Author : Ayjaz Wani

Published on Aug 17, 2024 Updated 0 Hours ago

কাশ্মীর উপত্যকায় উচ্চ ভোটার উপস্থিতি যে প্রশ্নটিকে উস্কে দেয়: কাশ্মীর কি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে, না কি অন্য কোনও জটিল বাস্তবতা উন্মোচিত হচ্ছে?

কাশ্মীরে বাড়ছে ভোটদানের হার

Image Source: NBC News

জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (জেঅ্যান্ডকে) পাঁচটি লোকসভা আসনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চিত্তাকর্ষক ভাবে ৫৮ শতাংশ, যা গত ৩৫ বছরের মধ্যে ভোটে অংশগ্রহণের সর্বোচ্চ হারকেই দর্শায়। কাশ্মীর উপত্যকায় ভোট ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থা প্রদর্শন করে রেকর্ড সংখ্যক তরুণ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে

উচ্চ ভোটার উপস্থিতি এবং সক্রিয় যুবকদের অংশগ্রহণ দেখার পর ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশন জম্মু ও কাশ্মীরের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভাবছে।

উচ্চ ভোটার উপস্থিতি এবং সক্রিয় যুবকদের অংশগ্রহণ দেখার পর ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশন জম্মু ও কাশ্মীরের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভাবছে। কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে… এ হেন ব্যাপক বিশ্বাস সত্ত্বেও ভোটারদের উপস্থিতি এবং নির্বাচনী ফলাফল কাশ্মীর উপত্যকায় উদ্ভূত আরও জটিল বাস্তবতাকেই তুলে ধরে, যা মূলত আবেগ এবং স্থানীয় আর্থ-সামাজিক সমস্যা দ্বারা চালিত হয়।

বয়কট থেকে ব্যালট পর্যন্ত

২০১৯ সালের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনগুলি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বয়কটের আহ্বানের সাক্ষী থেকেছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কারদের বা মাটিতে যুদ্ধরত কর্মীদের (ওজিডব্লিউ) হিংসা ও পাথর নিক্ষেপের ভয়ের কারণে নির্জন ভোটকেন্দ্র এবং কম ভোটারের উপস্থিতি ছিল এক সাধারণ দৃশ্য। কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ ও হিংসার প্রতি পাকিস্তানের গোপন সমর্থন চিরাচরিত ভাবে কাশ্মীরি ভোটারদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৭ সালের শ্রীনগর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আশপাশের সময়কালে ২০০টি হিংসার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যাতে আটজন নিহত হএর ফলস্বরূপ, উপ-নির্বাচনে মাত্র সাত শতাংশ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল, যা কিনা ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। হিংসার কারণে অনন্তনাগ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। একই ভাবে, ২০১৯ সালে কাশ্মীর উপত্যকার তিনটি সংসদীয় আসনে সম্মিলিত ভোটারদের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৯.১৬ শতাংশ। নিরাপত্তা বাহিনী এবং পাথর নিক্ষেপকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে দক্ষিণ কাশ্মীরের অশান্ত এলাকায় বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে শূন্য ভোট পড়েছিল

যাই হোক, ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে ৩৭০ এবং ৩৫ক ধারা প্রত্যাহার করার পর থেকে কাশ্মীর উপত্যকার পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রশাসনের নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার দরুন সন্ত্রাসবাদ এবং সম্পর্কিত হিংসা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। মাত্র ২০ জন যুবক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগদানের ফলে ২০২৩ সালে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগদানকারী স্থানীয়দের সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমেছে। যাই হোক, প্রায় ৭০-৮০ জন সক্রিয় বিদেশি সন্ত্রাসবাসী জম্মু ও কাশ্মীরে উপস্থিত রয়েছে এবং বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোনও হিংসার উদ্রেক হওয়া এড়াতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে একটি নতুন সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল তৈরি করতে হবে। গত দুই বছরে জম্মু অঞ্চলে এবং পির পঞ্জালের দক্ষিণে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলা নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট বিদেশি সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে বাধ্য করেছে।

২০১৯ সালের অগস্ট মাসে ৩৭০ এবং ৩৫ক ধারা প্রত্যাহার করার পর থেকে কাশ্মীর উপত্যকার পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রশাসনের নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার দরুন সন্ত্রাসবাদ এবং সম্পর্কিত হিংসা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।

তা সত্ত্বেও, বিশেষ করে উপত্যকায় নিরাপত্তা পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা পাথর নিক্ষেপ ধর্মঘটের অনুপস্থিতি বুলেটের উপর ব্যালটের জয়ের পথ প্রশস্ত করেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আদর্শের প্রভাব হ্রাস করা কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন যুবসমাজকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব সরকারে তাদের নিজস্ব জনগণের — যাদের সঙ্গে তাদের মতামত অনুরণিত হতে পারে — প্রতিনিধিত্ব দিয়ে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে। উপরন্তু, উপত্যকার বাসিন্দারা অনুভব করেছিলেন যে, স্থানীয় প্রশাসনে তাঁদের প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছেকারণ প্রশাসন পরিচালনাকারী আমলারা উদাসীন এবং অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে, কাশ্মীরিরা তাঁদের ভোট ব্যবহার করে ২০১৯ সালের পরে নয়াদিল্লির একতরফা সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিশেষ করে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।

