Author : Samir Saran

Published on Dec 31, 2024 Updated 0 Hours ago

ভূ-রাজনীতি দ্বারা গভীরভাবে বিভক্ত দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারি করার ক্ষমতা স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় কূটনীতির একটি বৈশিষ্ট্য। ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক শুধুমাত্র এই দুটি দেশের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের জন্য কাজ করে।

৫টি উপায় যার মাধ্যমে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক ২০২৫ সালে বিশ্বকে রূপ দেবে

২০২৫ সালের বৈদেশিক নীতির প্রবণতাগুলি বৃহৎ শক্তি সম্পর্কের পরিবর্তনের মাধ্যমে আকৃতি পাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন প্রশাসন ইউরোপের পুরনো মিত্রদের সঙ্গে তার সম্পর্ককে উন্নত করতে পারে, এবং চিনের সঙ্গে শত্রুতা তীব্রতর করতে পারে। একটি অনিশ্চিত বিশ্বে ভারত ভারসাম্য বজায় রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব সম্প্রদায় চিনের সঙ্গে তার অশান্ত সম্পর্কের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য নয়াদিল্লির প্রচেষ্টা দেখছে, এবং ভাবছে যে ইন্দো-মার্কিন গতিশীলতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো শক্তি সংগ্রহ করবে কি না। এত কিছুর পরেও, ২০২৫ সালে সবচেয়ে ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হবে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে।

নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্কের দৃঢ়তা উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মূল পারস্পরিক ক্ষেত্রগুলিকে স্পর্শ করে: শক্তি বাণিজ্য, প্রযুক্তি সহ-উন্নয়ন এবং কৌশলগত স্বার্থ। উচ্চ-প্রযুক্তি সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে উপযুক্ত অংশীদার। যদিও পশ্চিম — ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র — দ্বৈত-ব্যবহারের প্রযুক্তিতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের নিয়মগুলি শিথিল করছে, তবে নয়াদিল্লির সমুদ্রের নীচে ও দীর্ঘ-পরিসরের প্রয়োজনীয়তাগুলি পশ্চিমের দ্বারা পূরিত হওয়ার আগে এখনও অনেক পথ যেতে হবে৷ এখানেই মস্কো জায়গা করে নেয়।


বিশ্ব সম্প্রদায় চিনের সঙ্গে তার অশান্ত সম্পর্কের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য নয়াদিল্লির প্রচেষ্টা দেখছে, এবং ভাবছে যে ইন্দো-মার্কিন গতিশীলতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো শক্তি সংগ্রহ করবে কি না।



ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে কিছু অতি-‌উত্তপ্ত মন্তব্য যা দেখতে ব্যর্থ হয়, তা হল পশ্চিমীদের জন্যও তা গভীর গুরুত্ব বহন করে। ভারত ও রাশিয়ার যৌথভাবে তৈরি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র চিনাদের প্রতিহত করতে ফিলিপিন্সকে দেওয়া হয়েছে। অন্য কথায়, রুশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব হতে পারে শুধুমাত্র ভারতের মাধ্যমেই। এবং দেশটি ভারত বলেই মস্কোর দ্বারা এই ধরনের বিক্রিতে কোনও চিনা ভেটো অনুমোদিত নয়৷

এটি ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্কের অনন্য প্রকৃতির একটি উদাহরণ মাত্র। তাদের ঘনিষ্ঠতা ২০২৫ সালে গভীরতর প্রভাব সৃষ্টি করবে এবং এটি সারা বিশ্বের পক্ষেই হিতকর হিসাবে স্বীকৃত হবে। এখানে পাঁচটি দিক রয়েছে যা থেকে বোঝা যায় যে এই সম্পর্ক বিশ্বব্যবস্থা রক্ষা করার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷

প্রথমত, এটি বিশ্বের বাকি অংশ এবং পশ্চিমী বাস্তুতন্ত্রের থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকা রুশ রাজনীতির মধ্যে একটি সেতু হিসাবে কাজ করে। বহুপাক্ষিকতাবাদ ও বৈশ্বিক শৃঙ্খলার প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতা তার ঘনিষ্ঠ অংশীদার রাশিয়াকে এমন একটি ব্যবস্থায় বেঁধে ফেলে যা অন্যথায় রাশিয়া ব্যাহত করতে চায়। ভারত এটি করতে পারে কারণ দেশটিকে কোনও একটি রাজনৈতিক বা ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের পক্ষে লড়াই করতে দেখা হয় না। এটি এমন একটি সীমানাযুক্ত দেশ যা ব্যবস্থাগুলিকে অতিক্রম করে, এবং পৃথক পৃথক জগতকে সংযুক্ত করা, বা এমনকি একীভূত করার, ক্ষমতা প্রদান করে।

