Author : S. Paul Kapur

Published on Mar 24, 2023 Updated 0 Hours ago

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত অভিন্নতা অর্জনের অনেক দশকব্যাপী স্বপ্ন আমেরিকান নেতাদের ত্যাগ করতে হবে।

একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সমঝোতা?

এই প্রতিবেদনটি রাইসিনা এডিট ২০২৩ সিরিজের অংশ


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের বহু দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) বিভিন্ন কৌশলগত প্রচেষ্টায় সমর্থনের জন্য পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীল থেকেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিকতম আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধের বিচারের বিষয়টি। সর্বোপরি পাকিস্তান এই প্রচেষ্টায় আংশিক মিত্র হয়ে প্রায়শই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা এবং স্বার্থের প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে এবং একই সঙ্গে তাদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণও করেছে।(১)

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৪৭ সালে তার জন্মের সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় নীতির উপকরণ হিসাবে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে নিয়োগ করেছে। এটি পাকিস্তানকে তার নিয়মিত সামরিক বাহিনী ব্যবহার করার খরচ এবং ঝুঁকি ছাড়াই দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সীমান্তগুলিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম করেছে।(২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নন-নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন মিত্র হিসেবে পাকিস্তানকে মর্যাদা দেওয়া সত্ত্বেও তালিবান ও তার মিত্র জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির প্রতি সমর্থন জোগানোর মাধ্যমে  পাকিস্তান ৯/১১-র পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার মার্কিন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তালিবান ও তার সঙ্গীদের প্রতি পাকিস্তানের এ হেন সমর্থন নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে উল্লেখযোগ্য সামরিক, লজিস্টিক্যাল এবং কূটনৈতিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের উপর তালিবানদের প্রাথমিক দখল সম্ভব করে তুলেছিল।

১৯৪৭ সালে তার জন্মের সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় নীতির উপকরণ হিসাবে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে নিয়োগ করেছে।

সন্ত্রাসবাদের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থনের কারণে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তান থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। ২০১৭ সালে দেশটির দক্ষিণ এশিয়ার কৌশল এ কথা স্পষ্ট করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে না। তার পরে এটি পাকিস্তানকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা কমিয়ে দেয় এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের ধূসর তালিকায় দেশটির অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে বলেছে যে, পাকিস্তান তার আচরণের উল্লেখযোগ্য উন্নতি না করলে এই ধরনের ব্যবস্থা  বলবৎ থাকবে।

পাকিস্তান পরবর্তী কালে আফগানিস্তান থেকে তাদের প্রস্থানের বিষয়ে তালিবানের সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেছিল। এই সাহায্য সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কে টানাপড়েন অব্যাহত থেকেছে। বছরের পর বছর ধরে স্বল্প পরিমাণে হলেও পাকিস্তানের আমেরিকাকে সমর্থন জোগানোর দরুন আফগানিস্তানে তালিবানের জয় আটকে ছিল। লস্কর-ই-তইবা (এলইটি) প্রধান মুফতি মোহাম্মদ হাফেজ সইদকে গ্রেফতার এবং কারাদণ্ড-সহ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির উপর আপাত পাকিস্তানি হামলা সত্ত্বেও প্রবীণ এলইটি নেতা-সহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানে রয়ে যায়। এ কথা স্পষ্ট ছিল না যে, পাকিস্তানি নীতির কোনও পরিবর্তন আদৌ গভীর বা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না।

দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানকে অনেকাংশেই উপেক্ষা করে। বর্তমানে যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উল্টো পথে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এক নবজাগরণের মধ্য দিয়ে চলেছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পাকিস্তানি এফ-১৬-এর জন্য ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্থিতিশীল সহায়তা প্রদান। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে প্রায় তিন বছরের মধ্যে প্রথম বারের মতো ওয়াশিংটন সফরে যেতে দেখা গিয়েছে। এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদ দমন (সিটি), অর্থনৈতিক, শক্তি ও পরিবেশগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চালিয়েছে।

পাকিস্তান পরবর্তী কালে আফগানিস্তান থেকে তাদের প্রস্থানের বিষয়ে তালিবানের সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেছিল। এই সাহায্য সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কে টানাপড়েন অব্যাহত থেকেছে।

