• ২০২৫ সালে নেতারা বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবেন।
• বিভিন্ন গতিশীলতা এবং প্রশ্ন আগামী বছরের ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যকে আকার দিতে পারে।
• এই প্রতিবেদনে এমন পাঁচটি মূল প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যার সমাধান নেতাদের করতে হবে।
২০২৪ যদি নির্বাচনের বছর হয়, তা হলে ২০২৫ নিঃসন্দেহে হতে চলেছে প্রশ্নের বছর।
বছরের শুরুতে বিশ্ব জুড়ে সরকারগুলি নতুন মেয়াদ শুরু করবে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা, পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের জন্য দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হবে। যে কোনও সময়ে দাঁড়িয়েই এই সমস্যাগুলি সমাধান করা কঠিন। কিন্তু এই প্রশ্নগুলি বর্তমানে একটি অশান্ত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উত্থিত হয়েছে এবং বিশ্ব যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বিচ্ছিন্নতার সাক্ষী হয়েছে।
ফলস্বরূপ, নেতাদের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে, এমনটা নয়। বরং বিশ্ব যে ক্রম-আগ্রাসন এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছে, সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কাঠামো তৈরির উদ্দেশ্যে সমঝোতায় আসার পাশাপাশি এই চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করতে হবে।
তা হলে কোন গতিশীলতা নেতাদের কার্যকলাপকে চালিত করবে?
২০২৫ সালে কোন তিনটি গতিশীলতা সম্পর্কে নেতাদের অবগত থাকা জরুরি?
প্রথমত, নেতাদের অবশ্যই তাঁদের নিজেদের মধ্যে ও সমকক্ষদের ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধির জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হবে। নেতারা আর নেহাত অনুমান করতে পারেন না যে, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা শনাক্তযোগ্য স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হবে। কারণ মেরুকৃত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি নেতাদের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে চালিত করতে পারে যা বাইরে থেকে আপাত-বিপরীতমুখী বলে মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে, এই সিদ্ধান্তগুলিকে রূপদানকারী কিছু শক্তি কেবল মেরুকরণকে গভীরতরই করে তোলে না, বরং ভুল তথ্যের মাত্রাও বৃদ্ধি করতে পারে।
নেতাদের ভাবনার চাইতেও ভৌগোলিক প্রসঙ্গটির প্রভাব বেশি এবং তা গাজা, ইউক্রেন ও সুদানের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নেতাদের অসঙ্গতির মধ্যেই বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বাহ্যিক প্রতিশ্রুতিগুলি রাষ্ট্রের অবস্থান এবং দেশীয় স্বার্থের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। নেতাদের ভাবনার চাইতেও ভৌগোলিক প্রসঙ্গটির প্রভাব বেশি এবং তা গাজা, ইউক্রেন ও সুদানের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়েছে। মানবাধিকার প্রয়োগকে কেন্দ্র করে দ্বিমুখী মনোভাব মেনে নেওয়া এবং দায়িত্ব বা সুরক্ষার আকাঙ্ক্ষা এখন সর্বজনীন মূল্যবোধের আকাঙ্ক্ষার চাইতেও বেশি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। যেমনটা রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে সমর্থন করা হয়েছে।
সবশেষে, প্রভাবশালী আওয়াজ তোলার জন্য নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। নেতাদের খতিয়ে দেখতে হবে এবং নতুন শক্তিগুলির কথা শুনতে হবে। ব্যবসায়িক নেতা থেকে শুরু করে সামাজিক প্রভাবশালী হয়ে অস্থিতিশীল দেশে যারা স্থিতাবস্থা মেনে চলতে অনিচ্ছুক… তাদের কথাও শুনতে হবে। যুদ্ধোত্তর ‘উদারবাদী’ ঐকমত্য যতটা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক… উভয় দিক থেকেই ভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এমনকি যে দেশগুলি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তিকাঠামোর বহুলাংশ জুড়ে রয়েছে, তারাও বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।
এই পটভূমিতে সামনের বছরে নেতাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন ভূ-রাজনৈতিক প্রশ্নসমূহের উত্তর দিতে হবে?
২০২৫ সালের জন্য যে মূল পাঁচটি প্রশ্ন রয়েছে:
একটি ভঙ্গুর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়টিকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে?
