Authors : Samir Saran | Jane Harman

Published on Mar 09, 2024 Updated 2 Days ago
ভূ-রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে সহযোগিতার চারটি পথ

বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্মুখীন হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং আফ্রিকা জুড়ে যুদ্ধ চলছে; ২০২৩ সালটি বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যার প্রেক্ষিতে কোনও এক বছরে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি দর্শিয়েছে।

এই নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলি ছাড়াও বিশ্ব একটি উষ্ণায়িত পৃথিবী এবং ভঙ্গুর আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সম্মুখীন, যা শুধুমাত্র যৌথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।

এই ভয়ঙ্কর দৃশ্যপট সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও একসঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করতে পারে, এমন নানা উপায় রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল ফিউচার কাউন্সিল অন জিওপলিটিক্স-এর বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ‘শেপিং কোঅপারেশন ইন আ ফ্র্যাগমেন্টিং ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক নতুন প্রতিবেদনে দর্শিয়েছেন কী ভাবে এমনটা করা সম্ভব

প্রতিবেদনটি চারটি ক্ষেত্রে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নিরিখে উদ্ভাবনী পথের প্রস্তাব দেয়: আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, জলবায়ু কর্মসূচি, উদীয়মান প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।

 

নিচে প্রধান অংশগুলির উল্লেখ করা হল, যেমনটা বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।

 

১. আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা- অবিশ্বাসের যুগে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার অগ্রগতি

ব্রুস জোন্স, রবি আগরওয়াল, আন্তোনিও দি আগুয়ার পাত্রিওতা, কারিন ভন হিপ্পেল, লিন কুওক এবং সুজানা ম্যালকোরা আলোচনা করেছেন এ নিয়ে।

প্রথমে অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে যে, স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে অবিশ্বাস ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য।

এটি মোকাবিলা করা এবং আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য এ কথা স্বীকার করা প্রয়োজন যে, তীব্র অবিশ্বাসের পরিস্থিতিতেও সহযোগিতা সম্ভব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় বারবার তা প্রমাণ করেছে।

তৃতীয় পক্ষগুলির শান্ত কূটনীতির মাধ্যমে (প্রায়শই রাষ্ট্রপুঞ্জে বা তার মাধ্যমে) অবিশ্বাস মোকাবিলার চাবিকাঠি হল দর কষাকষি, ঝুঁকিমুক্তকরণ এবং সঙ্কট এড়িয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করা। তথাকথিত মধ্য শক্তি অতীতে বৃহৎ শক্তি সংঘাত প্রতিরোধ এবং ঝুঁকিমুক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং তা এই অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত অবশ্য এই শব্দবন্ধটি পশ্চিমী দেশগুলিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তনের অর্থ হল এই যে, তা পশ্চিমের বাইরে অন্যত্র উদীয়মান ক্তিক্ষেত্রে প্রসারিত হয়েছে।

পশ্চিমের প্রধান এবং মধ্যম শক্তিগুলিকে অ-পশ্চিমী শক্তিগুলির সঙ্গে সংযুক্তকারী (ব্রাজিল, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ইত্যাদি) একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া এমন এক কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্ম দেবে, যা জি৭, কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ (কোয়াড) এবং সম্প্রসারিত ব্রিকস-এর ক্রমবর্ধমান দ্বিখণ্ডিত বিশ্বগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারে।

২. জলবায়ু পরিবর্তন - জলবায়ু প্রশাসনের পুনর্বিবেচনা

সমীর সারন এবং ড্যানি কোয়া এ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু প্রশাসন নিয়ে পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। মৌলিক ভারসাম্যহীনতা তখনই সুপ্রকট হয়ে ওঠে, যখন উন্নত বিশ্ব চিরাচরিত নির্গমনের মূল অবদানকারী হয় এবং ভবিষ্যতে নির্গমন উন্নয়নশীল বিশ্বে কেন্দ্রীভূত হয়। গ্লোবাল সাউথে নিয়োজিত ব্যক্তিগত পুঁজির পরিমাণ শুধু বৃদ্ধি করাই নয়, অভিযোজনকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই ধরনের বিনিয়োগের সুযোগকে আরও প্রসারিত করার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন রয়েছে

