Published on May 10, 2023 Updated 0 Hours ago

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি ২০২৩ দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠছে

২০৩০ সালের মধ্যে ২‌ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে

মাত্রায় উচ্চাভিলাষী এবং অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি ২০২৩ (এফটিপি২০২৩) ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের রপ্তানি বাড়িয়ে ২‌ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার একটি পথ নির্ধারণ করেছে। এটি মোটের উপর ইতালির ২০২২–এর জিডিপি বা ভারতের ২০১৪ সালের জিডিপি–র  সমান আকারের। ২০২৩ এবং ২০৩০–এর মধ্যে রপ্তানি ২.৬ গুণ ‌বৃদ্ধির জন্য বার্ষিক বৃদ্ধির হার ১৪.৮ শতাংশে রাখার কথা ভাবা হয়েছে। এই অনুমান এই দশকের শেষ পর্যন্ত সময়কালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির প্রত্যাশার চেয়ে সামান্য বেশি। এই সময়ের মধ্যে দুই বছরে জার্মানি এবং চার বছরে জাপানকে অতিক্রম করে ভারত অবশ্য বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলেছে। বাণিজ্যনীতিটি রপ্তানির মাধ্যমে ভারতের বৃদ্ধির কাহিনিকে নতুন করে কল্পনা করে, এবং উদ্যোক্তা ও বাণিজ্যের সঙ্গে আস্থা ও সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে রপ্তানিতে গতি আনতে চায়।

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল যে বৃহৎ চিত্র কল্পনা করেছেন, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যে দৃষ্টিভঙ্গির কথা তিনি বলেন তার মতোই স্পষ্ট। এই ঘটনাটিও স্বস্তিদায়ক যে সরকারের বেশ কয়েকটি বাহু একসঙ্গে কাজ করছে এবং একই পদ্ধতি অবলম্বন করছে:‌ রপ্তানিকারীদের সঙ্গে এমনভাবে জড়িত হওয়া যেমন করদাতাদের সঙ্গে করা হয়ে থাকে। আমলারা কী রিপোর্ট দিল তার পরিবর্তে রপ্তানিকারকদের রপ্তানির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার বিষযটি সরকারের বৃহত্তর নীতিগত পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুখোমুখি বসার প্রয়োজন দূর করাও একটি চলতি প্রক্রিয়ার পরিবর্ধন, যা আয়কর বিভাগ থেকে শুরু হয়েছিল এবং যে প্রক্রিয়াকে অবশ্যই সমস্ত অনুবর্তিতা–পরিচালন মন্ত্রক পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। যেমন এফটিপি২০২৩ অনুযায়ী আমদানিকারী ও রপ্তানিকারীদের ম্যানুয়াল যাচাই–বাছাই করা আবশ্যকতার পরিবর্তে ব্যতিক্রম হিসাবে থাকবে। একইভাবে, সরকারের ‘মনোনীত সংস্থাগুলি’‌র জারি করা মূল শংসাপত্রগুলি একটি স্বপ্রত্যয়িত প্রক্রিয়ায় পরিণত হবে। এর ফলে লেনদেনের খরচ কমবে বলে এই নীতিতে বলা হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুখোমুখি বসার প্রয়োজন দূর করাও একটি চলতি প্রক্রিয়ার পরিবর্ধন, যা আয়কর বিভাগ থেকে শুরু হয়েছিল এবং যে প্রক্রিয়াকে অবশ্যই সমস্ত অনুবর্তিতা–পরিচালন মন্ত্রক পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।

আগের শিল্পনীতি ১৯৯১–এর বিবৃতি জারির সময়ে অনুমতি না–দেওয়া পর্যন্ত সব কিছু সীমাবদ্ধ থাকত। এখনকার নিয়ন্ত্রণের কথা বলা না–হলে সবকিছু উন্মুক্ত বলে গণ্য হওয়ার ধারাটি কিন্তু স্পষ্ট করে দেয় যে কী কী নিষিদ্ধ, সীমায়িত বা রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়িক উদ্যোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যাই হোক, যদিও নীতিটি অন্য নীতিসমূহের সঙ্গে সংযোগের ক্ষেত্রে একীভূত করা হয়েছে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। নীতিটি রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়িক উদ্যোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ আইটেমগুলির একটি তালিকা পেতে একটি ওয়েব লিঙ্ক (‘‌ডাউনলোডস’‌) নির্দেশ করে, কিন্তু একজন সাধারণ বিশ্লেষক এটি খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন না।

