Author : Manoj Joshi

Published on Aug 27, 2021 Updated 0 Hours ago

অদূর ভবিষ্যতে আদৌ কি কোনও সুসংহত ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি গ্রহণ করা সম্ভব? এ নিয়ে সংশয় থাকছেই। যে দ্রুততা ও আকস্মিকতার সঙ্গে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে তাতে খুব তাড়াতাড়ি এই অঞ্চলে তারা নতুন করে কোনও প্রতিশ্রুতির মধ্যে যাবে বলে মনে হয় না।

আফগানিস্তান এবং ইন্দো-প্যাসিফিক

আফগানিস্তানের সাম্প্রতিকতম ঘটনাগুলি আমাদের সামনে এমন এক সত্য তুলে ধরেছে, যা বহু দিন ধরেই আসলে প্রকাশ্যেই ছিল। আর সেটি হল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারত এবং আমেরিকার স্বার্থের দুস্তর ব্যবধান। এ ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিকের ভারতীয় সংজ্ঞার কথাই ধরা যেতে পারে যা রাজনৈতিক নয়, নিতান্তই ভৌগোলিক। ২০১৮ সালে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সর্বশেষ বক্তব্য অনুযায়ী, ইন্দো-প্যাসিফিক হল ‘আফ্রিকার তটভূমি থেকে আমেরিকার তটভূমি পর্যন্ত’ বিস্তৃত অঞ্চল। অন্য দিকে, ইন্দো-প্যাসিফিকের মার্কিন সংজ্ঞা এর থেকে আলাদা, কারণ আমেরিকার মতে অঞ্চলটি ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে শুরু করে আমেরিকার উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।

ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্ব আশ্চর্য্যজনক ভাবে পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও তার উপকূলবর্তী সৌদি উপদ্বীপ, পূর্ব আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়ার মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলিকে প্রাধান্য দেয় না। সুতরাং আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশীদার আমেরিকা যে ভারতকে দোহা প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করবে না, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। আমেরিকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং উজবেকিস্তানের চতুর্দেশীয় পরিধির মধ্যেও ভারতকে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি আমেরিকা। এ রকম অবস্থায় আমেরিকার তরফে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বাস্তবচিত্র বা সেনা প্রত্যাহারের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ভারতকে জানানোর প্রশ্নই ওঠে না, যদিও এ যাবৎ আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নেওয়া ভারতের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলি মূলত আমেরিকার নিরাপত্তার ছত্রছায়াতেই রূপায়িত হয়েছে।

ঠিক এই কারণেই সাউথ ব্লক কাবুলের এই তীব্র বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেও ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্ব যে বহাল আছে এবং ভাল ভাবেই এগোচ্ছে, সে কথা প্রচারে অতিরিক্ত তৎপর হয়ে উঠেছে। এক দিকে আফগানিস্তান থেকে ভারতীয় কূটনীতিবিদ ও কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমেরিকার সাহায্যের কথা জনসমক্ষে তুলে ধরা হচ্ছে। আবার অন্য দিকে প্রক্রিয়াটিকে সহজসাধ্য করে তোলার জন্য তালিবানদের আসল ভূমিকা চেপে যাওয়া হচ্ছে বা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে

আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশীদার আমেরিকা যে ভারতকে দোহা প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করবে না, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। আমেরিকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং উজবেকিস্তানের চতুর্দেশীয় পরিধির মধ্যেও ভারতকে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি আমেরিকা।

অদূর ভবিষ্যতে আদৌ কি কোনও সুসংহত ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি গ্রহণ করা সম্ভব? এ নিয়ে সংশয় থাকছেই। যে দ্রুততা ও আকস্মিকতার সঙ্গে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে তাতে খুব তাড়াতাড়ি এই অঞ্চলে তারা নতুন করে কোনও প্রতিশ্রুতির মধ্যে যাবে বলে মনে হয় না।

আমেরিকার দিক থেকে দেখলে এই মুহূর্তে মধ্য এশিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমেরিকা তেলের জন্য আর এই অশান্তিপূর্ণ অঞ্চলটির উপর নির্ভরশীল নয়। এই আবস্থায় আমেরিকার একমাত্র চিন্তার কারণ হতে পারে ইজরায়েলের সুরক্ষা। এই অঞ্চল থেকে সরে আসায় এ বার তারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার দিকে আরও মনোনিবেশ করতে পারবে।