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা তলানিতে ঠেকেছে এবং সংঘাত বাড়ছে। ডব্লিউটিও ও ইউএন-এর মতো প্রথাগত নেতা ও প্রতিষ্ঠানগুলি সম্প্রতি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে বা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। গ্লোবাল সাউথ জুড়ে দেশগুলি এবং উদীয়মান ব্লকগুলি এখনও স্পষ্ট করেনি যে তারা নিম্নমুখী পশ্চিম-নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য সঞ্জীবনী হিসাবে কাজ করবে না কি শুধু মাত্র বিঘ্নপ্রদানকারী ভূমিকাই পালন করবে। এই গতিশীলতার ভারসাম্য বজায় রাখাও বেজিংয়ের জন্য জরুরি। কারণ বেজিং এই মুহূর্তে একাধিক নতুন জ্যামিতির কেন্দ্রে রয়েছে - যেমন প্রস্তাবিত গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন, ফোরাম অন চায়না-আফ্রিকা কোঅপারেশন (এফওসিএসি) এবং একটি সম্ভাব্য রাশিয়া-ইরান-চিন অক্ষ।
ডব্লিউটিও ও ইউএন-এর মতো প্রথাগত নেতা ও প্রতিষ্ঠানগুলি সম্প্রতি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে বা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪ সালের দু’টি সবচেয়ে নির্ণায়ক দ্বন্দ্ব অর্থাৎ ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ এবং গাজায় ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত আসলে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্ব থেকেই উদ্ভূত। হঠাৎ করে এই দ্বন্দ্বগুলির যুদ্ধে পরিণত হওয়া দর্শায় যে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি শান্তি বজায় রাখতে বা সেই সংক্রান্ত আলোচনার জন্য দ্বিধাবিভক্ত।
এই প্রেক্ষাপটে, যখন সর্বজনীন মূল্যবোধের আনুগত্য প্রায় অসম্ভব এবং বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে পড়ছে, তখন নেতারা তাঁদের প্রভাবের সীমাবদ্ধতা ও তাঁদের জোটের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন।
নেতাদের প্রশ্ন তুলতে হবে: আরও সংঘাত এড়াতে আগামী দিনে কোন কোন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে? নেতাদের পক্ষে কি তাঁদের ক্ষমতার আরও সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করা সম্ভব? চুক্তির ন্যূনতম ক্ষেত্র কোনগুলি, যা শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি আনতে পারে ও পশ্চাদপসরণমূলক পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে পারে?
সমসাময়িক বিশ্বে সার্বভৌমত্ব বলতে কী বোঝায়?
গত আট দশকের তুলনায় নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার আদর্শ - ১৯৪৫ সাল থেকে যা বহাল রয়েছে – থেকে বর্তমান বিশ্ব ক্রমে সরে আসছে। অভিন্ন সাধারণ নিয়ম, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অঙ্গীকার ছাড়া একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা কঠিন। যাই হোক, নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার রক্ষকরা বুঝতে পেরেছেন যে অনেক দেশের জন্য জাতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাগুলির ভূমিকা এবং স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সেনাবাহিনীর ভৌত সীমানা অতিক্রম করা সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট অবমাননা; বিকৃত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থার কারসাজি ও বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য ব্যবস্থা ও অর্থপ্রদান ব্যবস্থা সম্ভাব্য ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ লঙ্ঘন করে এবং সার্বভৌমত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিও লঙ্ঘন করতে পারে।
অভিন্ন সাধারণ নিয়ম, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অঙ্গীকার ছাড়া একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা কঠিন।
সাম্প্রতিক দশকগুলিতে একটি ‘সমন্বিত’ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দেশগুলির সার্বভৌমত্ব ও কিছু নীতির বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক সংস্থাগুলির কাছে অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছিল। এই ব্যবস্থার নিরপেক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে এসেছে। বর্তমানে বিশ্বব্যবস্থার রক্ষকরাও প্রায়শই বোঝেন যে, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা হয় না এমন একটি বিশ্বে নিয়মগুলির পরিকল্পনা বা প্রয়োগ সম্ভব নয়। কারণ নিজেদের জনগণের হয়ে কথা বলতে পারে এবং তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে পারে, এমন শক্তিশালী রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে কী ভাবে একটি নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা বিকশিত হতে পারে?
২০২৫ সালে তাই নেতাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে: রাষ্ট্রের স্বাধীনতা কি তাদের জনসংখ্যার জন্য নিরাপত্তা প্রদান করে এমন ট্রান্স-ন্যাশনাল বা আন্তর্দেশীয় কাঠামোর শক্তিশালীকরণের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে সুরাহা ও পুনরুজ্জীবিত করা যেতে পারে?
সামনের পথ
২০২৫ সালে বিশ্বের নেতাদের এই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। তাঁদের উত্তর অনুরূপ না হলেও চলবে। কিন্তু এই সম্ভাবনা থেকেই যায় যে, যদি তাঁরা একে অপরের সঙ্গে তীব্র মতবিরোধ পোষণ করেন, তা হলে বিশ্বের সামনে উপস্থিত সমস্যাগুলির তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। অযৌক্তিকতা, অসঙ্গতি ও নানাবিধ কণ্ঠস্বরের মাঝে একটি ঐকমত্য খুঁজে পাওয়া তাই আগের চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.