-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
নেপাল কতদূর এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবে, তা নতুন প্রধানমন্ত্রীর কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব কৌতূহলী অথচ নির্লিপ্ত ভাবে চেয়ে দেখছে কী ভাবে তালিবানরা ফের আফগানিস্তানে নিজেদের শাসন কায়েম করতে চলেছে। ২০০১ সালে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর হাতে উৎখাত হওয়ার দু’দশক পরে যখন তালিবান জঙ্গিরা আবারও আফগানিস্তানের সম্পূর্ণ দখল নিতে চলেছে, তখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখা যাচ্ছে ভয়ার্ত দেশবাসী ও সেখানে কর্মসূত্রে বসবাসকারী অন্যান্য দেশের নাগরিকদের তীব্র সংকটের দৃশ্য — তাঁরা চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসতে। প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির সরকারের পতনের পরে সেখানে আটকে পড়া বিদেশিদের বার করে আনার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দফায় দফায় উড়ান চলছেই। অন্যান্য দেশের মতো নেপালও তৎপর হয়েছে এই চরম পরিস্থিতিতে আটকে পড়া নেপালি নাগরিকদের উদ্ধারের কাজে। মার্কিন দূতাবাসের নিজস্ব উদ্যোগে যদিও ১৭ অগস্ট পর্যন্ত ১১৮ জন নেপালি নাগরিককে কাতার এয়ারের বিমানে কাবুল থেকে কাঠমান্ডুতে উড়িয়ে আনা হয়েছে, তবুও আফগানিস্তানে এখনও আটকে থাকা নেপালিদের উদ্ধারের জন্য এ রকম আরও বেশ কিছু উদ্যোগ প্রয়োজন। সেখানে কতজন নেপালি আটকে আছেন তার সঠিক সংখ্যা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বালকৃষ্ণ খন্দ অবিলম্বে আফগানিস্তানে আটকে পড়া নেপালিদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। নেপালের বিদেশমন্ত্রকের সচিব ভরতরাজ পৌদ্যালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত প্রায় ১,৫০০-২,০০০ নেপালি এখনও কাবুল ছেড়ে বেরোতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই কর্মসূত্রে কানাডা, জার্মানি, জাপান, ইউ কে এবং আমেরিকার মতো দেশগুলির দূতাবাসের সঙ্গে যুক্ত। সাধারণত তাঁরা দূতাবাসে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়াও কিছু নেপালি কান্দাহারের বাগরাম বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আমেরিকা ও ব্রিটেনের অধীনে অথবা অন্যান্য দেশের সেনাঘাঁটির সঙ্গে ডিফেন্স কনট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেন। বেশ কিছু নেপালি কন্ট্রাক্টর কাবুলে তুর্কি সাব-কন্ট্রাক্টরদের অধীনে বা ফ্লুওর করপোরেশনের মতো মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন। নেপালের ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কাবুলের জার্মান দূতাবাসে ৬০ জন, ব্রিটেনের দূতাবাসে ৮৭ জন, জাপানি দূতাবাসে ৬২ জন এবং কানাডার দূতাবাসে ৬০ জন নেপালি কাজ করেন। এ ছাড়াও কাবুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের একাধিক সংস্থায় ৪৬৭ জন নেপালি কর্মরত। সর্বোপরি তাঁরা ছাড়াও জীবিকা অর্জনে সে দেশে গিয়ে আটকে পড়া শত শত নেপালি শুধু মাত্র পরিচয়পত্রের অভাবে দেশে ফিরতে পারছেন না। অনুমান করা হচ্ছে, এ রকম পরিচয়পত্রহীন প্রায় ১৪,০০০ নেপালি পরিযায়ী শ্রমিক হয়তো আফগানিস্তান ছেড়ে বেরিয়ে আসার সুযোগ না-ও পেতে পারেন।
নেপালের ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন এমপ্লয়মেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই মাসের মাঝামাঝি শেষ হওয়া গত অর্থবর্ষে ১০৭৩ জন নেপালিকে আফগানিস্তানে গিয়ে কাজের জন্য অনুমতিপত্র বা লেবার পারমিট দেওয়া হয়েছে। গত সাত বছরে ৮০০০-এরও বেশি নেপালি জীবিকার খোঁজে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে পাড়ি দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, নেপাল থেকে আফগানিস্তান যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি বেআইনি পথে হয়ে থাকে। কারণ, এই দুই দেশের মধ্যে কোনও নিয়মানুগ ও প্রত্যক্ষ কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। নেপালের ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন এমপ্লয়মেন্টের তরফে আগেও একাধিক বার কাজের খোঁজে দুবাই হয়ে আফগানিস্তানে যাওয়ার ব্যাপারে প্রধানত নিরাপত্তার অভাব সংক্রান্ত বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে দালাল বা এজেন্টরাই বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে শ্রমিকদের নিয়োগের কাজ করে। তার জন্য প্রয়োজনীয় কোম্পানির সিল, পদ ও ঠিকানা-সহ নিয়োগপত্র তারাই বানিয়ে দেয়। তার পরিবর্তে সংস্থাগুলির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিটি মোটেই আইনানুগ নয় এবং দেশভেদে শ্রম আইনও বদলে বদলে যায়। যে সংস্থা চাকরি দিচ্ছে এবং যে শ্রমিক চাকরি পাচ্ছেন — এই দুইয়ের সম্পর্ক সেই দেশের শ্রম আইনের নিরিখেই বিবেচিত হয়।
