Author : Samir Saran

Published on Jan 09, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারতীয় সাধারণ নির্বাচন গণতন্ত্রের শক্তির পুনর্নিশ্চিতকরণের ঊর্ধ্বে উঠলে তা ২০২৪-কে এমন এক বছর করে তুলতে পারে, যা গণতন্ত্রকে বিশ্বব্যাপী মানুষের দরজায় পৌঁছে দেবে।

 

২০২৪: বছরটি কি গণতন্ত্রকে নতুন রূপ দেবে?

এই প্রবন্ধটি "What to expect in 2024"‌–এর অংশ


২০২৪ সালে ৫০টিরও বেশি দেশের নির্বাচন হবে, যা রাজনৈতিক প্রবিধান, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে এক অভূতপূর্ব মন্থন সৃষ্টি করবে। কোন মহাদেশই এর আওতার বাইরে থাকবে না।

বিশ্বব্যাপী, জাতীয় অগ্রগতি মূল্যায়ন অত্যন্ত উদ্দীপনার সঙ্গে করা হয় এবং জনগণের জোটবদ্ধ কণ্ঠস্বর নতুন মতের জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালটি গণতন্ত্র এবং বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য ফলপ্রসূ হবে।

ডিজিটাল যুগে এই প্রথম বড় গণতান্ত্রিক দেশগুলির একই বছরে নির্বাচন হতে চলেছে। ব্যক্তিগত অংশগ্রহণ, গণসংহতি, রাজনৈতিক বার্তা এবং প্রচারের মূল নির্বাচনী বৈশিষ্ট্যগুলি দ্রুতই মনোযোগের কেন্দ্রে উঠে আসবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিকৃত করে এমন অনিবার্য উপাদানগুলিও বহাল থাকবে। যেমন অনলাইনে ভুল তথ্য, বিভ্রান্তি এবং প্রচার। ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন গুজব খবরের প্রেক্ষিতে এক বাঁকবদলকারী ঘটনা হলেও ২০২৪ সালের সম্ভাব্য পূর্বাভাসের তুলনায় তা নিতান্তই ফিকে।

 

বিশ্বব্যাপী, জাতীয় অগ্রগতি মূল্যায়ন অত্যন্ত উদ্দীপনার সঙ্গে করা হয় এবং জনগণের জোটবদ্ধ কণ্ঠস্বর নতুন মতের জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালটি গণতন্ত্র এবং বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য ফলপ্রসূ হবে।

এগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নির্বাচন হবে ভারতে, যার উপরে নজর থাকবে সকলের। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বহুত্ববাদী সমাজ – যেখানে ‘ধর্ম-এর প্রাচীন মতবাদএক অর্থে ভারতের আসল অলিখিত সংবিধানে পরিণত হয়েছে – চ্যাটজিপিটি, ডিপফেক এবং ভ্লগের যুগে একটি নতুন প্রবিধান প্রদান করবে

খুব সহজ কথায় ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনের অনন্য বিষয় হল, তাতে ‘ভারত’-এর মূল ধারণাটি অন্তর্গত। দেশটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতমজি২০-র সভাপতি হিসাবে ভারত উল্লেখযোগ্য ভাবে সফল মেয়াদ পূর্ণ করেছে। ভারত একক ভাবে উন্নয়ন-আবিষ্ট এমন এক ভৌগোলিক পরিসর, যার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় সমস্ত গ্লোবাল সাউথ বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, জি২০ সভাপতি হিসাবে ভারতের প্রথম পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ভয়েস অ দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট-এর আয়োজন করা, যেখানে ভারত ১২৫টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশের উদ্বেগগুলি বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী জি২০-তে নিজের অগ্রাধিকারগুলি স্থির করতে দেশগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।

ভারত বিশ্বের অত্যাধুনিক ডিজিটাল সমাজের অন্যতম। দেশটি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিক্ষম পরিষেবাকেন্দ্র হিসাবে তার অবস্থানকে সুসংহত করেছে; উন্নত উন্নয়নশীল দেশগুলি ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এর (ডিপিআই) বিশ্বমানের মডেল গ্রহণ করেছে এবং সেগুলির সঙ্গে অভিযোজিত হয়েছে; এবং ভারত এআই দক্ষতা অনুপ্রবেশ এবং ট্যালেন্ট কনসেন্ট্রেশন বা প্রতিভা ঘনত্বের নিরিখে আন্তর্জাতিক ভাবে সর্বোচ্চ পদাধিকারী দেশ।

 