একই ভাবে, গ্রিন এনার্জি সলিউশন বা দূষণমুক্ত জ্বালানি সমাধান বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিও উন্নত বিশ্ব এবং চিনে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ম্যান্ডেট ঋণের ধর পরিবর্তন করা উচিত এবং উদীয়মান বিশ্বে স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রকে জলবায়ু লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ করা উচিত।

একই সময়ে, ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) এবং জি২০-র মতো বহুপাক্ষিক মঞ্চগুলিকে অবশ্যই লিঙ্গব্যাপী স্বাস্থ্যের ফলাফলের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলিকে আরও ভাল ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্য সামাজিক সমর্থন জোগাড় করার উদ্দেশ্যে নারী-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ গড়ে তুলতে হবে।

 

৩. উদীয়মান প্রযুক্তি– প্রযুক্তিকে একত্র করা

সমীর সারন, ফ্লাভিয়া আলভেস এবং ভেরা সংওয়ে এ নিয়ে আলোচনা করেন।

সীমান্ত প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রবল গতি বিভিন্ন ধরনের অনুপ্রেরণা-সহ বহু রাষ্ট্রীয় এবং অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিদের দ্বারা তা অনুসরণ করা সমসাময়িক ভূ-রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

কারিগরি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা এবং তাদের বিস্তার রোধ করার প্রচেষ্টাকে সফল করার জন্য দেশগুলিকে নীতি-নির্ধারণে উদ্ভাবন করতে হবে, যেখানে সরকারগুলি প্রযুক্তি সংস্থা, সুশীল সমাজ, শিক্ষাক্ষেত্র এবং গবেষণা সম্প্রদায়ের অংশীদারকে আলোচনায় সম্পৃক্ত করতে সমর্থ হবে।

গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নির্মূলকরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ কর্তৃক রেসপন্সিবিলিটি টু প্রোটেক্ট (আর২পি) নীতির মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষতি থেকে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রগুলির জন্য একটি নিয়ন্ত্রক আর২পি বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে।

এবং গ্লোবাল সাউথকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার জন্য কপ-এর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রযুক্তির উদ্দেশ্যে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ-এর (কপ) আহ্বান করতে হবে।

 

৪. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য - বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং ভারসাম্য বজায় রাখা

নিকোলাই রুজ এবং ড্যানি কোয়া আলোচনা করেছেন এ মিয়ে।

বাণিজ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলার জন্য সীমাবদ্ধ করার পরিবর্তে বাণিজ্য কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজনবাণিজ্য বিস্তৃত সুবিধা প্রদান করলে এই প্রক্রিয়া আরও দৃঢ় ভাবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা দ্বারা সংজ্ঞায়িত বিশ্বব্যাপী অভিন্ন সাধারণ অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য পরিকল্পিত বাণিজ্য সরকার এবং নাগরিকদের আস্থা অর্জন করবে এবং স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক জয়ের জন্য ব্যাহত না হয়ে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবে।

বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সুবিধার উপর বিশ্বব্যাপী আস্থা পুনঃনির্মাণ করার জন্য এ কথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, গ্লোবাল সাউথ এবং বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলি যেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী বৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে।

দেশগুলি যাতে আন্তর্জাতিক মূল্য শৃঙ্খলে পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হয়, তা সুনিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

 

এই পথগুলি কী ভাবে সফল হতে পারে?

প্রতিবেদন জুড়ে এই চারটি পরিসরব্যাপী সহযোগিতা বৃদ্ধি করার চাবিকাঠি হিসাবে একটি অভিন্ন সাধারণ কারণ আবির্ভূত হয়েছে এবং তা হল অন্তর্ভুক্তি। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, উদীয়মান প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই বিভিন্ন কণ্ঠস্বরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং এমন শক্তিদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে যারা আগে বহুপাক্ষিক ফোরামের প্রান্তে ছিল।

এই পদ্ধতিকে ধ্রুবতারা করলে তবেই সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Samir Saran

Samir Saran

Samir Saran is the President of the Observer Research Foundation (ORF), India’s premier think tank, headquartered in New Delhi with affiliates in North America and ...

Read More +
Jane Harman

Jane Harman

Read More +