Author : Kabir Taneja

Published on Aug 19, 2023 Updated 0 Hours ago

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এবং তার ফলে গঠিত অংশীদারিত্ব থেকে শুরু করে জ্বালানি নিরাপত্তা এবং অভিবাসন সংক্রান্ত নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পর্যন্ত… সব ক্ষেত্রেই ভারত-পশ্চিম এশিয়া সম্পর্ক অনেক পরিবর্তিত হয়েছে

৭৭তম স্বাধীনতা দিবস: ভারত-পশ্চিম এশিয়া সম্পর্কের মূল্যায়ন

ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে বৃহত্তর পশ্চিম এশিয়ার (মধ্যপ্রাচ্য নামেও যা পরিচিত) সঙ্গে তার সম্পর্কের শিকড় ইতিহাসে প্রোথিত এবং সমসাময়িক ভাবে বিশেষ করে অর্থনীতি এবং মানুষে মানুষে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। নন-অ্যালাইনড মুভমেন্ট বা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনকে (এনএএম) কেন্দ্র করে এবং তার ফলে গঠিত অংশীদারিত্ব থেকে শুরু করে জ্বালানি নিরাপত্তা এবং অভিবাসী সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান  পর্যন্ত… পারস্য উপসাগর এবং ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকের মধ্যে এই অঞ্চলের সঙ্গে, বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউএই) মতো আরব রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শ্রমের প্রয়োজনীয়তা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হলেও, ২০০০-এর পর থেকে তার অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। ভারতের অর্থনীতি সেই সময় থেকেই দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রযুক্তি ও পরিষেবার মতো ক্ষেত্রগুলিতে তার সাফল্যের আখ্যান অনুসৃত হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ লক্ষ করা যাচ্ছে। এই সময়ে নয়াদিল্লি একটি সূক্ষ্ম বৈদেশিক নীতিও বজায় রেখেছিল অর্থাৎ বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক আন্দোলনগুলির মধ্যে না-থেকেও নিজের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আন্তঃআঞ্চলিক সঙ্কটের  মধ্যে প্রবেশ করেনি বা কোনও পক্ষাবলম্বন করেনি। এই নিরপেক্ষতা সমগ্র অঞ্চল জুড়েই প্রশংসিত হয়েছিল এবং গত দু’দশক ধরে ভারতীয় কর্মসূচিগুলিকে পথ দেখিয়েছে, যা বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ২০২২-২৩ সালে ১২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বাণিজ্য করার দরুন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের পরে তারাই ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে।

ভারতের অর্থনীতি সেই সময় থেকেই দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রযুক্তি ও পরিষেবার মতো ক্ষেত্রগুলিতে তার সাফল্যের আখ্যান অনুসৃত হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ লক্ষ করা যাচ্ছে।

আক্ষরিক অর্থে জ্বালানির একটি বড় অংশ, যা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে (জিডিপির আকার অনুসারে) ভারতের বৃদ্ধিকে শক্তি দিয়েছে, তা বছরের পর বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ার ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইরাকের মতো দেশগুলি থেকে আমদানি করা হয়েছে। আরব সাগরের পথে অপেক্ষাকৃত কম দূরত্ব পরিবহণ খরচ স্বল্প রাখতে সাহায্য করেছে, লভ্যতাকে অপেক্ষাকৃত সহজতর করে তুলেছে এবং এই ধরনের বাণিজ্যের বিনিময়মূলক প্রকৃতির ঊর্ধ্বে উঠে উপ-মহাদেশ এবং পশ্চিম এশীয় ভূখণ্ডের মধ্যে অর্থনৈতিক সেতু নির্মাণে সাহায্য করেছে।

