Author : Bart des

Published on Aug 14, 2023 Updated 22 Days ago

ইফ–ক্যাপ অর্থায়নের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে যা জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য এডিবি–র সক্ষমতা বাড়াবে

নতুন অর্থায়ন ব্যবস্থা এশিয়ায় জলবায়ু কর্মসূচির জন্য ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করতে পারে

বিশ্বজোড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রচেষ্টার জয় বা পরাজয় নির্ধারিত হবে এশিয়ায়, যেখানে বিশ্বের জনসংখ্যার তিন–পঞ্চমাংশ এবং কিছু দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতি রয়েছে। এছাড়াও এশিয়া শক্তির একটি ক্রমবর্ধমান বৃহৎ ভোক্তা, যার বড় অংশের উৎস জীবাশ্ম জ্বালানি। এই অঞ্চলটি এখন বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস নির্গমনের প্রায় ৪৫ শতাংশের জন্য দায়ী

একই সময়ে এশিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের জন্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের মতে, শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ ক্রমবর্ধমান জলস্তর এই অঞ্চলের প্রায় এক বিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করবে, এবং এশিয়াতেই ঘটবে বিশ্বের বেশিরভাগ দুর্যোগজনিত স্থানচ্যুতি, যা মূলত পরিবেশগত ও আবহাওয়া–সম্পর্কিত ঘটনাগুলির কারণে ঘটে।

ইফ–ক্যাপ প্রবর্তন

এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও প্রশমনে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে, কিন্তু চ্যালেঞ্জের বিশালতায় সাড়া দেওয়ার জন্য তা যথেষ্ট দ্রুত এগোচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে এটি অত্যন্ত স্বাগত জানানোর মতো খবর যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) বেশ কয়েকটি সরকারি অংশীদারের সঙ্গে মিলে এমন একটি অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা এই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনেক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ জোগাড় করতে পারবে। এটির নাম ইনোভেটিভ ফিনান্স ফেসিলিটি ফর ক্লাইমেট ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক ফিন্যান্সিং পার্টনারশিপ ফেসিলিটি (ইফ–ক্যাপ)। এডিবি এই নতুন ব্যবস্থার বর্ণনা দিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে।

এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও প্রশমনে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে, কিন্তু চ্যালেঞ্জের বিশালতায় সাড়া দেওয়ার জন্য তা যথেষ্ট দ্রুত এগোচ্ছে না।

ম্যানিলা–ভিত্তিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এমডিবি) এই ইফ–ক্যাপ–এর জন্য সামগ্রিক আকারে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তোলার পরিকল্পনা করেছে। ইফ–ক্যাপ একটি গ্যারান্টি মেকানিজম তৈরি করে কাজ শুরু করছে, যেখানে অর্থায়নকারী অংশীদারদের থেকে আসা প্রতি মার্কিন ডলার গ্যারান্টির থেকে সমগ্র এশিয়া জুড়ে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন প্রকল্পের জন্য ৫ মার্কিন ডলারের নতুন ঋণ সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকবে। এই অর্থ দিয়ে এশিয়ায় জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের কাজ চলবে।

এই ধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে এডিবি শেষ পর্যন্ত জলবায়ু সক্রিয়তার জন্য ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত তহবিল তৈরি করতে পারে। এই পরিসংখ্যানটিকে পরিপ্রেক্ষিতে রাখলে আমরা দেখতে পাই যে ২০২২ সাল পর্যন্ত সমস্ত ক্রিয়াকলাপের জন্য এডিবি–র নিজস্ব সংস্থান থেকে মোট আর্থিক প্রতিশ্রুতি ছিল ২০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইফ–ক্যাপ এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য এডিবি–র সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। এই সুবিধা তৈরির অর্থ হল এই যে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে এডিবি–ই প্রথম এগিয়ে এসে আর্থিক উদ্ভাবনের ব্যবহার সম্প্রসারণের জন্য এমডিবি বিনিয়োগ ক্ষমতা নিয়ে জি২০ বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সুপারিশে সাড়া দিল।