দ্বিতীয়ত, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক রাশিয়ার ভাল্লুককে ড্রাগনের খাদে সম্পূর্ণরূপে ঝাঁপ দিতে বাধা দেয়। বেজিংয়ের স্বার্থের দাসত্বে আটকে থাকা রাশিয়া বিশ্বব্যবস্থার জন্য, বিশেষ করে পশ্চিমের জন্য, বিপজ্জনক শত্রু হবে। ভারতের প্রসারিত হাত রাশিয়াকে দিক-‌পরিবর্তন করার ক্ষমতা দেয়, এবং চিনের দাবির কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ এড়াতে দেয়। এটি ক্রমবর্ধমানভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে — ব্রিকস এবং অন্যত্র — যে তার বিশাল প্রতিবেশীর জুনিয়র অংশীদার হওয়া এড়ানো মস্কোর জন্য একটি অগ্রাধিকার। রাশিয়া সমান অংশীদারিত্ব আশা করে। ভারত তা দেয়, চিন দেয় না। ইউরোপকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে শেষ পর্যন্ত যখন মহাদেশে শান্তি ফিরে আসবে, তখন এটি রাশিয়ার সঙ্গে থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সমতার ভিত্তিতে, এবং এর অধীনস্থ হবে না।


ভারতের প্রসারিত হাত রাশিয়াকে দিক-‌পরিবর্তন করার ক্ষমতা দেয়, এবং চিনের দাবির কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ এড়াতে দেয়।



তৃতীয়ত, জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য রাশিয়ার লাভ সীমিত করার জন্য নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এটিও বিশ্বকে বিস্তৃততর সুবিধা প্রদান করে। এটি শক্তির বাজারে মূল্যবান মূল্য স্থিতিশীলতা ও পূর্বাভাসযোগ্যতা নিয়ে আসে, যা পশ্চিম এবং বিশেষ করে ইউরোপের জন্য অত্যাবশ্যক। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে ইন্দো-রুশ সম্পর্কের শক্তি বাণিজ্যের উপাদান ইউরোপকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার দিকে পিছলে যেতে বাধা দেয়।

চতুর্থ, সম্পর্কটি গুরুত্বপূর্ণ আর্কটিক অঞ্চলে নতুন সম্ভাবনার অনুমতি দেয়। আর্কটিক অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত উপস্থিতি না থাকলে, শুধুমাত্র রাশিয়ার সঙ্গে নয়, ইউরোপীয় এবং নর্ডিক বন্ধুদের সঙ্গেও অংশীদারি না-‌থাকলে, একটি নতুন রাশিয়া-চিন অক্ষ এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ তৈরি করবে। এটি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের পরিবেশ ও নিরাপত্তার জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা বরং আরও ভাল বিকল্প উন্মুক্ত করে। রাশিয়া ও ভারতের সহ-মালিকানাধীন একটি চেন্নাই-ভ্লাদিভোস্টক করিডোর এই অঞ্চলের জন্য আরও  কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংযোগ ও প্রশাসনিক স্থাপত্যের দিকে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।

অবশেষে, ব্রিকস এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মতো ক্রমবর্ধমান শক্তি ও প্রভাবের গ্রুপিংয়ে ভারতের উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে, এগুলি পশ্চিমীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয়। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যেমন বলেছেন, ভারত অ-পশ্চিমী, কিন্তু পশ্চিম-‌বিরোধী নয়। এই মধ্যপন্থী এবং যুক্তিসঙ্গত মনোভাব এই ধরনের গোষ্ঠীগুলির ক্রিয়া এবং অবস্থানকে আকার দেয়। নয়াদিল্লি এবং পশ্চিমী মিত্রদের সমর্থিত প্রার্থীদের — যেমন ইউএই, মিশর ও ভিয়েতনামের — ব্রিকস-এ সদস্য বা অংশীদার হিসাবে প্রবেশ করা সেই গ্রুপিংকে আরও মধ্যমপন্থী করেছে৷ এই দেশগুলির উপস্থিতি এবং ভারতের নেতৃত্ব নিশ্চিত করে যে ব্রিকস একটি চ্যালেঞ্জ নয়, উত্তরাধিকার হিসাবে পশ্চিমী নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিক গ্রুপিংয়ের পরিপূরক হিসাবে আরও বেশি কাজ করে।


ব্রিকস এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মতো ক্রমবর্ধমান শক্তি ও প্রভাবের গ্রুপিংয়ে ভারতের উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে, এগুলি পশ্চিমীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয়।



ভূ-রাজনীতি দ্বারা গভীরভাবে বিভক্ত দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারি করার ক্ষমতা স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় কূটনীতির একটি বৈশিষ্ট্য। তবে, শুধুমাত্র এখনই, এই ক্ষমতাটি একটি চাপে থাকা বিশ্বব্যবস্থার ভাঙন রোধে অপরিহার্য হিসাবে প্রকাশিত হবে। ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক শুধুমাত্র এই দুটি দেশের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের জন্য কাজ করে। ভারত ও পশ্চিমের নীতিগত সম্প্রদায় এই সম্পর্কের মূল গুরুত্ব সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন। পশ্চিমের রুশোফোবিক মিডিয়া এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বাস্তুতন্ত্রের সংশয়বাদ সেই বাস্তবতাকে পরিবর্তন করে না।



এই ভাষ্যটি প্রথম
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস -‌এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.