কিন্তু ভূ-রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ভৌগোলিক কারণেই ভারত যেখানে ছিল সেখানেই থাকছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেখান থেকে আফগান বিপর্যয়ের দৃশ্য দেখা মোটেও স্বস্তির নয়। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের কিছু করার উপায় নেই এ কথা যেমন সত্যি, তেমনই আমেরিকার দেখানো পথে ইরানের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলার দায় আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমেরিকা যদি ইরানের সঙ্গে আবার বোঝাপড়া শুরু করে, তাতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। তেহরান ইতিমধ্যেই ভারতের ভীরুতার জন্য ক্ষোভ উগরে দিয়েছে এবং চাবাহার বন্দর ও শহরে ভারতের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যদিও ভারতের কাছে এই বন্দরের উপযোগিতা তর্কসাপেক্ষ।

নয়াদিল্লি সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে আফগানিস্তানে, কারণ সেখানে জনসাধারণের মধ্যে ভারতের যথেষ্ট সুনাম ছিল এবং আফগান সরকারের সঙ্গেও ছিল সুসম্পর্ক।

কিন্তু নয়াদিল্লি সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে আফগানিস্তানে, কারণ সেখানে জনসাধারণের মধ্যে ভারতের যথেষ্ট সুনাম ছিল এবং আফগান সরকারের সঙ্গেও ছিল সুসম্পর্ক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আফগানিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা — ন্যাশনাল ডিরেক্টোরেট অব সিকিয়োরিটি-র (এনডিএস) মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানে অভিযান চালিয়ে যেতে পারছিল।

যদিও পাকিস্তান এ যাবৎ তালিবান অভ্যুত্থানকে অস্ত্র, অর্থ ও নিরাপদ ঘাঁটির সুযোগ দিয়েছে, তবুও তালিবানদের পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরে তাদের ওপরে পাকিস্তানের ঠিক কতটা প্রভাব থাকবে, তা বলা মুশকিল। তালিবান অবশ্য ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে যাতে আগামী দিনে রসদ, সৈন্য এবং যুদ্ধের বিভিন্ন সরঞ্জামের জন্য তাদের শুধুমাত্র ইসলামাবাদের মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকতে হয়। মোল্লা বরাদরের মতো মানুষ পাকিস্তানে দীর্ঘ আট বছরের বন্দিদশা ও অত্যাচারের দিনগুলি ভুলে যাননি। কিন্তু পাকিস্তানের তুরুপে হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো তাসটি আছে যা তালিবান জোটের শরিক দলগুলির মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী।

চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা সহযোগিতা এবং আফগানিস্তানকে নিজেদের নতুন ত্রিপাক্ষিক দলের অন্তর্ভুক্ত করতে চাওয়া ভারতের পশ্চিম দিক নিয়ে মাথাব্যথা বাড়াতে পারে। সম্প্রতি ফোনে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির কাছে চারটি প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রথমত, আফগানিস্তানে এমন এক রাজনৈতিক কাঠামো তৈরিতে সাহায্য করা, যা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এক বৃহত্তর ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে; দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানকে পুনরায় সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর হতে না দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা; তৃতীয়ত, আফগানিস্তানে কর্মরত চিনা ও পাকিস্তানিদের সুরক্ষার ব্যাপারটিতে গুরুত্ব দেওয়া; এবং চতুর্থত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে জায়গা করে দেওয়া।

একই দিনে শি জিনপিং ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি ও ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহকে আলাদা আলাদা ভাবে ফোনে যোগাযোগ করেন। শি জিনপিং ইরান ও চিনের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়টির পক্ষে জোরালো সমর্থন জানান এবং বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি তিনি সর্বাত্মক পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের ‘ন্যায্য উদ্বেগের’ সঙ্গেও সহমত হন।

বেজিং তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) আওতায় ইতিমধ্যেই মধ্য এশিয়া, ইরান এবং পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করেছে এবং বর্তমানে তার লক্ষ্য হবে আফগানিস্তানকেও একই গণ্ডির মধ্যে নিয়ে আসা।

