বিশ্বব্যাপী অশান্তি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে অগণিত উপায়ে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলি দ্রুত পরিবর্তনশীল ঘটনাপ্রবাহের সময়মাফিক প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে। এই প্রবণতাগুলির জন্য শোক প্রকাশ করা ছাড়া বিশ্ব নেতাদের কাছে এই মুহূর্তে আর কিছুই করার নেই। এ ভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলি তাদের নৈরাজ্যের মৌলিক প্রকৃতিতে ফিরে এসেছে যেখানে দেশগুলি তাদের নিজস্ব গতিপথ নির্ধারণ করছে।
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বর্বরতার সঙ্গে সিরিয়া শাসন করার পর বাশার আল-আসাদের স্বৈরতন্ত্রের আশ্চর্যজনক গতিতে পনেরো দিনের মধ্যে পতন ঘটে। ২০১১ সালে সিরিয়ানরা তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু আসাদ ইরান ও রাশিয়ার সহায়তায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিছু সময়ের জন্য এমনটা মনে হয়েছিল, আরও এক জন মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী নেতা হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার মতো ব্যক্তিত্ব আসাদের রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল আসাদের জীবনকে কঠিন করে তুললেও – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান ও তার প্রক্সিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে এবং ইজরায়েল রাশিয়ার বিপরীতে ইউক্রেনকে সমর্থন করে - উভয়ের জন্যই আসাদের সিরিয়া ছিল তাদের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলগত পুনর্গঠনের একটি সামান্য অংশ মাত্র।
সিরিয়ানরা তাঁর বিরুদ্ধে তাঁদের প্রথম পদক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু আসাদ ইরান ও রাশিয়ার সহায়তায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বিদ্রোহী বাহিনী আসাদ সরকারকে উচ্ছেদ করার সঙ্গে সঙ্গে মর্ষকামী স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটানোর উচ্ছ্বাস বাস্তব আকার পেয়েছে। তবে যা সমান ভাবে বাস্তব তা হল, পরবর্তী সময়ে কী হবে তা নিয়ে আশঙ্কা। বিদ্রোহীরা জোর দিয়ে বলছে যে, তারা আর জিহাদি নয় এবং আসাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ইসলামি বাহিনী হিসেবে লড়াই করছে। তবে তা আদৌ হবে কি না, সে সময়ই বলবে। তাদের অতীত একটি ভিন্ন গল্প বলে এবং সে কথা মানুষ এখনও ভুলে যায়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জ হায়াত তাহরির আল-শামকে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এইচটিএস-এর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির মাথার জন্য ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ধার্য করেছে। জোলানি সাম্প্রতিক দিনগুলিতে তাঁর মধ্যমপন্থার ভাবমূর্তি বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন এবং প্রতিষ্ঠান ও জনগণের ইচ্ছার কথা বলেছেন। তবে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চরিত্র ও তার সামাজিক প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা রয়েই যায়।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আসাদের পতনকে ‘সিরিয়ার দীর্ঘ-সহিষ্ণু জনগণের জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার এক ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর প্রতিরক্ষা সচিব সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আইএসআইএস সিরিয়ায় ক্ষমতার শূন্যতার ‘সুবিধা নেওয়া’র চেষ্টা করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হাউস অফ আসাদের পতন ইতিমধ্যে জ্বলন্ত মধ্যপ্রাচ্যে জটিলতার আর একটি স্তর যুক্ত করেছে। ওয়াশিংটন এই উপলক্ষে আসাদের সাহায্যে রাশিয়ার অক্ষমতা দেখে খুশি হতে পারে। প্রায় এক দশক আগে ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছিলেন এবং ইরানের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আসাদের সংগ্রামী বাহিনীকে শক্তিশালী করতে তার নিজের বিমান বাহিনী এবং রুশ ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। এটি আসাদের শাসনকে এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পুতিনের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে। আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইউক্রেনের প্রতি পুতিনের অবস্থান আরও কঠোর হতে পারে। কারণ তিনি আরও একটি ক্ষেত্রে নিজেকে দুর্বল প্রতিপন্ন করতে চান না।
সিরিয়ার ঘটনাপ্রবাহ যদি মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে, তবে দক্ষিণ কোরিয়ার আশ্চর্যজনক রাজনৈতিক ঘটনাগুলি ভঙ্গুরতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির অন্তর্নিহিত স্থিতিস্থাপকতাকেই দর্শায়।
সামরিক আইন দক্ষিণ কোরিয়ার এক দূরবর্তী স্মৃতি ছিল এবং ১৯৮৭ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র হওয়ার পর থেকে তার ঘোষণা করা হয়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল পার্লামেন্টে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে’ পরাজিত করতে এবং উত্তর কোরিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামরিক শাসন ঘোষণা করলেও ফার্স্ট লেডির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছিল। সামরিক আইন দক্ষিণ কোরিয়ার এক দূরবর্তী স্মৃতি ছিল এবং ১৯৮৭ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র হওয়ার পর থেকে তার ঘোষণা করা হয়নি। শুধুমাত্র বিরোধী দলই নয়, ইউনের নিজের দলের নেতারাও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মত রাখলে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ মানুষ এই আইনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করে। এর ফলে জনসমক্ষে ঘোষণার ছ’ঘণ্টার মধ্যে ইউন তাঁর পদক্ষেপ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়া এবং ইউনের পশ্চাদপসরণ কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতাকে চালিত করার গুরুত্বকে দর্শায়। আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় চ্যালেঞ্জ হবে এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যা আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ফলে আনন্দিত ব্যক্তিদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সাড়া দিতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া একটি গণতন্ত্র হিসাবে নিজেকে স্থিতিশীল করলেও বিশ্বব্যবস্থা দেশটিকে শক্তিশালী ও স্থিতিস্থাপক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগোতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে সিরিয়ানদের এমন এক আন্তর্জাতিক (অ)ব্যবস্থার মধ্যে নিজেদের ভাগ্য গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়ম বা প্রতিষ্ঠান-নির্মাণের জন্য কোনও সময় নেই।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য টেলিগ্রাফ-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.