এই নিবন্ধটি ‘রাইসিনা এডিট ২০২৩’ সিরিজের অংশ।
বৃহৎ প্রযুক্তির প্রতি নিয়ামক বিদ্বেষ ও সুরক্ষাবাদী ডিজিটাল শিল্পনীতির পুনরুত্থানের বৈশ্বিক ঝড়ের মধ্যে অনেক ভাষ্যকারই যুক্তি দেন যে বাস্তবসম্মতভাবে দেখলে ডিজিটাল বাণিজ্যের জন্য বহুপাক্ষিক কাঠামোর ধারণাটি ভেঙে পড়েছে। অন্যরা আরও এগিয়ে বলবেন, কারণ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বৈশ্বিক লাইটহাউসের আলোকবর্তিকা ইতিমধ্যেই ম্লান হয়ে গিয়েছে। সেইসঙ্গেই, শুধু আমাদের ডিজিটাল ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেই নয়, যে কোনও বিষয়েই সরকারগুলির যৌথভাবে অভিন্ন দৃষ্টিকোণ বা একটি সাধারণ ফলাফলের পথ খুঁজে পাওয়ার আশাও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
অনেক সরকার জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে ডিকার্বনাইজেশন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ও অনস্বীকার্য বাস্তব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের আবরণের আড়ালে সুরক্ষাবাদী বাণিজ্য ও শিল্প নীতির অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, কমবেশি সব ভাষ্যকারই একমত যে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কিছু জি৭ সদস্য ডব্লিউটিও–র উপর ভরসা এবং এর সংস্কার প্রচেষ্টায় আগ্রহ হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিছু নেতৃস্থানীয় জি২০ সদস্য কখনওই এই সংস্থাকে বাস্তবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেনি, এবং এখনও দ্বিধান্বিত রয়েছে। অনেক সরকার জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে ডিকার্বনাইজেশন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ও অনস্বীকার্য বাস্তব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের আবরণের আড়ালে সুরক্ষাবাদী বাণিজ্য ও শিল্প নীতির অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উপভোক্তারা। অন্তর্ভুক্তি, কর্মী–কেন্দ্রিকতা ও সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতার জন্য আপাত বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির সময়টিতে খুব কম সরকারই দারিদ্র্যে নিমজ্জিত শত শত কোটি মানু্যের কাছে যা চাকরি ও আয় পৌঁছে দিয়েছে সেই বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষা করার জন্য কাজ করছে। এটি একটি বাস্তব এবং জরুরি বৈশ্বিক সমস্যা। অ্যাকাডেমিক ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মতাদর্শ থেকে মুক্ত এবং জাতীয় রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে স্বাধীন মনোভাব নিয়ে এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।
যে কথা প্রায়শই ভুলে যাওয়া হয় তা হল ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করে; সরকার নয়, দেশ নয়। বিশ্ব ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ইতিমধ্যেই জেনিভা যাওয়ার প্রক্রিয়া ছেড়ে দিত, যদি ডব্লিউটিও–র আলোচনার প্রক্রিয়াটি পুনরায় সক্রিয় করার সম্ভাবনা না থাকত। যখন ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব ঘটছে সেই সময় বিশেষ করে ই–বাণিজ্য/ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারিক বহুপাক্ষিক বিন্যাসে এটিকে কিকস্টার্ট করতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতি স্পষ্টতই সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই ডিজিটাল হচ্ছে। নিজস্ব ঢঙে প্রয়োজনীয় নিয়ামক ব্যবস্থাগুলি তৈরি করার জন্য সরকারগুলি যখন হিমসিম খাচ্ছে সেই সময় ডব্লিউটিও সিস্টেমের অন্তর্নিহিত নীতিগুলিকে কঠোরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সবচেয়ে বড় পরিণতি হল এই ঝুঁকি যে একটি শক্তিশালী ও সফল একাধিক–পাক্ষিক চুক্তি বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টার সমাপ্তি ঘটাবে।
