উত্তর কোরিয়া ও চিন সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে প্রেরণা জুগিয়েছে
পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি ও ইতিহাস গত শতাব্দীগুলিতে অশান্ত থেকেছে। সংস্কৃতিতে অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও মূলত অশান্ত রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে দেশগুলি বিভক্ত হয়ে ছিল। জাপানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক জাপানের নৃশংস উপনিবেশবাদের ইতিহাসের কারণে মলিন হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্পর্কের অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও সম্পর্কটি সর্বদা ‘কমফর্ট উইমেন’ ও যুদ্ধকালীন শ্রম সমস্যাগুলির কারণে হোঁচট খেয়েছে। এগুলি তাদের সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি এবং চিনা অর্থনীতির উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা ও ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের দুঃসাহসিকতার মধ্যেও। তারপর কীভাবে চিন ও উত্তর কোরিয়ার প্রতি তাদের পারস্পরিক কৌশল এবং তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উষ্ণতাদক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলনের দিকে চালিত করেছে সে বিষয়ে এই নিবন্ধটি আলোকপাত করেছে।
জাপান ও আরও কে–র মধ্যে উচ্চপর্য়ায়ের দ্বিপাক্ষিক সফর
Timeline
Number of visits by ROK’s President to Japan
Number of visits by Japan’s Prime Minister to ROK
Number of visits by ROK’s Foreign Ministers Visit to Japan
Number of visits by Japan’s Foreign Minister to ROK
2003-2008
5
6
7
4
2008-2013
3
5
5
5
2013-2018
0
0
4
3
2018-2023
1
0
1
0
সূত্র: এমওএফএ
২০২৩ সালের মার্চের সাম্প্রতিক শীর্ষ বৈঠকটি ১২ বছরে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে প্রথম বৈঠক, এবং সেখানে উত্তর কোরিয়ার হুমকি এবং চিনকে নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ মোকাবিলার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। শীর্ষ বৈঠকের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা উভয় দেশের নেতাদের ঘন ঘন সফরের মাধ্যমে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এমন একটি নতুন অধ্যায় শুরুর ওপর জোর দেন যা আনুষ্ঠানিকতায় আবদ্ধ নয়। কিশিদা যোগ করেছেন যে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এখন উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির পটভূমিতে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা আলোচনা পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করেছে, এবং উভয়েই একটি‘অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিক’ (এফওআইপি)–এর তাৎপর্য তুলে ধরছে।
২০২২ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন সক্রিয়ভাবে পুনর্মিলনের জন্য জোর দিচ্ছে, এবং সিনিয়র স্তরের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের গতি বজায় রেখেছে। অবশ্য মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্রের মতে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক অগ্রগতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নয়, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ফলাফল। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক পুনর্মিলন মূলত উত্তর কোরিয়ার বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক সামরিক অবস্থান, এবং তাইওয়ান প্রণালীতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সহ ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা উদ্বেগ দ্বারা চালিত হয়েছে। উভয় দেশ তাইওয়ান প্রণালী ও ইন্দো–প্যাসিফিককে তাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, এবং তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করার সময়েও দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় নিবিড়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। একইভাবে, সংশোধিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের মতো আগ্রাসী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে জাপানও তাদের লক্ষ্যের ইঙ্গিত দিয়েছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক পুনর্মিলন মূলত উত্তর কোরিয়ার বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক সামরিক অবস্থান, এবং তাইওয়ান প্রণালীতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সহ ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা উদ্বেগ দ্বারা চালিত হয়েছে।
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক কর্মকর্তার মতে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে উত্তর কোরিয়ার হুমকির বিষয়ে আরও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছে, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিন ও ইউক্রেন সহ অন্য বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় দক্ষিণ কোরিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সমন্বিত কোয়াডের কাছাকাছি আনতে।ইউন বলেছেন যেসিওল বর্তমানে কোয়াডের ওয়ার্কিং গ্রুপে জড়িত থাকার মাধ্যমে সহযোগিতার কথা বিবেচনা করছে, যা ভ্যাকসিন উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তবে তিনি কোয়াডের সদস্যপদ গ্রহণের কোনও অভিপ্রায় প্রকাশ করেননি। ইতিমধ্যে, ‘যুদ্ধকালীন বাধ্যতামূলক শ্রম’ সম্পর্কিত সাম্প্রতিক চুক্তি একটি উল্লেখযোগ্য ছাড় হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে, যেটির তিনটি দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অগ্রগতিতে একটি মাইলফলক হিসাবে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তীতে,তিন দেশের কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে মিলিত হনসামরিক তথ্য আদান–প্রদানের সুনির্দিষ্ট বিশদ নিয়ে আলোচনার জন্য।