ভৌগোলিক বিশেষীকরণ  কমার্স

‘‌ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান প্রোডাক্ট’‌ প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ভৌগোলিক বিশেষীকরণ প্রণোদনাকে এফটিপি২০২৩–এর মধ্যে একীভূত করা হয়েছে। যে শহরগুলি ৭৫০ কোটি ভারতীয় রুপি (৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা তার বেশি মূল্যের পণ্য উৎপাদন করবে তারা রপ্তানি শ্রেষ্ঠত্বের শহর (টিইই) হিসাবে বিজ্ঞাপিত হবে৷ এই শহরগুলি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে অগ্রাধিকার পাবে। এই নীতিটি তাঁত, হস্তশিল্প ও কার্পেটের রপ্তানি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিদ্যমান ৩৯–এর সঙ্গে চারটি নতুন শহর (ফরিদাবাদ, মির্জাপুর, মোরাদাবাদ ও বারাণসী) টিইই হিসাবে মনোনীত হওয়ায় সংখ্যাটি এখন মোট ৪৩–এ পৌঁছলেও এর বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করে জেলাগুলিকে পণ্যনির্দিষ্ট রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করার নীতির লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিতভাবে এটি ছোট উদ্যোগ ও কৃষকদের বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করার আশা রাখে। আমরা জানি না এটি কীভাবে বিকশিত হবে:‌ কৃষকেরা বৃদ্ধির যাত্রায় যোগ দেবেন না কি অতীতের মধ্যে আবদ্ধ থাকবেন, তা দেখার বিষয়।

‘‌ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান প্রোডাক্ট’‌ প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ভৌগোলিক বিশেষীকরণ প্রণোদনাকে এফটিপি২০২৩–এর মধ্যে একীভূত করা হয়েছে।

২০৩০ সালের মধ্যে ই–কমার্স রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ২০০–৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ধার্য করার ক্ষেত্রে অনুমানটি এত বড় একটি পরিসর যে তা প্রায় অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টি মাথায় রেখে এফটিপি২০২৩ বহু ই–কমার্স হাব এবং সেগুলির অর্থপ্রাপ্তির ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা, হিসাবনিকাশ, রিটার্ন নীতি, ও রপ্তানিযোগ্যতার মতো অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলির জন্য রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এর জন্য আরও গভীর এবং আরও গুরুতর চিন্তার প্রয়োজন, এবং নথিটি থেকে মনে হয় একটি ‘‌কমপ্রিহেনসিভ ই–কমার্স পলিসি’‌ আসতে চলেছে। ভবিষ্যতের ই–কমার্স সরবরাহ করার জন্য তৈরি থাকতে হলে ভারতের একটি ভবিষ্যৎমুখী ও অভিযোজিত নীতি প্রয়োজন। এফটিপি২০২৩ এই বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়।

আগামী সাত বছরে ১২ শতাংশ নামমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি (৭–৮ শতাংশ প্রকৃত বৃদ্ধি এবং ৪–৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হার) অনুমান করে ভারতের জিডিপি ২০৩০ সালের মধ্যে ৩.৩১ ট্রিলিয়ন থেকে বেড়ে ৭.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়া উচিত। এফটিপি২০২৩ এই সময়ের মধ্যে রপ্তানি ৭৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২ ট্রিলিয়ন করার কথা বলে। অন্যভাবে বললে শুধু রপ্তানি বৃদ্ধিই প্রত্যাশিত নয়, জিডিপির শতাংশ হিসাবে তার অংশও ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ৪ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি সম্ভব। কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করে কীভাবে ভারত বৈশ্বিক রপ্তানির হাব হয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে দর–কষাকষি করতে পারবে, এবং কর্পোরেট উদ্বাস্তুরা যখন চিন থেকে ভারতে চলে আসছে সেই সময় সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাত থেকে ভারত কতটা লাভবান হতে পারবে সেই বিষয়গুলির উপর। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য ২৭ শতাংশ একটি প্রতিযোগিতামূলক সংখ্যা, কারণ বৈশ্বিক গড় হল ২৮.৯ শতাংশ;‌ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই অঙ্কটি হল ১০.৯ শতাংশ, চিনের ক্ষেত্রে ২০.০ শতাংশ,  জাপানের ১৮.৪ শতাংশ আর জার্মানির ব্যতিক্রমী ৪৭.০ শতাংশ।