সাধারণ ভাবে দেখতে গেলে, চার দিকে ভূখণ্ড দ্বারা বেষ্টিত নেপালের মতো দেশের পক্ষে কোনও মতেই বিদেশে বেআইনি ভাবে শ্রমিক নিয়োগের ব্যাপারটি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর কারণ মূলত দুটো। এক, বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম চাহিদার জোগান দিতে না পারা এবং দুই, অর্থনৈতিক ভাবে বিশ্বের নিম্ন-মধ্যবিত্ত উপার্জনকারী দেশগুলির তালিকায় তাদের নিজেদের নাম লেখানোর আকাঙ্ক্ষা। নেপাল এমন একটি দেশ যার অর্থনৈতিক ভারসাম্য বহু অংশে বৈদেশিক কর্ম সংস্থানের সুযোগের ওপরে নির্ভরশীল এবং তা সরাসরি দেশের মোট জিডিপি কে (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) প্রভাবিত করে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন বা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) মতে, নেপালের পরিযায়ী শ্রমিকরা শুধু মাত্র নিজের দেশেরই নয়, সেই দেশগুলিরও উন্নয়নে অবদান রেখেছেন, যেখানে তাঁরা কর্মরত। প্রতি বছরই বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা। ২০১৪ অর্থবর্ষে মূলত মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলিতে কাজের জন্য ৫,২০,০০০ অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। ভৌগোলিক ভাবে কাছাকাছি অবস্থানের সুবাদে নেপালিরা বহু সময়েই ভারত হয়ে দূর দূর দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে নিরাপত্তাহীনতা ও শ্রমিক শোষণের চিত্রটি কঠোর বাস্তব। ২০১৬ সালে কাবুলে সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণে ১২ জন নেপালি সিকিওরিটি কন্ট্রাক্টর নিহত হন। এই দলটি কানাডার দূতাবাসের অধীনে কাজ করছিল। মিনিভ্যানে চেপে যাওয়ার পথে আত্মঘাতী বোমার আঘাতে প্রাণ হারান তাঁরা। এই ঘটনার স্মৃতি নেপালিদের আজও তাড়া করে বেড়ায় এবং সেই সময় থেকেই নেপাল সরকার আফগানিস্তানে কাজের অনুমতিপত্র দেওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট অনিচ্ছুক। যদিও বাস্তব চিত্রটা অন্য রকম। স্বদেশ যখন ন্যূনতম রুজিরুটির ব্যবস্থা করতে অক্ষম, তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও তীব্র অনিশ্চয়তার জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন নেপালি শ্রমিকরা।
বর্তমানে নেপালের অন্যতম বড় সমস্যাটি হল নব নির্বাচিত শের বাহাদুর দেউবা সরকারের অক্ষমতা। নেপালের মন্ত্রিসভায় বিদেশ, শ্রম অথবা পর্যটনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কোন মন্ত্রীই নেই, যাঁরা এই পরিস্থিতিতে নেপালি শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার কাজে সচেষ্ট হতে পারতেন। ইতিমধ্যেই দ্বন্দ্বদীর্ণ নেপালি কংগ্রেসের নতুন সরকার গঠনের এক মাস পরেও দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা চূড়ান্ত টালমাটাল, ফলে সেখানে এখনও স্থিতাবস্থা তৈরি হয়নি। সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচি গ্রহণ করা ছাড়া এ পর্যন্ত কোনও গঠনমূলক কাজই নতুন সরকার করে উঠতে পারেনি। নেপালের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চিত গণতন্ত্রের ইতিহাসমণ্ডিত একটি দেশের ভবিষ্যৎ কোভিড ১৯-এর এই সংকটময় দিনে কী হতে পারে, তা সত্যিই প্রশ্নের মুখে। এই কারণেই আফগানিস্তান থেকে নেপালি নাগরিকদের বার করে আনার জন্য নেপাল শরণাপন্ন হয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্যের। এ বিষয়ে তারা রাষ্ট্রপুঞ্জকে লিখিত আবেদন জানিয়েছে, এমনকি আমেরিকার মতো দেশে বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক মিশনও পাঠিয়েছে। এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে অসংখ্য মানুষ আটকে রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে নেপালি ছাড়াও রয়েছেন বহু আফগান। তাঁরাও অন্যান্য দেশে যাওয়ার পথ খুঁজছেন, বিভিন্ন দেশের কাছে সাহায্য চাইছেন। এই সময় নেপালের প্রয়োজন ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা, যাতে ভারতের উদ্যোগে উদ্ধারকারী বিমান নেপালিদের সহজেই দেশে পৌঁছে দিতে পারে। রাজনৈতিক মানচিত্র-বিতর্ক এবং সীমান্ত সমস্যা নিয়ে গত বছর দুই দেশের সম্পর্কে যে শীতলতার সৃষ্টি হয়েছে, এই যোগাযোগের মাধ্যমে তাও কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। নেপাল কতদূর এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবে, তা নতুন প্রধানমন্ত্রীর কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এবং প্রচুর প্রতিশ্রুতি ও যথেষ্ট সংশয় নিয়ে যে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তার ভাবমূর্তিও টিকবে কি না, তা এর মাধ্যমেই বোঝা যাবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sohini Nayak was a Junior Fellow at Observer Research Foundation. Presently she is working on Nepal-India and Bhutan-India bilateral relations along with sub regionalism and ...
Read More +