Author : Harsh V. Pant

Published on Apr 18, 2023 Updated 0 Hours ago

ভূ–রাজনৈতিক পরিবর্তন ও বহুমেরুবিশিষ্টতার মধ্যে বার্লিনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক এক নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে‌

ভারত–জার্মানি সম্পর্কের ‘‌জিটেনভেন্ডে’‌

এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে জার্মানির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে ফ্রান্সের মতো অন্য ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে তার সম্পর্কের থেকে পিছিয়ে আছে। এর কারণের মধ্যে আছে বিদ্বেষহীন পারস্পরিক অবহেলা ও চিনের উপর জার্মানির প্রাথমিক ফোকাস। তবে এই পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

চ্যান্সেলর স্কোলজের দুই দিনের ভারত সফরের সময়টা, যা ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩–এ শুরু হয়েছিল, উল্লেখযোগ্যভাবে মিলে গিয়েছিল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীর সঙ্গে, যে যুদ্ধ স্কোলজের নিজের ভাষায় ছিল জিটেনভেন্ডে বা সন্ধিক্ষণ।

প্রকৃতপক্ষে, রুশ আক্রমণ জার্মানির নিরাপত্তা নীতিতে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হয়ে উঠেছে, যার ফলে কৌশলগত বিষয়ে কয়েক দশক ধরে অনুসৃত যুদ্ধ–পরবর্তী শান্তিবাদ পরিত্যাগ করা হয়েছে। জার্মানির প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২%–এ উন্নীত করা এবং দেশের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ তহবিল প্রদানের ঘোষণা থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট।

রাশিয়ার যুদ্ধ ও চিনের নিজেকে জাহির করার অবস্থান জার্মানির ভান্ডেল ডার্চ হ্যান্ডেল (বাণিজ্যের মাধ্যমে পরিবর্তন)–এর পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ঘটনাপ্রবাহ দেশটিকে তার বাণিজ্য ও শক্তি নির্ভরতার বিষয়টি গভীরভাবে পুনর্বিবেচনা করতে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনার দিকে এগোতে প্ররোচিত করেছে। রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক অচেনা পর্যায়ে প্রবেশ করায় সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে মূল্যবোধভিত্তিক অংশীদারির উপর ইউরোপের ক্রমবর্ধমান অগ্রাধিকার এখন ভারত–জার্মান সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে ২০২১ সালে জার্মান সরকারের কোয়ালিশন চুক্তি উল্লেখিত হয়েছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে দেশটির শীর্ষ বিদেশনীতি অগ্রাধিকারগুলির একটি হিসাবে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জার্মান বিদেশমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের ভারত সফরের, এবং প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, ও পরিচ্ছন্ন শক্তিতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য ২০১১ সালে শুরু হওয়া ইন্ডিয়া–জার্মানি ইন্টার–গভর্নমেন্টাল কনসালটেশনস–এর ষষ্ঠ সংস্করণের অর্জনের উপর ভিত্তি করে স্কোলজের সফরটি সহযোগিতা প্রসারিত করেছে মাইগ্রেশন, ডিজিটাল রূপান্তর ও ইন্দো–প্যাসিফিক ক্ষেত্রে।

রাশিয়ার যুদ্ধ ও চিনের নিজেকে জাহির করার অবস্থান জার্মানির ভেন্ডেল ডার্চ হ্যান্ডেল (বাণিজ্যের মাধ্যমে পরিবর্তন)–এর পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই ঘটনাটি দেশটিকে তার বাণিজ্য ও শক্তি নির্ভরতার বিষয়টি গভীরভাবে পুনর্বিবেচনা করতে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনার দিকে এগোতে প্ররোচিত করেছে।

ভারত এই বছর জি২০–র সভাপতিত্ব করায় এবং সেই ফোরামে সহযোগিতায় ভূ–রাজনীতির বাধা এড়ানোর কথা বলায় চ্যান্সেলর স্কোলজের সফরটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ চলতে থাকায় রাশিয়া–ইউক্রেন দ্বন্দ্ব এবং এর বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়াই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে কোনও শান্তি প্রক্রিয়ায় অবদান রাখার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

চিনের দিকে কেন্দ্রীভূত জার্মানির পূর্ববর্তী এশিয়া নীতি থেকে সরে গিয়ে স্কোলজ ২০২১ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমেই জাপান সফর করেন, এবং তারপরে মোদীকে বার্লিনে ষষ্ঠ ইন্টার–গভর্নমেন্টাল কনসালটেশনস–এর জন্য আমন্ত্রণ জানান। এশিয়ায় এই বর্ধিত রাজনৈতিক প্রসারণ হল ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য জার্মানির সামগ্রিক কৌশলের অংশ, যা ভারতকে একটি প্রধান অংশীদার হিসাবে উল্লেখ করে। ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তিঘর হিসাবে এবং রপ্তানির উপর নির্ভরশীলতার কারণে জার্মানির জন্য এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগকারী সরবরাহ শৃঙ্খল ও বাণিজ্য পথের স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ভারত সফরের আগে একটি সাক্ষাৎকারে স্কোলজ বৃহত্তর সামরিক মোতায়েনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে কৌশলগত সম্পৃক্ততা বাড়াতে জার্মানির অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। ২০২১ সালে ফ্রিগেট বায়ার্নকে ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরে পাঠানো এবং মুম্বইতে তার স্টপওভারের  (জানুয়ারি ২০২১)  প্রতীকী সঙ্কেত ছিল এর একটি অভিব্যক্তি। তৃতীয় দেশের উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত ভারত–জার্মানি ত্রিভুজাকার সহযোগিতার একটি সাম্প্রতিক চুক্তিও এই লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রতিরক্ষা সংযোগ