ডিজিটাল যুগে এই প্রথম বড় গণতান্ত্রিক দেশগুলির একই বছরে নির্বাচন হতে চলেছে। ব্যক্তিগত অংশগ্রহণ, গণসংহতি, রাজনৈতিক বার্তা এবং প্রচারের মূল নির্বাচনী বৈশিষ্ট্যগুলি দ্রুতই মনোযোগের কেন্দ্র উঠে আসবে।

 

আসন্ন নির্বাচন ভারতের গণতান্ত্রিক তাগিদ, উন্নয়নমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং প্রযুক্তিগত পরিশীলনের এক মিথস্ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করবে।

নিজেজি২০ সভাপতিত্বের সময় ভারত সঠিক ভাবে নিজেকে ‘মাদার অব ডেমোক্র্যাসি’ বলে দাবি করেছিল এবং প্রাচ্যের গু হিসাবে গণতান্ত্রিক নীতিগুলির উপর পুনরায় জোর দিয়েছিল। জি২০ পার্লামেন্টারি স্পিকার্স সামিটে যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উল্লেখ করেন, সহস্রাব্দ প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে সমাবেশ, অবাধ বিতর্ক গণতান্ত্রিক আলোচনা প্রচলনের উল্লেখ আছে – ‘যেখানে সমাজের উন্নতির জন্য সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।’ বৃহত্তর কল্যাণের জন্য এই গণতান্ত্রিক উদ্বেগ বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর (এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্য) সভ্যতাগত বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সম্পৃক্ততাকে পথ দেখিয়েছে।

ভারতের অর্থনৈতিক দক্ষতা, ডিজিটাল অর্জন কূটনৈতিক সক্ষমতা এর গণতান্ত্রিক প্রমাণ-সহ দেশটিকে গ্লোবাল সাউথের ধ্রুবতারা করে তোলে। রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক আত্মানুসন্ধানে নিয়োজিত উন্নয়নশীল দেশগুলির আর সম্পর্কহীন পশ্চিম কর্তৃত্ববাদী চিনের মধ্যে কোনও একটি দেশকে বেছে নেওয়ার দরকার নেই। ভারতীয় মনোভাব ও উদাহরণসমূহ উন্নয়নশীল উদীয়মান অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে আরও বেশি মানানসই।

 

ভারত একক ভাবে উন্নয়ন-আবিষ্ট এমন এক ভৌগোলিক পরিসর, যার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় সমস্ত গ্লোবাল সাউথ বিদ্যমান।

 

বৃহৎ ভারতীয় নির্বাচন: আখ্যান বনাম ফলাফল

বর্তমানে ভারত ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারসম্পন্ন অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুযায়ী, ভারত ২০২৬-২৭ সালে এই মাইলফলক অতিক্রম করতে পারে। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে দেশের মাথাপিছু জিডিপি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৪ সালে মাথাপিছু প্রায় ১৬০০ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২৬১২ মার্কিন ডলারে পরিণত হয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারতীয় নেতৃত্ব একটি জিডিপি-কেন্দ্রিক বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির তুলনায় একটি মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং ব্যক্তিগত বৃদ্ধি ও কল্যাণ সুনিশ্চিত করে, এ হেন উদার, মানবকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তরের পক্ষে মত দিয়েছে।

ভারত জুড়ে এই দৃষ্টিভঙ্গির নানাবিধ প্রমাণ স্পষ্ট। ৯৯.৯ শতাংশেরও বেশি ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্কের কাছে একটি আধার ডিজিটাল পরিচয়পত্র রয়েছে, যা তাদের সরকারি পরিষেবা পাওয়ার ক্ষমতা প্রদান করে। দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে, যেখানে ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে পরিষেবা প্রদান করা হয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির ৫৫.৫ শতাংশ নারীদের। এর পাশাপাশি ৩০ মিলিয়ন ভারতীয় প্রতিদিন অনলাইনে আর্থিক লেনদেন করার জন্য স্বদেশি ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস ব্যবহার করে এবং বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল অর্থনীতিকে সশক্ত করে তোলে