ইফ–ক্যাপ–এর বিভিন্ন দিক

ইফ–ক্যাপ জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন প্রকল্পের জন্য সম্পদ একত্র করতে একটি আমব্রেলা মেকানিজম হিসাবে কাজ করবে। এই ছাতার নীচে অবস্থিত ইফ–ক্যাপ গ্যারান্টি ট্রাস্ট ফান্ড ঋণশোধের কিস্তি দিতে ব্যর্থতার জন্য এডিবি–কে গ্যারান্টি প্রদান করবে। এডিবি–র সার্বভৌম ঋণের পরিমাণের এক একটি পোর্টফোলিওর গ্যারান্টি সেই পোর্টফোলিওতে বরাদ্দ করা এডিবি–র চলতি মূলধনের কিছু অংশকে মুক্ত করে দেবে। মুক্ত মূলধন তখন এডিবিকে নতুন সার্বভৌম ও অ–সার্বভৌম (বেসরকারি ক্ষেত্রে) জলবায়ু ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেবে। সুবিধাটি পাঁচ বছরের বিনিয়োগের মেয়াদে প্রকল্পগুলিকে অর্থায়ন করবে, তবে গ্যারান্টিগুলি ২৫ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।

ইফ–ক্যাপ একটি বহু–দাতা অনুদান ট্রাস্ট তহবিলকেও অন্তর্ভুক্ত করে, যা প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং প্রকল্পগুলির অনুদানের উপাদানগুলিকে সমর্থন করবে। অর্থায়নকারী অংশীদারেরা ইফ–ক্যাপ অনুদান ট্রাস্ট ফান্ডে নগদ অনুদান প্রদান করবে প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে প্রকল্প প্রস্তুতি, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জ্ঞান সমাধানের অর্থায়নের জন্য। প্রকল্পগুলির অর্থায়ন বা উচ্চ–প্রভাবযুক্ত জলবায়ু প্রকল্পের খরচ ও ঝুঁকি কমাতেও এই অনুদান ব্যবহার করা যেতে পারে।

এডিবি এছাড়াও ইফ–ক্যাপ–এর উদ্দেশ্য ও সুযোগকে সমর্থন জোগানোর জন্য তৈরি করবে দাতাদের ট্রাস্ট তহবিল, কাঠামো নির্মাণ, এবং অন্যান্য ধরনের অর্থায়ন অংশীদারিত্ব, যেমন অনুদান, গ্যারান্টি ও অন্যান্য অনুরূপ ব্যবস্থা।

এডিবি এছাড়াও ইফ–ক্যাপ–এর উদ্দেশ্য ও সুযোগকে সমর্থন জোগানোর জন্য তৈরি করবে দাতাদের ট্রাস্ট তহবিল, কাঠামো নির্মাণ, এবং অন্যান্য ধরনের অর্থায়ন অংশীদারিত্ব, যেমন অনুদান, গ্যারান্টি ও অন্যান্য অনুরূপ ব্যবস্থা। ইফ–ক্যাপ প্রতিটি ট্রাস্ট তহবিলে সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে, এবং ইফ–ক্যাপ–এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত বা তার আওতায় আসা অন্যান্য অর্থায়ন অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা (গ্যারান্টি সহ) থেকে অবদান গ্রহণ ও পরিচালনা করবে।

এই ব্যবস্থার বেশিরভাগ অবদানই আসবে গ্যারান্টি বা অনুদানের আকারে। কোন সরকারগুলি ইফ–ক্যাপে অবদান রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (বা চিন্তা করছে), তা ইফ–ক্যাপ–এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে বক্তার তালিকা থেকে বোঝা যেতে পারে। এই ইভেন্টটি চলতি বছরের মে মাসে কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে অনুষ্ঠিত হয়। ডেনমার্ক, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, তাইল্যান্ড, সুইডেন, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিকারিকরা উদ্বোধনে যোগদান করেছিলেন।

কাঠামো ও কাজের প্রক্রিয়া

সমস্ত উন্নয়নশীল দেশ যারা এডিবি থেকে সহায়তা পাওয়ার যোগ্য, তারা ইফ–ক্যাপ থেকেও সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। ডোনার কমিটির (‌পরে বিবরণ দেওয়া আছে)‌ সঙ্গে সম্মত মানদণ্ডের ভিত্তিতে এডিবি প্রকল্প প্রস্তাবগুলি নির্বাচন করবে। সাধারণভাবে, প্রকল্পগুলি প্যারিস চুক্তি এবং প্রাসঙ্গিক এডিবি কৌশল ও নীতিগুলির মূল উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

