Author : Nilanjan Ghosh

Published on Jan 19, 2023 Updated 0 Hours ago

শুধুমাত্র শক্তি রূপান্তর সবুজ রূপান্তরের ভিত্তি হতেপারে না; বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের ক্ষেত্রে আরও সামগ্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার

সবুজ অর্থায়নের মাধ্যমে সবুজ রূপান্তরের একটি নতুন চিত্র: কপ২৭ থেকে প্রত্যাশা

এই প্রতিবেদনটি কমন বাট ডিফারেনশিয়েটে রেসপন্সিবিলিটি: ফাইন্ডিং ডিরেকশন ইন কপ২৭ সিরিজের একটি অংশ


‘সবুজ রূপান্তর’-এর ধারণাটি এখনও পর্যন্ত বিশ্বের বৃহৎ অংশে শুধুমাত্র শক্তির পরিবর্তনের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে। এর অর্থ হল, চিরাচরিত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে দিক পরিবর্তন করে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি-মিশ্রণ পরিবর্তন। কিন্তু শুধুমাত্র শক্তির রূপান্তরই যে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার সমাধান করবে না, সেই অন্তর্নিহিত সত্য সবুজ রূপান্তরের এই সুস্পষ্ট হ্রাসবাদী দৃষ্টান্তের পটভূমির নেপথ্যে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে।

মানবতার লাগামহীন উন্নয়ন-উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং নগরায়ণের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তি ভৌত পরিকাঠামো তৈরির জন্য প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র (যেমন অরণ্য, তৃণভূমি এবং উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র) থেকে ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তনকে চালিত করে। এটি কেবল অতিরিক্ত কার্বন পৃথগীকরণের জন্য এই জাতীয় প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষমতাকেই নয়, বরং এর কার্বন মজুত করার ক্ষমতাকেও হ্রাস করে। এর পাশাপাশি ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক ভাবে মজুত কার্বন মুক্ত হয়, যার ফলে বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক পরিষেবা বাধাগ্রস্ত হয়। নীতিনির্ধারক ব্যবস্থা (প্রধানত গ্লোবাল সাউথে) এই সত্যের প্রতি সম্ভবত উদাসীন যে, এই ধরনের ক্ষতি শুধুমাত্র শক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমেই প্রতিস্থাপন করা সম্ভব না। বরং অনিয়ন্ত্রিত ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তন, যা প্রাকৃতিক সম্পদকে ভৌত সম্পদ দ্বারা প্রতিস্থাপন করে, তা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার থেকে পাওয়া ইতিবাচক প্রভাবকে ব্যর্থ করে দেয়।

মানবতার লাগামহীন উন্নয়ন-উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং নগরায়ণের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তি ভৌত পরিকাঠামো তৈরির জন্য প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র (যেমন অরণ্য, তৃণভূমি এবং উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র) থেকে ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তনকে চালিত করে।

সুতরাং প্রশমন-প্রকল্পগুলিকে শুধুমাত্র শক্তির মিশ্রণ পরিবর্তনের মাধ্যমে দেখা উচিত নয়। যেমন, বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনার দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবাগুলির অনুপস্থিত মাত্রা (অর্থাৎ মানবসমাজের জন্য প্রকৃতি যে পরিষেবাগুলি বিনামূল্যে দেয়)। এর দু’টি অর্থ রয়েছে। প্রথমত, আলোচনার টেবিলে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে প্রকৃতির ক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞতা বিদ্যমান। দ্বিতীয়ত, কোনও আলোচনাই মানবজীবনে বাস্তুতন্ত্র যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা স্বীকার করে না। বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবার গুরুত্ব ২০০৯ সালে পবন সুখদেব ‘দরিদ্রদের জিডিপি’ হিসাবে ব্যাখ্যা করে তুলে ধরেন। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছে যে, ভারতে দরিদ্রদের আয়ের ৫৭ শতাংশ প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায়। বাস্তুতান্ত্রিক নির্ভরতা অনুপাতের সাম্প্রতিক অনুমান (বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবাগুলির আর্থিক মূল্য এবং সম্প্রদায়ের আয়ের অনুপাত) প্রকাশ করেছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অংশে অনুপাতটি ঐক্যের চেয়ে বেশি। এটি দর্শায় যে, বাস্তুতন্ত্র-নির্ভর দরিদ্র সম্প্রদায় অর্থনীতির তুলনায় প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র থেকে বেশি সুবিধা লাভ করে। সুতরাং, ব্যাপক ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তন বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবাগুলির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা দরিদ্রদের মঙ্গলকে বাধা দান করে। অন্য দিকে, বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো শক্তিগুলিও এই বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবাগুলিকে বাধা দেয় (যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশ মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতাকে নষ্ট করে)।

এ প্রসঙ্গে আর একটি উদ্বেগের কথা তুলে ধরা দরকার। গ্লোবাল সাউথের একাধিক অংশে প্রশমন কার্যক্রম সহায়ক হবে না, তাদের মানিয়ে নিতে হবে। তবে প্রশমন প্রকল্পে অর্থায়নের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও অভিযোজনের ক্ষেত্রে অর্থায়নের সুযোগ সীমিত। এটি প্রশমন কার্যক্রমের পক্ষে একটি সহজাত তহবিল পক্ষপাত সৃষ্টি করেছে। সুতরাং ‘সবুজ অর্থায়ন’ শব্দবন্ধটি ‘সবুজ রূপান্তর’-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট হয়েছে এবং এটি মূলত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পে অর্থায়নের দিকে মনোনিবেশ করেছে। অর্থাৎ অভিযোজন এমন একটি কার্যক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে যা গ্লোবাল সাউথের জন্য প্রয়োজন, কিন্তু গ্লোবাল নর্থ তাকে স্বীকৃতি দেয় না।