পাকিস্তানের লক্ষ্য যা-ই হোক না কেন, চিন আফগানিস্তানের মাটিতে অশান্তির সূত্রপাত করতে চাইবে না। এ বিষয়ে চিন যথেষ্ট সাবধানী এবং মধ্য এশিয়ায় আমেরিকার যে কোনও রকম শক্তিবৃদ্ধি বা ইসলামি মৌলবাদকে মাথা চাড়া না দিতে দেওয়াই তার প্রধান লক্ষ্য। বেজিং তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) আওতায় ইতিমধ্যেই মধ্য এশিয়া, ইরান এবং পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করেছে এবং বর্তমানে তার লক্ষ্য হবে আফগানিস্তানকেও একই গণ্ডির মধ্যে নিয়ে আসা।

ইতিমধ্যেই কথা উঠতে শুরু করেছে কী ভাবে চিন আফগানিস্তানের প্রায় এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের খনিজ পদার্থ, বিশেষ করে ‘রেয়ার আর্থস’ নিজের কাজে লাগাতে চলেছে। গ্লোবাল টাইমসের মতে চিনারা আফগানিস্তানের খনি অঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত তারা বাণিজ্যিক খাতে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রায় ৬৩০ মিলিয়ন ডলার সরাসরি বিনিয়োগ করেছে খনি অঞ্চলে যোগাযোগ ও সড়ক নির্মাণ খাতে।

বিগত বেশ কিছু বছরে আফগানিস্তানে ভারতের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের পরিমাণ চিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি। আফগানিস্তানে ভারত রাস্তা, জলাধার, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিদ্যুতের সাব-স্টেশন ইত্যাদি তৈরি করেছে এবং বৈদ্যুতিক সংযোগের প্রসার ঘটিয়েছে, কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, বাস উপহার দিয়েছে। হাজিগাক অঞ্চলের খনিজ পদার্থ তুলে আনার কাজে ভারত ইরানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুগ্ম ভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বর্তমানে এই সব কিছুর উপরেই প্রশ্নচিহ্ন ঝুলছে, আফগানিস্তানে আগামী দিনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তারা এই সব কিছুকেই নতুন ভূ-রাজনৈতিক আঙ্গিকে দেখবে। একই কথা প্রযোজ্য ভারতের ক্ষেত্রেও।

ইতিমধ্যেই আমরা ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছোট ছোট পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি যা আমাদের কাছে বেশ অস্বস্তির। চিন ও পাকিস্তানের মধ্যেকার সম্পর্ক মজবুত হওয়ার পাশাপাশি ইসলামাবাদের উপর আমেরিকার আগ্রহ বাড়ছে। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আমেরিকা পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাস দমন শাখা বা কাউন্টার টেররিজম বেস তৈরি করতে চেয়েছিল কিন্তু ইসলামাবাদের তরফে এ বিষয়ে তীব্র আপত্তি থাকায় তাকে পিছু হঠতে হয়। যদিও পাকিস্তানে ওয়াশিংটনের সুদীর্ঘ বিনিয়োগের ইতিহাস মাথায় রাখলে এ কথা সহজেই অনুমেয় যে, এ বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যাবে না।

ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে আমেরিকা নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় চিনকে উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দেওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনও পরিকল্পনা আমেরিকার নেই।

