মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ষষ্ঠতম চলতি সফর বিশ্বের দু’টি বৃহত্তম গণতন্ত্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা, কৌশল এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বের উপর এই সহযোগিতার প্রভাব পড়বে। ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণার মনোভাব দ্বারা একত্র দুই দেশ চিন ও পাকিস্তানে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে। এবং অর্থনৈতিক প্রভাব ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান এবং সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো তেল উৎপাদনকারী দেশগুলিতে অনুরণিত হবে। কারণ ভারতীয় অর্থনীতি এই দশকের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। ২০২৩ সালের ২১, ২২, এবং ২৩ জুন- এই তিনটি দিন একটি প্রতিষ্ঠিত বৃহৎশক্তি এবং একটি উদীয়মান আঞ্চলিক শক্তির সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে ব্রতী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ৩১তম সফরের অন্তর্নিহিত ভূ-রাজনৈতিক পরিসরটি বিঘ্নসংকুল হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিভক্ত একটি দ্বিমেরু বিশ্ব থেকে বর্তমান বহু মেরু বিশ্বে বেশ কয়েকটি সার্বভৌম কণ্ঠস্বর মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে যখন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মার্কিন প্রেসিডেন্টের (হ্যারি এস ট্রুম্যান) সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন বিশ্ব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসে একটি দীর্ঘ ঠান্ডা লড়াইয়ে প্রবেশ করছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ভারত যেন তার শিবিরে যোগ দেয়; নেহরু এর বিরোধিতা করেন এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের মতো একটি তৃতীয় শক্তি তৈরি করার চেষ্টা করেন। পরবর্তী কালে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের পতন আমেরিকার পাকিস্তানকে একটি অস্ত্রসমৃদ্ধ ভৌগোলিক পরিসরে পরিণত করার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণার মনোভাব দ্বারা একত্র দুই দেশ চিন ও পাকিস্তানে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে।
ফলে ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান প্রশাসন-সমর্থিত মৌলবাদী ইসলামকে গণ সন্ত্রাস সৃষ্টির একটি অস্ত্রে পরিণত করেছে, যার ফল ৯/১১, ২৬/১১ এবং অন্য অগণিত ঘটনায় পরিলক্ষিত হয়েছে। গত এক দশকে ভারতের নিরিখে পাকিস্তানের যে ‘ভৌগোলিক সুবিধা’ – যা প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পরবর্তী সময়ে চিনের সহায়তা পেয়েছে – তা বর্তমানে একটি মেয়াদোত্তীর্ণ ধারণায় পর্যবসিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিন থেকে নিজেকে ডি-রিস্কিং (এটি এমন একটি নতুন শব্দ যা ডিকপলিংকে প্রতিস্থাপন করছে) বা ঝুঁকিমুক্ত করছে; চিন পাকিস্তানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করছে; এবং পাকিস্তান নিজেকে চিনের ক্লায়েন্ট রাষ্ট্রে পরিণত করে একটি সাংবিধানিক-অর্থনৈতিক-সামরিক বিস্ফোরণের পথে এগোচ্ছে (পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়টি এখানে দ্রষ্টব্য)। ভৌগোলিক অবস্থানকে ইসলামি সন্ত্রাসের এক বৃহৎ পরিসর হিসেবে ব্যবহার করার দিন ফুরিয়ে আসছে।
দেশের অভ্যন্তরে নজরে ফেরালে দেখা যাবে, নেহরু থেকে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার সম্মতিতে সমাজতন্ত্রের পথে ঝোঁকেন এবং এক অভূতপূর্ব পতনের দিকে চালিত হন, সেটিকে সর্বতো ভাবে আপন করে নেন এবং বিভিন্ন উদ্যোগের পথ বন্ধ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৬ সালের মার্চ, ১৯৭১ সালের নভেম্বর এবং ১৯৮২ সালের জুলাই মাসে যে তিনটি সফর করেছিলেন, তা ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে তিক্ত করে তোলে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যে যুদ্ধ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দেয়, তাতে আমেরিকা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল।
১৯৭৪ সালে ভারত নিজেকে একটি পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার কারণে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। ভারতের জাতীয় স্বার্থের অভিব্যক্তি ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধাচরণ করে। প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই – যিনি ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের মাঝে দু’বছরের জন্য ক্ষমতায় ছিলেন – সুনিশ্চিত করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা যেন আরও হ্রাস পায়। তাঁর সরকার দ্বারা কোক এবং আইবিএম-এর প্রস্থান সুনিশ্চিত ও উদযাপন করার এক বছর পরে কেন তিনি ১৯৭৮ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন, তা একটি রহস্য হয়েই রয়ে গিয়েছে।