তবে প্রশমন প্রকল্পে অর্থায়নের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও অভিযোজনের ক্ষেত্রে অর্থায়নের সুযোগ সীমিত। এটি প্রশমন কার্যক্রমের পক্ষে একটি সহজাত তহবিল পক্ষপাত সৃষ্টি করেছে।

প্রশমনের পক্ষে এবং অভিযোজনের বিরুদ্ধে এই অর্থায়ন পক্ষপাতের অন্যান্য কারণও আছে। প্রথমত, প্রশমন প্রকল্পে বিনিয়োগ (যেমন বৈদ্যুতিক যান) স্বল্পমেয়াদে উপলব্ধ আর্থিক লাভ দেয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জ্বালানি দক্ষতা বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগের সময় পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম হতে পারে। এই ধরনের খরচ সঞ্চয়ের কাজটি খুব ব্যক্তিগত পর্যায়ে ঘটে। দ্বিতীয়ত, অভিযোজন প্রকল্পে বিনিয়োগের একটি ‘জনকল্যাণমূলক’ দিক রয়েছে এবং প্রায়শই প্রস্তুতিপর্বে দীর্ঘ সময় লাগায় যার আয় অনেকাংশে চোখে পড়ে না। এ রকম একটি উদাহরণ হতে পারে ‘বাসোপযোগী জলবায়ু-প্রতিরোধী’ পরিকাঠামো, যেখানে অতিরিক্ত খরচের সুবিধা অনুভূত হবে না যদি স্বল্প সময়ের মধ্যে চরম কোনও ঘটনা না ঘটে। ‘কৌশলগত পশ্চাদপসরণ’-এর মতো অভিযোজন প্রকল্পগুলির যথাযথ গুরুত্ব না-পাওয়ার কারণটি দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতিপর্ব এবং প্রায় বুঝতে না-পারার মতো প্রভাবগুলির মধ্যে অন্তর্নিহিত। তৃতীয়ত, বেসরকারি ক্ষেত্রের বিনিয়োগ লাভের হারের দিকে নজর দেয়, যেখানে প্রায়শই অভিযোজন প্রকল্পগুলির মতো ‘জনকল্যাণমূলক’ ক্ষেত্রে অর্থায়ন লাভদায়ক হয় না। এই কারণগুলির জন্যই কপ২৭-এ গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর এখন অভিযোজন অর্থায়নের দিক থেকে ধ্বনিত হচ্ছে।

সবুজ পরিবর্তনের একটি নতুন রূপরেখা

সবুজ রূপান্তরকে শুধুমাত্র শক্তি পরিবর্তনের হ্রাসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা উচিত নয়। বরং এটি আরও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির দাবি রাখে: এটিকে একটি সবুজ অর্থনীতিতে রূপান্তর হিসাবে দেখা উচিত যা একটি জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উন্নততর জীবনযাপনের দিকে চালিত করবে। এর অর্থ আদতে কী? এটি ম্যাক্রো স্তর থেকে একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে একটি সামগ্রিক পরিবর্তনকেই বোঝায়। ২০২১ সালের ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্সে (ইউএনএফসিসিসি কপ২৬) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মিশন লাইফ’-এর ঘোষণা করেন, যার লক্ষ্য ছিল মানুষের ব্যক্তিগত আচরণকে বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রমের ধারার সঙ্গে এক সুরে বাঁধা। এটি ‘একটি গণআন্দোলনের মাধ্যমে ঐতিহ্য এবং সংরক্ষণ ও সংযমের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি স্বাস্থ্যকর এবং স্থিতিশীল জীবনযাপনের উপায়’কেই তুলে ধরে। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তন সবুজ পরিবর্তনের একেবারে নতুন চিত্রের সমতুল্য। এটি আধুনিক সমাজে আমাদের সাধারণ ভোগবাদ থেকে সরে আসাকেই বোঝায়, যা উচ্চমাত্রার ভোগ দ্বারা চিহ্নিত। অন্য দিকে, ভোগকে ভারতীয় বৃদ্ধির প্রধান চালক বলে মনে করা হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে একটি বিকাশশীল দেশ যাকে বণ্টন এবং দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তার জন্য এ কথা অপরিহার্য হয়ে ওঠে যে, দেশটির উন্নয়নমূলক প্রতিবন্ধকতাগুলি অতিক্রম করার জন্য রূপান্তরকে একটি সঠিক উপায়ে অর্থায়ন করা প্রয়োজন।

২০২১ সালের ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্সে (ইউএনএফসিসিসি কপ২৬), ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মিশন লাইফ’-এর ঘোষণা করেন, যার লক্ষ্য ছিল মানুষের ব্যক্তিগত আচরণকে বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচির ধারার সঙ্গে এক সুরে বাঁধা।

সুতরাং এই প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় হল যে, সবুজ রূপান্তরকে সমর্থন জোগানোর জন্য আমাদের সবুজ অর্থায়ন সম্পর্কিত আরও সামগ্রিক ধারণার প্রয়োজন। গ্লোবাল সাউথের জন্য সবুজ রূপান্তর নিখরচায় হবে না, বরং সেটি অত্যন্ত ‘খরচসাপেক্ষ’ এক প্রক্রিয়া, যার জন্য তার উন্নয়নমূলক প্রয়োজনগুলিকেও মূল্য চোকাতে হতে পারে। এই সমস্ত উদ্বেগ পর্যাপ্তভাবে আলোচনার টেবিলে রাখা উচিত। তার সঙ্গে সবুজ রূপান্তর এবং সবুজ অর্থায়ন উভয়েরই পুনর্নির্ধারিত বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। কপ২৭-এ কি এর সমাধান পাওয়া যেতে পারে, না কি তা শুধুমাত্র কল্পনার স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকবে?

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.