ইন্দো-প্যাসিফিকের অপর প্রান্তে আমেরিকা ও চিন নিজেদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে যার সাম্প্রতিকতম নমুনাটি দেখা গেছে আসিয়ান রিজিয়োনাল ফোরামে (এআরএফ)। এই বৈঠকে বক্তব্য রেখেছেন ওয়াং ই এবং অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ভারতের তরফে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন বিদেশমন্ত্রকের নবীন মন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং। ওয়াং বলেন যে, ইতিপূর্বেই আচরণবিধি নিয়ে মন্ত্রিপর্যায়ের এক বৈঠকে মোটের উপর ঐকমত্য হয়েছে। এই আচরণবিধি চালু করার জন্য চিন গত ২০ বছর ধরে আসিয়ানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সবের মাধ্যমে চিন এটাই প্রতিপন্ন করতে চাইছে যে, চিন ও আসিয়ান দক্ষিণ চিন সমুদ্রে সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান চায়। আমেরিকা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করে এবং তারা ভারত এবং ইউরোপীয় নৌ-জোটের মাধ্যমে ‘নৌ চলাচলের স্বাধীনতা’র উপর জোর দিচ্ছে। ২০১৮ সালের অগস্ট মাসে আচরণবিধির যে খসড়া বানানো হয়েছিল, বেজিং সেটির মধ্যে একটি নতুন ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। তাতে অঞ্চলটির সঙ্গে ভৌগোলিক ভাবে যুক্ত নয়, এমন দেশগুলির দক্ষিণ চিন সমুদ্রে সামরিক অনুশীলন ও সামুদ্রিক সম্পদ উন্নয়নের অধিকার থাকবে না।

আসিয়ান রিজিয়োনাল ফোরাম বা এআরএফ-এর সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন হংকং, তিব্বত এবং জিনজিয়াং-এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চিনকে কটাক্ষ করেছেন এবং চিনের ক্রমাগত বেড়ে চলা পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের প্রসঙ্গও তুলেছেন। তবে ব্লিঙ্কেনের মন্তব্যের পক্ষে আসিয়ান দেশগুলির তরফে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কেউ কেউ মানবাধিকার প্রসঙ্গে আমেরিকার ভাষণকে খারিজ করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বর্তমান সফরের পরেও অবস্থার বিশেষ উন্নতি হবে বলে মনে হয় না।

নৌ বাহিনী বা জাহাজ চলাচল নয়, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আর্থিক নীতি। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে আমেরিকা নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় চিনকে উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দেওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনও পরিকল্পনা আমেরিকার নেই। একই রকম ভাবে ভারতও আরসিইপি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বর্তমানে আমেরিকা ও তার চতুর্পাক্ষিক গোষ্ঠী বা কোয়াডের বাকি তিনটি দেশ ভ্যাকসিন, জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রশমন, আন্তর্জাতিক স্তরে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ভবিষ্যতের অত্যাধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলিতে চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামলে নিজেদের সক্ষমতার কথা বলছে। কিন্তু এই সব কিছুই বাণিজ্যিক চুক্তি ও বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলির উপর প্রত্যক্ষ ভাবে নির্ভরশীল। এখনও তার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে সরকারি ভাবে প্রকাশ্যে আসা আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অনুযায়ী আমেরিকা তার প্রভুত্ব বজায় রাখতে চায় সেই সব অঞ্চলেই, যা আমেরিকার আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিকাশের  চালিকাশক্তি। একই সঙ্গে এই নীতিতে ‘ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের’ সীমানার বাইরেও ভারতের কার্যকলাপকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এই নথিতে ভারতকে তার ‘মহাদেশীয় প্রতিবন্ধকতাগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’ সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা মূলত চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত বিতর্কের প্রশ্নেই সীমাবদ্ধ।

বলা বাহুল্য যে, আমেরিকার এই প্রস্তাবনায় ভারতের সুবিস্তৃত বৈদেশিক নীতি ও সুরক্ষানীতিগুলির দায়বদ্ধতার কোনও প্রসঙ্গই নেই।

সুরক্ষার সুনিশ্চিতকরণে আমেরিকার বিসশস্ততা ও ভরসাযোগ্যতা বিশ্বের বহু দেশের কাছেই আর সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, আফগানিস্তানের মতো একটি দুর্বল দেশ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার ফলে আমেরিকা পূর্ব এশিয়ায় চিনের মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুঝতে আরও বেশি সক্ষম হবে। কিন্তু এই সমস্যাগুলি নিয়ে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ জনমত কী বলছে, তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। অন্যান্য দেশের প্রতি আমেরিকার মৌখিক দায়বদ্ধতার কথা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা বোকামির কাজ হবে। যদিও ইউরোপ ও ন্যাটোর প্রতি আমেরিকার দায়বদ্ধতা প্রায় সন্দেহাতীত, কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিকে পালাবদলের অনিশ্চয়তা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.