নেহরু থেকে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার সম্মতিতে সমাজতন্ত্রের পথে ঝোঁকেন এবং এক অভূতপূর্ব পতনের দিকে চালিত হন, সেটিকে সর্বতো ভাবে আপন করে নেন এবং বিভিন্ন উদ্যোগের পথ বন্ধ করে দেন।
ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৯৮৫ সালের জুন, অক্টোবর এবং ১৯৮৭ সালের অক্টোবর মাসে মোট তিন বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান এবং এই সফরগুলি দুই দেশের সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখলেও তা স্থবির ছিল। অভ্যন্তরীণ ভাবে তিনি অর্থনৈতিক নীতি সংস্কারের চেষ্টা করলেও বিশেষ ফল হয়নি; কূটনৈতিক ভাবে ভারত মার্কিন বিদেশনীতির অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকেনি।
১৯৯১ সালে ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও এক সার্বিক অর্থনৈতিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন। এর পর ১৯৯২ সালের জানুয়ারি এবং ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর দু’টি মার্কিন সফর অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার দরজা খুলে দিতে শুরু করে। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর, ২০০১ সালের নভেম্বর, ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর এবং ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর চারটি মার্কিন সফর দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৯৮ সালে পোখরান দুই-এর অধীনে বাজপেয়ী পাঁচটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালান, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরক্তির কারণ হয় এবং একটি সাময়িক বাধার জন্ম দেয়। তবে উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্ক গভীরতর হতে শুরু করে। ইতিবাচক অর্থনৈতিক গতি নেতিবাচক কৌশলগত স্বাধীনতার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে। এর ফলস্বরূপ পরমাণু পরীক্ষা সত্ত্বেও ২০০০ সাল থেকে ভারতে মার্কিন বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়।২০০৪ সাল নাগাদ ভারত একটি দ্রুত উন্নয়নশীল বৃহৎ অর্থনীতি হিসাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এবং ২০০৭ সালে ট্রিলিয়ন-ডলার ও ২০১৪ সালে ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সীমা স্পর্শ করতে সমর্থ হয়। ভারতে অর্থনৈতিক এবং ক্রমবর্ধমান মার্কিন বিনিয়োগের চেয়েও মনমোহন সিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ দ্বারা আলোচিত ও সমর্থিত ইউএস-ইন্ডিয়া: সিভিল নিউক্লিয়ার কোঅপারেশন এক কৌশলগত মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হয়। এটি এমন একটি চুক্তি যা অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে এবং দুই গণতন্ত্রের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় করে তোলে।
দুই দফায় ক্ষমতায় থাকাকালীন মনমোহন সিং মোট আটটি মার্কিন সফর করেন- ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর, ২০০৫ সালের জুলাই, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর, ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর, ২০১০ সালের এপ্রিল এবং ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে দু’টি সফর (২০০৮ সালের নভেম্বর এবং ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর) জি২০ সমাবেশের দরুন ঘটে, যেহেতু গোষ্ঠীটি উত্তর আটলান্টিক আর্থিক সঙ্কটের কারণে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।
মোদী উত্তরাধিকারসূত্রে ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতি এবং পারমাণবিক সহযোগিতার আকারে একটি কৌশলগত সদিচ্ছা আহরণ করেছেন এবং দু’টিকেই কাজে লাগিয়ে তিনি সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি নিজস্ব অবদানও রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই চলমান ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ব্যাটন হাতে তুলে নেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালের মার্চ-এপ্রিল ও জুন, ২০১৭ সালের জুন এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর পাঁচটি মার্কিন সফর পারস্পরিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করে তুলেছে। মোদী উত্তরাধিকারসূত্রে ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতি এবং পারমাণবিক সহযোগিতার আকারে একটি কৌশলগত সদিচ্ছা আহরণ করেছেন এবং দু’টিকেই কাজে লাগিয়ে তিনি সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি নিজস্ব অবদানও রেখেছেন। আকার, কৌশল এবং নীতির এই সংমেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সময়োপযোগী। কারণ এটি এই অঞ্চলে আস্থার অংশীদারিত্ব, পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং চিন থেকে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত (ডি-রিস্ক) করার পথ খুঁজছে। জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি কোয়াড তার ক্রমবর্ধমান প্রভাবও প্রদর্শন করছে।