এই ধরনের উন্নয়ন, বিশেষ করে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত স্বার্থ এবং সহযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে তারা ভারতের পশ্চিম প্রান্তের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে, যা চিনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার কাজ থেকে ভারতকে বিভ্রান্ত করবে। ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রচার চালালেও ভারতের ঘোষিত শত্রুর প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ভারতের চোখ খুলে দেবে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদৌ নির্ভরযোগ্য অংশীদার নয়। এই সমস্যাগুলির প্রেক্ষিতে কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে এফ-১৬ টিকিয়ে রাখার মতো সামরিক সহায়তা জোগাতে চাইবে? এর বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা থাকলেও খতিয়ে দেখলে এর কোনওটিই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রতিরক্ষা বিভাগ দাবি করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ সাসটেনমেন্ট প্যাকেজ পাকিস্তানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ দমন প্রচেষ্টাকে আরও সমর্থন জোগাতে সক্ষম করবে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়তার জন্য পাকিস্তানের উপর নির্ভর করা সন্ত্রাসবাদের প্রতি তার দীর্ঘ দিনের সমর্থনকে নস্যাৎ করে দেয়। কঠিন ও ব্যয়বহুল হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পাকিস্তানের পরিবর্তে অন্য আঞ্চলিক দেশগুলিকে সন্ত্রাসবাদ দমন প্রচেষ্টায় সহযোগী করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আশা করতে পারে যে, পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা প্রদান উপমহাদেশে কৌশলগত স্থিতিশীলতা  বাড়াবে ও শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে দুর্বল পাকিস্তানের ভারসাম্য বজায় রাখবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমতা প্রত্যাশা করা। বরং ক্রমবর্ধমান চিনা আগ্রাসনকে সামাল দিতে তার অংশীদার ভারতকে সশক্ত করার প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত। ইউক্রেনে পাকিস্তানি অস্ত্র স্থানান্তরের ক্ষতিপূরণ হতে পারে পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা প্রদান। কিন্তু পূর্ব ইউরোপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তা ইন্দো-প্যাসিফিকের স্বার্থের চেয়ে কম তাৎপর্যপূর্ণ। ইউক্রেনের জন্য তৃতীয় পক্ষের সমর্থনের সুবিধার্থে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে খর্ব করা উচিত নয়। সর্বোপরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশা করতে পারে যে, পাকিস্তানের এফ-১৬ উন্নত করা চিনের উপর পাকিস্তানের অত্যধিক নির্ভরশীলতা রোধ করতে সাহায্য করবে।(৩) চিনকে সব সময়ের বন্ধু বলে বিবেচনা করার পাশাপাশি এফ-১৬ বিমানের অবস্থা ছাড়াও পাকিস্তান ইতিমধ্যেই চিনের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। এফ-১৬ সাসটেনমেন্ট চিন-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে সামান্যই প্রভাব ফেলবে।

ইউক্রেনের জন্য তৃতীয় পক্ষের সমর্থনের সুবিধার্থে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে খর্ব করা উচিত নয়।

এর অর্থ এই নয় যে, আমেরিকা পাকিস্তানকে উপেক্ষা করবে বা বিচ্ছিন্ন করে দেবে। পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি। সর্বোপরি কখনও কখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের স্বার্থ অভিন্ন হতে পারে এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সীমিত সহযোগিতার ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানকে এতটাই প্রয়োজন, যেমনটা গত ২০ বছরে আগে কখনও হয়নি। সামরিক গোষ্ঠীগুলি ও সন্ত্রাসবাদের প্রতি পাকিস্তানের তরফে অর্থায়ন বন্ধ করার স্পষ্ট উদাহরণ স্থাপনের উপর নির্ভরশীল থাকবে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি কতটা হবে। ইতিমধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি রফতানির জন্য শুল্ক-মুক্ত অঞ্চল তৈরির মতো সীমিত অর্থনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন ও পাকিস্তানি নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনাও সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আমেরিকান নেতাদের অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত অভিন্নতা অর্জনের বহু দশকব্যাপী স্বপ্ন ত্যাগ করতে হবে। বর্ধিত নিরাপত্তা সহায়তার মতো ব্যবস্থার মাধ্যমে এই উদ্যোগ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া ফলপ্রসূ না-ও হতে পারে এবং তারা দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত কৌশলগত স্বার্থকে ব্যাহত করতে পারে।


১) হুসেন হাক্কানি, ‘ম্যাগনিফিসেন্ট ডিলিউশন: পাকিস্তান, দি ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড অ্যান এপিক হিস্টরি অব মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং’, নিউ ইয়র্ক: পাবলিক অ্যাফেয়ার্স, ২০১৩

২) এস পল কপূর, ‘জিহাদ অ্যাজ গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি: ইসলামিক মিলিটেন্সি, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড দ্য পাকিস্তানি স্টেট’ (নিউ ইয়র্ক: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৬)

৩) এস পল কপূর, ‘আ নিউ স্পেশ্যাল রিলেশনশিপ?’ ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট (নভেম্বর / ডিসেম্বর ২০২১), পৃষ্ঠা ৬২

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.