তবে বিশ্বের সব চেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে জিডিপিতে রপ্তানির শতাংশ বাড়ানোর জন্য দুটি স্তম্ভের প্রয়োজন। প্রথমত, রপ্তানির সংমিশ্রণ। পেট্রোলিয়াম পণ্য, মূল্যবান পাথর এবং ওষুধের ফর্মুলেশন হল ভারত থেকে শীর্ষ তিনটি রপ্তানি, যেগুলি নীচের (লোহা ও ইস্পাত বা সোনা) থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, এবং অটোমোবাইল ও মোবাইল ফোনের মতো আরও বেশি মূল্য সংযোজিত পণ্যের থেকে চাপের সম্মুখীন হবে। কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হিসাবে ই–কমার্সও উঠে আসতে পারে।

আমদানির ভূ–রাজনৈতিক দাবার বোর্ড যেমন ভারতের তেলের শীর্ষ রপ্তানিকারক করে তুলেছে রাশিয়াকে, তেমনই এমন ভবিষ্যতের কল্পনা করা অসম্ভব নয় যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)–এর পরে আরও নতুন রপ্তানি বাজার বিকশিত হবে, বিশেষ করে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, ও আফ্রিকায়।

এবং দ্বিতীয়ত, রপ্তানির গন্তব্য। আমদানির ভূ–রাজনৈতিক দাবার বোর্ড যেমন ভারতের তেলের শীর্ষ রপ্তানিকারক করে তুলেছে রাশিয়াকে, তেমনই এমন ভবিষ্যতের কল্পনা করা অসম্ভব নয় যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)–এর পরে আরও নতুন রপ্তানি বাজার বিকশিত হবে, বিশেষ করে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, ও আফ্রিকায়। এবং তারপরে আছে ছোট দেশগুলির একটি পরিপূর্ণ গোষ্ঠী, যা সম্মিলিতভাবে ভারতের ই–কমার্স রপ্তানির দিকনির্দেশে ওজন যোগ করতে এবং প্রভাবিত করতে পারে, যেমন দক্ষিণ আমেরিকা। ২০৩০ সালের মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা আজ দুঃসাহসী মনে হতে পারে, কিন্তু ভারতের বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা এবং এই বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্তর্নিহিত নীতির কারণে এই সংখ্যাটি দৃশ্যমান এবং সম্ভব।

অবশেষে বলতে হয়, বাণিজ্যমন্ত্রী হিসাবে গয়াল শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উন্নতি বিভাগেরও তত্ত্বাবধান করেন, যেখানে কিছু চমৎকার উদ্যোগ চলছে। যেমন, জন বিশ্বাস (বিধানের সংশোধনী) বিল, ২০২২, বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক অনুবর্তিতা ডিক্রিমিনালাইজ করে এবং ভারতে ব্যবসা করা সহজতর করে তোলে। বাণিজ্যমন্ত্রক এইভাবে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বাণিজ্যে পরিবর্তনের জন্য একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে। এই উভয় পরিবর্তনকে একসঙ্গে দেখলে আমরা আশা করতে পারি একটি শুভচক্রের সৃষ্টি হবে:‌ ব্যবসা করা সহজতর হলে তা দেশীয় ও বৈশ্বিক পুঁজিকে আকৃষ্ট করবে, মূলধন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে ও বৃদ্ধি ঘটাবে, এবং এর একটি বড় অংশ রপ্তানিতে যাবে, যার ফলে নতুন কলকারখানা সম্প্রসারণের জন্য আরও মূলধন আকর্ষিত হবে। যদি এই অনুমানগুলি সফল হয়, গয়াল লাড্ডু দিয়ে উদযাপন করতে পারেন; লঙ্ঘিত হলেও তিনি পেড়া বিলি করতে পারেন, এবং দুটোই রপ্তানির ওজন বাড়াতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.