২০২৪ সালের নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য পরিবর্তনও স্পষ্ট হয়ে উঠছে২০০৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে ৪১৫ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্য সীমা অতিক্রম করেছে। নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের নিরিখে একটি দীর্ঘস্থায়ী ভারতীয় মনোযোগ আখেরে লাভজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে: এখন ভারতে মাঝারি আকারের ব্যবসায় ঊর্ধ্বতন এবং নেতৃত্ব প্রদানকারী অবস্থানের প্রায় ৩৬ শতাংশ জুড়ে রয়েছেন নারীরা, যা আন্তর্জাতিক গড়ের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি। ২০১৩ সাল থেকে শিশুমৃত্যুর হার ৩৯.০৮২ থেকে ২৬.৬১৯ এবং মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৭ (প্রতি এক লক্ষ জীবিত জন্মে) থেকে ১০৩-এ নেমে এসেছে। ২০২১-২০২২ সালে খাদ্য নিরাপত্তাকে সশক্ত করে দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৩১৫.৭ মিলিয়ন টনের মাত্রা স্পর্শ করেছে।

 

দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে, যেখানে ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে পরিষেবা প্রদান করা হয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির ৫৫.৫ শতাংশ নারীদের।

 

এগুলি নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণামূলক আখ্যান। এগুলি হল সাফল্যের সেই কাহিনি, যা ভারতীয় নাগরিকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের আখ্যান বেশ বিভ্রান্তিকর, বিকৃত এবং সেগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে এ হেন বিভাজন ত্রুটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা বিশ্বের যে কোনও বহুসাংস্কৃতিক সমাজেই লক্ষ্যণীয়। নেতৃস্থানীয় পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলি - প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল - এর উপর নজর বোলালে দেখা যাবে যে, তারা আসন্ন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরোধী’ পক্ষের অবস্থান বেছে নিয়েছে।

২০১৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ভারতের ডিভাইডার-ইন-চিফ’ বা ‘বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রধান ব্যক্তি’র তকমা লাগিয়েছিল এবং বিস্ময় প্রকাশ করেছিল যে, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের শাসন আরও পাঁচ বছর মোদী সরকারের হাতে থাকবে কি না।’ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ঘোষণা করে যে, মোদী ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ হিসাবে ভারতের এক সময়ের গর্বিত দাবি অনেকাংশেই ভেঙে পড়েছে। দি ওয়াশিংটন পোস্ট মনে করে যে, ভারত কর্তৃত্ববাদের কবলে এগিয়ে যাচ্ছে’ এবং বিবিসি অক্সফাম রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে শোক প্রকাশ করে যে, ভারতের মোট সম্পদের ৪০.৫%-এর মালিক হলেন দেশের ধনীতম ১% ব্যক্তিরা’। কিন্তু এই গণমাধ্যমগুলি এটি লক্ষ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, ভারত শীর্ষে সম্পদ উৎপাদন করলেও সেই সম্পদকে সর্বদা নিম্ন স্তরে চালিত করার প্রক্রিয়াকে উত্সাহ জোগায়, তা ইউরোপীয় অভিজাততন্ত্রের প্রকৃতির তুলনায় ভিত্তিগত ভাবেই আলাদা।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি-সচেতন নেতা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁর সরকার নাগরিকদের সুবিধা প্রদান করতে এবং জনসংখ্যার পরিমাপে সেই লক্ষ্যগুলিকে অর্জন করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এ ভাবে দু প্রতিযোগী শক্তি কাজ করছে — একদিকে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলি ডিজিটাল মঞ্চ ব্যবহার করে নিজেদের মোদী-বিরোধী জোটে অবস্থান গ্রহণ করছে এবং অন্য দিকে ভারতীয় নেতৃত্বের প্রযুক্তির ব্যবহার রূপান্তরমূলক বৃদ্ধি প্রদান ও জনগণকে তাদের প্রস্তাবের প্রতি আকৃষ্ট করতে সাহায্য করেছে

 

এ ভাবে দু প্রতিযোগী শক্তি কাজ করছে — একদিকে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলি ডিজিটাল মঞ্চ ব্যবহার করে নিজেদের মোদী-বিরোধী জোটে অবস্থান গ্রহণ করছে এবং অন্য দিকে ভারতীয় নেতৃত্বের প্রযুক্তির ব্যবহার রূপান্তরমূলক বৃদ্ধি প্রদান ও জনগণকে তাদের প্রস্তাবের প্রতি আকৃষ্ট করতে সাহায্য করেছে

 

ভারতীয় নির্বাচন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রভাবকে নির্ণায়ক ভাবে মূল্যায়ন করতে এবং দুটি প্রধান কেন্দ্রীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে। গণমাধ্যমের আখ্যান কি প্রদেয় পরিষেবাকে অতিক্রম করতে পারবে না কি সুশাসন শেষ পর্যায়ের সাফল্য আখ্যানকে বাজিমাত করবে? এবং যদি শেষ পর্যন্ত জীবিত অভিজ্ঞতা ও বাস্তব মাটিতে প্রদেয় পরিষেবা বিজয়ী হয়, তা হলে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে অতিরঞ্জিত করে দেখার দোষে কি আমরা দুষ্ট হব?