বিবাদ কাটিয়ে ওঠা থেকে উষ্ণ বন্ধন পর্যন্ত
দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ নিষ্পত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়া উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করার পরে সম্পর্কের ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা জাপানের ঔপনিবেশিক শাসনের (১৯১০–১৯৪৫) সময়কালীনবলপূর্বক শ্রমের শিকারদের ক্ষতিপূরণ দেবে। জাপানি সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করার পরিবর্তে বেসরকারি কোরীয় সংস্থাগুলির অর্থায়নে একটি পাবলিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই কাজ করা হবে। এই পদক্ষেপ জাপান ও ওয়াশিংটন দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দুই দেশের নেতারাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসারিত করতে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে যৌথ অংশীদারি জোরদার করার জন্য অসংখ্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ২০১৯ সালের পর২০২২ সালের সেপ্টেম্বরেইউন ও কিশিদা রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের সভার সময় প্রথম শীর্ষ বৈঠক করেন, এবং সেখানে দুই নেতা তাঁদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করতে সম্মত হন।
জাপানের ঔপনিবেশিক দখলদারির বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিবাদের স্মরণে ইউনের ১ মার্চ ২০২৩ সালের ভাষণে এই সম্প্রীতির আভাস দৃশ্যমান ছিল। তিনি বলেছিলেন যে জাপান তার ঔপনিবেশিক আগ্রাসী মানসিকতার বাইরে বেরিয়ে এসেছে, এবং একই রকম সর্বজনীন মূল্যবোধের অংশীদারে পরিণত হয়েছে। তিক্ত সম্পর্ক শুধু চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করানোর জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রয়াসকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং চিনের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত উচ্চ–প্রযুক্তির সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির জন্য দুই মার্কিন মিত্রের প্রয়াসকেও বাধাগ্রস্ত করছে। ইউন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে উচ্চ–প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলে তাদের মধ্যে সহযোগিতা অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তবে ইউন জোর দিয়ে বলেছিলেন যে এই প্রচেষ্টাগুলি বেজিংয়ের অংশগ্রহণকেও অন্তর্ভুক্ত করবে। তিনি বলেন যে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা হলে তা শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় অবদান রাখবে না, বরং চিনের সঙ্গে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও সহায়তা করবে।বেজিং দ্রুত এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেএবং জাপান–দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কের উন্নতি আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি উন্নীত করবে বলে আশা প্রকাশ করেও বিভিন্ন দেশের মধ্যে ‘একচেটিয়া এবং বদ্ধ গোষ্ঠী’ তৈরি করা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। চিন এখন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার জন্য একটি ত্রিপক্ষ শীর্ষ বৈঠক চাইছে বলেখবরএসেছে।
তিক্ত সম্পর্ক শুধু চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করানোর জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রয়াসকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং চিনের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত উচ্চ–প্রযুক্তির সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির জন্য দুই মার্কিন মিত্রের প্রয়াসকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
তবে জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হলেও কোরীয়রা তা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেননি।সাম্প্রতিক একটি গ্যালপ পোল দেখায়যে সে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনার বিরোধী। তার উপর কিছু সমালোচক অভিযোগ করেছেন যে ইউন চিন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে একটি শীতল যুদ্ধের মানসিকতা গ্রহণ করেছেন, যার ফলে দক্ষিণ কোরিয়া আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। কোরিয়ান ন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাটিক অ্যাকাডেমির প্রাক্তন চ্যান্সেলর কিম জুন–হিউংবলেছেন যে ‘সিওল নিজেকে জোটবদ্ধ করছে এবং ঠান্ডা যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে’, যা একটি আরও উল্লেখযোগ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ তাইওয়ানে সংঘাত দেখা দিলে দক্ষিণ কোরিয়া তাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউন প্রশাসন দেশীয় শ্রোতাদের বোঝাতে আগ্রহী যে এই বিষয়টি জাপানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং উদার গণতন্ত্রের বৃহত্তর জোটের অঙ্গ। নিঃসন্দেহে আরও কিছু বিষয়ের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে চিনের সাম্প্রতিক আগ্রাসন ও কর্তৃত্বপূর্ণ অবস্থান, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে হুমকির পুনরাবৃত্তি, এবং হংকংয়ের বিক্ষোভ নৃশংসভাবে দমন এই সহযোগিতার মঞ্চ তৈরি করেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সমৃদ্ধ হবে কিনা তা বলার সময় এখনও আসেনি, কারণ ঔপনিবেশিক অতীত উভয় রাষ্ট্রকে তাড়িত করবে, যা এই সহযোগিতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.