সার্বভৌম ও অ–সার্বভৌম উভয় ধরনের প্রকল্পই ইফ–ক্যাপ তহবিলের সুযোগ নিতে পারবে, যদি না ডোনার কমিটি অন্য সিদ্ধান্ত নেয়। ইফ–ক্যাপ সহায়তাকে অন্যান্য এডিবি সংস্থান ও দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সহায়তার সঙ্গে সম্মিলিত করা যেতে পারে, এবং কেন্দ্রীয় ও উপরাষ্ট্রীয় সরকার, সরকারি সংস্থা, বেসরকারি ক্ষেত্র ও এডিবি থেকে সহায়তা পাওয়ার যোগ্য অন্যান্য সংস্থার কাছে তা উপলব্ধ করা যেতে পারে।

একটি কৌশলগত অংশীদার ফোরাম উপলব্ধ তহবিলের সঙ্গে জলবায়ু ও উন্নয়নের চাহিদাগুলিকে সারিবদ্ধ করার লক্ষ্যে ইফ–ক্যাপ অপারেশনগুলিতে কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিনিধি, অর্থায়নকারী অংশীদার এবং অন্য অংশীদারদের বার্ষিক ভিত্তিতে একত্র করবে। কৌশলগত অংশীদার ফোরামে উন্নয়নশীল দেশের একজন প্রতিনিধি এবং অর্থায়নকারী অংশীদারদের একজন প্রতিনিধি কো–চেয়ার হিসাবে থাকবেন।

ইফ–ক্যাপ সহায়তাকে অন্যান্য এডিবি সংস্থান ও দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সহায়তার সঙ্গে সম্মিলিত করা যেতে পারে, এবং কেন্দ্রীয় ও উপরাষ্ট্রীয় সরকার, সরকারি সংস্থা, বেসরকারি ক্ষেত্র ও এডিবি থেকে সহায়তা পাওয়ার যোগ্য অন্যান্য সংস্থার কাছে তা উপলব্ধ করা যেতে পারে।

ইফ–ক্যাপ–এর কাঠামোতে আর্থিক অবদানকারীদের একটি কমিটি (ডোনার কমিটি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যে কমিটি নির্দিষ্ট গ্যারান্টি ও অনুদান তহবিল, ইফ–ক্যাপ কাঠামো ও শাসন সহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ডোনার কমিটি ইফ–ক্যাপ পরিচালনার জন্য সাধারণ কাঠামো নির্ধারণ করলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জড়িত হবে না, যেমন পৃথক প্রকল্প নির্বাচন বা প্রক্রিয়াকরণ। এটি তার দায়িত্ব পালনে কৌশলগত অংশীদার ফোরামের নির্দেশনা বিবেচনা করবে। এডিবি ডোনার কমিটির সভাপতিত্ব করবে, এবং ইফ–ক্যাপ–এর অর্থায়নকারী অংশীদারদের একজন সহ–সভাপতিত্ব করবে। অবশিষ্ট অর্থায়ন অংশীদাররা হবে দাতা কমিটির সদস্য বা পর্যবেক্ষক।

ইফ–ক্যাপ–এর ৫ বছরের বিনিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ইফ–ক্যাপ বিনিয়োগগুলি চালিয়ে যাবে, না বন্ধ করে দেবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ডোনার কমিটি৷ ডোনার কমিটির সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও দ্বিপাক্ষিকভাবে বা ইফ–ক্যাপ গ্যারান্টি ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে অর্থায়নকারী অংশীদারদের জারি করা গ্যারান্টিগুলি নির্ধারিত ২৫ বছরের মেয়াদ শেষ না–হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, যদি না অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।

ইফ–ক্যাপ অর্থায়নের একটি মূল বাহন হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দিয়ে এডিবি ২০১৯–২০৩০ সালের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু অর্থায়নে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনের পূর্বঘোষিত উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য পূরণ করতে পারে, এবং সম্ভবত অতিক্রম করেও যেতে পারে। এটি অন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুরূপ জলবায়ু আর্থিক সুবিধা তৈরিতে অনুপ্রাণিত ও অবহিত করতে পারে।


বার্ট এডেস কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের একজন বিশিষ্ট ফেলো এবং ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের একজন অধ্যাপক।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.