Author : Kabir Taneja

Published on Jul 30, 2024 Updated 0 Hours ago

গাজা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি বহুদেশীয় যুদ্ধ-পরবর্তী বাহিনী মোতায়েন করার পাশাপাশি হামাসের বিকল্প রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা গাজা সংঘাত নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে এক অবাস্তব সমাধান।

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় বহুদেশীয় বাহিনী মোতায়েন করার ফল ভাল না-ও হতে পারে

রায়েল এবং হামাসের মধ্যে গাজা যুদ্ধ প্রত্যাশিত ভাবে এই অঞ্চলে ব্যাপক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। অক্টোবর হামাস কর্তৃক ইরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হামলা ইজরায়েলকে হামাস গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও সামরিক অবকাঠামো নির্মূলকরার জন্য একটি পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করতে বাধ্য করেছিল। যাই হোক, রায়েলের জন্য গত সাত মাস ধরে সরাসরি জয়ের প্রতিবন্ধকতাগুলি বাড়তে থেকেছে। হামাস এখনও একাধিক ইরায়েলিকে আটক করে রেখেছে এবং অভ্যন্তরীণ ইরায়েলি রাজনীতি ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠার দরুন বিষয়গুলি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

রায়েলের সর্বকালীন মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল যুদ্ধের জন্য নয়, হামাসের বিরুদ্ধে সরাসরি বিজয়ের বিষয়ে ইরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অটল থাকার জন্যও বিকল্প খুঁজতে ব্যস্ত হয়েছে। রায়েলি নেতৃত্ব হামাসকে সম্পূর্ণ ‘নির্মূল’ করার জন্য রীতিমতো লড়াই করলেও গাজায় কোন রাজনৈতিক কাঠামোটি এই গোষ্ঠীটিকে প্রতিস্থাপন করবে, সে সম্পর্কে প্রশ্নগুলি অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে। আরব রাষ্ট্র-সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শূন্যতা পূরণের জন্য একটি বহুদেশীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের জন্য চাপ দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যাই হোক, এ বিষয়ে সাফল্য তো দূরের কথা, এ হেন এক ধারণার পিছনে একাধিক জটিলতা রয়েছে

 

রায়েলের সর্বকালীন মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল যুদ্ধের জন্য নয়, হামাসের বিরুদ্ধে সরাসরি বিজয়ের বিষয়ে ইরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অটল থাকার জন্যও বিকল্প খুঁজতে ব্যস্ত হয়েছে।

 

একটি বহুদেশীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী কাগজে কলমে সম্পূর্ণ রূপে নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিধির অধীনে গোলান হাইটস-এর মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এলাকায় শান্তিরক্ষী বাহিনী অর্থাৎ ইউনাইটেড নেশনস ডিসএনগেজমেন্ট অবজার্ভার ফোর্স (ইউএনডিওএফ) ১৯৭৪ সাল থেকে কার্যকর করা হয়েছে। যাই হোক, ইউনাইটেড নেশনসের নিরাপত্তা পরিষদ দ্বারা ইউএনডিওএফ-এর সক্রিয়করণের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অংশটি ছিল জরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে একটি রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা। সংক্ষেপে বললে, একটি রাজনৈতিক চুক্তি ছিল শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভিত্তি।

