেয়েদের অধিকারের উপর তালিবানের লক্ষ্যযুক্ত আক্রমণ সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে।

মহিলাদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান চালিয়ে যেতে দেবে এমন একটি মধ্যপন্থী শাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী গোষ্ঠী শীঘ্রই সেই সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে যা এক সময় এই মহিলারা অবাধে উপভোগ করতেন।

এই বিষয়টি পুনর্নিশ্চিত করেছেন আফগানিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ প্রতিবেদক রিচার্ড বেনেট। তিনি ৬ মার্চ ২০২৩–এ প্রকাশিত তাঁর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন যে আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি তাঁর পূর্ববর্তী ২০২২ সালের প্রতিবেদনের পর থেকে ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। আফগান নারীদের দুর্দশার বিষয়ে তিনি আরও ইঙ্গিত করেছেন যে, ‘‌‘২০২২‌ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি কর্তৃপক্ষ পার্ক, জিম ও গণ–স্নানাগারগুলিতে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছিল, এবং ২১ ডিসেম্বর তারা অ্যাকাডেমিয়া থেকে মহিলাদের বার করার কথা ঘোষণা করেছিল৷ তিন দিন পর, ২৪ ডিসেম্বর, মহিলাদের কাজের সুযোগ চাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।’‌’‌ বেনেট এই বলে রিপোর্টটি শেষ করেছেন যে, ‘‌নারীদের প্রতি তালিবানের পদ্ধতিগত বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান প্রভাব আন্তর্জাতিক অপরাধ ব্যবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ায়’‌, এবং বোঝায় যে ‘‌নারী ও মেয়েদের উপর বিধিনিষেধের ক্রমবর্ধমান প্রভাব (…) জেন্ডার অ্যাপারথেডের সমতুল’‌।

অ্যাপারথেড (‌বর্ণবৈষম্য)‌ শব্দটি এসেছে আফ্রিকান ভাষার শব্দ ‘‌অ্যাপার্ট’‌থেকে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৯০–এর দশকের গোড়া পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের প্রতি আচরণ তুলে ধরতে শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। রোম সংবিধি (‌স্ট্যাচিউট)‌ অনুসারে অ্যাপারথেড বা ‌বর্ণবৈষম্য‌ প্রধানত জাতিগত নিপীড়নের ইস্যুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, এবং একে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এইভাবে:‌ ‘‌‘‌সংবিধিতে উল্লেখিত অনুরূপ অমানবিক কাজ, যা অন্য কোনও জাতিগত গোষ্ঠী বা গোষ্ঠীসমূহের উপর একটি জাতিগত গোষ্ঠীর আধিপত্য এবং সেই শাসন বজায় রাখার অভিপ্রায়ে নিয়মতান্ত্রিক নিপীড়নের একটি প্রাতিষ্ঠানিক শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত হয়।’‌’‌

কিন্তু সংজ্ঞা যা–ই হোক তার মধ্যে লিঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং তার কোনও উল্লেখও নেই। কিন্তু, রোম সংবিধি লিঙ্গ নিপীড়নের অপরাধকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে নিপীড়ন শব্দটি ‘‌গোষ্ঠীর পরিচয়ের কারণে বা সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক আইনের বিপরীতে মৌলিক অধিকারের ইচ্ছাকৃত ও গুরুতর লঙ্ঘন’‌ এবং ‌লিঙ্গ শব্দটি ‘‌সমাজের প্রেক্ষাপটে দুটি লিঙ্গ, পুরুষ ও মহিলা’‌ বোঝায়। যাই হোক, জেন্ডার অ্যাপারথেড (‌লিঙ্গবৈষম্যবাদ)‌ এখনও একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানে এটি শুধুই একটি বর্ণনামূলক শব্দ। সহজভাবে বলতে গেলে, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বর্ণবিদ্বেষের অপরাধ শুধুই জাতিগত শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু লিঙ্গভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে নয়।

গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য বিষয়টি কিছুটা মনোযোগ পাচ্ছে। মিশিগান ল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের লুইস এম সিমস অধ্যাপক করিমা বেনৌন  লিঙ্গবৈষম্যবাদকে বর্ণনা করেছেন এইভাবে:‌ ‘‘‌‌আইনের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি শাসনব্যবস্থা, যা নারী ও পুরুষের মধ্যে পদ্ধতিগত বিচ্ছিন্নতা আরোপ করে এবং গণপরিসর থেকে পদ্ধতিগতভাবে মহিলাদের বাদ দিতে পারে।’‌’‌ তিনি আরও বলেন, ‘‌‘লিঙ্গবৈষম্যবাদ ‌আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক বিধির পক্ষে ততটাই বড় অভিশাপ, ঠিক যেমন ছিল জাতি বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করার সমতুল্য নীতির ক্ষেত্রে জাতিগত বর্ণবৈষম্য।”

এই যুক্তিগুলি ব্যবহার করে এ কথা বলা সম্ভবত ন্যায়সঙ্গত হবে যে আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের প্রতি ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের আলোকে এবং তাদের অধিকার কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ায় লিঙ্গবৈষম্যবাদী শব্দটি বর্তমান ডি–ফ্যাক্টো তালিবান সরকারের অধীনে পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও উপযুক্ত।

এখানে এ কথাও উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে আফগানিস্তানে যা চলছে তা চিত্রিত করার জন্য লিঙ্গবৈষম্যবাদ শব্দটি প্রথমবার ব্যবহার করা হচ্ছে না। একজন নারী অধিকার কর্মী এবং ২০১৯ সালে প্রাক্তন আফগান সরকারের সময় নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ নাহিদ ফরিদ ২০২২ সালে তালিবানকে একটি লিঙ্গবিদ্বেষী শাসন বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, জমানাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বৈধতা, সাহায্য, সহায়তা এবং তহবিলের দাবিতে মহিলাদেরকে ‘‌দর–কষাকষির উপকরণ’‌ হিসাবে ব্যবহার করছে।

তিনি এই বিষয়টির উপর আরও জোর দিয়েছিলেন যে আফগান মহিলারা এক অত্যন্ত অনন্য দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হচ্ছেন, যেখানে অনেকেই নৈরাশ্য ও হতাশা থেকে তাঁদের জীবন শেষ করার পথ বেছে নিচ্ছেন। সেপ্টেম্বর ২০২২–এ রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলার সময় ফরিদ তালিবানদের মানবাধিকারের উপর আক্রমণের কারণে জমানাটিকে একটি ‘‌লিঙ্গবৈষম্যবাদী’‌ শাসন হিসেবে চিহ্নিত করে দেওয়ার জন্য বিশ্বকে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বলেন যে বর্ণবৈষম্যবাদের লেবেল দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবর্তনের জন্য একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছিল, এবং সেই কারণেই আফগানিস্তানে পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবেও কাজ করতে পারে।

এখন একদল আফগান নারী, অধিকারকর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞ ‘‌লিঙ্গবৈষম্যবাদ বন্ধ করুন’‌ বলে একটি আন্তর্জাতিক প্রচারণাকে সমর্থন জোগাচ্ছেন। তাঁদের লক্ষ্য শুধু আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো নয়, সেইসঙ্গেই লিঙ্গবৈষম্যবাদকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানানো। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শুরু করা এই প্রচারাভিযান এই ধারণাকে প্রতিফলিত করে যে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য মোকাবিলার জন্য তৈরি বিদ্যমান আইনগুলি আফগানিস্তানে নারীর মর্যাদা লঙ্ঘনের জন্য আরোপিত নীতিগুলির ব্যবস্থাগত প্রকৃতি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে৷

ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক সংলাপই যখন একটি স্পষ্ট পরিবর্তন আনেনি, বিশেষ করে আফগানিস্তানের নারী ও মেয়েদের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে, তখন বর্ণবৈষম্যের আইনি সংজ্ঞার সম্প্রসারণ–সহ উপলব্ধ যে কোনও উপায় ব্যবহার করে এই মহিলাদের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য লড়াই করা গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্প্রসারণ সম্ভবত সরকারগুলিকে সক্রিয় করতে চালিত করতে পারে, তাদের মানবিক দায়িত্ব পালনে চাপ দিতে পারে, এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে তাদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে পারে। সর্বোপরি, ২০২৩ সালে বসবাস করে আমরা মহিলাদের এই মাত্রার নিপীড়ন সহ্য করতে পারি না, এবং করা উচিত নয়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.