কাশ্মীর উপত্যকার বারামুল্লা, শ্রীনগর এবং অনন্তনাগ-রাজৌরির তিনটি সংসদীয় আসনের ১৮-৩৯ বছর বয়সের মধ্যে ভোটারদের ভোট পড়েছে যথাক্রমে ৫৬.০২ শতাংশ, ৪৮.৫৭ শতাংশ এবং ৫৪.৪১ শতাংশ গত তিন দশকের জঙ্গিবাদে যুবকরা অবশেষে বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াই এবং নতুন সুযোগ তৈরির মতো সমস্যাগুলি মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। নির্বাচনের সময় উপত্যকায় ১৮-৩৯ বছর বয়সি ভোটারদের অংশগ্রহণে একটি বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, যাঁরা বিজেপি-র অনুমোদিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। আলতাফ বুখারির নেতৃত্বে আপনি পার্টি এবং সাজাদ লোনের নেতৃত্বে পিপলস কনফারেন্স উপত্যকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দ্বারা ব্যাপক ভাবে বিজেপি-র প্রক্সি হিসাবে বিবেচিত হয়। নির্বাচনী প্রচারে প্রধান মনোযোগ দেওয়া হয় ২০১৯ সালে নয়াদিল্লির অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তগুলির উপর এবং তা নির্বাচনে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির দিকে চালিত করেছিল। তা সত্ত্বেও, তাঁরা উপত্যকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট এবং শান্তি অব্যাহত রাখার জন্য ব্যাপক আশা রেখেছেন।

জামাত-ই-ইসলামি থেকে শুরু করে রশিদের জয়

সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের সময় একটি পরিবর্তনের মাঝেই নিষিদ্ধ জামাত-ই-ইসলামি (জেইআই) সদস্যরা উপত্যকার তিনটি নির্বাচনী এলাকায় ভোট প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিল। জেআই আসলে এমন একটি সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন যা বিচ্ছিন্নতাবাদের পক্ষে এবং ভারতীয় রাষ্ট্রকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েক বছর ধরে কাশ্মীর সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। জেআই-এর প্যানেল প্রধান ভারতীয় সংবিধানের অধীনে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নিজেদের প্রস্তুতি ব্যক্ত করেছেন, যদি এর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

কাশ্মীরের বারামুল্লা সংসদীয় আসনের ফলাফল হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ নামে পরিচিত আব্দুল রশিদ শেখের বিজয় আঞ্চলিক মূলধারার দলগুলি এবং নয়াদিল্লিকে অবাক করেছে। সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) অধীনে গত পাঁচ বছর ধরে তিহার জেলে বন্দি রশিদ প্রায় ৪,৭০,০০০ ভোট পেয়েছিলেন। তিনি নির্ণায়ক ভাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকে ২ লক্ষ ভোটের বেশি ব্যবধানে পরাজিত করেন। কিছু সাংবাদিক এবং ওমর আবদুল্লার মতে, রশিদের বিজয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্তিশালী করবে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করবে। তবে মনে করা হচ্ছে, রশিদের প্রচার অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে জেলের প্রতিশোধ চাওয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সহানুভূতি ও সংকল্প থেকেই রশিদ নির্বাচিত হয়েছেন। অনেক সমর্থক মনে করেন, এই বিজয় রশিদের মুক্তি সুনিশ্চিত করবে এবং তাঁকে সংসদে তাঁদের প্রকৃত উদ্বেগের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেবে।

কাশ্মীরের বারামুল্লা সংসদীয় আসনের ফলাফল হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ নামে পরিচিত আব্দুল রশিদ শেখের বিজয় আঞ্চলিক মূলধারার দলগুলি এবং নয়াদিল্লিকে অবাক করেছে।

বারামুল্লা লোকসভা আসন থেকে ২০১৯ সালে নির্বাচিত ন্যাশনাল কনফারেন্সের মহম্মদ আকবর লোন সংসদে বেকারত্ব, বিদ্যুৎ এবং পরিকাঠামোর মতো কোনও স্থানীয় সমস্যা খুব কমই উত্থাপন করেছিলেন। ওমর আবদুল্লার মতো অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে যুক্ত ভিআইপিসংস্কৃতির প্রতি মোহও ভোটারদের রশিদকে ভোট দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, বারামুল্লা সংসদীয় আসনের অধীন এলাকাগুলি গত ১২ বছর ধরে দক্ষিণ কাশ্মীর এবং শ্রীনগরের চেয়ে বেশি শান্তিপূর্ণ ছিল। রশিদের সমাবেশগুলি এমনকি নির্বাচন বয়কটের জন্য পরিচিত এলাকায় যথেষ্ট যুব সমর্থন আকর্ষণ করেছে

কাশ্মীর উপত্যকার জনগণ সক্রিয় ভাবে পাকিস্তান দ্বারা সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ, হিংসা বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতা করেছেন। যাই হোক, নেতিবাচক আবেগ এবং নয়াদিল্লির প্রতি একটি সম্ভাব্য হতাশাবাদী অবস্থান এখনও ভোটারদের ভোটদান ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে, বিশেষ করে বারামুল্লা আসনে। তবুও, জনগণ স্বাভাবিক পরিস্থিতি, উন্নত জীবিকা এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (ইউটি) স্তরে বৃহত্তর রাজনৈতিক অংশগ্রহণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, যে বিষয়গুলিকে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নয়াদিল্লিপুঁজি করা দরকার।

 


আয়জাজ ওয়ানি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.