এর ফল স্বরূপ, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থান বিনিয়োগ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলির সংখ্যা বৃদ্ধির আকারে একটি বৃহত্তর অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত শক্তি সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে। তথ্য বর্তমানে প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে ওঠায় ৫জি-র ক্ষেত্রে হুয়াই এবং টিকটক-এর (বিশদে জানতে হলে চায়না টেক দ্রষ্টব্য) মতো একগুচ্ছ পরিষেবার বিরুদ্ধে ভারতের গৃহীত কড়া অবস্থান শুধু মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও প্রভাবিত করেছে এবং তাদের মনোভাবের সঙ্গে অনুরণিত হয়েছে। এই অবস্থা বজায় থাকবে।
কৌশলগত-অর্থনৈতিক আন্তঃকার্যকারিতা এবং সাধারণ ভিত্তি শক্তিশালী হচ্ছে। আশ্চর্যজনক ভাবে, এর নেপথ্যে বৃহত্তম কারণ হল, হিংস্র ক্ষমতালোভী শি জিনপিং, যিনি চিনের সব ক্ষমতার শীর্ষে আসীন এবং যিনি বর্তমানে ভূখণ্ড, সমুদ্র এবং বাজার দখলের লড়াইয়ে মত্ত। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চিনা রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা শি-র দরুন হ্রাস পেয়েছে। এবং এই পথে হেঁটে তিনি চিনা উদ্যোক্তাদের দুর্বল করেছেন। হংকংয়ে গণতন্ত্রের শ্বাসরোধ করা ও তাইওয়ানকে গ্রাস করার শি-র প্রচেষ্টা নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
দুই দেশের সম্পর্কটি প্রতিরক্ষা চুক্তি, উচ্চ প্রযুক্তির সহযোগিতা এবং ভারতের জন্য বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খলের আকারে একটি ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত কৌশলগত পরিকল্পনার সম্ভাবনা বহন করে।
এ হেন এক সময়ে ভারতের গণতন্ত্র তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক আকার এবং কৌশলগত পরিসরের দরুন হঠাৎ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। অন্য দিকে দুই দেশের সম্পর্কটি প্রতিরক্ষা চুক্তি, উচ্চ প্রযুক্তির সহযোগিতা এবং ভারতের জন্য বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খলের আকারে একটি ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত কৌশলগত পরিকল্পনার সম্ভাবনা বহন করে। চিনের ‘উইন-উইন’ বা ‘ক্ষতিহীন লাভ’-এর সংজ্ঞা – যার অর্থ চিন দ্বিগুণ লাভবান হবে এবং এক দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অপর দিকে ইইউ-এর মতো সুবিধাপ্রাপকদের ছেঁটে ফেলা – বিপরীতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের জন্য ‘উইন-উইন’-এর অর্থ হল সারা বিশ্ব জুড়ে শান্তির বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জয়।
এই সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরু হয়েছে। সফরে থাকছে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক, একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ, কংগ্রেসের জয়েন্ট সিটিং বা যৌথ সভায় ভাষণ এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও মার্কিন স্টেট সেক্রেটারি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ। এ ছাড়াও শীর্ষস্থানীয় সিইও বা প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গেও মোদী একাধিক বৈঠক করবেন।
তাঁর সফরের স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য নীতি থেকে প্রতিরক্ষা হয়ে বিনিয়োগ পর্যন্ত একগুচ্ছ চুক্তির বাস্তবায়ন হলেও দীর্ঘমেয়াদে এই সফর ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে শক্তিশালী করার পথে অন্যতম প্রয়াস। ইইউ থেকে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত বিশ্বের সকলেই এই সম্পর্কের উপর নিবিড় ভাবে নজর রাখবে এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক (ইইউ, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া), ধর্মীয় (সৌদি আরব এবং কাতার) এবং কৌশলগত (রাশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া) সীমাবদ্ধতার পরিসরের মধ্যে থেকেও দেশ দু’টির স্বার্থের সঙ্গে নিজেরা অভিযোজিত হবে। উদীয়মান ভারত এবং সুসংহত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যখন নতুন স্বাভাবিকীকরণের জন্য সমাবেশ করছে, তখন অতীত আর ভবিষ্যৎকে কলঙ্কিত করতে পারবে না। একুশ শতকের বিশ্ব কেমন হবে, তা দেখার জন্য ইতিহাস মোদী এবং বাইডেনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে।
গৌতম চিকারমানে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.