যেহেতু নয়াদিল্লি রাশিয়ার উপর তার সামরিক নির্ভরতা কমিয়ে এই ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে, এবং সেই সময়েই বার্লিন তার দীর্ঘস্থায়ী অস্ত্র রপ্তানি নীতির পুনর্মূল্যায়ন করছে, তাই জার্মানি ভারতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অংশীদার হতে পারে। বৈঠকে আলোচ্যের মধ্যে ছিল সামরিক হার্ডওয়্যারের সহনির্মাণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তর, এবং ৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি চুক্তি যেখানে জার্মানি যৌথভাবে ভারতে ছয়টি প্রচলিত সাবমেরিন তৈরি করবে। এর পর বর্ধিত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য ২০২৪ সালে প্রথম ফ্রান্স–ভারত–জার্মানি সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।

তৃতীয় দেশের উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত ভারত–জার্মানি ত্রিভুজাকার সহযোগিতার একটি সাম্প্রতিক চুক্তিও এই লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তবে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা চিহ্নিত করা দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতার বিষয়ে তাদের অভিন্ন উদ্বেগ সত্ত্বেও মনে রাখতে হবে জার্মানির চিনের সঙ্গে কোনও সীমান্ত নেই, কিন্তু ভারতের সঙ্গে দেশটির আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে। অন্যদিকে চিনের প্রতি জার্মান আস্থার অভাব সত্ত্বেও ২০২২ সালের নভেম্বরে স্কোলজের সে দেশে সফর প্রমাণ করে যে জার্মান শিল্প চিনা বাজারের সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত। যদিও স্কোলজ চিন থেকে ‘‌বিযুক্তিকরণ’‌–-এর অসুবিধাগুলির উপর জোর দিচ্ছেন, এটি উৎসাহজনক যে জার্মানি একটি বিস্তৃত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হিসাবে চিন সম্পর্কে একটি নতুন কৌশল তৈরি করছে।

ভারত ও জার্মানি বহুপাক্ষিক ফোরামে সহযোগিতা করে, জি–৪ গোষ্ঠীর অংশ হিসাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের জন্য চাপ দেয়, এবং গত বছরের জি–৭ সম্মেলনে যোগদানের জন্য মোদীকে জার্মানির আমন্ত্রণেও সৌহার্দ্যের সুরটি স্পষ্ট ছিল।

বাণিজ্য ও প্রযুক্তি

ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) জার্মানি ভারতের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অংশীদার। ভারত–ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার পুনঃপ্রবর্তনের ফলে বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবেই অ্যাজেন্ডায় উচ্চ স্থান পেয়েছিল। চ্যান্সেলর তাঁর উচ্চ–ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়িক  প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছিলেন, এবং বলেছিলেন যে তিনি এতে ‘‌ব্যক্তিগতভাবে জড়িত’‌ থাকবেন। পরিচ্ছন্ন শক্তি ও সবুজ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা আবির্ভূত হয়েছে অংশীদারির কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হিসাবে, আর তা শুরু হয়েছে গত বছরের একটি সবুজ ও স্থিতিশীল উন্নয়ন অংশীদারি ও সবুজ হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে। জার্মানিতে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতির কারণে গতিশীলতা ও অভিবাসনের বিষয়টিও নজরে ছিল, যেখানে প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ ভারতীয়রা এই ব্যবধান পূরণ করতে সাহায্য করতে পারেন।

যেহেতু অংশীদারির বেশিরভাগ অংশ অর্থনীতি নিয়ে গঠিত, তাই অর্থনীতির সম্পর্ককে আরও স্বাস্থ্যকর অংশীদারিতে ক্রমাগতভাবে বিকশিত হতে দেখা স্বস্তিকর। যুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ইউরোপের সঙ্গে ভারতের নিয়মিত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা ইন্দো–প্যাসিফিকের মতো অঞ্চলে অভিন্নতাকে দুর্বল করেনি, এবং এই ঘটনাটি অংশীদারির কৌশলগত মাত্রাকে সংহত করছে। রাশিয়া–চিন অক্ষ শক্তিশালী হতে থাকা এই সারিবদ্ধতাকে আরও উৎসাহিত করতে পারে।

অস্থির ভূ–রাজনৈতিক পরিবর্তন, উদীয়মান বহুমেরুবিশিষ্টতা এবং ভারতের প্রতি ইউরোপের বর্ধিত প্রেমের পটভূমিতে জার্মানির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এক নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘দ্য হিন্দু’–তে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.