কিছু আরব রাষ্ট্র ইতিমধ্যেই এমন কোন বহুদেশীয় শক্তির অংশ না হওয়ার প্রতি জোরালো ভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে, যা ইরায়েলের স্বার্থ অনুযায়ী গাজায় তাদের উপস্থিতিকে অবৈধ বলে প্রতিপন্ন করতে পারে। তত্ত্বগত ভাবে এই ধরনের একটি বাহিনী তখনই সফল ভাবে মোতায়েন করা সম্ভব, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজে উপস্থিত থেকে এ বিষয়টির নেতৃত্ব দেয়। এটি একটি সুদূরপ্রসারী ধারণা বলে মনে হচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো একজনের জন্য তা রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল হতে পারে, যিনি বছরের শেষের দিকে একটি কঠিন নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং যাঁর বিপরীতে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একজন মানুষ যিনি ২০১৭ সালে রিয়াধে ঐতিহাসিক ভাবে আরব অংশীদারদের একই ছাতার তলায় আনতে সমর্থ হয়েছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমস্যা শুধু মাত্র নেতানিয়াহুকে সফল ভাবে আলোচনার অংশ করে তোলাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বাইডেন প্রশাসন ইজরায়েল এবং তার নিরাপত্তার পক্ষাবলম্বন করেছে। ফলে হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে গাজার শাসন ও পুনর্গঠনের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধোত্তর ধারণা বিকাশের জন্য পাশাপাশি কাজ করে চলেছে এবং একই সঙ্গে রায়েলকে জানিয়েছে যে, যদি দেশটি রাফাহ-র বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযান চালায়, তা হলে প্রদত্ত সহায়তা আর দেওয়া হবে না। যাই হোক, ব্লিঙ্কেন এ কথাও যোগ করেছেন যে, এই ধরনের যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা এখনও ইজরায়েলের তরফ থেকে আসেনি।

 

যুদ্ধের কৌশল এবং লক্ষ্য নিয়ে সামরিক ও রাজনৈতিক সংস্থার মধ্যে উত্তেজনা জনসাধারণের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা আরও ভঙ্গুর অবস্থাকেই দর্শায়।

 

হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ইরায়েলি কৌশলের গভীরতা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ইরায়েলের মাটিতেও প্রকাশ্যে উঠে আসছে। যুদ্ধের কৌশল এবং লক্ষ্য নিয়ে সামরিক ও রাজনৈতিক সংস্থার মধ্যে উত্তেজনা জনসাধারণের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা আরও ভঙ্গুর অবস্থাকেই দর্শায়। কথা মনে রাখা অপরিহার্য যে, রাষ্ট্র হিসেবে ইজরায়েলের মূল লক্ষ্য হল অপরাজেয়তার ভাবমূর্তির পুনর্নির্মাণ করা, যা দেশটি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের আগে পর্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ভাবে উপভোগ করেছিল। এটি রাজনৈতিক ভাবে টিকে থাকা, উত্তরাধিকারের জন্য নেতানিয়াহুর তীব্র ইচ্ছে দর্শানোর পাশাপাশি যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ভাবমূর্তি তৈরি হতে না দেওয়ার প্রচেষ্টা অবস্থাকে জটিলতর করে তুলেছে। যুদ্ধকালীন নেতা, কৌশলের দাবিকৃত স্বচ্ছতা এবং লক্ষ্য পূরণ না করে ত্যাগ করার সম্ভাবনা বিষয়কে আরও জটিল করে তুলেছে, যাকে নেতানিয়াহুর দুর্বলতা বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

নেতানিয়াহু সম্পর্কে রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সাম্প্রতিক প্রকাশ্য সমালোচনা এবং স্ট্রিপ সংক্রান্ত ‘ডে আফটার’ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে গাজার দীর্ঘমেয়াদি বেসামরিক বা সামরিক ইজরায়েলি নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনাগুলি যুদ্ধের দিকনির্দেশে উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ বিভাজনকেই দর্শিয়েছে। এবং সামরিক শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে বেসামরিক রাজনীতিবিদ কেবল মাত্র গ্যালান্ট নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেননি, ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি এখন পর্যন্ত স্পষ্ট ভাবে ‘ডে আফটার’ কৌশল তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ার দরুন নেতানিয়াহু ‘তীব্র সমালোচনা’ করেছেন।

 

গাজার হামাস প্রধান এবং ইরায়েলের তালিকায় কুখ্যাততম ব্যক্তিত্ব ইয়াহিয়া সিনওয়ার এখনও গাজার মধ্যেই আছেন এবং মিশর, কাতার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজা ও রায়েলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ও সেগুলি নিয়ন্ত্রণের কাজটি করছেন।