সুতরাং, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আপাতত সংযুক্ত রয়েছে। বৈদ্যুতিন বাণিজ্যে জয়েন্ট স্টেটমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জেএসআই) –এর মাধ্যমে বহুপক্ষীয় আলোচনা চলছে। সেই নিরিখে অগ্রগতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আলোচনার মূল অংশীদারদের উপর নির্ভর করে, যারা ডেটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে সংলাপের জন্য আরও বেশি আগ্রহ দেখায়। অগ্রগতি মুষ্টিমেয় মূল ডব্লিউটিও সদস্যদের উপরও নির্ভর করে, যারা এই বহুপাক্ষিক আলোচনায় জড়িত হওয়া বা অনুমোদন করা থেকে সম্পূর্ণভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে, কারণ এর উল্লেখযোগ্য পরিণতিগুলি এখন নিকটবর্তী দিগন্তেই প্রদর্শিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় পরিণতি হল এই ঝুঁকি যে একটি শক্তিশালী ও সফল একাধিক–পাক্ষিক চুক্তি বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টার সমাপ্তি ঘটাবে।
ডিজিটাল বাণিজ্যে ডব্লিউটিও–তে বড় সমস্যা হল ডব্লিউটিও মোরেটোরিয়াম অন কাস্টমস ডিউটি অন ইলেকট্রনিক ট্রান্সমিশন। নিঃসন্দেহে ‘মোরেটোরিয়াম’– এর উল্লেখে নয়াদিল্লি ক্ষুব্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, এটি শেষ পর্যন্ত এড়ানো যাবে না। জি২০ হল ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ডব্লিউটিও মিনিস্টারিয়াল কাউন্সিল মিটিং (এমসি১৩)–এ মোরেটোরিয়াম নিয়ে অচলাবস্থা শেষ করার জন্য বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাটির সর্বোত্তম আশা। রাইসিনা ডায়ালগ গঠনমূলক বহু–অংশীদার কথোপকথন থেকে দূরে সরে যায় না। গত বছর, এই বছর এবং পরের বছরের জি–২০র তিনটি চেয়ার নিয়ে গঠিত ত্রয়ীর তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করা এবং বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকে বাঁচানোর ক্ষমতা আছে।
ব্যাখ্যা করে বললে, যদি জেএসআই–এর আলোচনার সমস্ত বা প্রায় সমস্ত অংশীদার ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ যৌথভাবে মোরেটোরিয়ামের একাধিক–পাক্ষিক সংস্করণে স্বাক্ষর করে, এবং যদি কয়েক মাস পরে ডব্লিউটিও মন্ত্রীরা তাঁদের পরবর্তী বৈঠকে (এমসি১৩) বিদ্যমান বহুপাক্ষিক সংস্করণ পুনর্নবীকরণ করতে ব্যর্থ হন, তারপর আমার ভবিষ্যদ্বাণী হল যে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ডব্লিউটিও–তে বিনিয়োগ করা বন্ধ করবে, কারণ তাদের জন্য আর কোনও প্রণোদনা থাকবে না।
ডিজিটাল রূপান্তর, বিশেষ করে পরিষেবা ক্ষেত্রে, এত দ্রুত ঘটছে এবং তা এতটাই সদা–বর্তমান যে ডিজিটাল বাণিজ্য দ্রুত বিশ্ব বাণিজ্যের মূল ভিত্তি হয়ে উঠছে। যদি ডব্লিউটিও প্রয়োজনীয় ভবিষ্যৎ শাসনের বিকাশ ঘটাতে না–পারে, বা এমনকি তার বর্তমান শৃঙ্খলাগুলির পুনর্নবীকরণ না করতে পারে, তবে অবশিষ্ট শেষ বহুপাক্ষিকতাবাদীরা, যাঁদের মধ্যে আমিও একজন, একটি ব্যর্থ ব্যবস্থা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন, এবং পরিণতিস্বরূপ বাজারের বিভক্ততা হ্রাস করার জন্য পরবর্তী নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করতে বাধ্য হবেন।