 

ক্ষিণের উত্থান: কেন ভারতীয় গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ

গণতন্ত্র কোন পশ্চিমী অবদান নয় এবং তার পশ্চিমী রঞ্জক বা মোড়ক থাকারও প্রয়োজন নেই। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের জন্য গণতন্ত্র হল - যেমনটি গ্লোবাল সাউথের বেশির ভাগ অংশের জন্য- অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি, পরিকাঠামোমূলক বিনিয়োগ, জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মসূচি, নারীচালিত উন্নয়ন, পরিবেশ-বান্ধব জীবনধারা গ্রহণ এবং ডিপিআই প্রতিষ্ঠা, যা অন্যান্য হস্তক্ষেপের মধ্যে জনপরিষেবা প্রদানকে সর্বজনীন করে তোলে। এগুলি ন্যায্যতার গঠনমূলক একক, যেগুলি ছাড়া কোনও অর্থবহ গণতন্ত্র চলতে পারে না। এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত সফল হয়েছে। জি২০-তে নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের পক্ষের সরব হওয়ার জন্য একটি যুগান্তকারী বিল পাস করা হয়েছে, যেটিতে ভারতীয় পার্লামেন্টের লোয়ার হাউসে এবং রাজ্যের বিধানসভার এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে শূন্য নিঃসরণ অর্জনের অঙ্গীকার পূরণের জন্য একাধিক ক্ষেত্রে কাজ করছে; এর যুগান্তকারী লাইফ (লাইফস্টাইল ফর মুভমেন্ট) আন্দোলন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করছে; এবং একগুচ্ছ দেশ তাদের ডিপিআই নির্মাণ করতে ভারতের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গঠনে আগ্রহী হয়েছে।

 

ভারত তার বৃদ্ধির আখ্যানের অংশ হিসাবে বৃহৎ প্রযুক্তির মঞ্চগুলির সঙ্গে একজোটে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে কখনও কখনও নৈরাজ্যবাদী দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ান ধারণাগুলিকে খণ্ডন করার সময় ভারতীয় আইনগুলিকে সমর্থন করেছে

 

ভারত এ কথাও স্বীকার করে নেয় যে, উন্নয়নশীল বিশ্বের ভিন্নধর্মী সমাজের জন্য ধর্মপ্রচার ও নিরঙ্কুশ বাক্‌স্বাধীনতার চেয়ে অনলাইন নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি মার্কিন মঞ্চগুলি বাক্‌স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক ধারণার মধ্যে সমসত্ত্বতা আনার চেষ্টা করলেও ভারত প্রাজ্ঞ ভাবেই তার সাংবিধানিক পরিকল্পনার যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ’-এর পক্ষাবলম্বন করেছে। ভারত তার বৃদ্ধির আখ্যানের অংশ হিসাবে বৃহৎ প্রযুক্তির মঞ্চগুলির সঙ্গে একজোটে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে কখনও কখনও নৈরাজ্যবাদী দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ান ধারণাগুলিকে খণ্ডন করার সময় ভারতীয় আইনগুলিকে সমর্থন করেছে

সমষ্টিগত ভাবে এই বৈশিষ্ট্যগুলি গণতান্ত্রিক ভারতকে উদীয়মান দক্ষিণের দেশগুলির কাছে এক আলোকবর্তিকা করে তুলেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে জি২০ প্রেসিডেন্সির শুরুতে ভয়েস অ দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট-এ অগ্রণী ভূমিকা পালনের পর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউ দিল্লি লিডারস সামিট পর্যন্ত… ভারতকে গ্লোবাল সাউথের বৈধ মুখপাত্র হিসাবে স্বাগত জানানো হয়েছে। এমন এক সন্ধিক্ষণে ভারতীয় সাধারণ নির্বাচন —  যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক অনুশীলনও বটে — গণতন্ত্রের শক্তিকে পুনর্নিশ্চিত করার ঊর্ধ্বে উঠবে এবং ২০২৪ সালকে এমন এক বছর করে তুলবে, যা গণতন্ত্রকে বিশ্বের সকল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবে।

 


সমীর সারন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Samir Saran

Samir Saran

Samir Saran is the President of the Observer Research Foundation (ORF), India’s premier think tank, headquartered in New Delhi with affiliates in North America and ...

Read More +