 

উপরোক্ত বিষয়গুলিকে কেউ কেউ উদ্বেগজনক বিশ্লেষণ হিসাবে তুলে ধরেছেন, কিন্তু গাজায় বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে স্বার্থহীন নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরায়েলি উভয় প্রতিবেদনেই এই সত্যটি তুলে ধরা হয়েছে যে হামাস সেই সকল অঞ্চলেই যুদ্ধাবস্থায় ফিরছে, যেগুলিকে এর পূর্বে আইডিএফ-এর তরফে হামাসমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে খান ইউনিস, জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এবং উত্তরের কিছু অন্য এলাকা। গাজার হামাস প্রধান এবং ইরায়েলের তালিকায় কুখ্যাততম ব্যক্তিত্ব ইয়াহিয়া সিনওয়ার এখনও গাজার মধ্যেই আছেন এবং মিশর, কাতার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজা ও রায়েলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ও সেগুলি নিয়ন্ত্রণের কাজটি করছেন।

অদক্ষ ভাবে নির্ধারিত বিক্ষোভ-অভ্যুত্থান বিরোধী কৌশল এবং কাঠামোগত নীল নকশা না থাকার মূল্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও চোকাতে হবে। গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানের মাটিতে তালিবানের সঙ্গে যুদ্ধ চালালেও ২০২১ সালে এক পরাজিত শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতা এবং অভ্যুত্থান বিরোধিতার কৌশলগুলি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিতর্ক চললেও এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এটি ছিল এমন এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা পেন্টাগনের অভ্যন্তরেও চাপা বিরোধের জন্ম দিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অসম্পৃক্ততা এবং হাজার হাজার মাইল দূরের দেশ অর্থাৎ আফগানিস্তান ত্যাগের সুযোগ থাকলেও, রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক কারণে রায়েলের কাছে সেই বিলাসিতার সুযোগ নেই

 

আল-কায়েদাকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার অনেক আগে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে হামাসের পরিচয় প্যালেস্টাইন-পন্থী আখ্যানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

 

হামাসের পক্ষে বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি আসলে তাদের পক্ষে কাজ করলেও যুক্তিযুক্ত ভাবে ইরায়েলি রাজনীতির মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। আল-কায়েদাকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার অনেক আগে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে হামাসের পরিচয় প্যালেস্টাইন-পন্থী আখ্যানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এমনটা পরিকল্পনা মাফিক ঘটেছে না কি ভাগ্যের বশত হয়েছে, তা অবশ্য সমালোচনার বিষয়। জনসাধারণের একাংশের মধ্যে এবং ভূ-রাজনৈতিক আখ্যানে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর পরিবর্তে বিপ্লবী গোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার দরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে তুর্কি প্রেসিডেন্টের মতো নেতারা প্রকাশ্যে হামাসকে সন্ত্রাসবাদের তকমা দিতে অস্বীকার করেছে। এটি শুধু মাত্র আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতাতেই নয়, বরং আঞ্চলিক ভাবেও এক বৃহত্তর সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই হামাসের বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত। তবে সামগ্রিক আখ্যানটি বর্তমানে গোষ্ঠীটির জন্য ইতিবাচক।

উপরোক্ত সবগুলিই একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জটিলতা বৃদ্ধি করেছে, যার মধ্যে গাজাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি বহুদেশীয় যুদ্ধ-পরবর্তী বাহিনী গঠনের ধারণা-সহ হামাসের বিকল্প রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা অন্তর্ভুক্ত। ইরায়েলের সামরিক লক্ষ্য আপাতত হামাসকে নির্মূল’ করা, ‘ডে আফটার’ কৌশল অর্জন করা জরুরি। আপাতত, নেতানিয়াহুর উপরেই সকলের নজর এসে পড়েছে, যখন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপ এবং যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

 


কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.