বিগত এক দশকে এই অবিচলিত বৃদ্ধি আরও গতি লাভ করেছে, যার নেপথ্যে রয়েছে নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনীতিতে পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতিগত পরিবর্তন। ‘এশিয়ান সেঞ্চুরি’ বা ‘এশীয় শতক’-এর ধারণা অথবা আরও সহজে বললে, চিন ও ভারতের মতো অর্থনীতি দ্বারা পরিচালিত হয়ে পাশ্চাত্য থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ভরকেন্দ্রকে প্রাচ্যের দিকে সরিয়ে আনার আন্দোলন বর্তমানে পশ্চিম এশিয়ার চিরাচরিত মিত্র দেশগুলির কাছে এক গ্রহণযোগ্য আখ্যান। এই অবস্থা আরও গতিশীলতা লাভের কারণগুলি হল সংশ্লিষ্ট দেশগুলির জ্বালানি সংক্রান্ত তীব্র ক্ষুধা; সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরান এবং অন্য দেশগুলির অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করার জন্য এই সকল জ্বালানি পণ্য (যেমন তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস) বিক্রি করা; এবং সর্বোপরি পাশ্চাত্যে এক দ্রুত পট পরিবর্তন আনা, যেখানে ইউরোপে ‘দূষণহীন শক্তি’র ব্যবহার বৃদ্ধি ও একটি প্রধান জ্বালানি রফতানিকারক এবং উত্পাদক হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান।

জুলাই মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফর ছিল এমিরাতি দেশগুলিতে তাঁর পঞ্চম সফর এবং এটি এমন এক অভূতপূর্ব নেতৃত্বস্থানীয় সংযোগ স্থাপন যা উভয় অর্থনীতির জন্য ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মতো নতুন প্রক্রিয়া – ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের একগুচ্ছ যৌথ চুক্তি – এবং চিনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা স্থিতিশীলতার স্তর যুক্ত করেছে, যা ভারতের মতো অংশীদার দেশগুলির জন্য অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, জুলাই মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফর ছিল এমিরাতি দেশগুলিতে তাঁর পঞ্চম সফর এবং এটি এমন এক অভূতপূর্ব নেতৃত্বস্থানীয় সংযোগ স্থাপন যা উভয় অর্থনীতির জন্য ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভারত, ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত নতুন কূটনৈতিক জোট আইটুইউটু-র মাধ্যমে ইজরায়েলের সঙ্গে নয়াদিল্লি প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে। অন্য দিকে হরমুজ প্রণালীর অপর প্রান্তে ইরানের সঙ্গে নয়াদিল্লি চাবাহার বন্দর উন্নয়নের মতো প্রকল্পগুলির মাধ্যমে তার চিরাচরিত সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে যা এই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ভরকেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে এবং আফগানিস্তানের মতো প্রতিকূল অবস্থাসম্পন্ন দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক সংযোগ স্থাপনের জন্য পথনির্দেশিকা তৈরি করেছে ও একই সঙ্গে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব কাটাতে সেতু বন্ধন করেছে।

ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বৈচিত্র্যময় ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ- অর্থনৈতিক উপস্থিতি তার অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এবং তার পশ্চিম এশিয়ার অংশীদাররা সকলেই শুধু মাত্র উপরোল্লিখিত মেট্রিক্সে সহযোগিতা করতে চাইছে না, বরং একই সঙ্গে একটি ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার জন্য আন্তঃসহযোগিতায় আগ্রহী। বহু মেরুকরণের চিন্তাভাবনা এবং ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’-এর মতো ধারণার আবির্ভাবের মতো শব্দবন্ধগুলি বর্তমানে প্রায়শই নয়াদিল্লির তরফে শোনা যাচ্ছে, যা পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অভিধানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। এই নতুন বিন্যাসে পশ্চিম এশিয়া এবং ভারতের মতো অঞ্চলগুলির মধ্যে ‘সহজাত’ অংশীদারিত্বের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে, যা একে অপরের বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একে অপরকে দ্রুত বিকশিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার শক্তিশালী মেরু হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বৈচিত্র্যময় ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক উপস্থিতি তার অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আগামী দশকগুলি এই অঞ্চলগুলির জন্য এবং তাদের মধ্যকার সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তরুণ প্রজন্ম অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধান শক্তি রূপে আবির্ভূত হবে। দ্বন্দ্বের আন্তর্জাতিক আখ্যানকে সরিয়ে রেখে, ভারত এবং পশ্চিম এশিয়ায় তার অংশীদারিত্ব অধিকাংশ অভিন্ন সাধারণ বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির নিরিখে উন্নততর অবস্থানে রয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে একে অপরকে সাহায্য করার পাশাপাশি দেশগুলি সেই সকল ক্ষেত্রেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যেখানে আন্তর্জাতিক এবং বিশ্বব্যাপী প্রচলিত আখ্যানের তুলনায় আঞ্চলিক বা স্থানীয় সমাধানগুলি বেশি অভিপ্রেত।


কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.