একটু একটু করে ডব্লিউটিও সিস্টেম হ্রাস পাবে। পদ্ধতিগত উদ্ঘাটন দ্রুত ঘটতে পারে। সবচেয়ে বড় বিপদ হল যে একটি নতুন অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা তৈরি হতে শুরু করলে একটি খণ্ডিত বিশ্ব সম্প্রদায়ের আর সর্বত্র স্টার্ট–আপ, ডিজিটালি–সক্ষম ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ ও ভোক্তাদের এই প্রক্রিয়াটির কারণে কী মূল্য দিতে হচ্ছে তার উপর দৃষ্টি থাকবে না।
আমাদের এখনও সুযোগ রয়েছে। আমাদের সকলকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, উৎপাদনশীলতা, প্রতিযোগিতা–সক্ষমতা এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রবেশের জন্য সমর্থন পুনরুদ্ধার করতে হবে, যার অর্থ ডব্লিউটিও–র জন্য সমষ্টিগত সমর্থন। ঝড়ের গর্জন সত্ত্বেও অবশ্যই ডব্লিউটিও বাতিঘরের রশ্মিকে আলোকিত রাখার দিকে শক্তিনিবেশ করতে হবে। রাইসিনা সংলাপ এই আশা জাগায় যে জি৭–জি২০ লিঙ্কগুলির পুনর্জাগরণ ডিজিটাল নিয়ামক ব্যবস্থাগুলির ক্রমবর্ধমান ভিন্নতা মোকাবিলায় এবং বাণিজ্য নীতিতে বহুপাক্ষিকতাকে পুনরায় সক্রিয় করতে কার্যকর পদক্ষেপের জন্য ভরবেগ তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। বার্তাটি খুবই সহজ–সরল। যদি জি৭ ও জি২০ এই ভিন্নতাকে থামাতে এবং ডব্লিউটিও–তে বহুপাক্ষিক সংলাপ ও সহযোগিতা পুনরায় সক্রিয় করতে একসঙ্গে না–দাঁড়ায়, তাহলে ডিজিটাল প্রযুক্তিগত বিপ্লবের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি নষ্ট হয়ে যাবে।
সবচেয়ে বড় বিপদ হল যে একটি নতুন অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা তৈরি হতে শুরু করলে একটি খণ্ডিত বিশ্ব সম্প্রদায়ের আর সর্বত্র স্টার্ট–আপ, ডিজিটালি–সক্ষম ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ ও ভোক্তাদের এই প্রক্রিয়াটির কারণে কী মূল্য দিতে হচ্ছে তার উপর দৃষ্টি থাকবে না।
সাফল্য দেখতে কেমন হবে? ডিজিটাল বাণিজ্যে একাধিক–পাক্ষিক কাঠামো থেকে স্বতন্ত্র বহুপাক্ষিকের জন্য এখনও কি একটি অবতরণ ক্ষেত্র রয়েছে? উত্তরটি হল, হ্যাঁ। এমসি১৩–য় ডব্লিউটিও মোরেটোরিয়ামের পুনর্নবীকরণই, পছন্দ হোক বা না হোক, হল পূর্বশর্ত। এটি আসলে কঠিন নয়। অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট–এর ডিজিটাল ট্রেড ইনভেন্টরি অনুসারে, ডব্লিউটিও–র প্রায় অর্ধেক সদস্য আঞ্চলিক বা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিধানগুলিতে স্বাক্ষর করেছে, যা বৈদ্যুতিন সংযোগ শুল্ককে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারতের ব্যাপক অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি (সিইসিএ), এবং আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিতে (আরসিইপি) ইন্দোনেশিয়ার যোগদান অন্তর্ভুক্ত।
ই–কমার্সে জেএসআই পরিচালিত অন্য বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল অর্থনীতিতে আস্থা তৈরির বিধান, এবং ডিজিটাল বাণিজ্য, যেমন কাগজবিহীন ট্রেডিং, ই–চুক্তি, ই–স্বাক্ষর, ই–প্রমাণিকরণ, ডিজিটাল পরিচয়, অ্যান্টি–স্প্যাম, এবং ই–পেমেন্ট, এবং সেইসঙ্গে আন্তঃসীমান্ত ডেটা প্রবাহ সুবিধার বিধান।
ডব্লিউটিও সদস্যরা আসন্ন জাহাজডুবি এড়াতে পারে। যা প্রয়োজন তা হল বাতিঘরের দিকে যাওয়ার সংকল্প। কীভাবে সেখানে পৌঁছনো সম্ভব তার রূপরেখা রয়েছে ২০২২ থিঙ্ক২০ পলিসি ব্রিফ, ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন: বিল্ডিং ইন্টারন্যাশনালি কম্পিটিটিভ ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিজ উইথ গ্লোবাল ভ্যালু চেন কানেক্টিভিটি, এবং ২০২১ থিঙ্ক২০ পলিসি ব্রিফ ‘ডিজিটাল ট্রেড: টপ ট্রেড নেগোশিয়েশন প্রায়োরিটিজ ফর ক্রস–বর্ডার ডেটা ফ্লোজ অ্যান্ড অনলাইন ট্রেড ইন সারভিসেস‘ –এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.